Thursday, April 18, 2024
Homeফিচারমেগা লুটপাটের মেগা বাজেট — ভ্যাট ও করের বোঝায় বাড়বে জীবনযাত্রার খরচ

মেগা লুটপাটের মেগা বাজেট — ভ্যাট ও করের বোঝায় বাড়বে জীবনযাত্রার খরচ

18881968_1512773692121768_1705719909459613216_n

অর্থমন্ত্রী যখন তার জীবনের ‘শ্রেষ্ঠতম’ বাজেট পেশ করার কৃতিত্ব ঘোষণায় সোচ্চার তখন মানুষের মুখে মুখে পুরো বাজেট ছাপিয়ে দুটি কথা বেশ আলোচিত হচ্ছে। একটি চালের দাম বৃদ্ধি আর দ্বিতীয়টি হল ব্যাংকে ১ লক্ষ টাকা থাকলেই কেউ বড়লোক বলে গণ্য হবে কিনা!

সাধারণ মানুষের আলাপচারিতায় ক্ষোভ, কৌতুক ও ব্যঙ্গ মেশানো নানা প্রশ্ন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে : যার কাছে চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয় তিনিই আবার বলছেন ব্যাংকে ১ লক্ষ টাকা থাকলেই তিনি বড়লোক!

অনেকের নিশ্চয়ই মনে আছে, সরকারি সোনালি ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপ দুর্নীতির মাধ্যমে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট করার ঘটনায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, “চার হাজার কোটি টাকা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়।” (প্রথম আলো, ০৫.০৯.১২) সেই অর্থমন্ত্রীই যখন বলেন, ব্যাংকে ১ লক্ষ টাকা আমানত থাকলে তিনি বড়লোক এবং তাকে আগের চেয়ে বেশি আবগারী শুল্ক দিতে হবে তখন মানুষ বুঝতে চাইছে — এ কি কৌতুক নাকি উপহাস!

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য কৌতুক নয় বরং উপহাস হিসাবেই দেখছে মানুষ। আর সেই উপহাসের জবাবে কেউ কেউ কৌতুক করেই বলছে, যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ছে, বাড়ি ভাড়া বাড়ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, সেই খরচ সামাল দিয়ে কোনো সৎ মানুষ ব্যাংকে ১ লক্ষ টাকা রাখতে পারলে বাস্তবিকই তিনি বড়লোক!

এই কৌতুকের মধ্যেই বর্তমান বাজেটের একটি মূল্যায়নও পাওয়া যাচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী ৪ লাখ কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করেছেন তা অতীতের যে-কোনো বাজেটের তুলনায় আকারে বিশাল। কিন্তু এই বিশাল বাজেট যখন ঘোষিত হচ্ছে তখন দেশের আর্থিক খাতের সার্বিক চিত্রটি কেমন? ওয়াকেবহাল মানুষ মাত্রেই জানেন, অতীতের যে-কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের আর্থিক খাতে এখন বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে, ব্যাংক তহবিল লোপাটের মহামারি চলছে। বিদেশে টাকা পাচারও অতীতের যে-কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এ সময় দেশের কর্মসংস্থান, রপ্তানি, প্রবাসী আয়, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ — সব কটির প্রবৃদ্ধির ধারা স্থবির অথবা নেতিবাচক। এর মধ্যেই মেগা মেগা (অর্থাৎ বিশাল বিশাল) প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে ঘোষিত হলো আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট।

টাকা দেয় কে, টাকা খরচ হয় কোথায়?
সরকার এক বছরে কোন খাত থেকে কত টাকা সংগ্রহ করবে আর কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করবে সেই হিসাবটাই হল বাজেট। প্রশ্ন হল, সরকার টাকা পায় কোথায়? এই টাকা যোগান দেয় জনগণ। বিভিন্ন কর ও শুল্ক বা ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে সরকার জনগণের কাছ থেকেই এ টাকা সংগ্রহ করে, যা রাজস্ব আয় হিসেবে দেখানো হয়। আর সেই রাজস্ব আয়ের বড় অংশ খরচ হয় সরকারের প্রশাসনিক কাজে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত প্রতিটি ব্যক্তির বেতন-ভাতায়, সেনাবাহিনী-পুলিশ-র‍্যাবসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের খরচ চালানোতে। এর নামই রাজস্ব ব্যয়। এর বাইরে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয় হয়, যাতে বড় খরচ হয়। এটাকেই বলে উন্নয়ন ব্যয়। ব্যয়ের জন্য যে অর্থ দরকার, তা যদি এই রাজস্ব থেকে না আসে তাহলে সরকার ঋণ করে। দেশের ভেতরে কিংবা দেশের বাইরে থেকে সরকার ঋণ নেয়। এ ঋণের আসল ও সুদ দুটোই পরিশোধ হয় আবার জনগণের কাছ থেকে নেয়া কর বা শুল্কের টাকা থেকেই। এর বাইরে কিছু অনুদান আসে বিভিন্ন দেশ বা সংস্থা থেকে যা প্রধানত প্রকল্প-ভিত্তিক।

তাহলে যে সাধারণ মানুষ কর, ভ্যাট দিয়ে সরকারের তহবিল গঠন করে, বাজেটে তার জন্য কত বরাদ্দ থাকে? যে কেউ খোলা চোখে তাকালেই দেখতে পাবেন, রাজস্ব ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশ চলে যায় প্রশাসনিক ব্যয়ে। অর্থাৎ যারা জনগণের সেবা করার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের পেছনে! বাড়ির মালিকের চেয়ে বাড়ির কেয়ারটেকার ও পাহারাদারের জন্য খরচ বেশি হলে সেটাকে কি বলা যায়?

দ্রব্যমূল্য ও বাজেট
রোজার সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, এর কোনো প্রতিকার সাধারণ মানুষ দেখে না। বাজারে মোটা-চিকন সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে গড়ে ৮ থেকে ১২ টাকা। গত প্রায় দেড় মাস ধরে এই বাড়তি দামে মানুষ চাল কিনছে। এর ফলে প্রতিটি পরিবারকে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। সেই বাড়তি খরচও যুক্ত হয়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়ে। বর্তমান বাজেট কি এই দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি রোধ করবে নাকি দ্রব্যমূল্যের আগুনে নতুন করে ঘি ঢালবে?

বাজেট ঘোষণার পর এফবিসিসিআই, ঢাকা চেম্বার, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, চট্টগ্রাম চেম্বার এবং বিসিআইয় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়িত হলে তা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। (প্রথম আলো, ০৪ জুন ২০১৭) খেয়াল করুন, সাধারণ মানুষ নয়, শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরাই বলছে যে এ বাজেটের ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।

প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে ভ্যাটের আওতা সম্প্রসারিত করা হয়েছে অর্থাৎ নতুন নতুন পণ্যকে ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে। এই নতুন তালিকায় আছে কাপড়চোপড়, চা, বোতলজাত পানি, টুথপেস্ট, ব্রাশ, আসবাবপত্র ইত্যাদি। এগুলোতে দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট। বিদ্যুৎ বিলেও আগের চেয়ে বেশি ভ্যাট দিতে হবে। খরচ বাড়বে রেস্তোরার খাবারে এবং বিমান ও এসি রেল-বাস-লঞ্চের ভাড়ায়।

‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ ২০১২ সালে করা হলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা বাস্তবায়ন স্থগিত রাখা হয়েছিল। সেই আইনে কিছু সংশোধনী এনে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে রক্ষা করে এবং ক্রেতা-ভোক্তা স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে চলতি অর্থবছর থেকে বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গত ৬ এপ্রিল ’১৭ দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ শতাংশ মূসক অনকে দেশের তুলনায় বেশি। আমাদের সার্বিক মাথাপিছু আয়ও কম। আর মূসক শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপরই পড়ে।”

আরো কিছু অসঙ্গতি
(ক) ঘাটতির বোঝা জনগণের ঘাড়ে : অর্থমন্ত্রী যে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন, তার এক-চতুর্থাংশের বেশি টাকা তাকে জোগাড় করতে হবে ধারকর্জ করে। বর্তমান বাজেটে ঘাটতি দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। ঘাটতি মানে হল, এ টাকা কোথা থেকে আসবে সেটা জানা নেই। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি দেখানো হয়েছে, যা প্রায় অসম্ভব। এই যে ঘাটতি এবং বিদেশি সহায়তা, যা অনিশ্চিত, সেটা কীভাবে পূরণ করা হবে? অতীতের নজিরগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ঘাটতি পূরণ করা হয় জনগণের জন্য বরাদ্দ থেকে ব্যয় কমিয়ে। অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণপরিবহন ইত্যাদি খাত থেকে খচর কমিয়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

(খ) খেলাপি ঋণ : বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকির জায়গা। বিশেষ করে, সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। ঘাটতি পূরণের জন্য জনগণের করের টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ খেলাপি ঋণ নামের কোনো শব্দই বাজেটে নেই।

(গ) জ্বালানি খাতে দ্বিমুখী নীতি : জ্বালানি খাত একটি সমস্যা কবলিত খাত। আমরা যেসব তেল-গ্যাস-কয়লা ব্যবহার করি, যেগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হয়, সেগুলোর পরিমাণ কমছে। একই সাথে কয়লা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই সারা পৃথিবী জুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষত সৌরশক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব বেড়েছে। জ্বালানি সংকটের কথা আমাদের সরকারও বলছে। কিন্তু বাজেটে দেখা গেল উল্টো নীতি নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট সৌরবিদ্যুতের প্যানেলের ওপর প্রায় ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ও কর আরোপ করা হয়েছে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, যার ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার মেগাওয়াট হবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। কিন্তু বাজেটের এই কর প্রস্তাব কার্যকর হলে সরকারের ওই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অসম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎসচিব প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বাজেটে এই কর আরোপের বিষয়টি তার জানা নেই। কারণ বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় তাকে এ-সংক্রান্ত কোনো আলোচনায় ডাকা হয়নি। (৬ জুন ১৭)

তেলা মাথায় তেল
বাংলা একটি প্রবচনে বলে, তেলা মাথায় ঢালো তেল, শুকনা মাথায় ভাঙো বেল। বর্তমান বাজেটে তেমন নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছে। যার একটি উদাহরণ হল পোশাক শিল্পে বা গার্মেন্ট খাতে কর কমানো আর ব্যাংকের গচ্ছিত টাকার ওপরে আবগারি শুল্ক বাড়ানো এবং করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা।

ব্যাংকের গচ্ছিত টাকার ওপরে এমনিতেই সুদের হার কম। চলতি হিসাবে সুদের হার ৩-৪ শতাংশের মতো, আর চলতি অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশের মতো। বাজেটের নতুন প্রস্তাবের ফলে ব্যাংকে ১ লাখ টাকার বেশি থাকলেই আগের চেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হবে। আগে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ টাকার ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা। এখন সেটা ৮০০ টাকা করা হয়েছে।

আবগারি শুল্ক হিসাব করা হয়, সারা বছরে কোনো গ্রাহকের হিসাবে কোনো এক দিন সর্বোচ্চ কত টাকা ছিল। এর মানে হলো, কারও হিসাবে টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে, আবার কমতেও পারে। কিন্তু সর্বোচ্চ বেড়েছিল যেদিন, সেদিনের পরিমাণটির ওপর আবগারি শুল্ক বসে। বছরে একবারই দিতে হবে হিসাব গ্রাহককে। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা জমা রাখা বা সঞ্চয় করতে মধ্যবিত্তদের আরো বেশি শুল্ক দিতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এতে সীমিত আয়ের মানুষ চাপে থাকবেন। কেননা, চলতি অর্থবছরে গড়ে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশের মতো ছিল। এর মানে, করমুক্ত আয়সীমার কিছু ওপরে যারা ছিলেন, তাদের জীবনযাত্রায় খরচ সাড়ে ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। একদিকে মূল্যস্ফীতির জন্য বাড়তি টাকা খরচ হয়ে গেছে, সামনে একই হারে করও দিতে হবে। এতে সামগ্রিকভাবে ছোট করদাতার খরচ বাড়বে, সঞ্চয় কমবে।

এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের করের আওতায় আনা হয়েছে এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়েছে। এ দুটি পদক্ষেপই মধ্যবিত্ত সীমিত আয়ের মানুষের জন্য চাপ হিসাবে আসবে।

মেগা লুটপাটের মেগা বাজেট!
অর্থমন্ত্রী একটি মেগা বাজেট দিয়েছেন। এই মেগা বাজেটে মেগা মেগা কিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আর আমাদের দেশে মেগা প্রকল্প মানেই মেগা লুটপাট — এটা সবাই নিঃসংশয়ে মেনে নিতে বাধ্য। আমাদের দেশ হচ্ছে সেই দেশ যেখানে রাস্তাঘাট নির্মাণ ব্যয় দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি।

এমনই একটি উদাহরণ হানিফ ফ্লাইওভার। বিপুল অর্থ খরচ করে একটা এত বড় অবকাঠামো তৈরি করা হলেও ফ্লাইওভারটির নিচের রাস্তাটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একই কথা প্রযোজ্য মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নিয়েও। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হয়নি। এর ব্যয়ও কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন সময় এসব ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে পত্রপত্রিকায় বহু প্রতিবেদন এসেছে। কিন্তু সেগুলোর কোনো সদুত্তর সরকারের তরফ থেকে দেয়া হয়নি।

সরকার যেসব মেগা প্রকল্পে মেগা পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে তারই কয়েকটি হল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এসব প্রকল্পের ব্যয় দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। তার সাথে এসব প্রকল্পের উপযোগিতা এবং ব্যয় নিয়ে কোনো জবাবদিহিও নেই। আর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উপযোগিতা নিয়ে মানুষের মনে গভীর সংশয় বিরাজ করছে। এই প্রকল্প বাংলাদেশের রক্ষাকবচ বলে পরিচিত সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে Ñ এমনটাই বিশেষজ্ঞদের আশংকা। সেসব আমলে না নিয়ে জনগণের লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের তোড়েজোড়ে চলছে। আর এর ফলে ধ্বংস হবে জনগণের সম্পদ সুন্দরবন।

অর্থমন্ত্রী তার জীবনের শেষ বাজেট এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট পেশের কৃতিত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কোনো সুখবর তিনি দিয়ে যেতে পারেন নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের অর্থনীতির জন্য এরই মধ্যে তিনটি বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেগুলো হলো বিনিয়োগ স্থবিরতা, বাস্তবায়ন অদক্ষতা ও কর্মসংস্থানের খরা। এগুলো সমাধানের কোনো রূপরেখা তিনি বাজেটে হাজির করেননি। আর তাই অর্থমন্ত্রীর মেগা বাজেট শেষ পর্যন্ত মেগা লুটপাটের বাজেট হিসাবেই দেখা দেবে।

সাম্যবাদ জুন ২০১৭

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments