Friday, April 19, 2024
Homeঅনুশীলনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে সাবেক ছাত্র নেতাদের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে সাবেক ছাত্র নেতাদের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে

Education not for saleরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা। এদের অনেকেই এখনও প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত এবং জাতীয়ভাবে পরিচিত বাম নেতা। এরা হলেন- রাগিব আহসান মুন্না, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, আব্রাহাম লিংকন, বৃত্ত রায়, সাদাকাত হোসেন খান ও কাফী রতন।
তারা ছাত্রদের উপর এহেন নগ্ন-আক্রমণের প্রতিবাদ করেছেন ও আন্দোলনকারী ছাত্রদের সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের লিখিত বক্তব্যের কিছু অংশ বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। যে উদ্দেশ্যে এই লেখাটি তারা লিখেছেন তা-ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তির বিপক্ষে তারা অবস্থান নিয়েছেন।
তারা লিখেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ যে কোন সংকট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন-এটাই যৌক্তিক, এটাই সবার কাম্য।” আলোচনা করে সবাই মিলে বাণিজ্যকীকরণের সিদ্ধান্ত নিলে সেটা যৌক্তিক হবে? অথবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগকে দিয়ে এরূপ কর্মকাণ্ড না করিয়ে যদি ছাত্রদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে বাণিজ্যিক কোর্সের সিদ্ধান্তে রাজি করাতেন তবে কি তা যৌক্তিক হত? কিংবা সেটাই কি কাম্য হত?
তারা আরও বলেছেন, “সান্ধ্যকোর্স বাণিজ্যিক হোক আর আর অবাণিজ্যিকই হোক, যৌক্তিক হোক বা অযৌক্তিক হোক-তা আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়।” আলোচনা করে অনৈতিক কাজ করলে তা নৈতিক হয়ে যায় না। আর সান্ধ্যকোর্স বাণিজ্যিক হলে আলোচনারই বা সুযোগ কোথায়?
বাস্তবে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে আজ দুনিয়াজোড়া বিক্ষোভ হচ্ছে। কিন্তু তা যদি নাও হতো তবুও নীতিগত দিক থেকে এটা মেনে নেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। সেটা যদি চার-পাঁচজন ছাত্রও বুঝে প্রতিবাদ করে-তাহলে তারাই সত্য ধারণ করে। তাই অল্প কয়েকজন মানুষ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোই এর বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। ফলশ্র“তিতে আজ গোটা ছাত্রসমাজই এর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। তাই এটি আজ কোন আলোচনার ব্যাপার নয়। প্রাইভেটাইজেশন বন্ধ করতে হবে-এটাই স্পষ্ট বক্তব্য হওয়া উচিত। কিন্তু সাবেক ছাত্র নেতারা ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অজান্তেই প্রাইভেটাইজেশনকে র্যাশনালাইজ করেছেন।
তারা আরোও লিখেছেন, “যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর প্রশ্ন সামাজিকভাবেই উত্থাপিত হয়ে থাকে, তবে তা সব পক্ষের মধ্যে আলোচনা করেই ঠিক করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ জ্ঞান পেটেন্ট হচ্ছে। বাণিজ্য অনুষদগুলো নতুন নতুন বাণিজ্য প্রকল্প হাজির করছে। এসব জ্ঞানের শুধু সামাজিক মূল্যই নয়, বর্তমান দুনিয়ায় আর্থিক মূল্যও আছে।” তারা কিভাবে কথাগুলো বলতে পারলেন? এভাবে বলার মধ্য দিয়ে কার্যত তারা সামাজিক জ্ঞান পেটেন্ট করার পক্ষে অবস্থান নিলেন।
শিক্ষা মানব জাতির সংগ্রামের ফল। শিক্ষার উপর কারও ব্যক্তিগত মালিকানা চলে না। সে কারণেই আমরা পেটেন্টের বিরোধিতা করি।
৯০ দশকের এই ছাত্রনেতারা স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঐতিহাসিক ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল,  ‘শিক্ষাকে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ব্যবহার করা চলবে না’। সুষ্পষ্টভাবে এ কথা বলতে আজ তাদের দুর্বলতা কোথায়? শিক্ষা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির অস্বচ্ছতা শেষ পর্যন্ত শাসকগোষ্ঠীর তথা শিক্ষা ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনার পক্ষেই যায়। আমরা এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ জানাব।

অনুশীলন : সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মুখপত্র

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments