Saturday, April 20, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - ডিসেম্বর ২০১৬রুটি-বিস্কুটে ট্যাক্স বসিয়ে তোলা টাকা ব্যয় হবে কার জন্য?

রুটি-বিস্কুটে ট্যাক্স বসিয়ে তোলা টাকা ব্যয় হবে কার জন্য?

december-2016-page-001নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। ২০১৬-১৭ সালের বাজেট যখন হয়, তখনও আর এক দফা দাম বাড়ানোর ঘটনা সাধারণ গরীব-মধ্যবিত্ত মানুষকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করেছিলো। কিন্তু উপায় যেহেতু নেই, তাই সেটা মেনে নিয়ে, সংসারের এদিক-ওদিক থেকে কেটে-ছেটে তারা কোনোরকমে সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছেন। এবারের বাজেটে কোনো জিনিসের দাম কি কমেনি? কমেছে। বাজেটে যেসব জিনিসের দাম কমানো হয়েছে সাধারণ মানুষ সেগুলোর নামও জানে না। মানুষ বুঝতেও পারেনি তরল প্রাকৃতিক রাবার, হুইট ক্রাশার, ফ্লাই অ্যাশ, প্যারাফিন ওয়াক্স ইত্যাদি পণ্যের দাম কমিয়ে কার লাভ হলো। কিন্তু সাধারণ ব্যবহার্য জিনিসের দাম বাড়ানোতে তাদের সংসারে যে তিক্ততা সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন, যে চাপ তৈরি হচ্ছে মাসের শেষে; তা-তো দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।

এবারের বাজেটে আরেকটি মূল্যবান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন জনদরদী অর্থমন্ত্রী মহোদয়। সেটার ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। আগে কেজি প্রতি ১০০ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত রুটি-বিস্কুটের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি সুবিধা ছিলো। এবারের বাজেটে এই অব্যাহতি সুুবিধা তুলে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রাস্তার পাশের ছোট টং দোকানগুলোতে যে কেক-বিস্কুট-রুটি পাওয়া যায়, যা তৈরি করে সারা দেশের প্রায় ৪ হাজার ছোট ছোট বেকারি, এই সকল হস্তচালিত বেকারির পণ্যের একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত মূসক অব্যাহতি সুবিধা তুলে নেয়ায় এই জিনিসগুলোর দাম বেড়ে গেছে। এসব পণ্যের ক্রেতা মূলত দেশের নি¤œ আয়ের মানুষ। শ্রমিক-দিনমজুর-হকার-রিকশাচালক-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-চাকুরিজীবীরা সারাদিনে কাজের ফাঁকে এইসকল হালকা খাবার খান। তারা দিনে কয়েক দফায় চায়ের সাথে এসকল খাবার খেয়ে কোনোরকমে ক্ষুধা মেটান।

এই রুটি-বিস্কুট-কেকের প্রত্যেকটি আইটেমের দাম বাড়ার ভোগান্তিটা আবারও সেই স্বল্প আয়ের মানুষদের ওপর দিয়েই যাবে। সাধারণ মানুষের রক্ত শোষণ করে আদায় করা এই ট্যাক্সের টাকা থেকে গার্মেন্টস মালিকদের কাঁচামাল আমদানিতে কর ছাড় দেয়া হবে, স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হবে, ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে মওকুফ করা হবে, কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হবে, তিন-চার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক কেলেঙ্কারিকে কিছুই না বলে উড়িয়ে দিয়ে হলমার্ক-বিসমিল্লাহ্ গ্রুপদের রক্ষা করা হবে, তাদের কেলেঙ্কারিতে হয়ে যাওয়া লোকসান পোষানোর জন্য রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকসমূহকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে- এই তালিকা যতো ইচ্ছা বাড়ানো যাবে এবং বাস্তবে এগুলোই হলো গরীবের রক্ত শোষণ করে তোলা রাজস্বের ব্যবহার। সাধারণ মানুষ জানেও না যে প্রতি বছর ট্যাক্স বাড়িয়ে, নতুন ট্যাক্স আরোপ করে, গরীব মধ্যবিত্তের একেবারে পাই পাই হিসেবের টাকায় ভাগ বসিয়ে জড়ো করা রাজস্ব দিয়ে সরকার কী কাজ করে? তাদের জীবনের কী উন্নয়ন হয়? কিংবা ভবিষ্যতের কোন্ বিরাট উন্নতির জন্য আজ তারা তাদের প্রাণ জেরবার করছে?

এর জবাব স্পষ্ট। সাধারণ মানুষের এই নিরন্তর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পথেই পুঁজিপতিদের সম্পদবৃদ্ধি হয়। সরকার একের পর এক নতুন নতুন ট্যাক্স বসিয়ে সাধারণ মানুষের দম আটকে দিচ্ছে, আর সেই টাকায় পুঁজিপতিদের ছাড়, ভর্তুকি, ঋণের টাকা মওকুফ করে দেয়া হচ্ছে। ক্রমাগত ট্যাক্স বসিয়েও আর যখন পোষাচ্ছে না, তখন একেবারে গরীব-নি¤œবিত্তের চা-বিস্কুটে পর্যন্ত ট্যাক্স বসছে। শত-হাজার কোটি টাকা রোজগার করা ব্যবসায়ীদের কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি, উপরন্তু ব্যবসায়ীদের সভায় ব্যবসায়ী নেতারা কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, সেটা ভেবে দেখা হবে।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, এই পণ্যগুলো তৈরি করে সারা দেশের ৪ হাজার ছোট ছোট বেকারি প্রতিষ্ঠান। প্রাণ গ্রুপসহ কয়েকটি বড় কোম্পানী বেশ কিছুৃদিন ধরে এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে। তাদের উদ্দেশ্য এই খুচরো বাজার দখলে নেয়া। এবারের করের চাপে সাধারণ বেকারিগুলো তাদের পণ্যের দাম বাড়ালেও বড় কোম্পানিগুলো তা করেনি। পুঁজিবাদী অর্থনীতির নিয়মে আমরা ধারণা করতে পারি, এই প্রক্রিয়ায় তারা বাজার থেকে ছোট বেকারিগুলোকে উৎখাত করে নিজেরা সে বাজার দখল করবে। তারপর একতরফাভাবে এগুলোর দাম বাড়াবে। সেটাও আরেকটা শঙ্কার দিক। তাতে এই ৪ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও তাদের পরিবার পথে বসবে। পুরো বেকারি মার্কেটটা একচেটিয়া পুঁজিপতিদের হাতে চলে যাওয়ার পর তারা এগুলোর দাম বাড়াবে। ফলে এই ট্যাক্স বসানোর প্রভাব সুদূরপ্রসারী, সাধারণ মানুষকে সবদিক থেকেই আক্রান্ত করবে। জনগণ যদি এখনই প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে না তোলে তাহলে আমরা বারবারই এরকম মার খেতে থাকবো। প্রতিরোধই হলো পুঁজিবাদী সমাজে বাঁচার একমাত্র উপায়।

সাম্যবাদ ডিসেম্বর ২০১৬

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments