Saturday, April 20, 2024
Homeফিচারজাতীয় সম্পদ রক্ষায় গণআন্দোলন গড়ে তুলুন

জাতীয় সম্পদ রক্ষায় গণআন্দোলন গড়ে তুলুন

রামপাল প্রকল্পের প্রতিবাদে ঢাকা-সুন্দরবন লংমার্চ

মহাজোট সরকারের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত রুখে দাঁড়ান

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। একটু পর পরই বৃষ্টি নেমে আসছে। বৃষ্টির উৎপাত উপেক্ষা করে দু হাজারের বেশি মানুষের মিছিল প্রবেশ করেছে বাগেরহাট শহরে। চার দিনে প্রায় ৪০০ কিমি পথ এরা পাড়ি দিয়ে এসেছে। মুখে, শরীরে তাই ক্লান্তির ছাপ, মলিনতার ছাপ, কিন্তু মিছিলের পদক্ষেপে, শ্লোগানে কোনো ক্লান্তি নেই, শ্রান্তি নেই! গানে-শ্লোগানে মুখরিত লংমার্চের মিছিল দেখতে রাস্তার দু ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাগেরহাটবাসী। বয়োবৃদ্ধ একজন তো বলেই উঠল, “বাবারা আসছ, যাও, দোকান বন্ধ করে আমিও আসছি।” মনে হচ্ছে, এই কাফেলার অপেক্ষায়ই যেন তিনি প্রহর গুণছিলেন।

Longmarch-Digraj

লংমার্চ প্রবেশ করতেই থমকে গেলো গোটা বাগেরহাট শহর। রাস্তার দু’পাশে হাজারো মানুষ। দোকানে বেচা-বিক্রি বন্ধ। পথচারীরা থমকে দাঁড়িয়ে। বিস্ময় চাপা থাকে না ডাক্তার আহমদ আলীর কণ্ঠে – “এত বড় মিছিল কিন্তু কত সুশৃঙ্খল, কত সুদৃশ্য। এরকম মিছিল আর দেখিনি।”

শুরুটা হয়েছিল ২৪ সেপ্টেম্বর, রাজধানী ঢাকার বুকে। এই ২৪ সেপ্টেম্বর ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল দিন। পরাধীন দেশকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শোষণ-নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তির সংকল্পে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন বীরকন্যা প্রীতিলতা। প্রীতিলতা, মাস্টারদা সূর্যসেন এরকম অসংখ্য মানুষের শহীদী আত্মদানের বিনিময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্যাস্ত হয়েছে। পাকিস্তানি প্রায় ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরম্নদ্ধেও মানুষ লড়েছে, জীবন দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু মানুষ শোষণ থেকে মুক্তি পায়নি। দেশের অর্থনীতি-রাজনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারা সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখে না। লাভের লোভে শাসকশ্রেণী পুঁজিপতি শ্রেণী দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে হাত মিলায়। দেশের গ্যাস-কয়লা,সমুদ্র ব্লক বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে চায়। কৃষি জমি থেকে কৃষককে উচ্ছেদ করে,পরিবেশ ধ্বংস করে রামপালসহ বিভিন্ন স্থানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতেও পিছপা হয় না। এদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতার সংগ্রামী স্মৃতি নিয়ে আসে অমিত প্রেরণা।

২৪ সেপ্টেম্বর সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, বাম-প্রগতিশীল চেতনার লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী-শিক্ষক, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্য, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, দেশপ্রেমিক ব্যক্তিবর্গ জমায়েত হতে থাকেন পূর্বনির্ধারিত স্থান জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, কৃষক সংগঠন, নারী সংগঠনের সদস্যরা। কে নেই লংমার্চে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ শিক্ষক লংমার্চে শরিক হতে ছুটে এসেছেন সাত সকালেই। কথায় কথায় বোঝা যায়, দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে যে নৈরাশ্য তৈরি হয়েছে, আওয়ামী-বিএনপির ক্ষমতাকেন্দ্রীক স্বার্থ-সুবিধার জন্যে সংঘাতের রাজনীতি দেখতে দেখতে রাজনীতি সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ মনোভাবের জন্ম হয়েছে – জনগণের স্বার্থের পক্ষে এরকম গণআন্দোলন তাদের মনে আশাবাদ তৈরি করতে পেরেছে। সুন্দরবন রক্ষার এই লংমার্চ সে কাজে খানিকটা হলেও সফলতা অর্জন করেছে।

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এটা ষষ্ঠ লংমার্চ। ভারতে গ্যাস রপ্তানির প্রতিবাদে ঢাকা-বিবিয়ানা লংমার্চ, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় ঢাকা-চট্টগ্রাম লংমার্চ, মংলা বন্দর ও সুন্দরবন রক্ষায় ঢাকা-খুলনা-মংলা লংমার্চ, ফুলবাড়ী কয়লাখনি রক্ষায় ঢাকা-দিনাজপুর-ফুলবাড়ী লংমার্চ, সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্র রক্ষায় ঢাকা-সুনেত্র লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব লংমার্চ দাবি আদায়ে সক্ষম হয়েছে শুধু নয়, পথে পথে মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব গণজাগরণের জোয়ার সৃষ্টি করেছে। জনগণের জাগ্রত পাহারায় শাসকদের নীলনক্সা বার বার পরাস্ত হয়েছে। যে কারণে বিএনপি সরকার ভারতে গ্যাস রফতানি করতে পারেনি, ভুয়া মার্কিন কোম্পানি কর্ণফুলীল মোহনায় বন্দর নির্মাণ করতে পারেনি, মংলা বন্দর উন্নয়নে সরকার বাধ্য হয়েছে, সুন্দরবন ধ্বংস করে গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারেনি, ফুলবাড়ীতে লক্ষ মানুষকে উচ্ছেদ করে, কৃষি জমি ধ্বংস করে উন্মুক্ত কয়লা খনি করতে পারেনি। সর্বশেষ ঢাকা-সুনেত্র লংমার্চেও গণজাগরণে ভীত সরকার সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্র রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে ইজারা দিতে পারেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকেই এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এসব লংমার্চের স্মৃতি এবারের লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেও বাড়তি উদ্দীপনা তৈরি করেছে।

‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই’ – এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় শুরু হয় লংমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ। উদ্বোধন ঘোষণা করেন কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুলস্নাহ। সুন্দরবনকে মায়ের সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, এই প্রকল্প হলে ভারতীয় কোম্পানি আর দেশীয় লুটেরা ধনীকশ্রেণী কোটি কোটি টাকা মুনাফা লুটে নেবে। তাদের এই মুনাফার জন্য আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস হবে। ভারতের কোনো ক্ষতি হবে না। এ নিয়ে আমাদের সরকারেরও কোনো উদ্বেগ নেই। কারণ এই সরকারের কাছে জনগণের স্বার্থের কোনো দাম নেই, তারা জনগণের স্বার্থ দেখে না। কিন্তু আমরা তা হতে দিতে পারি না। সুন্দরবন আমাদের বাঁচায়, সুন্দরবনকে আমরা বাঁচাবো। এটা আমাদের দেশপ্রেমের পরীক্ষা।

Longmarch-Peoples Participation

দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সংকল্প নিয়েই বেলা সাড়ে ১০টায় শুরু হল সুন্দরবন লংমার্চ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে হাইকোর্ট মোড় ঘুরে মৎসভবন, শাহবাগ, এলিফ্যান্টরোড, সাইন্সল্যাব, ধানমন্ডী হয়ে মিছিল এগিয়ে চলে। দুপুর ২টায় লংমার্চ পৌঁছায় সাভার রানা পস্নাজার সামনে।

সেখানে রানা প্লাজায় ভবনধসে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার শ্রমিকদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। সমাবেশ স্থলের চারপাশে, রাস্তার দু’ধারে শত শত শ্রমিক দাঁড়িয়ে। চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের দুঃসহ ক্ষত এখনো শুকায়নি। নিহত-আহত-নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। জীবনের কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। তারপরও এখানে কর্মরত শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল ছিল বহু পরিবারের জীবন। সেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে কত পরিবার পথে বসেছে, কত শিশুর জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।

সমাবেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন ময়মনসিংহের আকলিমা বেগম। তার এক হাতে একটি শিশু, অন্য হাতে রানা প্লাজায় নিহত বোন কোহিনূর বেগমের ছবি। তাকে এই লংমার্চের উদ্দেশ্য জানাতেই তিনি বললেন, “সরকারের কাছে মাইনষের দাম নাই, হেরা আবার গাছের জানের কদর বুঝবো ক্যামনে?” সত্যিই তো, কারা আমাদের বন ধ্বংস করছে? কেন বন ধ্বংস করছে? আকলিমা আক্তারের কণ্ঠেই সত্য কথাটা উচ্চারিত হয়েছে।

আকলিমা বেগমের মতো, নিহত কোহিনূর বেগমের মতো বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের জন্য প্রাণান্ত অবস্থা যে শ্রমিকদের, একটি দিন কাজ না পেলে সন্তানের ক্ষুধার্ত মুখ যাদের তাড়িয়ে বেড়ায় – সেই লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের শ্রম শোষণ করে, শরীরের রক্ত নিঙড়ে মুনাফার পাহাড় গড়ছে মালিকরা। এই মালিকরাই তো দেশ পরিচালনা করছে। দেশের সম্পদ লুটে নিচ্ছে। প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস-কয়লা লুটে নেয়ার জন্য নানা উপায় বের করছে, নিজেদের সহযোগি হিসাবে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ডেকে আনছে। তারাই আজ মুনাফার অদম্য লালসায় গোটা বিশ্বের ঐতিহ্য, বিরল প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের আধার, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকার উৎস সুন্দরবনকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে। মানুষের জীবনের মূল্য যাদের কাছে নেই, প্রকৃতি-পরিবেশের কী মূল্য এদের কাছে আছে? মানুষের জীবন, শ্রম ও প্রকৃতির সম্পদ সবই এদের কাছে মুনাফা উপায় মাত্র। তাই লংমার্চ শুধু সুন্দরবনকে রক্ষায় নয়, মানুষের জীবন ও মানুষের জীবন রক্ষাকারী প্রকৃতি যে লুটেরা শাসকদের হাতে বিপন্ন তাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার লড়াইয়ের অংশ। এই অঙ্গীকার নিয়েই চলেছে ঢাকা-সুন্দরবন লংমার্চ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণের আয়োজন। এখানে কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন লংমার্চকে নিয়ে তাদের পরিবেশনা করে। খাবারগ্রহণ শেষে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে সন্ধ্যার দিকে লংমার্চ প্রবেশ করে মানিকগঞ্জ শহরে। বিজয়মেলার মাঠে সমাপনী সমাবেশ। এখানে জেলা তেল-গ্যাস কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান হযরতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শেখ মু. শহীদুল্লাহ, আনু মুহাম্মদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ, শাহ আলম, মোজাম্মেল হক তারা, সাইফুল হক, জাহেদুল হক মিলু, জোনায়েদ সাকী, আব্দুস সাত্তার, মাসুদ খান, কল্লোল মোস্তফা, মানস নন্দী। লংমার্চকারীদের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা ছিল ল’কলেজ এবং দেলোয়ার হোসেন কলেজে।

Longmarch_SPBপরদিন সকাল ১০টায় লংমার্চ আবার যাত্রা শুরু করে। ফেরীঘাট পার হয়ে গোয়ালন্দে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। লংমার্চ রাজবাড়ী শহরে পৌঁছায় দুপুরে। বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে লংমার্চের মিছিল শহর ঘুরে আজাদী ময়দানে সমাবেশে মিলিত হয়। জনসভার মঞ্চে ছিল চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জারি গান ও গণসঙ্গীত, এই বাংলা নাট্যসংসদের নাটক ‘শিকার’ প্রদর্শনী। এর মাঝেই দুপুরের খাবার গ্রহণ। এরপর জেলা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুশান্ত ধর রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রমতুল্লাহ, আনু মুহাম্মদ।

এরপর লংমার্চ রওয়ানা দেয় ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে। ফরিদপুর শহরে যখন লংমার্চ প্রবেশ করে তখন পড়ন্ত বিকেল। শহরের মোড়ে মোড়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সিপিবি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সর্বসাধারণ লংমার্চকে স্বাগত জানায়। শহর প্রদক্ষিণ করে লংমার্চ অম্বিকা মেমোরিয়াল হলে জনসভায় মিলিত হয়। ফরিদপুর জেলা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক মণীন্দ্রনাথ রায় কর্মকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শেখ মু. শহীদুলস্নাহ, আনু মুহাম্মদ, বিডি রহমতউলস্নাহ, শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, আজহারম্নল ইসলাম আরজু, সাইফুল হক, রাজেকুজ্জামান রতন, জোনায়েদ সাকী, মোশাররফ হোসেন নান্নু, শহীদুল ইসলাম সবুজ, আমিনুল ইসলাম বাবুল, মুসাহিদ আহমদ, শ্যামল কান্তি দে, মাসুদ খান। সমাবেশ শেষে রাতের খাবার গ্রহণের ও থাকার ব্যবস্থা ছিল অম্বিকা চরণ হলেই। পাশাপাশি স্থানীয় একটি স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় নির্মাণাধীন একটি ভবনে। দরজা-জানালা নেই, ইট-সুরকি আর বালির আস্তরণে মোড়া মেঝেতে শুয়ে রাত্রিযাপন।

পরদিন সকাল ১০টায় পুনরায় যাত্রা শুরু হল। এবারের গন্তব্য যশোর। ফরিদপুর থেকে স্থানীয় কয়েকজন বাসদ কর্মী যুক্ত হলেন লংমার্চের কাফেলায়। এদের সাথে একজন কলেজ ছাত্র যোগ দিলেন লংমার্চে, তার নাম এনামুল। ব্যক্তিগতভাবে সে কাউকেই চেনে না, তবু পা মিলিয়েছে লংমার্চে। একদল অপরিচিতি মানুষের সাথে এভাবে অনিশ্চিত পথে কেউ পা বাড়ায়? থাকার কষ্ট, খাওয়ার কষ্ট – এসব কি সে জানে? জিজ্ঞেস করতেই হাসিমুখে বলল, “আমি এ আন্দোলনের কথা কিছুই জানতাম না। গতকালই প্রথম এসব শুনলাম। নেতাদের বক্তব্য শুনে মনে হল, এ আন্দোলনে থাকা উচিত, লংমার্চে যাওয়া উচিত। তাই চলে আসলাম। আমার মতো এরকম আরো অনেকে যদি যুক্ত হয় তাহলেই তো আন্দোলন সফল হবে। আর দেশের জন্য কিছু করতে হলে কষ্ট তো কিছু করতেই হবে।”Longmarch-Magura

রাজনীতি মানেই কিছু নগদ পাওয়া যায়, সুবিধা হাতিয়ে নেয়া যায়, টেন্ডারবাজী-ঠিকাদারি দখল করা যায়, এর বাইরেও যে রাজনীতির আরো মানে আছে, আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামাত-জাতীয় পার্টির রাজনীতি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত মানুষ এসব ভুলতে বসেছে। অনুভূতিপ্রবণ মানুষ, বিবেকবান মানুষ অনেকেই রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অন্যায়-দুর্নীতি, লুটপাট, খুন-হানাহানি, নারীর শ্লীলতাহানি – কিছু নিয়েই মানুষ আর ভাবতে চায় না। ‘ভেবে কি হবে?’, ‘যা হবার তাতো হবেই!’, ‘ওদের সাথে কি আর পারা যাবে?’, ‘আমি একা একা আর কি করব?’ – এমনই সব বিচিত্র সংশয় আর দ্বিধা মানুষের মনে। এসব ভাবনা আমাদের পায়ে জাল হয়ে জড়িয়ে থাকে। গণআন্দোলন আমাদের মনের পায়ে জড়িয়ে থাকা এসব জাল ছিন্ন করে দেয়। খাওয়ার কষ্ট, ঘুমানোর কষ্ট, রোদ-বৃষ্টিতে পথ চলার কষ্টকে উপেক্ষা করে লংমার্চকারীদের পথচলা পথের দু’ধারের মানুষের মনে তো নাড়া দেবেই। দিতেও পেরেছে। যেমনটি বলছিলেন ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার আরিফ – “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা, আজকের তরুণ-যুবকেরা এরকম কাজে নামতে পারে, আমি ভাবতেই পারি না। বর্তমানের রাজনীতিবিদরা তো ব্যবসায়ী। লাভটাই তাদের আসল কথা। এই নষ্ট প্রজন্ম দিয়ে কিছু হবে না। যদি হয় তো আগামী প্রজন্মের তরুণদের দিয়েই হবে। এদের ত্যাগের মর্ম মানুষ বুঝবে।”

লংমার্চে অংশগ্রহণকারীদেও ত্যাগের সীমা যাই হোক, লংমার্চের পথে পথে জনগণ কিন্তু অপরিসীম সহযোগিতায় লংমার্চকে বরণ করে নিয়েছে। সমর্থন ও ভালোবাসায় সিক্ত করেছে। আর্থিক সহযোগিতা তো ছিলই, সেই সাথে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করার কাজেও তাদের ভূমিকা ছিল। বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির নারী কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে অনেকে নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থেকেছেন। মানুষের এই সহযোগিতা-ভালোবাসা থেকেই লংমার্চকারীরা শক্তি সঞ্চয় করেছেন, পেছনের পথ ফেলে সামনের পথে পা বাড়িয়েছেন।
মাগুরার পৌরভবনের সমাবেশ, ঝিনাইদহের আবারপুর বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ, কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পথসভা করে যশোরে পৌঁছুতে পৌঁছুতে রাত হয়ে যায়। যশোর টাউনহল ময়দানের প্রবেশ পথে বাসদ ও ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষ থেকে লংমার্চকারীদের স্বাগত জানানো হয়। জেলা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবছার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শেখ মু. শহীদুলস্নাহ ও আনু মুহাম্মদ। যশোরে খাওয়া ও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা ছিল আব্দুর রাজ্জাক কলেজে। স্থান সংকুলানের সমস্যা এখানেও হল, কিন্তু রত্রিযাপন-খাওয়া-গোসল এগুলোর কষ্ট স্বীকার করেই তো সবাই লংমার্চে এসেছে।

Longmarch_Jessor-SSF২৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় কলেজ প্রাঙ্গন থেকে লংমার্চের মিছিল রেলরোড, মুজিব সড়ক হয়ে শহর ছাড়ে খুলনার উদ্দেশ্যে। পথে ফুলতলা বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ, দৌলতপুরে দুপুরের খাবার গ্রহণ ও বীণাপানি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এখান থেকে খুলনার পথে লংমার্চ এগিয়ে গেলে কাশিমপুর মোড়ে ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়ন লংমার্চকারীদের মধ্যে খাবার পানি বিতরণ করে তাদের আতিথেয়তার প্রকাশ ঘটায়। লংমার্চ খুলনার সমাবেশ স্থল হাদীস পার্কে পৌঁছার ৩ কিলোমিটার দূরে থাকতেই নেমে আসে প্রবল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে লংমার্চ পৌঁছায় শহীদ হাদিস পার্কে। বৃষ্টিতে সমাবেশস্থলে পানি জমে যায়। তারপরও বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যরা জাতীয় কমিটির নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত দীর্ঘ এক ঘণ্টা প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলেই অবস্থান করে। এই দৃশ্য স্থানীয় জনগণসহ লংমার্চে অংশগ্রহণকারী সকলেই প্রত্যক্ষ করেছেন। বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির কর্মীদের এই শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ সকলকেই অভিভূত করেছে। এক পর্যায়ে সমাবেশ স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে, সমাবেশ হবে পরদিন সকালে। বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির কর্মীদের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা ছিল পিটিআই মোড়ের একটি কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে একটি মাত্র টয়লেট, গোসলের অবস্থাও তথৈবচ। এরকম অবস্থায় রাত্রিযাপন করে সকালে সবাইকে হাজির হতে হয় হাদীস পার্কের সমাবেশে।

হাদিস পার্কের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে লংমার্চ রওয়ানা হয় বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে – যেখানে স্থাপিত হবে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। স্টেডিয়াম রোড, রেলরোড, ঘোষপট্টি, বহুমুখী কলেজিয়েট স্কুল হয়ে পুরাতন জজ কোর্ট সংলগ্ন মাঠে সমাবেশে মিলিত হয়। এখানে অতি অল্পসময়ের মধ্যে দুপুরের খাওয়া সেরে লংমার্চ যাত্রা করে দ্বিগরাজের উদ্দেশ্যে। পথে একে একে অতিক্রম করে সোনাতলিয়া, ফয়লাবাজার, বনসেনবাজার, ভাগা বাসস্ট্যান্ড, গুনাইব্রিজ প্রভৃতি এলাকা। পথের দুপাশে শত শত হাজার হাজার মানুষ। হাততালি দিয়ে তারা লংমার্চকে স্বাগত জানিয়েছে। কয়েকদিন ধরেই পত্রপত্রিকায় শোনা যাচ্ছিল, সরকার স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে লংমার্চ প্রতিহত করবে। কিন্তু রামপাল বা দ্বিগরাজের কোথাও তার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। লংমার্চের শুরুতে শেখ মু. শহীদুলস্নাহ বলেছিলেন, “আমরা দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে যে শক্তি তৈরি করেছি তাকে মোকাবেলা করার শক্তি শাসকশ্রেণীর নেই।” তাঁর কথাটাই তো সত্যি হল। তাই সরকার প্রেসনোট জারি করেও মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। আর কে না জানে যে, এদেশের সরকারি প্রেসনোটের চেয়ে বড় কোনো মিথ্যা হয় না! সরকারি প্রেসনোটে যেসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, লংমার্চ তার মুখোশ খুলে দিয়েছে। এমনি করে পথে পথে জনসচেতনতা ও গণজাগরণের ঢেউ তুলে অবশেষে লংমার্চ দ্বিগরাজের নির্ধারিত সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হল।Longmarch_2

দ্বিগরাজে নদীর ওপারেই সুন্দরবন। একদিন এ এলাকাটাও সুন্দরবনের অংশ ছিল। কিন্তু শাসকদের অপরিকল্পনা, স্থানীয় প্রভাবশালী লুটেরাদের বন উজাড়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা কারণে সুন্দরবন ক্রমাগত ছোট হয়ে আসছে। জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) সেচ প্রকল্প এবং ফারাক্কা বাঁধের কারণে খুলনা-বাগেরহাটের নদীগুলো দিয়ে মিঠা পানির প্রবাহ কমে গেছে। এরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সুন্দরবন এবং বাগেরহাট-খুলনা-সাতক্ষীরাসহ পুরো অঞ্চলের উপর। এই গোটা দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। সুন্দরবনে গরান-গেওয়া প্রভৃতি গাছ আগামরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সিডর-আইলা ইত্যাদি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়-সাইক্লোনের আঘাতেও সুন্দরবন বুকে আগলিয়ে আমাদের রক্ষা করে নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সুন্দরবন আপন শক্তিতেই মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে কিন্তু, সে ক্ষতি এখনো পূরণ হয়নি। এ অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে গরিব চাষীদের জমি জবরদখল করে গড়ে উঠেছে চিংড়ী ঘের। এর ফলেও এ অঞ্চলে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এই ধুঁকতে থাকা প্রকৃতির উপর মরণ আঘাত হয়ে দেখা দেবে, এটা যে কোনো বিবেচক মানুষের কাছেই মনে হয়েছে।
কানায় কানায় পূর্ণ দ্বিগরাজের সমাবেশ স্থল। জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মু. শহীদুলস্নাহর বক্তব্যের পর পরই ‘সুন্দরবন ঘোষণা’ উপস্থাপন করেন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এখানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, সৈয়দ আবু জাফর, সাইফুল হক, খালেকুজ্জামান, জোনায়েদ সাকী, মোশাররফ হোসেন নান্নু, মোশাহিদ আহমদ, কল্লোল মোস্তফা, ফারুক ওয়াসিফ প্রমুখ।

কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, “প্রতিদিন হাজারো মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। এই সুন্দরবন আমাদের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ, আমাদের ফুসফুস। এদেশের শাসকরা মানুষকে খেতে না দিয়ে, শিক্ষা-চিকিৎসা না দিয়ে, চাকুরি না দিয়ে তিলে তিলে মারছে। এখন প্রকৃতি ধ্বংস করে, জীবিকার ওপর আক্রমণ করে মানুষকে বিপন্ন করতে চাইছে। এই আগ্রাসনের হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বাত্মক মুক্তির লড়াই গড়ে তুলতে হবে।”

সুন্দরবন ঘোষণা

সুন্দরবন ঘোষণায় বলা হয়, “টিপাইমুখ বাধ প্রতিরোধে যেমন উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম মনিপুরের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের যোগসূত্র আছে, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ জুড়ে থাকা এই সুন্দরবন ধ্বংসের রামপাল কয়লা বিদ্যুৎপ্রকল্পের ক্ষেত্রেও একইভাবে শুধু রামপাল বা বাংলাদেশের জনগণই নয়, ভারতীয় এমনকি সারা দুনিয়ার সংগ্রামী জনগণের পারস্পরিক সংগ্রামের আন্ত্মঃসংযোগ গড়ে তোলা দরকার। তার লক্ষণও আমরা দেখতে পাচ্ছি।”

এতে বলা হয়, “বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের গবেষণা থেকে জানা যায় যে, এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে ৫২ হাজার টন বিষাক্ত সালফার ডাইঅক্সাইড, ৩০ হাজার টন নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড, ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। এছাড়া পশুর নদী থেকে ঘণ্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার হারে পানি প্রত্যাহার, তারপর বিপুল বেগে পানি আবার নদীতে নির্গমন, নির্গমনকৃত পানির তাপমাত্রা ও পানিতে দ্রবীভূত নানান বিষাক্ত উপাদান নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ, পানির পস্নবতা, পলি বহন ক্ষমতা, মৎস্য ও অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনচক্র ইত্যাদিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, গোটা সুন্দরবনের জলজ বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করবে। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহন, জাহাজ থেকে নির্গত তরল কঠিন বিষাক্ত বর্জ্য, জাহাজ নিঃসৃত তেল, শব্দ, তীব্র আলো ইত্যাদি সুন্দরবনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও জীব-বৈচিত্র্য বিনষ্ট করবে।”

“গত ২৬ সেপ্টেম্বর সরকার প্রচারিত প্রেসনোটে জাতীয় কমিটির বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর বলা হয়েছে। লংমার্চের আগে বিভিন্ন সময় জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য ও যুক্তি সংবাদ সম্মেলন, সেমিনার, গণশুনানি ইত্যাদির মাধ্যমে তুলে ধরা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কখনোই তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ও যুক্তিভিত্তিক উত্তর দিতে দেখা যায়নি। লংমার্চকে কেন্দ্র করে সারাদেশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠায় শুরু হয়েছে অপপ্রচার। কিন্তু আমাদের বিশ্লেষণ, তথ্য ও যুক্তি খণ্ডণ করতে ব্যর্থ হয়ে ভুল তথ্য ও মিথ্যাচার ছাড়া আর নতুন কিছুই এতে যোগ হয়নি।”

ঘোষণায় বলা হয়, “রামপাল প্রকল্প সুন্দরবন থেকে ১৪ কিমি দূরত্বে হলেও, প্রেসনোটে বলা হয়েছে, ‘ইউনেস্কো ন্যাশনাল হেরিটেজ’ সাইট থেকে এটা নাকি ৭২ কিমি দূরে, ফলে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থিত! বাস্ত্মবে ‘ইউনস্কো ন্যাশনাল হেরিটেজ’ বলে আলাদা কিছু নেই, যা আছে তা হলো ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ সাইট, গোটা সুন্দরবনটাই যার অংশ। ফলে সুন্দরবন ১৪ কিমি দূরে হলে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজকে ৭২ কিমি দূরে বলাটা জনগণের সাথে প্রতারণার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না। আরেকটি বিষয় হলো, যে অভয়ারণ্যকে সরকার ইউনেস্কো ন্যাশনাল হেরিটেজ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে, সে অংশ দিয়েই কয়লা ভর্তি জাহাজ চলাচল করবে বলে তা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে গোটা সুন্দরবনটাই যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেখানে, সুন্দরবনের কোনো একটি অভায়ারণ্য প্রকল্প থেকে ৭২ কিমি দূরে বলে সেটাকে নিরাপদ প্রমাণ করার চেষ্টা হাস্যকর। সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যাবহারের ফলে ক্ষতিকর কার্বন, সালফার, ফ্লাই অ্যাশ ও অন্যান্য বায়ু দূষণের উপাদান ন্যূনতম পর্যায়ে থাকার দাবিটিও প্রতারণাপূর্ণ, কেননা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে এসব বিষাক্ত উপাদান উদগীরণ সাব-ক্রিটিক্যাল টেকনোলজির তুলনায় মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ কম হবে যা ক্ষতির মাত্রার তুলনায় সামান্য।”

“যে ভারত তার নিজ দেশে সুন্দরবনের ১৬ ভাগের একভাগ আয়তনের রাজীব গান্ধি ন্যাশনাল পার্ক এবং ৯০০ ভাগের একভাগ আয়তনের পিচাভারম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ২৫ কিমি সীমার মধ্যে তাপভিত্তিক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেনি, সেই ভারত বাংলাদেশে সুন্দরবনের মতো একটি বিশ্ব ঐতিহ্য, জীববৈচিত্র্যের অফুরন্ত আধার, রামসার সাইট এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বলে ঘোষিত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মাত্র ১৪ কিমি এর মধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিশাল তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে!”

ঘোষণায় আরো বলা হয়, “গত দেড় দশকে জাতীয় কমিটির আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে স্বল্পমূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের এক টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক জ্বালানি যদি জাতীয় মালিকানায় থাকে, যদি খনিজ সম্পদ রপ্তানি নিষিদ্ধ করা যায়, যদি নবায়ণযোগ্য-অনবায়ণযোগ্য-জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রসমূহ সম্প্রসারিত করা যায়, যদি এসব কাজ করায় জাতীয় সক্ষমতার বিকাশকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় তাহলে অতিদ্রুতই বাংলাদেশের পক্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব এবং কৃষি-শিল্পে বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভব। আগের সরকারগুলোর ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও এ পথে না গিয়ে দেশি-বিদেশী লুটেরাগোষ্ঠীকে ব্যবসা দেয়া এবং কমিশনভোগী তৎপরতায় নিয়োজিত থাকায় বিদ্যুৎ এর সংকট বিদ্যমান আছে। বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানের কথা বলে সরকার যেসব পথ নিচ্ছে, তাতে দেশি-বিদেশী বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী ও লুটেরাগোষ্ঠী লাভবান হলেও দেশের জনগণের উপর আরো বোঝা চাপানো হয়েছে এবং নতুন নতুন বিপদের ঝুঁকি তৈরি করা হচ্ছে। এই লংমার্চ বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য তাই অবিলম্বে পিএসসি ২০১২ বাতিল, ফুলবাড়ি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, খনিজ সম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণসহ জাতীয় কমিটির সাত দফা বাস্ত্মবায়নের দাবি জানাচ্ছে।”

“আমরা বারবার বলি বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারি ভুল নীতি, দুর্নীতি ও মুনাফামুখী আগ্রাসনে সুন্দরবন ক্রমান্বয়ে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দিতে যাচ্ছে মরণ আঘাত। ভারতীয় কোম্পানির সীমাহীন মুনাফার জন্য, দেশি ভূমিদস্যুদের বনভূমি দখল অবাধ করবার জন্য আমাদের অস্তিত্বের অংশ সুন্দরবন ধ্বংস হতে দিতে পারি না। শুধু ভারত নয়, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া অন্য যে কোনো দেশের নামেই আসুক না কেনো, কোনো দখলদার লুটেরাদের হাতেই বাংলাদেশকে আমরা ছেড়ে দিতে পারিনা। কোনো সাম্রাজ্যিক পরিকল্পনার ফাঁদে বাংলাদেশকে ফেলতে আমরা দিতে পারি না।”

“সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অবিলম্বে এই সুন্দরবন ধ্বংস করার প্রকল্প বাতিল করতে হবে। সুন্দরবনকে সুস্থ ও পুনরুৎপাদনক্ষম অবস্থায় বিকশিত করার জন্য ‘সুন্দরবন নীতিমালা’ প্রণয়ন ও বাস্ত্মবায়ন করতে হবে। ২২ অক্টোবরের ভিত্তি প্রস্তরের ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ হবে না, জনগণ এই প্রস্তর উপড়ে ফেলবে। প্রেসনোটে মিথ্যাচার করেও কোনো লাভ হবে না, এতে সরকারের প্রতারণা, জালিয়াতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অবস্থান আরো উন্মোচিত হবে।”

বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, আলমগীর হোসেন দুলাল, মানস নন্দী, ওবায়দুল্লাহ মুসা, উজ্জ্বল রায়, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, সাইফুজ্জামান সাকন, জহিরুল ইসলাম, বেলাল চৌধুরী, হাসিনুর রহমান, আ.ব.ম. নুরম্নল আলম, বিপ্লব মণ্ডল, চিত্তরঞ্জন সরকার প্রমুখ। বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির অঙ্গ-সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট, শিশু কিশোর মেলা এ লংমার্চে অংশগ্রহণ করে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সামনে বাম মোর্চার বিক্ষোভ

প্রতারণাপূর্ণভাবে চোরাগোপ্তা পথে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিফলক উদ্বোধন
সরকারের বিরাট নৈতিক পরাজয়

DLA-1সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবিতে ১০ অক্টোবর গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সম্মুখে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

বাম মোর্চার সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, জোনায়েদ সাকী, আজিজুর রহমান, শহীদুল ইসলাম সবুজ, হামিদুল হক, মহিনউদ্দীন চৌধুরী লিটন।

বিক্ষোভ সমাবেশে বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ বলেন দেশের জনগণের মতামত ও বিরোধীতা উপেক্ষা করে প্রতারণাপূর্ণ কৌশলে চোরাগোপ্তা পথে যেভাবে ভারতীয় চাপে ভেড়ামারায় বসে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে তা শেখ হাসিনা সরকারের বিরাট নৈতিক পরাজয়; রামপাল বিদ্যুৎপ্রকল্পের এই ভিত্তিফলক মহাজোট সরকারের কপালে দেশবিরোধী আরেকটি কলংকের দাগ এঁকে দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান নয়, বরং ভারত সরকারকে খুশী করে আগামী নির্বাচন বৈতরণী পার হবার রাস্তা প্রশস্থ করা। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদেশীদেরকে তুষ্ট করে ক্ষমতায় থাকার এই ধরনের কৌশল অতীতেও কাজে লাগেনি, ভবিষ্যতেও লাগবে না। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার যদি তথ্য, যুক্তি ও সত্যের পথে না হাঁটে তাহলে ফুলবাড়ীর মত রামপালেও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করবে।

বিক্ষোভে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা বিদ্যুৎ চাই সত্য, কিন্তু কোনভাবেই তা আমাদের প্রাকৃতিক বর্ম শত শত প্রাণ বৈচিত্র্যের আঁধার সুন্দরবন ধ্বংস করে নয়। তারা বলেন এমনিতেই সিডর আর আয়লায় দেশের দক্ষিণাঞ্চল বিপর্যস্থ; আর এখন সমগ্র পরিবেশ বিপন্নকারী এই রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিরাট অংশে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাবে। বাংলাদেশের মানুষ তাই এই আত্মঘাতি প্রকল্পকে কোনভাবেই হতে দেবে না। তারা বলেন সরকার যদি সোজা পথে না হাটে, অবিলম্বে এই প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা না দেয়, তাহলে পূজা ও ঈদের পর হরতাল-অবরোধ, ধারাবাহিক অবস্থানসহ গণসংগ্রামের বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে এই অপতৎপরতা বাতিলে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আজ গাজীপুরে আসওয়াদ গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে অসংখ্য হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভরত বাম মোর্চার নেত্রী মোশরেফা মিশুসহ নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ ও সরকারী দলের সন্ত্রাসী দলের উপর্যুপরী হামলা-আক্রমনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

রংপুর : রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্র ফ্রন্ট রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

কারমাইকেল কলেজ : ছাত্র ফ্রন্ট কারমাইকেল কলেজ শাখার উদ্যোগে ৬ অক্টোবর সুন্দরবন বনাম রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র শীর্ষক তথ্য ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় কলেজ শহীদ মিনারের সামনে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সভাপতি আহসানুল আরেফিন তিতু। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কলেজ সভাপতি রেদওয়ানুল ইসলাম বিপুল, সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান বকসী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইমরান, রিনা আক্তার প্রমুখ।

ফেনী : রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্ত্মর স্থাপনের বিরম্নদ্ধে বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি ফেনী জেলা শাখার উদ্যোগে ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় ট্রাংক রোড শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা ফোরামের সদস্য বাদল চক্রবতি ও অনুপম পাল।

জনগণকে জিম্মি করে চক্রান্তের রাজনীতি চলছে

রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরিসহ জনজীবনের সংকট নিরসনের দাবিতে বাসদের বিক্ষোভ

“জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে দেশের মানুষ রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে সুন্দরবন ধ্বংসের চক্রান্ত্মের প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। ঢাকা-সুন্দরবন লংমার্চে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। কিন্তু জনগণের এসব প্রতিবাদ-আপত্তি-উদ্বেগকে উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক কায়দায় রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন ঘোষণা করলেন। এটা জনমতের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননা প্রদর্শন।” গত ৭ অক্টোবর বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির উদ্যোগে সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণা, নারী নির্যাতন বন্ধসহ জনজীবনের সংকট নিরসনের দাবিতে ৭ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আলমগীর হোসেন দুলাল, মানস নন্দী, ফখরুদ্দিন কবির আতিক। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবন অভাব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সন্ত্রাস-দুর্নীতি, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, সাংস্কৃতিক অবক্ষয়, নারী নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতার মতো ভয়াবহ সংকটে জর্জরিত। কিন্তু এ সমস্ত সংকটকে ছাপিয়ে নির্বাচন কীভাবে হবে, কারা সংবিধান মেনে চলবে আর কারা মেনে চলবে না – ইত্যাদি অর্থহীন বিতর্কে দেশকে আটকে ফেলার চেষ্টা চলছে। অথচ নির্বাচন যে প্রক্রিয়াতেই হোক, নির্বাচনে যারাই বিজয়ী হোক, তার মধ্য দিয়ে জনজীবনের এসব গুরুতর সমস্যার কোনোই সমাধান হবে না, এটা অত্যন্ত স্পষ্ট। মানুষকে এক ধরণের কৃত্রিম বিতর্কে-উদ্বেগে ঠেলে দিয়ে দেশের বুর্জোয়াশ্রেণী, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, শিল্পপতি-ব্যবসায়ী গোষ্ঠী গোপন নানা চক্রান্তে মেতে উঠেছে। তাদের এই গোপন চক্রান্তের বলি হবে দেশের মানুষ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সংস্কৃতি। নেতৃবৃন্দ শাসকগোষ্ঠীর ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় এবং জনজীবনের সংকট নিরসনে বামপন্থীদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments