Thursday, April 25, 2024

সংগ্রাম ও সংগঠন সংবাদ

লুটেরাগোষ্ঠীর স্বার্থে দেশ পরিচালনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান

কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবহন, কর্মসংস্থানসহ জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন

08.07.15_SPBM
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র উদ্যোগে কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবহন, কর্মসংস্থানসহ জনগণের বেঁচে থাকার অধিকার বাস্তবায়নের দাবিতে গণ-সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ৮ জুলাই সকাল ১০.৩০টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে পদযাত্রা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। গণ-সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ (মার্কসবাদী) কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী। এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড মানস নন্দী, ওবায়দুল্লাহ মুসা, উজ্জ্বল রায়, ফখ্রুদ্দিন কবির আতিক এবং কৃষক ফ্রন্ট নেতা আহসানুল হাবিব সাঈদ, মনজুর আলম মিঠু।

সভাপতির বক্তব্যে কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, দেশের মানুষের দুর্দশার প্রধান কারণ এ রাষ্ট্র একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। এখানে ধনিকশ্রেণীর সরকার ক্ষমতাসীন। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে এদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক পুঁজিপতিদের জন্ম হয়েছে। এই মুষ্টিমেয় লুটেরা পুঁজিপতিশ্রেণীর স্বার্থেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। এই লুটেরাগোষ্ঠীর স্বার্থেই ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রহসন চালিয়ে আওয়ামী মহাজোট সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক কায়দায় শাসন ক্ষমতা দখল করেছে। দেশে প্রশাসনিক ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। আর এদের মদত দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ভারতের শাসকগোষ্ঠী।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় ‘কানেকটিভিটি’, ট্রান্সশিপমেন্টের নামে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ, সমুদ্র সীমায় অবাধে চলাচলের সুযোগ, ভারতীয় প্রয়োজনে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ করিডোর, দায়মুক্তি আইন করে বিদ্যুৎ খাতে ভারতীয় বৃহৎ পুঁজি আদানি-আম্বানীদের সাথে বিনিয়োগের চুক্তি — এ চুক্তিগুলির সবই হয়েছে ভারতের একচেটিয়া কর্পোরেট পুঁজির মালিকদের স্বার্থে। অথচ তিস্তার পানির ওপর বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি প্রত্যাহারের ভারতীয় অন্যায় পরিকল্পনা নিয়ে কোনো আলোচনা হল না। সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল বিদ্যুৎপ্রকল্প বন্ধের কোনো কথা শোনা গেল না। ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর যে সামরিক খবরদারি চালাচ্ছে তা বিবেচনায় নিলে ‘কানেকটিভিটি’ শেষপর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি বিরাট বিপদ হিসাবে দেখা দিতে পারে। কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী আওয়ামী মহাজোটের ফ্যাসিবাদী শাসন এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের সকল বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

কমরেড মানস নন্দী বলেন, রোজার মাসের শুরুতেই সমস্ত জিনিসের দাম বেড়েছে। সরকার কোনো নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। রাজধানীসহ সারাদেশে গাড়িভাড়া-বাড়িভাড়া নিয়ে মালিকদের যে নৈরাজ্য চলছে, তার বিরুদ্ধে সরকারের কোনো তৎপরতা নেই। ঈদ যত ঘনিয়ে আছে তত সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠছে, গণপরিবহন বলে কিছু নেই। সমস্ত পরিবহন সেক্টর বাস-লঞ্চ মালিকদের হাতে জিম্মি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা বলে কিছু নেই, প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ল্যাব মালিকরা এখন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে কি ভয়াবহ নৈরাজ্য ও দুর্নীতি বিরাজ করছে তার প্রমাণ পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস, উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি নিয়ে হয়রানি, লাগামহীন বেতন-ফি বৃদ্ধি ও শিক্ষার বেসরকারিকরণ। তিনি গার্মেন্ট শ্রমিক সহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের ঈদের আগে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার দাবি জানান।

কমরেড আহসানুল হাবিব সাঈদ বলেন, কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পায় না, গ্রামীণ শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর কোনো কাজ নেই, তারা বছরে ৯ মাসই বেকার থাকে। কাবিখা-কাবিটা নিয়ে চলছে চরম দুর্নীতি ও লুটপাট। তিনি কৃষকদের নামে দায়েরকৃত সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার, ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ এবং হাটে হাটে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চালুর দাবি জানান।

‘মোদির বাংলাদেশ সফর : ২২ দফা চুক্তি ও জাতীয় স্বার্থ’ শীর্ষক মতবিনিময়

প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক হতে হবে সমমর্যাদা, ন্যায্যতা ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে

গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগে গত ২ জুন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর : ২২ দফা চুক্তি ও জাতীয় স্বার্থ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। সভা পরিচালনা করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। মতবিনিময় সভায় আলোচনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক আকমল হোসেন, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, প্রকৌশলী বি ডি রহমতউলাহ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী এড. আব্দুস সালাম, হামিদুল হক, মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন।

সভার শুরুতে বাম মোর্চার পক্ষ থেকে উপস্থাপিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনির্বাচিত ও অগ্রহণযোগ্য সরকারের প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থনের বিনিময়ে মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহ অমীমাংসিত রেখে ভারতের সকল চাহিদাকেই একে একে মিটিয়ে দেয়া হয়েছে। মোদির এই সফরকে অনির্বাচিত সরকার অনির্দিষ্টকাল তাদের ক্ষমতায় থাকার অনুমোদন হিসাবেই বিবেচনা করছে। ধূর্ত ও অভিজ্ঞ মোদিও তাদের চাহিদা মিটিয়েছেন। তিনি তার এক হালি বক্তৃতার কোথাও সচেতনভাবেই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রসঙ্গ বা এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ সম্পর্কে কোন কথা বলেননি। আমাদের অধিকাংশ গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজও সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে মোদির সফর-বক্তৃতা-চুক্তি-সমঝোতায় তাদের উচ্ছাস আর আনন্দ প্রকাশ করেেছন। অথচ মোদির এই সফরে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির প্রবাহে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের সমাধান না করে ভারতের চাহিদামত তাদেরকে একতরফা ট্রানজিট-করিডর সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে কি কি সুযোগ-সুবিধা পাবে, অবকাঠামোর ব্যয়ভার কিভাবে নির্ধারিত হবে, নিরাপত্তা অবকাঠামো কিভাবে-কার দায়িত্বে থাকবে, এর পরিবেশগত দায়ভার, ট্রানজিট সংশ্লিষ্ট চোরাচালান ও মাদক পাচার সমস্যার কিভাবে সুরাহা হবে এসব প্রশ্নের যথাযথ সমাধান ছাড়া ‘কানেকটিভিটি’র নামে ভারতকে একতরফা ট্রানজিট ও বন্দর সুবিধা প্রদান হবে আত্মঘাতি এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অজুহাতে কথিত বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের ভারতে অনুপ্রবেশের যুক্তিতে বাংলাদেশের প্রায় পুরো স্থল সীমান্ত জুড়ে ভারত যে কাঁটাতারের প্রাচীর নির্মাণ করেছে, সেই যুক্তিতে বস্তুত সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে ভারতের এই বিশালব্যাপ্ত ট্রানজিট সুবিধার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চয় একটি গুরুতর প্রশ্ন।
প্রচলিত সকল বিধিবিধান লংঘন করে বিনা টেন্ডারে জ্বালানি সংক্রান্ত বিশেষ আইনের আওতায় ‘দায়মুক্তি’র সুযোগ নিয়ে ভারতের রিলায়েন্স ও আদানি গ্র“পের সাথে যথাক্রমে ৩ হাজার ও ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্যোগ না নিয়ে আধিপত্যবাদী ভারতের উপর সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎখাতকে ক্রমান্বয়ে নির্ভরশীল করে ফেলার এই তৎপরতা চরম অপরিণামদর্শী। ভারতের কোম্পানি এনটিপিসির কর্তৃত্বাধীন রামপালে সুন্দরবন বিনাশী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পও অব্যাহত রাখা হয়েছে। দেশবাসীর মতামত উপেক্ষা করে ও ইউনেসকোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে সরকার প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। ভারতের সাথে বিশাল বাণিজ্যিক ঘাটতি, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশীদের ধারাবাহিক হত্যাকান্ড, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প প্রভৃতি সমস্যা সমাধানে এবারও আশ্বাসের বাইরে বস্তুগত কিছু পাওয়া যায়নি। ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার ঋণ একদিকে ভারতেরই ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে; আর এই ঋণের আওতায় গৃহীত প্রকল্পসমূহের ৭৫% কাঁচামাল ভারত থেকে আমদানি করতে হবে।

প্রতিবেশীকে তার ন্যায্য অধিকার, পাওনা ও মর্যাদা না দিলে নিজেকে সৎ প্রতিবেশী বলে দাবি করা চলে না। প্রতিবেশীকে বঞ্চিত ও নিরাপত্তাহীন রেখে নিজেদের শান্তি ও নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যায় না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের সাথে দ্বি-পাক্ষিক সমস্যা সমাধানে ভারত কখনই সমমর্যাদা ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করেনি। উল্টো ভারতে নানা মাত্রায় বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। এই ব্যাপারে আবার নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি ও তাদের আদর্শিক সংগঠন শিবসেনা ও আরএসএস সবার থেকে এগিয়ে। ভারত বরাবরই বাংলাদেশকে তাদের অনুগত ভূমিকায় দেখতে চেয়েছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করে তাদের ব্যবস্থাপত্র ও কৌশল অনুযায়ী বাংলাদেশের কাছ থেকে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ আদায় করে নিয়েছে; ঝুলিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারসমূহ। গত চার দশক ধরে বাংলাদেশের সরকারসমূহের ভারত তোষণ নীতির কারণে নিজেদের ক্ষমতা নিরাপদ রাখতে যেয়ে সমস্যাসমূহের যৌক্তিক সমাধানের কার্যকরি উদ্যোগ না থাকায় জাতীয় স্বার্থ গুরুতরভাবে বিপন্ন হয়েছে; ক্ষেত্র বিশেষে তা আরো জটিল হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ভারতসহ প্রতিবেশীদের সাথে সমমর্যাদা ও সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতা চায়; কিন্তু কোনো অন্যায় দাবি ও আধিপত্যবাদী তৎপরতার কাছে নতি স্বীকার নয়। ভারত ও বাংলাদেশের সরকারগুলো লুটেরাদের স্বার্থে দ্বি-পাক্ষিক সমস্যা জিইয়ে রাখে, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাসহ নানা সংকট তৈরী করে। এর বিরুদ্ধে উভয় দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম জরুরি।

মোদির সফরের প্রতিবাদ বিক্ষোভে বাধা ও গ্রেফতারের নিন্দা-প্রতিবাদ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নেয়ার সময় বাসদ (মার্কসবাদী)-র কার্যালয় ঘেরাও করে রাখা, বাসদ (মার্কসবাদী) কর্মী শরীফুল চৌধুরী, প্রগতি বর্মন তমা, সায়েমা আফরোজ-কে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতে প্রেরণ, মিছিল-সমাবেশ করতে না দেয়া, পুলিশ কর্তৃক বাম মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশুর বাসভবন ঘেরাও করে রাখা ও গ্রেফতারের হুমকির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।

উল্লেখ্য, ৬ জুন বিকাল ৪টায় বাসদ (মার্কসবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষিত সময়ের পূর্বেই বিকাল ৩টা থেকে বাসদ (মার্কসবাদী)-র কার্যালয়ের প্রবেশমুখ পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘেরাও করে রাখে এবং নেতাকর্মীদের ঢুকতে-বেরোতে বাধা দেয়। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়কারী মোশরেফা মিশুর বাসভবন ৫ জুন রাত থেকে গোয়েন্দা পুলিশ ঘেরাও করে রাখে এবং তার মোবাইল কেড়ে নেওয়া এবং বাসা থেকে বের হওয়া মাত্র গ্রেফতারের হুমকি দিতে থাকে। এছাড়া প্রেসক্লাবের সামনে থেকে নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন-সহ ৩ জনকে এবং জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা মহিউদ্দিন আহমদসহ ৩ জন নেতাকর্মীকে আটক করে এবং তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষার দাবিতে ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি করতে না দেয়ার জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকার যেভাবে হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও বলপ্রয়োগ করেছে তা নজিরবিহীন ও সরকারের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে মতপ্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পদদলিত করা হল। বিবৃতিতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, মোদির সফরে তাদের ভাষায় জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হয়ে থাকলে ভিন্নমতের প্রতি সরকার এত অসহিষ্ণু কেন?

বাম মোর্চা : গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ এক যুক্ত বিবৃতিতে মোদির সফরের সময় বাম মোর্চার কর্মসূচি করতে না দেয়া ও মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশুকে গৃহবন্দি করে রাখার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তিস্তাসহ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ছাড়া সুসম্পর্কের কথা বলা প্রহসন – মুবিনুল হায়দার চৌধুরী

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ৩ জুন সংবাদমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সুসম্পর্কের ডংকা বাজানো হলেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য জীবন-মরণ সমস্যা তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এই সফরের আলোচ্যসূচিতেই নেই।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে যে ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল তা ৪৪ বছর পরে বাস্তবায়ন করে প্রচারের জোরে একেই বিরাট অর্জন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। আর এই ‘বদান্যতা’র বিনিময়ে আওয়ামী মহাজোট সরকার কানেকটিভিটি-র নামে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন অর্থাৎ করিডোর সুবিধা দিতে চলেছে। কানেকটিভিটি বা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার আগে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। একই সাথে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি প্রত্যাহারে ভারতের প্রস্তাবিত আন্তঃনদীসংযোগ প্রকল্প এবং সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎস বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি আদায় করা প্রয়োজন। অভিন্ন নদীর পানি বাংলাদেশের ‘ন্যাচারাল রাইট’ ও ন্যায্য পাওনা। ভারত সরকার একতরফা পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের নদীব্যবস্থাকে বিপন্ন করেছে এবং নানা অজুহাতে অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন আলোচনা ঝুলিয়ে রেখে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যবহার করেছে। এই নীতি অব্যাহত রেখে সুসম্পর্কের কথা বলা প্রহসন মাত্র।”

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “ভারতকে ট্রানজিট-এর নামে করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রাজনৈতিক বিবেচনা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, অবকাঠামোগত সামর্থ্য ও অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করা উচিত। ভারত সমুদ্রসীমাবিহীন স্থলবেষ্টিত কোনো দেশ নয়। ফলে ভারতকে ট্রানজিট দিতে বাংলাদেশ আইনগত ও নৈতিক দিক থেকে বাধ্য নয়। তবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে রাস্তা ব্যবহারের সুযোগ পেলে ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়, অর্থনৈতিক সাশ্রয় হয়। দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সমমর্যাদাপূর্ণ মনোভাব থাকলেই একমাত্র এ ধরনের সহযোগিতার বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দুর্বল দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের শাসকশ্রেণীর সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী রাজনীতির কারণে সেই পরিবেশ এ মুহূর্তে নেই। ট্রানজিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থায় যাবার আগে নিশ্চিত করতে হবে — সামরিক উদ্দেশ্যে এ সুযোগ যেন ব্যবহৃত না হয় এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব যাতে হুমকির মুখে না পড়ে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ-ভারতের জনগণের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও মৈত্রী দৃঢ় করতে রেলওয়ের মাধ্যমে (বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে মূল ভূখন্ডের মানুষের যাতায়াতের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু ভারতীয় শাসকদের মূল উদ্দেশ্য দু’দেশের জনসাধারণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও সুসম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা নয়, তারা সেদেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুবিধা চায়।”

তিনি আরো বলেন, “ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বাড়ানো, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের মূল ভূ-খন্ডের পরিবহন এবং আন্তঃদেশীয় এই গ্রিড থেকে বাংলাদেশেকে বিদ্যুৎ প্রদান ইত্যাদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলবে যা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিনিয়োগে সুন্দরবনের পাশে রামপালে বৃহদায়তন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে সুন্দরবনকে বিপদাপন্ন করার আত্মঘাতী প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।”

তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ বাড়ছে। শ্রীলংকায় সরকার পরিবর্তনে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, এমনকি নেপালের শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসন না হওয়ার ক্ষেত্রেও ভারতের প্রভাব কাজ করছে। নেপালে ভূমিকম্প পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতার নামে অননুমোদিত গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারকে ভারত কিভাবে মদত দিয়ে চলেছে তা সবাই জানেন। ভারতের সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী সেদেশের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের বাজার সম্প্রসারণ ও পুঁজি বিনিয়োগের স্বার্থে দক্ষিণ এশিয়াকে তার প্রভাবাধীন অঞ্চলে পরিণত করতে চায়। অন্যদিকে এই অঞ্চলকে ঘিরে ভারত-চীন আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনাও ক্রিয়াশীল। এই প্রেক্ষাপটে নতজানু নীতি পরিহার করে স্বাধীন অবস্থান থেকে এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পরিচালনা করার দাবিতে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে।”

তিস্তাসহ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং জাতীয় সম্পদের ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেন, মোদির সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির উপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের সংকট তৈরি হবে যা আগামীদিনে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করবেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ন্যায্যতা’ ও সমতার ভিত্তিতে তিস্তা-পদ্মাসহ সকল অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভারত গোটা বাংলাদেশকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং ১৬ কোটি মানুষের মানবিক অধিকার লংঘন করে চলেছে। সীমান্ত হত্যা নিয়ে বহু আলোচনা সত্ত্বেও তা অব্যাহত আছে। এসব সমস্যার সমাধান না করে মোদীর সফরকে ঘিরে আওয়ামী মহাজোট সরকারের উচ্ছ্বাস আসলে ডামাডোলের আড়ালে জনগণের অধিকার হরণেরই প্রক্রিয়া মাত্র। বিবৃতিতে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আমাদের শাসকদের নতজানু নীতি এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ সংগঠিত করা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে নীলফামারীতে সমাবেশ

ভারতের কাছ থেকে তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার ও মহাজোট সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদে বাসদ (মার্কসবাদী) নীলফামারী জেলা শাখার উদ্যোগে ৬ জুন সকাল ১১টায় স্থানীয় চৌরঙ্গী মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পার্টির নীলফামারী জেলা সংগঠক ডা. রবীন্দ্রনাথ রায়ের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আহসানুল আরেফিন তিতু, ডোমার উপজেলা সমন্বয়ক ইয়াসিন আদনান রাজিব, জলঢাকা উপজেলা সংগঠক তরনি রায়, ডিমলা উপজেলা সংগঠক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিন দিনাজপুর ও রংপুরে পৃথক পৃথক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

নারী নির্যাতন বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ

SSF_Narimukti_150615

বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে ১৫ জুন বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশের পূর্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য ফখ্রুদ্দিন কবির আতিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফরোজা বুলবুল, ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্নেহার্দ্রি চক্রবর্তী রিন্টু, নারীমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মণিদীপা ভট্টাচার্য।

বক্তারা বলেন, ‘একটি অগণতান্ত্রিক পরিবেশে দিনের পর দিন অন্যায় ঘটনাগুলো যেভাবে বিনা বিচারে ঘটে চলছে, নারী নির্যাতনকারীরাও সরকার ও প্রশাসনের সেই অন্যায় প্রক্রিয়ার কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীদের প্রতিনিয়ত অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরাও তাদের শিক্ষার পাশাপাশি কোনো বিনোদনের সুযোগ না পেয়ে পর্নোগ্রাফি-মাদকে বিনোদনের পথ খুঁজছে। এই ধরনের সামাজিক আয়োজন প্রতিদিন নারী নির্যাতকের জন্ম দিচ্ছে।’
সমাবেশ শেষে স্মারকলিপি পেশের জন্য মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণের পর শাহবাগে পুলিশি বাধার মুখে সেখানেই সমাবেশ শেষ করে। এরপর ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি দিতে যান।

বাহাদুর শাহ পার্কের সমাবেশে মাসুদ রানার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সীমা দত্ত, রাজীব চক্রবর্ত্তী, শরীফুল চৌধুরী, মেহরাব আজাদ, কৃষ্ণ বর্মণ, এলাকাবাসী রহিম ফরায়েজী।

মিরপুর গোল চক্করে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাইফুল হাসান মুনাকাত। বক্তব্য রাখেন নাহিদ ইসলাম, বিদ্যাসাগর পাঠাগারের উপদেষ্টা শিক্ষক মনিরুজ্জামান, ডা. মুজিবুল হক আরজু, কল্যাণ দত্ত।
মোহাম্মদপুরের টাউনহলে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মর্জিনা খাতুন, বক্তব্য রাখেন ¯েœহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু, রাশেদ শাহরিয়ার, গোলাম রাব্বি।

ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

চট্টগ্রাম : নারীমুক্তি কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে ঢাকায় আদিবাসী-গারো নারীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে ও জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে নগরীর নিউ মার্কেট চত্বরে ১৭ জুন বিকাল ৫ টায় এক মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সংহতি জানায় চিটাগং গারো ইয়ুথ এসেম্বলী। জেলা সভাপতি পপি চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি তাজ নাহার রিপন, গারো ইয়ুথ এসেম্বলীর সহ-সভাপতি প্রমোদ জাম্বিল, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদাউস পপি। সমাবেশ পরিচালনা করেন জুলায়খা আখতার।

যশোর : ১১ জুন বিকাল সাড়ে ৪টায় যশোর ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা সংসদ মিলনায়তনে ছাত্র ফ্রন্ট ও নারীমুক্তি কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে চাই গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন নারীমুক্তি কেন্দ্র যশোর জেলার আহ্বায়ক নাসিমা আক্তার লাতিন, পরিচালনা করেন ছাত্র ফ্রন্ট নেতা কৃষ্ণেন্দু ম-ল। বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক কমরেড হাসিনুর রহমান, যশোর ইনস্টিটিউটের সাবেক সম্পাদক ও ব্যাংকার মোস্তাফিজুর রহমান কাবুল, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট যশোর শাখার সহকারী পরিচালক বিপ্লব ম-ল, শিক্ষক সোনিয়া সাইদান নাহার, এম এস টি পি গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস ঈশা।

গাইবান্ধা : ৩০ মে শিশু কিশোর মেলা ও বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে গাইবান্ধার দারিয়াপুর চৌমাথায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন জেলা বাসদ (মার্কসবাদী)-র দারিয়াপুর অঞ্চল শাখার আহবায়ক জোব্বার হোসেন, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী, মাহবুব আলম মিলন, রাহেলা সিদ্দিকা, বন্ধন প্রমুখ।

রংপুর : ১৪ জুন ছাত্র ফ্রন্ট কারমাইকেল কলেজ শাখার উদ্যোগে নারী নির্যাতন বিরোধী ছাত্রসমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় অন্নদামোহন হলে কলেজ শাখার সভাপতি আবু রায়হান বকসির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি কল্যাণ দত্ত, জেলা সভাপতি আহসানুল আরেফিন তিতু, রোকনুজ্জামান রোকন, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র-এর কামরুন্নাহার খানম শিখা, হোজায়ফা সাকওয়ান জেলিড।

সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ব্যাংক ঘেরাও

১২ জুলাই বেলা ১২টায় সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের উদ্যোগে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহারসহ সহজ শর্তে স্বল্প সুদে কৃষক ক্ষেতমজুরদের জন্য ব্যাংক ঋণ চালুর দাবিতে দারিয়াপুর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ঘেরাও করা হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা বাসদ(মার্কসবাদী) আহবায়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, কাজী আবু রাহেন শফিউল্যা খোকন, জাহেদুল হক, মোজাহেদুল ইসলাম রানু, মাহবুবুর রহমান খোকা প্রমুখ।

বক্তাগণ বলেন, গত কয়েক বছর যাবত কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। দু’বেলা ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা যখন কঠিন হয়ে পড়েছে, ঠিক সেই সময় ব্যাংক থেকে টাকা আদায়ের জন্য দায়ের করা হচ্ছে সার্টিফিকেট মামলা। বড় বড় ঋণ খেলাপি ব্যাংক লুটেরাদের টাকা উদ্ধার করতে না পেরে সরকার বাজেটে ব্যাংকের ঘাটতি পূরণের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। লুটেরা ঋণ খেলাপিদের যে কোনো একজনের টাকা উদ্ধার করলে সারাদেশের চাষীদের ঋণ মওকুফ করে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তা হবে না, কারণ সরকার ঐ লুটেরা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষাকারী। সহজশর্তে স্বল্পসুদে কৃষক ক্ষেতমজুরদের জন্য ব্যাংক ঋণ চালুর দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে মহাজনী সুদী কারবার ও এনজিও সুদী কারবারীদের ঋণ জালে আটকা পরছে কৃষক-ক্ষেতমুজরা।

খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের দাবি বিদ্যুৎমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

খাগড়াছড়িতে চলমান প্রবল বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের দাবিতে আন্দোলনরত ‘বিদ্যুৎ সংকটে ভুক্তভোগী জনতা’র ব্যানারে গত ১ জুলাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিদ্যুৎমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এর আগে গত ১৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ, পাড়ায় পাড়ায় আন্দোলন কমিটি গঠন ও প্রচার মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন পাড়া থেকে আন্দোলন কমিটির নেতৃত্বে মিছিলসহ মানুষ খাগড়াছড়ি মুক্তমঞ্চে সমবেত হতে থাকে। এখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু দাউদ এবং পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি নাজির হোসেন। বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মংসাথোয়াই চৌধুরী, বাসদ (মার্কসবাদী)-র জেলা আহ্বায়ক জাহেদ আহমেদ টুটুল, নারীমুক্তি কেন্দ্রের কৃষ্টি চাকমা, অরণ্য তারণ্যের সভাপতি সাইফুদ্দিন মিঠু, ক্যাব জেলা সভাপতি আবু তাহের মুহাম্মদ, সাংবাদিক অপু দত্ত, স্বর্ণ ব্যবসায়ী লিটন, শিশু কিশোর মেলার সংগঠক সনাথ চাকমা।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারি বেসরকারি সব মহল থেকেই স্বীকার করা হচ্ছে যে খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎসংকট একটা প্রধান সমস্যা। বছরের পর বছর জেলাবাসী এ সংকট সহ্য করে চলেছে। সম্প্রতি এ সংকট চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩/৪ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে লো-ভোল্টেজ, অযৌক্তিক বিদ্যুৎবিল, বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে নানা তালবাহানা ও দুর্নীতি ইত্যাদি। সমাবেশ থেকে বিদ্যুৎ সাব স্টেশনের দোহাই না দিয়ে অবিলম্বে বিকল্প বৈদ্যুতিক লাইন টেনে এ সংকটের আশু সমাধান জানান। অন্যথায় জেলাবাসী আরো বড় ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। সমাবেশ শেষে একটি দীর্ঘ মিছিলসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিদ্যুৎমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক শিক্ষাশিবির সমাপ্ত

Schooling 2nd_1

৫-৮ জুলাই ২০১৫ বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত কমরেডদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক শিক্ষাশিবির পরিচালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।এবার রাজনৈতিক শিক্ষাশিবিরের বিষয়বস্তু ছিল দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ এবং রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র। বিষয়বস্তুর ওপর আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেডস শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, মানস নন্দী, মনজুরা হক নীলা, ওবায়দুল্লাহ মুসা, উজ্জল রায় এবং ফখরুদ্দিন কবির আতিক। এছাড়া বিষয়বস্তুর উপর অংশগ্রহণকারী কমরেডগণ তাদের প্রশ্ন ও মতামত তুলে ধরেন। এছাড়া প্রতিদিন রাতেই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কমরেডরা দিনের আলোচনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।

Schooling 2nd_2

অবিলম্বে সরকারিভাবে ধান ক্রয় অভিযান শুরু করার দাবি

৩১ মে বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ধানসহ কৃষি ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে কৃষকদের রক্ষায় সরকারীভাবে ধান ক্রয় অভিযান অবিলম্বে শুরুর দাবি জানায় বাসদ(মার্কসবাদী)। কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফখ্রুদ্দিন কবির আতিক, সাইফুজ্জামান সাকন ও জহিরুল ইসলাম।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুর, দিনাজপুর. গাইবান্ধা, বগুড়া, নীলফামারী, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকরা রাস্তায় ধান ফেলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

মনুষ্যোচিত মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলুন

বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১০ জুলাই বিকেল ৪টায় ২২/১ তোপখানা রোডের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিছিল ও সমাবেশ পরিবর্তন করা হয়। সংগঠনের মহানগর সংগঠক ফখরুদ্দিন কবির আতিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, মানস নন্দী, উজ্জল রায়, কল্যাণ দত্ত, রাজু আহমেদ, রাজীব চক্রবর্ত্তী।

সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে শ্রমজীবী মানুষের অবদানে। কৃষি-শিল্প-সেবা ক্ষেত্রে এদের শ্রমে-ঘামে জাতীয় উৎপাদন বেড়ে চলেছে। কিন্তু তাদের জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত। নিম্ন মজুরী, বেকারত্ব, ক্ষুধা, অভাব, ছাঁটাই, নির্যাতন তাদের নিত্যসঙ্গী। যতক্ষণ এই পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল আছে, ততক্ষণ কাজের নিশ্চয়তা, ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের জন্য আমাদের লড়তে হবে। তবে শুধুমাত্র এই সংগ্রামেই শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি আসবে না। পাশাপাশি পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা উচ্ছেদ করে শোষণহীন সমাজতন্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপোষহীন বিপ্লবী ধারার শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একই সাথে নেতৃবৃন্দ ঈদের ১০ দিন আগে শ্রমিকদের বেতন ও বেতনের সমপরিমাণ বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করতে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।

সিলেট : ফেডারেশনের সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে ১২জুলাই বিকাল ৪টায় নগরীতে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি সংগঠনের কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সংগঠন সিলেট জেলা শাখার সভাপতি সুশান্ত সিনহার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার সদস্য এড. হুমায়ুন রশীদ শোয়েব, সংগঠনের সহ-সভাপতি হৃদেশ মুদি, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সাইদুল, এড. উজ্জ্বল রায়।

চা শ্রমিক ফেডারেশনের শ্রমমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ

অবিলম্বে নতুন চুক্তি সম্পাদন, দৈনিক মজুরি ৩শ টাকা প্রদান ও ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার দাবি

সিলেট : অবিলম্বে নতুন চুক্তি সম্পাদন, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণ, সপ্তাহে ৫ কেজি চাল, প্রতি বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, স্থায়ী এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ, অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, ইকনোমিক জোনের নামে চান্দপুর চা বাগানের ভূমি অধিগ্রহণ বাতিলসহ ১১ দফা দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলা ২৮ জুন ’১৫ দুপুর ১২টায় সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রমমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে। স্মারকলিপি পেশের পূর্বে সিলেটের বিভিন্ন চা বাগান থেকে আগত চা শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিসম্বলিত ফেস্টুনসহ মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি লাক্কাতুরা চা বাগান থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলার আহবায়ক বীরেন সিং এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য এড. হুমায়ুন রশীদ শোয়েব, চা শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক হৃদেশ মুদি, মালনীছড়া বাগান শাখার সভাপতি সন্তোষ নায়েক, লাক্কাতুরা শাখার সাধারণ সম্পাদক লাংকাট লোহার।

সভায় বক্তরা বলেন, উদয়াস্ত পরিশ্রমের পর মাত্র ৬৯ টাকা মজুরি দিয়ে নূন্যতম পুষ্টির চাহিদা পূরণ তো দূরের কথা, ক্ষুধার অন্নটুকু পর্যন্ত জোটে না। এর সাথে রোগ-বালাই তো লেগেই আছে। প্রায় ৮ মাস আগে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের সময় সকল পক্ষ বলেছিলেন দ্রুত নতুন চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন, নির্ধারণ করবেন মানবোচিত মজুরি। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই অবিলম্বে নতুন চুক্তি সম্পাদন ও ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ, ভূমির অধিকার নিশ্চিতকরণ সহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাবেশ শেষে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শত শত চা শ্রমিকদের স্বাক্ষরসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রমমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেন।

এদিকে সমাবেশ চলাকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ইউসুফের নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সমাবেশে উপস্থিত চা শ্রমিকদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। হামলায় চা শ্রমিক ফেডারেশন লাক্কাতুরা শাখার সাধারণ সম্পাদক লাংকাট লোহার, অজিত দাশ, শিলা কুর্মীসহ ৭ জন শ্রমিক আহত হন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও চা শ্রমিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

মৌলভীবাজার : চা শ্রমিক ফেডারেশন মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ২৮ জুন দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রমমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে মাত্র ৬টি তে সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় আছে। অথচ সংবিধানে সবার জন্য অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। দুই বছর পর পর চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও ২০০৯ সালের পর আজ ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন চুক্তি হচ্ছে না।

হবিগঞ্জ : ২৮ জুন সকাল ১১টায় চা শ্রমিক ফেডারেশন হবিগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে শ্রমমন্ত্রীর কাছে গণস্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। দীর্ঘ তিন সপ্তাহ পূর্ব থেকে রশিদপুর, লস্করপুর, চান্দপুর, দেউন্দী, বেগম খান, চন্ডীচড়া, আমু, সাতছড়ীসহ বিভিন্ন চা বাগানে ১১ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন হবিগঞ্জ জেলা শাখার সংগঠক চা শ্রমিক নেতা ময়না রবি দাস ও শিবলাল এর নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কবাদী) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সংগঠক শফিকুল ইসলাম, ছাত্র ফ্রন্ট বৃন্দাবন কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে নতুন চুক্তিসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও দেউন্দী চা বাগানে ৫ দিন ব্যাপী ধর্মঘটের মাধ্যমে উত্থাপিত দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

২০ রোজার মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবি

২০ রোজার মধ্যে সকল শ্রমিকদের বেতন ও বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেয়ার দাবিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৬ জুন শুক্রবার বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনের মহানগর সংগঠক ফখ্রুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল রায়, কল্যাণ দত্ত প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতি বছরই দেখা যায় ঈদের পূর্ব দিন বেতন পায় অনেক শ্রমিক, কিছু শ্রমিক তাও পায় না। তারা বেতনের টাকা দিয়ে আর সেমাই চিনি কেনার সময় পায় না, সন্তানদের জামা-কাপড় কিনে দিতে পারে না। শ্রমিকদের ঈদ বোনাস এখনো মালিকের খেয়াল-খুশির ওপর নির্ভর করে, বাঁধাই শ্রমিকসহ অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা কোনো বোনাস পায় না। ওদিকে শেষ মুহুর্তে বেতন পেয়ে বাড়ি যেতে গিয়ে পরিবহন সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হয়। দেশের সম্পদ সৃষ্টিতে শ্রমিকের অবদান সবচেয়ে বেশি, অথচ একদিকে তারা মানুষের মতো বাঁচার অধিকার থেকে বঞ্চিত, অন্যদিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে উৎসবের আনন্দ তারা করতে পারে না।

সিলেট : ঈদের পূর্বে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখা ২৬ জুন মিছিল সমাবেশ করে। বিকাল ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে সিটি পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সংগঠন সিলেট জেলার সভাপতি সুশান্ত সিনহার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা এড. হুমায়ুন রশীদ শোয়েব, চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলার আহ্বায়ক বীরেন সিং, সাজিদুল ইসলাম, এড. উজ্জ্বল রায়, মহিতোষ দেব মলয়।

রংপুর : ২০ রোজার মধ্যে বেতন-বোনাস প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন রংপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ২৬ জুন সকাল ১১টায় স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা সংগঠক পলাশ কান্তি নাগের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী) রংপুর জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, শাহীদুল ইসলাম সুমন, মহেদুল ইসলাম, সুজন রায়।

বাঁধাই শ্রমিকদের ঈদ বোনাসের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ

বাঁধাই শ্রমিকদের ঈদ বোনাস প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সূত্রাপুর থানা শাখার উদ্যোগে ৩ জুলাই বিকাল ৩টায় বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে সমাবেশ ও বাংলাবাজার, ডালপট্টি মোড়, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সংগঠনের থানা সংগঠক রাজীব চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও সংগঠক মানিক হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উজ্জল রায়, ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুদ রানা, বাঁধাই শ্রমিক জামিল হোসেন। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাঁধাই শ্রমিকরা ঈদের কোনো বোনাস পায় না। তাঁরা যে মজুরি পায় তা দিয়ে সংসার চলে না।

ঈদের দশ দিন আগে প্রাইভেট গাড়ি চালকদের বেতন-বোনাসের দাবি

ঈদের দশ দিন আগে বেতন-বোনাসের দাবীতে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত সংগঠন প্রাইভেট গাড়ী চালক ইউনিয়নের উদ্যোগে বিকাল ৩.৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক মামুন মিয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কল্যাণ দত্ত, রাজু আহমেদ, গাড়ী চালক আ: রশিদ, মাহাবুব প্রমুখ। সমাবেশে ড্রাইভারদের ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ, ন্যূনতম বেতন ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, নিয়োগপত্র, ৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভার টাইম ভাতা প্রদানের দাবি জানানো হয়।

সিলেটে স্মৃতিসৌধের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান

সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবিতে শিশু কিশোর মেলা সিলেট জেলা শাখা ঘোষিত আগামী ২৮ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে সিলেটের পাড়ায়-পাড়ায়, অফিস-আদালতে, দোকানপাটে দাবির পক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে।

২৯ জুন থেকে এ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু হয়। প্রচ- তাপদাহ কিংবা বৃষ্টির মধ্যে শিশু কিশোর মেলার সদস্যরা সাধারণ মানুষকে স্বাক্ষর দিতে আহবান করলে মানুষ স্বাক্ষর দিয়ে দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এসময় মেলার সংগঠকদের আহবানে সবাই আন্দোলনের তহবিলে অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করেন। স্বাক্ষর সংগ্রহের সময় শিশু কিশোর মেলা সিলেট জেলার সংগঠক রুবাইয়াৎ আহমেদের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন লিপন আহমেদ, সাদিয়া নোশিন তাসনিম, পলাশ কান্ত দাশ, তৌহিদুজ্জামান জুয়েল, নিশাত কর সানি, পিংকি চন্দ, ইয়াছিন আলী ইমন, দীপ্ত, রুদ্র, অপূর্ব প্রমুখ।

সাম্যবাদ জুলাই-আগষ্ট ২০১৫

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments