Thursday, April 18, 2024
Homeফিচারমানুষের মত বাঁচার অধিকার চাই

মানুষের মত বাঁচার অধিকার চাই

অবিলম্বে চালের দাম কমাতে হবে
rice_price_edited-1

এক বিপন্ন সময়ে আমরা বাস করছি, যেখানে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার কোন সুযোগ নেই। নারী-শিশুসহ কারোরই জীবনের নিরাপত্তা নেই। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে বেশীরভাগ মানুষের পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার জোটে না। চিকিৎসার খরচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শিক্ষাও তাই। গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের দাম কিছুদিন পরপরই বাড়ানো হচ্ছে। সামনে বাজেট আসছে, নতুন করে আবার কর চাপানো হবে। এককথায়, জনগণের ওপর চলছে চতুর্মুখী আক্রমণ। সাধারণ মানুষ ভালো নেই। ভালো আছে তারাই, যারা চুরি-দুর্নীতি-লুটপাটে দেশকে সর্বস্বান্ত করছে। আইন-বিচার-প্রশাসন সবই তাদের হাতের মুঠোয়। সরকার এদেরই প্রতিনিধি।

কারসাজি করেই বাড়ানো হচ্ছে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম
কিছুদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সব পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে এবং তা অন্য বছরের চেয়ে বেশী। সুতরাং সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে দাম বাড়ানোর কোন যুক্তি নেই (যুগান্তর, ১০মে)। বাস্তব চিত্র হল মোটা-সরু সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ১০-১২ টাকা। অর্থাৎ শুধুমাত্র চাল কেনা বাবদ একটি পরিবারকে মাসে অন্ততঃ ৫০০-৬০০ টাকা (মাসে ৫০ কেজি চাল কিনলে) বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন প্রায় ২০ লাখ টন বেশি। এমনকি বিদেশ থেকে আমদানি করলেও প্রতি কেজি খরচ গড়ে ৩৩ টাকার বেশি হবে না। অথচ এখন মোটা চালই বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। সরকারে হাতে যথেষ্ট মজুদ থাকলে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারতো না। পাশাপাশি সরকার বাজেরে হস্তক্ষেপ করতে পারতো, দোষীদের শাস্তি দিতে পারতো। কিন্তু এর কোনটিই করা হয়নি। জনগণকে ভোগান্তি থেকে বাঁচাতে চাল আমদানিরও উদ্যোগ নেয়নি। এর ফল কী? যদি ৪ কোটি পরিবার ধরি; প্রত্যেকের দিনে অন্তত ২ কেজি চাল লাগলে ১০ টাকা বাড়তি হিসেবে প্রতিদিনই ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এভাবে সরকারের দায়িত্বহীনতায় প্রতি মাসেই অসাধু ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট আত্মসাৎ করছে অন্তত ২৪০০ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতও ধোপে টেকে না। আন্তর্জাতিক বাজারে গত ১ বছরে চাল, গম, চিনি, তেল, ডাল, ছোলা, পেয়াজ, রসুনসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। গত ১ মাসে কিছু পণ্যে সামান্য দাম বাড়লেও এর প্রভাব পড়ার কথা নয়। কারণ যথেষ্ট মজুদ আগে থেকেই আছে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, সরকারই ব্যবসায়ীদের অবাধ মুনাফার সুয়োগ করে দিয়েছে।

অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর এবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তার
গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর এখন তাকে অজুহাত করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কয়েকগুণ কমার পরও সরকার যেটুকু দাম কমিয়েছে তাতে তেলে উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ৩৪ পয়সা কমেছে। আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে ইউনিট প্রতি ৩৪ পয়সা। সার্বিকভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনে পড়ার কথা নয়। আর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যে পরিমাণ কমেছে, তাতে বিদ্যুতের দাম আরো কমানোই যৌক্তিক। প্রকৃতপক্ষে বেসরকারী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বেশী দামে বিদ্যুৎ কেনার কারণে পিডিবির লোকসান বাড়ছে। এর দায় চাপানো হচ্ছে জনগণের কাঁধে। সরকারের লুটপাট এবং বেসরকারী মালিকদের স্বার্থরক্ষার নীতির মাশুল কেন জনগণ দেবে?

ধনীরা পাচার করবে আর সাধারণ মানুষ বাড়তি ট্যাক্স দেবে – এ নীতির অবসান চাই
কয়েকদিন পরেই নতুন বছরের বাজেট প্রণীত হবে। সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানেই জিনিসের দাম বৃদ্ধি ও কর বৃদ্ধির আতংক! শোনা যাচ্ছে ১৫% ভ্যাট আরোপ করা হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে হারেই ভ্যাট বাড়ানো হোক না কেন, ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়, কমবে ক্রয়ক্ষমতা। সরকারের রাজস্ব আহরণের এই নীতি চরম বৈষম্যমূলক। কারণ এই দেশে প্রতি বছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করা হয়। গত ১০ বছরে ৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। রাজস্ব বোর্ড-এর চেয়ারম্যান বলেছেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে ৫৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। আর হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক, শেয়ারবাজারের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের কথা কে না জানে। কিন্তু সে সব টাকা উদ্ধারের খবর নেই।

জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে কে?
চারদিকে উন্নয়নের শোরগোল – বক্তৃতায়, কাগজে, বিলবোর্ডে। বহু লেনের হাইওয়ে, ব্রিজ, ফ্লাইওভার, শপিং মল কতো কি! কিন্তু আপনি যদি খেয়ে-পরে বাঁচতে না পারেন, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরেন, ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে না পারেন, বেঁচে থাকার মতো মজুরী না পান, ফসল ফলিয়েও বঞ্চিত হন, আপনার মেয়ের নিরাপত্তা যদি না থাকে, অত্যাচারিত হয়েও যদি বিচার না পান, প্রকৃতি-পরিবেশ বিনষ্ট করে ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার আয়োজন চলে, তবে জেনে রাখুন এ উন্নয়ন আপনার উন্নয়ন নয়। আপনার সত্যিকারের উন্নয়ন মন ভোলানো কথায়, ভোটের বাক্স ভরে দিলে আসবে না। অভিজ্ঞতা বলে এজন্য লড়াই চাই। লড়াইয়ের জন্য দরকার আদর্শ, নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক শক্তি। আমরা সংখ্যার অর্থে ছোট দল, কিন্তু জনস্বার্থ নিয়ে আদর্শের ভিত্তিতে আমরা লড়ছি। আপনার সমর্থন-সহযোগিতা পেলে এ লড়াইয়ের শক্তি আরো জোরদার হবে।

১. চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমাও। মুনাফালোভী মজুতদার-ব্যবসায়ীদের শাস্তি দাও।
২. সরকারী উদ্যোগে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় কর এবং রেশনব্যবস্থার মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি কর।
৩. বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা বন্ধ কর। গ্যাস-পানির দাম কমাও।
৪. ভ্যাট বৃদ্ধিসহ জনগণের ওপর নতুন কর চাপানো যাবে না। লুটপাটকারী-অর্থপাচারকারী-দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শাস্তি দাও, লুটের টাকা উদ্ধার কর।
৫. চিকিৎসা ও শিক্ষায় বাণিজ্য বন্ধ কর।
৬. শ্রমিকদের বাঁচার মত মজুরী দাও। কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত কর। হাওর অঞ্চলের মানুষকে রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ নাও।
৭. সুন্দরবনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল কর।
৮. নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা দাও। ধর্ষক, লাঞ্ছনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও।

চালের দাম কমানোসহ উপরোক্ত দাবিতে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি

২রা জুন, বিকাল ৪টা, জাতীয় প্রেসক্লাব চত্তর

৩-১৬ জুন, এলাকায় এলাকায় এলাকায় গণসংযোগ

১৭ জুন সমাবেশ, বিকেল ৪টা, জাতীয় প্রেসক্লাব চত্তর


বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)

ঢাকা মহানগর শাখা

 

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments