Thursday, March 28, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - বিশেষ সংখ্যা ২০‌১৬জনগণকে বিভক্ত করে প্রতিবাদের শক্তি নষ্ট করতেই ট্রাম্পের আবির্ভাব

জনগণকে বিভক্ত করে প্রতিবাদের শক্তি নষ্ট করতেই ট্রাম্পের আবির্ভাব

98d5ef8df6ad85cb18bb63a8e6d2290dমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কালো-মুসলিম-হিস্পানিক-অভিবাসীবিরোধী উগ্র আমেরিকান জাত্যাভিমান সৃষ্টিকারী বক্তব্য, নারীদের সম্পর্কে নোংরা উক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি নির্বাচনের আগেই খ্যাতি লাভ করেছিলেন। আমেরিকাসহ বিশ্বের বড় বড় মিডিয়ায় হিলারিই নির্বাচিত হবেন এমন একটা ভাব দেখানো হয়েছিলো। বিভিন্ন সংস্থার জরিপের ফলাফলেও হিলারি এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু সব কিছু ভুল প্রমাণিত করে ট্রাম্প জয়লাভ করলেন।
আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা, বেকার সমস্যা, জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধি এমন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে যে, মানুষের বিক্ষোভ সেখানে ফেটে ফেটে বেরুতে চাইছে। ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট মুভমেন্ট’ তার একটি দৃষ্টান্ত। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অনেক মৌলিক অধিকারই আজ আমেরিকাবাসীদের নাগালের বাইরে। স্থানে স্থানে এসকল বিষয় নিয়ে অনেক বিক্ষোভ হচ্ছে যার সকল খবর আমরা পাইনা। এই বিক্ষোভ ঠেকানো ও শোষিত মানুষকে বিভক্ত করার জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতিরা ট্রাম্পকে নিয়ে এলো। ট্রাম্প দেখালেন যে, আমেরিকানদের বেকারত্বের কারণ পুঁজিবাদ নয়, অভিবাসীরা অর্থাৎ যাদের দেশ আমেরিকা নয়, তাদের সংখ্যা বাড়ার কারণেই প্রকৃত আমেরিকানরা কাজ পাচ্ছে না। তিনি উগ্র আমেরিকান জাতীয়তাবাদ প্রচার করলেন। এভাবে তিনি আমেরিকায় বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের বিরাট সংখ্যক অভিবাসীদের বিরুদ্ধে, এরই সাথে সাথে কালোদের বিরুদ্ধে, হিস্পানিকদের (আমেরিকায় বসবাসকারী স্প্যানিশ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী) বিরুদ্ধে হোয়াইট আমেরিকানদের ক্ষেপিয়ে তুললেন। এককথায় মানুষের পিছিয়ে পড়া চিন্তাকে ভয়ানক মাত্রায় উত্তেজিত করেই ট্রাম্পের আগমন। এবারের নির্বাচনের প্রচারের সময়ও ছিল বিগত অন্যান্য নির্বাচন থেকে অনেক বেশি। ফলে পরিকল্পিতভাবে একটা দীর্ঘ সময় নিয়ে এই ক্ষেপিয়ে তোলার কাজ চলেছে। পরস্পরের প্রতি তীব্র হিংসা ধারণকারী এই বিরাট শ্রমজীবী মানুষ এখন বেশ কিছুদিন ধরে নিজেদের বিভক্ত করে রাখবে। আমেরিকার সমস্ত রকম অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের মূল যে পুঁজিবাদ, তাকে চিহ্নিত করে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ে নামা সাময়িকভাবে তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

ট্রাম্পের আগমনে সারা বিশ্বে যে একটা গেল গেল রব পড়ে গেছে, তারও কোনো ভিত্তি নেই। ট্রাম্প বা হিলারি যেই আসুন না কেন এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে যে কোনো পরিবর্তন হবে না, তা আমেরিকান পত্র-পত্রিকায়ও বারবারই এসেছে। ট্রাম্পের বিপরীতে হিলারিকে সাধু সাজাবার চেষ্টাও হাস্যকর। হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালেই বিভিন্ন দেশের উপর আমেরিকা চড়াও হয়েছে, আগ্রাসন করেছে, মধ্যপ্রাচ্যে লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করেছে। চরম সংকটগ্রস্থ পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার যুদ্ধ ছাড়া দম নেয়ারও উপায় নেই। তাই উগ্র কিংবা মিষ্টি – যে রূপ নিয়ে যে প্রেসিডেন্টই আসুন না কেন তিনি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদের সেবা করতেই আসবেন, তাকে রক্ষা করতেই আসবেন। ট্রাম্প বা হিলারির এর বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। ট্রাম্প এলেন বলে আমেরিকান সমাজের বিভক্তি এত তুঙ্গে ওঠেনি বরং বিভক্তি এত তীব্র করার দরকার পুঁজিপতিদের ছিলো বলেই ট্রাম্প এলেন।

সাম্যবাদ বিশেষ সংখ্যা নভেম্বর ২০১৬

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments