Thursday, April 18, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - এপ্রিল ২০১৮নির্বাচন জনগণকে মুক্তি দিতে পারে না

নির্বাচন জনগণকে মুক্তি দিতে পারে না

1457104416

কাছাকাছি চলে আসা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানারকম আলোচনা চলছে গোটা দেশ জুড়ে। আওয়ামী লীগের ভয়াবহ দুঃশাসনে মানুষের ক্ষুব্ধতা কোনো ফাঁক পেলেই ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনেও আমরা তার আভাস পেলাম। তাই নির্বাচনের আলোচনা এখন অন্যরকম মাত্রা পাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, না করবে না? আওয়ামী লীগ কি আপেক্ষিক অর্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যাবে, নাকি ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করবে? এইরকম কয়েকটি প্রশ্নের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে নির্বাচনের আলোচনা।

সুষ্ঠু নির্বাচন বলে বুর্জোয়া গণতন্ত্রে এখন কিছু নেই, ব্রিটেন-আমেরিকা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত কোথাও তার ছায়াটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে আশাও কেউ করে না। এখন যেটা হয় — সেটা হলো তুলনামূলকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন। এর মানের হলো, ভোটদাতাদের একটা বড় অংশ যাতে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটটা দিতে পারেন, রিগিং যাতে বল্গাহীন না হয়, অর্থাৎ যাতে মোটামুটি অর্থে বেশ কিছু লোক (তাদের উপর নির্বাচনের আগে ও পরে ভয়ভীতি প্রদর্শন কিংবা অর্থের যত প্রভাবই থাকুক না কেন) ভোটবাক্সে নিজে যেন সিল দিয়ে ব্যালটটি ফেলতে পারেন। এটাকেই আমাদের দেশে আজ তুলনামূলকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন বলা হয়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ প্রবর্তিত ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’ এমন একটি চমৎকার মডেল তৈরি করেছে যে, এই তুলনামূলক সুষ্ঠু নির্বাচনও আদৌ হবে কিনা সেটাই এখন একটা আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগ কীভাবে এই নির্বাচনটি সম্পন্ন করতে চায়?
এই প্রশ্নটা আজ আলোচনা করতে হচ্ছে। অথচ বুর্জোয়া গণতন্ত্র যে নির্বাচনের ধারণা এনেছে তাতে এই প্রশ্ন ওঠারই কোনো কথা ছিল না। বুর্জোয়া গণতন্ত্র তার শুরুর সময়ে of the people, by the people, for the people বলে গণতন্ত্রের যে স্লোগান নিয়ে এসেছিল তা এখন দুনিয়াতে আর কোথাও কাজ করে না। নির্বাচনে টাকা, পেশিশক্তি ও মিডিয়ার প্রভাব সকল দেশেই থাকে, কোথাও কোনোটা কম, কোনোটা বেশি। বাংলাদেশের নির্বাচনে এই তিনের প্রভাব রেখেই শুধু ভোট দেয়ার ভিত্তিতে যে তুলনামূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা এসেছে— তাও এখন আর কাজ করছে না। ভোটের আগে ভোট কেনা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মিডিয়া ম্যানিপুলেশন বজায় রেখে কেবলমাত্র ব্যালট পেপার বাক্সে ঢোকানোর যে ক্ষমতাটা মানুষের হাতে ছিল, যাকে মোটা দাগে তার ভোটাধিকার বলা হয় — সেটাও আজ কেড়ে নেয়া হয়েছে। এর জন্য এখন মানুষকে লড়াই করতে হচ্ছে।

আগামী নির্বাচন আমাদের উপরের সংজ্ঞানুসারে যদি তুলনামূলকভাবে সুষ্ঠু হয় তাহলে জনরায় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যেতে পারে। আওয়ামী লীগ এ ঝুঁকি নিতে চাইবেনা— এটাও প্রায় সবাই মনে করেন। কিন্তু ২০১৪ সালের মতো আরেকটা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাবে এবং প্রতিবাদহীনভাবে সেটা সম্পন্ন হবে— অনেকেই সেরকম মনে করছেন না, বিশেষত: মানুষের এই ভীষণ ক্ষুব্ধতা দেখে। আবার দেশের মানুষ নেতৃত্বহীন অবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কিছু একটা ঘটিয়ে দেবে তা-ও হতে পারে না। বিএনপি ও তার জোট দেশের সমস্যা-সংকট নিয়ে কোনোদিন কোনো লড়াই করেনি। তারা ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগ যা করছে তাই করতো। এদের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতিগত কোনো পার্থক্য নেই।

বামপন্থী দলগুলোর দু’একটি বাদে বাকিরা সবাই নির্বাচনমুখী। তাহলে জনগণের এই বিক্ষোভকে সংগঠিত আন্দোলনে রূপান্তর করবে ও তাকে নেতৃত্ব দেবে কে? এই অবস্থায় বিতর্ক এখন আর আন্দোলন কীভাবে হবে এই জায়গায় নেই, বরং নির্বাচন কীভাবে হবে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে। আরও স্পষ্ট করে বললে বিতর্ক এখন এটাই যে, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ কীভাবে পরিচালনা করবে এবং সেটাকে বিএনপি ও তার জোট কীভাবে মোকাবেলা করবে। বামপন্থী দলগুলোর বেশিরভাগটাই এখন এটাই আলোচনা করছেন এবং এই দুইয়ের লড়ালড়ির মধ্য থেকে কিছু পাওয়া যায় কিনা তার হিসাব করায় ব্যস্ত আছেন। এটা সুখকর কোনো বিতর্ক নয়। এই বিতর্কে জনগণের কোনো ভূমিকা নেই। এতবার নির্বাচন করে, নির্বাচনের জন্য লড়াই করে, প্রাণ দিয়েও আমরা দেখেছি যে, তুলনামূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আসে সে আমাদের কী দেয়, কী দিতে পারে। দেশে যদি পাঁচ বছর পরপর তথাকথিত তুলনামূলকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বিঘ্নে সংগঠিত হয়, কোন সমস্যা না হয়— তাহলেও কি আমাদের ভাগ্য ফিরবে?

ব্যবস্থা বজায় রেখে নির্বাচন কোনদিনই
মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারে না
বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ কী অবস্থানে আছে তা এ সময়ে পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের পরিবেশ, নিম্নতম মজুরি, যৌন সহিংসতা, বিদেশে অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ, বাল্য বিবাহ, দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি এরকম বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয়। অপরদিকে পয়ঃনিষ্কাশন, পরিবেশ সুরক্ষা, আইনের শাসন এসব দিকে এর অবস্থান সবচেয়ে নিচে। অর্থাৎ বুর্জোয়া ব্যবস্থায় পরিচালিত দেশগুলোর মধ্যেও সবেচেয়ে নিম্নস্থানে তার অবস্থান। গণতন্ত্রের কী দেয়া উচিত একটা রাষ্ট্রকে, তার রূপ কী — সেটা বোঝার মতো প্রয়োজনীয় শিক্ষা, চেতনা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান কোনোটাই এদেশের বেশিরভাগ নাগরিকের নেই। কোনোরকমে ক্ষুধানিবৃত্তির জন্য ছুটছে দেশের বেশিরভাগ মানুষ, সেটাও জুটছে না তার।

তীব্র শোষণে নিষ্পেষিত মানুষকে ভাষা যোগান দেশের শিক্ষিত মানুষেরা, লেখক-বুদ্ধিজীবীরা। সংবাদপত্র অন্যায় ও শোষণের কথা তুলে নিয়ে আসে। গণতন্ত্রে এই মাধ্যমগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশে প্রতিদিনই মত প্রকাশের সমস্ত স্বাধীনতা একে একে ছেঁটে ফেলা ও মত প্রকাশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে সংকুচিত করার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে কেটেছেঁটে যতটুকু মত প্রকাশের স্বাধীনতা, যতটুকু সভাসমিতি করার অধিকার, বক্তব্য দেয়া ও প্রকাশ করার অধিকার ছিল তা আরও সংকুচিত করা হয়েছে এবং ক্রমাগত করা হচ্ছে। ‘তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০১৬’ এর ৫৭ ধারার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনানুষ্ঠানিক, নিতান্ত ব্যক্তিগত মন্তব্যকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো শুরু হলো। এ নিয়ে হইচই পড়ে গেলে একে সংশোধন করে যে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৭’ করা হলো, তাতে বাস্তবে ৫৭ ধারাকে প্রতিস্থাপিতই করা হলো! আওয়ামী লীগ বর্ণিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিপরীতে যাতে কিছু লেখা না হয় সেজন্য ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন, ২০১৬’ এর খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মতো এ জাতির জীবনের এতবড় একটা ঘটনা নিয়ে কেউ কিছু লিখতে পারবে না, গবেষণা করেতে পারবে না, পুরানো তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না, শুধু আওয়ামী লীগের দেয়া বই পড়বে— একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তির কবর খননের জন্য এর চেয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় না।

এখন ঢাকা শহরে ঘরোয়া সভা করতে গেলেও পুলিশের সম্মতির প্রয়োজন হয়। পুলিশ সরাসরি কোনো ঘোষণা দেয়নি, কিন্তু পুলিশকে ‘অবগতকরণ পত্র’ দেয়া হয়েছে তা নিশ্চিত না হয়ে কেউ হল ভাড়া দেন না। অর্থাৎ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়াম বরাদ্দের ক্ষেত্রে অঘোষিত নিয়ম জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন পাবলিক প্রতিষ্ঠানের তদারকিতে থাকা হলগুলোর ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে চার-পাঁচগুণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসকল স্থাপনা আবেদন করে বরাদ্দ নেয়া যেত সেগুলো এখন ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিবাদ সমাবেশকে নিরুৎসাহিত করা হয়, উৎসাহিত করা হয় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ভোগ্যপণ্যের প্রচারমূলক অনুষ্ঠানকে।

অডিটোরিয়াম, হল ও স্থাপনা বরাদ্দের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, দীর্ঘদিন ধরে যেসব অনুষ্ঠান দেশের সাধারণ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় — সবকিছুর উপরই নিষেধাজ্ঞার খড়্গ তুলে দেয়া হয়েছে। পয়লা বৈশাখের আগে একগাদা নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে একটা কথাই বলা হচ্ছে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’। পয়লা বৈশাখে বিকেল ৫টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে দিতে হবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার খাতিরে, বইমেলা, ঈদ, পূজাসহ সকল অনুষ্ঠান সীমাহীন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, কারণ জাতীয় নিরাপত্তা। অথচ এ জাতি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছেই সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ, দেশে প্রতিমাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রাণ হারায় গড়ে ৭ জন করে লোক।

সভা-সমিতি ও রাজনৈতিক দল করার অধিকারও এখন ভীষণ মাত্রায় সংকুচিত। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ স্বাধীনভাবে সভা, সমিতি ও রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। নির্বাচনে বাধাহীনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। এটাই গণতান্ত্রিক দেশের রীতি। কিন্তু আমাদের দেশে এখন আর সে পরিবেশ নেই। নিবন্ধনের বিধান করে নির্বাচনে অংশগ্রহণকে সীমিত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের উৎপত্তি হয়েছিল প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে। আজ সেই অর্থনীতি একচেটিয়া হয়ে গিয়ে প্রতিযোগিতাকেই সংকুচিত করে কখনও দুই দলের, কখনও একদলের শাসনব্যবস্থায় পরিণত করেছে। নির্বাচন কমিশন থেকে দেয়া শর্তগুলো পূরণ করে নতুন কোনো দলের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা খুব কঠিন। তাকে হয় ভুল তথ্য দিতে হবে, নতুবা সরকারের অনুগত হয়ে নিবন্ধিত হতে হবে। এ ভিন্ন তার নিবন্ধনের তথা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো উপায় নেই। গণতন্ত্রের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের সীমাকে ক্রমাগত ছোট করে ফেলা হচ্ছে। সীমাবদ্ধ অংশগ্রহণ, সীমাবদ্ধ আলোচনা, সীমাবদ্ধ মত— এখন এ নিয়েই বুর্জোয়া রাষ্ট্র। অথচ মতামতের বৈচিত্র্য ও তর্ক-বিতর্ক Ñ এটা বুর্জোয়া গণতন্ত্রই পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিল।

ফলে গণতন্ত্রের শর্তগুলোর কোনোটিই আজ দেশে বিরাজ করে না। এ অবস্থা বজায় রেখে নির্বাচন কোনো নতুন খবর নিয়ে আসতে পারে না। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে যেখানে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছি আমরা, সেখানে শুধুমাত্র নির্বাচন আমাদের মুক্তি এনে দেবে— এই চিন্তা সঠিক নয়। আবার, গণতন্ত্র আর নির্বাচন এক ব্যাপার নয়। নির্বাচন ঠিকমতো হলেই এটা বোঝায় না যে সেদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত আছে। কিন্তু এটা ঠিক, নির্বাচনটাও যদি ঠিকভাবে না হয়, তাহলে এটা বোঝা যায় যে, সেদেশে গণতন্ত্রের বিশেষ কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। অর্থাৎ রক্তমাংস নিঃশেষিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে এ যুগে একমাত্র চেনা যায় তার শরীরের নির্বাচনের পোশাক দেখে, সেটাকেও সে আজ খুলে ফেলেছে। বুর্জোয়া গণতন্ত্র আবির্ভূত হয়েছে আজ নগ্ন ও ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদের রূপে।

বামগণতান্ত্রিক শক্তিকে গণআন্দোলন
গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে
দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের শাসনে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ থাকলেও, মাঝে মাঝে ফেটে পড়লেও — নেতৃত্বহীন অবস্থায় তা একসময় স্থিমিত হবে। কিংবা একটা সরকার পরিবর্তনের দিকে নিয়ে গেলেও সেই একইরকম আরেকটি সরকার ক্ষমতায় আসবে। মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। এই অন্যায় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারেলেই একমাত্র জনগণের মুক্তির রাস্তা বের হতে পারে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি বুর্জোয়াশ্রেণীর দলগুলো গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করবে না। গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারে একমাত্র বামপন্থী শক্তি। বামপন্থীদের দুটি বড় জোট গণতান্ত্রিক বামমোর্চা ও সিপিবি-বাসদ মিলে বৃহত্তর বামঐক্য গড়ে তুলেছেন। ঐক্যের ঘোষণায় আশু ও দীর্ঘমেয়াদী বেশকিছু কর্মসূচী ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনমুখী না হয়ে ঐক্যকে নির্বাচনমুখী করার ব্যাপারে সিপিবি-বাসদ ও বামমোর্চার কয়েকটি দল তৎপর। এই দুই জোটে অবস্থানকারী বামপন্থীরা বিগত সময়ে যতগুলো জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন — সেখানে তাদের প্রাপ্ত ভোটকে যোগ করলেই বোঝা যায় নির্বাচনে বামপন্থীদের অবস্থা কী রকম। তারপরও বড় বুর্জোয়া দলগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বিভিন্ন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা নির্বাচনে একটা অবস্থান তৈরি করতে পারবেন — একথা এখনও ভাবেন। এই কথাগুলো মিডিয়ায়ও এমনভাবে প্রচার করেন যেন মনে হবে বামপন্থীদের ঐক্যই হয়েছে নির্বাচন করার জন্য। তারা যেন নির্বাচনে জিতলে কিছু একটা করতে পারবেন। এটি একেবারেই একটি ভুল চিন্তা। তাদের উচিত ছিল সংসদীয় রাজনীতির মুখোশ উন্মোচন করা। কেবল এই উদ্দেশ্যেই বামপন্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।

এই পরিস্থিতিতে আমরা যত ক্ষুদ্র শক্তিই হই, সত্যিকারের মুক্তির পথ কোনদিকে — সেই সত্যটা আমরা বারবার মানুষের সামনে তুলে ধরব। নিজেরাও চেষ্টা করবে সেই পথে লোক জড়ো করার। আমাদের বক্তব্য ও আবেদন সকল পরিবর্তনকামী মানুষকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করব।

সাম্যবাদ এপ্রিল ২০১৮

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments