Saturday, April 20, 2024
Homeফিচারনিপীড়ক-লুটপাটকারীদের ক্ষমতার কোন্দলে পুড়ছে জনগণ

নিপীড়ক-লুটপাটকারীদের ক্ষমতার কোন্দলে পুড়ছে জনগণ

একতরফা নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না

এক দুর্যোগময় সময়ের ভিতর দিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ। স্বাভাবিক নিয়মে একটি নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু সে নির্বাচন কেমন করে হবে, তা নিয়েই চলছে বিরোধ ও সংঘাত। আর এই বিরোধ-সংঘাত হিংস্র আকার নিয়েছে যার আগুনে পুড়ছে দেশের মানুষ। শাসকরা চাইছে, তাদের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন সম্পন্ন করতে। বিরোধী দল চাইছে, শাসকদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়ে নিজেদের জয়ের পথ সুগম করতে। সমঝোতার একটু আভাস দেখা দিয়েও মিলিয়ে গেছে। এ সংঘাত সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে। ক্ষমতার মসনদ নিয়েই তো যুদ্ধ। কথায় বলে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। বাংলাদেশেও তাই চলছে। প্রতিদিনই মানুষ মরছে – পুড়ে মরছে, বোমায় মরছে, গুলিতে মরছে।

অকালে বেঘোরে মৃত্যুই মানুষের একমাত্র প্রাপ্তি নয়। বাজার দর লাগামছাড়া – আজ পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তো কাল বাড়ছে ডালের দাম। গার্মেন্ট শ্রমিকরা মজুরির দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে পুলিশ-RAB-বিজিবি, মালিকের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে। কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে মালিক। গ্রামের গরিব মানুষের কাজ নেই, বিশেষত উত্তরবঙ্গে এখন চলছে কার্তিক মাসের অভাব। প্রতিদিনই নারী নির্যাতনের গা-শিউরে ওঠা খবর আসছে। স্কুল-কলেজের লেখাপড়ার দশা বেহাল। সব মিলিয়ে মানুষের ভোগান্তির তালিকা অনেক দীর্ঘ। পরিস্থিতি বলছে, ভোগান্তির এই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের দেয়া হরতাল-অবরোধ-লগি বৈঠা মিছিলের রেকর্ড ভাঙতে বিএনপি মরিয়া! আরো হরতাল আসবে, আরো জ্বালাও-পোড়াও হবে, আরো গ্রেফতার-গুলি হবে, আরো মানুষ মরবে – এ অবধারিত।

এ পরিস্থিতি কেমন করে তৈরি হল, তাও আমাদের জানা। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে আপাত অর্থে হলেও অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না – এটা দেশবাসীর তিক্ত অভিজ্ঞতা। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী শাসনামলের নির্বাচন থেকে এ অভিজ্ঞতার শুরু। এরপর জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনামলে এ অভিজ্ঞতা আরো দৃঢ় হয়েছে। ’৯১-তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জামাত সমর্থিত বিএনপি সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত মাগুরা উপনির্বাচন দেশবাসীকে আবার এ কথাই স্মরণ করিয়ে দিল যে, নির্বাচিত শাসকরাও অনির্বাচিত সামরিক স্বৈরশাসকদের চেয়ে কম যায় না। বিএনপি সরকারের চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী প্রবণতার প্রকাশ ঘটেছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, একদলীয় নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে। তখন দেশের গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী দল ও শক্তিগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। আওয়ামী লীগও জামাতের সাথে কৌশলগত মৈত্রী করে আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন আপাত অর্থে নিরপেক্ষ হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করার প্রচেষ্টা নগ্নভাবেই চলেছে। নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে পাওয়ার পরিকল্পনা থেকে বিচারপতিদের চাকুরির বয়স সীমা বাড়নো, দলীয় লোকদের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দান, পদোন্নতি প্রদান – এসবই চলেছে। নির্বাচন কমিশনও দলীয়করণের খপ্পরে পড়েছে। সর্বশেষ, বিএনপি-জামাত জোট নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত দলীয় রাষ্ট্রপতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানিয়েছিল। আর এবার আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগের রায়কে উসিলা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। যদিও বিচারবিভাগের রায়ে আগামী ২ মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে, এমন কথাও বলা হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা হল, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে এ দুই বড় দল কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না, দেশবাসীও এদের বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে না।

দেশে এখন যে সংকট চলছে তা বুর্জোয়া ব্যবস্থার শাসনতান্ত্রিক সংকট। কিন্তু সে সংকটকেই আজ দেশের সর্বময় সংকটে পরিণত হয়েছে। দুই বড় বুর্জোয়া দল তাদের ক্ষমতা দ্বন্দ্বে জনগণকে জিম্মি করেছে। একে অপরের দুঃশাসন-লুটপাট-সন্ত্রাস-দলীয়করণ দেখিয়ে নিজের ভোটের বাক্স ভারী করতে চাইছে। তবে জনগণকে জিম্মি করে এ সংঘাতের রাজনীতি চললেও, জনগণ এবং জনগণের অধিকার যে এই দুই দল ও তাদের সহযোগীদের কাছে কোনো তাৎপর্য বহন করে না – সেটাও দেশের মানুষ খুব ভালো করেই বোঝে। এরা ক্ষমতার জন্য লুটেরা ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, কালোটাকার মালিক, সন্ত্রাসী গডফাদার, সামরিক-বেসামরিক আমলা, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সাথে নানা ধরনের আপস-সমঝোতা-চক্রান্ত করে। প্রয়োজনে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়। দেশের মানুষ এসব বোঝে না এমন নয়।

সদ্য ক্ষমতার মেয়াদ সম্পন্নকারী মহাজোট সরকারের দুঃশাসনের স্মৃতি মানুষের মনে এখনো দগদগে ঘা হয়ে আছে। গত ৫ বছরের শাসনে আওয়ামী মহাজোট দেশবাসীকে কি উপহার দিয়েছে? জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণে কোনো নতুন পদক্ষেপ কি আওয়ামী লীগ নিয়েছে? শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার, কর্মসংস্থানের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম ও সার-বীজ-ডিজেলের সুলভ প্রাপ্তি, সিন্ডিকেট চক্র ভেঙে দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ Ñ কোনো ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগের সাফল্য নেই। বরং এ ৫ বছর ধরে বাজার ছিল লাগামহীন। সরকার জ্বালানি তেল ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে। বাসের ভাড়া বেড়েছে, বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। হলমার্ক-ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, রেলের নিয়োগ বাণিজ্য কেলেঙ্কারি, সরকারি ব্যাংকগুলোর নানা অনিময়-দুর্নীতি, পদ্মাসেতু দুর্নীতি Ñ আর্থিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির কোনো সীমা পরিসীমা নেই। সন্ত্রাস দিনে দিনে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যার মতো চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের পর্যন্ত বিচার হয়নি। বিরোধী দলের একজন এমপি নিখোঁজের কোনো সুরাহা হয়নি। পুরাতন ঢাকায় ঘটে যাওয়া বিশ্বজিৎ হত্যাকা-, নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যাকা- Ñ দুএকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যা সরকারী দলের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণে ঘটেছে। এমন ঘটনা সারাদেশে অগণিত। এমনকি জনগণের বহুদিনের কাক্সিক্ষত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েও আওয়ামী লীগ যেভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে, সেটাও দেশবাসী প্রবল ঘৃণার সাথে প্রত্যক্ষ করেছে। রামু-উখিয়া-টেকনাফে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার পর এবার পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। জনগণের সমস্ত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন শাসকদের সর্বশেষ গণবিরোধী শাসনের নজির।

বিপরীত দিকে প্রধান বিরোধী দল, যারা আজ ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইছে, তাদের দুঃশাসনের স্মৃতিও তো মানুষ ভুলে যায়নি। দুর্নীতিতে চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হওয়া, ফুলবাড়ী-কানসাটের গণবিদ্রোহ দমনে শাসকদের বর্বরতা, বিদ্যুৎ নিয়ে খাম্বা মামুন-গংদের লুটপাট, সিন্ডিকেট-চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান ও লাগামহীন মূল্য সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী গডফাদারদের লালন-পালন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, বাংলা ভাই-জেএমবি গোষ্ঠীর উত্থান, রমনা বটমূল-পল্টন-উদিচী বোমা হামলাসহ সারাদেশে একযোগে বোমা-গ্রেনেড হামলা – এ তালিকাও অনেক দীর্ঘ। অর্থাৎ জনবিরোধী শাসন পরিচালনায়, লুটপাট-দলীয়করণ, সন্ত্রাসীদের মদদদান, মৌলবাদী শক্তির প্রশ্রয়দানে দুই দলাই সমান পারদর্শী, সমান দক্ষ। দেশের সম্পদ তেল-গ্যাস-কয়লা লুটপাটেও এই দুই দল সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।

বুর্জোয়ারা তাদের ক্ষমতার বিরোধে জনগণকেও আটকে ফেলেছে। নির্বাচন কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, মানুষ শান্তিতে ও নিরাপদে ভোট দিতে পারবে কিনা, আজকের দিনে এটাই সবচেয়ে বড় ও জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু, এ পরিস্থিতিতেও আমরা বার বার যে কথাটি দেশবাসীকে মনে করিয়ে দিতে চাই তাহল, নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে হলেই কি অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়? নির্বাচনে রাষ্ট্র প্রশাসন, প্রচার মাধ্যমগুলোর ভূমিকা কি নিরপেক্ষ হয়? কালোটাকা, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার অবাধে চললে কি নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অবাধ হয়? এছাড়া নির্বাচনী বিভিন্ন আইন-কানুনের প্রতিবন্ধকতা তো আছেই। একজন সৎ মানুষের পক্ষে বর্তমান নির্বাচনী আইনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো পথ খোলা আছে কি? ভোট দেয়ার পর, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের আকাক্সক্ষার বিপরীতে দেশ পরিচালনা করলে তাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার কোনো বিধানও আমাদের দেশে নেই। বিচারবিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোও হয় শাসকদলের তল্পিবাহক, নয়তো মেরুদণ্ডহীন।

এ দুর্বিষহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাইছে সবাই। বড় দুই দলের মধ্যে আপস-সমঝোতা, তৃতীয় শক্তির আগমন, বিকল্প শক্তির উত্থান – এমনই নানা ধরনের সমাধানের পথ নিয়ে মানুষ ভাবছে। গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী, শিক্ষিত এবং রাজনীতি সচেতন মানুষও অবস্থার ভয়াবহতা দেখে যে-কোনো উপায়ে এর থেকে পরিত্রাণ চাইছে। বুর্জোয়াদের কোনো কোনো অংশও দুই দলের ফ্যাসিস্ট চেহারা দেখিয়ে জনগণের মধ্যে বিকল্পের আকাক্সক্ষা জাগিয়ে তুলছে। প্রায় একই সুরে নির্বাচনকে ঘিরে বিকল্প নির্মাণের কথা বলছেন অনেক বামপন্থী। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, বুর্জোয়া ব্যবস্থার গত ৪২ বছরের ইতিহাস কি আমাদের সামনে এ-সত্যটাই তুলে ধরে না যে এ শোষণমূলক নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখে তথাকথিত ‘বিকল্প’ জনগণকে পুনরায় অধিকারহীন অবস্থার দিকে ঠেলে দেবে। দেশের ইতিহাস শুধু নয়, খুব সম্প্রতি আরব দেশগুলোতে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনও কি সেই শিক্ষা রেখে যায়নি?

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শাসক বেছে নেয়া, শাসক পরিবর্তন করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোর একটি মাত্র, সবটা নয়। নিরাপদে নিজের পছন্দ মতো ভোট দিয়ে শাসক নির্বাচন করার যে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ দেশে এখনো আছে – তা কোনো ভাবেই আমরা খর্ব হতে দিতে পারি না। একতরফা কোনো নির্বাচন দেশের মানুষ, ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো মেনে নেবে না। এ মুহূর্তে ন্যূনতম অর্থে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ব্যবস্থার আয়োজন করা শাসকদল হিসাবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। নির্বাচন যেমনই হোক না কেন, তাতে কি মানুষের জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে? এমন বিশ্বাস দেশের কোনো মানুষ করে না।

আওয়ামী-বিএনপির দুঃশাসনে মানুষ বীতশ্রদ্ধ, একইসঙ্গে খানিকটা অসহায় ও হতাশ। উপায়হীন হয়ে, পথ না পেয়ে এদের কাছেই মানুষ বার বার ফিরে যায়। ঘুরে ফিরে বুর্জোয়া দ্বিদলীয় চক্রের ফাঁদে, নির্বাচনী সমাধানের ফাঁদে দেশের মানুষ গলা পেতে দেয়। মানুষ ঠেকে শেখে, ঠকে শেখে, মার খেয়েও শেখে। কিন্তু এত মার খেয়ে, এত ঠেকে-ঠকেও আমাদের চোখ ফোটেনি।

স্বাধীনতার আগে এবং পরে বামপন্থী দলগুলো জনগণের অধিকার নিয়ে ছোট-বড় অনেক লড়াই করেছে, অনেক আত্মত্যাগ করেছে। কিন্তু জনগণের অধিকার নিয়ে লাগাতার এবং ধারাবাহিক লড়াই করতে করতে শক্ত জনভিত্তি নিয়ে কোনো বাম দলই দাঁড়াতে পারেনি। গণআন্দোলন সম্পর্কেও বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি। কিন্তু, সব ব্যর্থতার এবং দুর্বলতার পরও, বামপন্থীরাই বাংলাদেশের ভরসা। আমরা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই, গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, দ্রব্যমূল্য, সন্ত্রাস, নারীনির্যাতন, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা, শ্রমিক-কৃষকের অধিকার, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন। বামপন্থী শক্তিগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, গণআন্দোলন গড়ে তোলার কাজে এগিয়ে আসুন। গণআন্দোলন, এবং একমাত্র গণআন্দোলনই পারে বুর্জোয়া দলগুলোর নিপীড়ন-লুটতরাজের বৃত্ত থেকে মানুষকে মুক্ত করতে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments