Thursday, March 28, 2024
Homeফিচারসরকার কৃষক-ক্ষেতমজুরদের ঠকিয়ে উন্নয়নের ফানুস উড়াচ্ছে

সরকার কৃষক-ক্ষেতমজুরদের ঠকিয়ে উন্নয়নের ফানুস উড়াচ্ছে

IMG_0451 copy

৯টি কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠনের জোট কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ ১০ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের এক বিরাট সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের উন্নতি সমৃদ্ধির ভিত্তি ভূমি এদেশের কৃষক ও ক্ষেতমজুরদেরকে রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়ে দশকের পর দশক ঠকিয়েই চলেছে। তারা উৎপাদন করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে কিন্তু প্রতিদানে তাদেরকে উৎপাদিত ফসলের উৎপাদন খরচ দেয়া হচ্ছে না, সামান্য ঋণের টাকা আদায়ে সার্টিফিকেট মামলা দিয়ে তাড়িয়ে বেড়ানো হচ্ছে, খাসজমি তাদের সাংবিধানিক অধিকার হওয়ার পরেও সেই জমি দিয়ে দেয়া হচ্ছে শিল্পায়নের নামে শহরের ধনী শিল্পপতিদের, দলীয় নেতাকর্মীদের। কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ ৯ দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার কৃষক-ক্ষেতমজুর সমাবেশে যোগদান করেন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল পল্টন-জিপিও-গুলিস্তান হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এরপরে একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। এর আগের অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে আগামী ২৯ এপ্রিল উপজেলায় উপজেলায় ধানের লাভজনক দাম ও প্রতি ইউনিয়নে সরকারি উদ্যোগে ক্রয়কেন্দ্র চালুর দাবিতে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে ও সমাজতান্ত্রিক কৃষক ক্ষেতমজুর ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কৃষক সমিতির সভাপতি অ্যাড. এসএমএ সবুর, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুল হক, ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, কৃষক-ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, সমাজতান্ত্রিক কৃষক ক্ষেতমজুর ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম মিঠু, বিপ্লবী কৃষক সংহতির আনসার আলী দুলাল, কৃষক ফোরামের লিয়াকত আলী, কৃষক ক্ষেতমজুর সংহতির আহ্বায়ক দেওয়ান আব্দুর রশিদ মিলু প্রমুখ। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক কৃষক-ক্ষেতমজুর ফ্রন্টের শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, সমাজতান্ত্রিক কৃষক-ক্ষেতমজুর ফ্রন্টের অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ, কৃষক-ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি রণজিৎ চ্যাটার্জি, ক্ষেতমজুর সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক অর্ণব সরকার।

56553688_1046619798870214_4027424733636067328_o

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অবদান রাখা প্রধান তিনটি খাতের একটি কৃষি। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪২.৭ ভাগই কৃষিতে নিয়োজিত। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অপার সম্ভাবনা ও বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান থাকার পরও শাসকরা দেশের কৃষি-কৃষক ও ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের উপেক্ষা করে আসছে। প্রতি বছর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অন্যতম অবদান রাখলেও জাতীয় বাজেটে প্রতি বছর কৃষি খাতের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণমজুর দরিদ্র মানুষের জন্য সামান্য যা বরাদ্দ করা হয় তা প্রশাসনিক ও স্থানীয় দলীয় টাউট বাটপাররা লুট করে নিচ্ছে। অথচ এ দেশের কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুর না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। এই উদাসীনতা ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষক-ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরের জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

তবে আশার কথা হলো এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে গ্রামের গরিব মানুষ জেগে উঠছে। আজকের নানা সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে ঢাকার এই বিরাট সমাবেশ তার সত্যতা প্রমাণ করে। বক্তারা বলেন, কৃষক-ক্ষেতমজুরদের এই দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তির জন্য তাঁরা তাদের অধিকার আদায়ে যে আন্দোলন গড়ে উঠছে তাকে আমরা এগিয়ে নেব।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এদেশের কৃষক কিনতে ঠকে, আবার বেচতেও ঠকে। কৃষি উৎপাদন পণ্যের দাম বাড়ানো হয় এবং কৃষি উৎপাদন পণ্যের বাজার ব্যবসায়িকদের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেয়ার কারণে কৃষক কিনতে ঠকছে আবার বিক্রয়ের সময় সরকার ব্যবসায়িকদের কাছ থেকে ধান কেনায় কৃষক ব্যবসায়িকদের কাছে ধান বিক্রি করতে গিয়ে ঠকছে। তাই কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে বিএডিসির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন পণ্য বিক্রয় এবং প্রতি ইউনিয়নে সরকারিভাবে ফসলের ক্রয়কেন্দ্র চালু করতে হবে এবং বাজেটে কৃষি বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এদেশের ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুররা সবচাইতে অবহেলিত জীবন যাপন করছে। তাঁদের নিজের জমিতে ঘর নেই, সারাবছর কাজের নিশ্চয়তা নেই, খাদ্য দ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাঁদের খাদ্য নিশ্চয়তা নষ্ট করছে, বৃদ্ধ বয়সে কাজের সামর্থ না থাকায় এদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়ছে। বাঁচার চেষ্টায় এনজিও ঋণ নিয়ে জড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ আরেক মরণ ফাঁদে। এই মেহনতি মানুষের জন্য খাস জমি বরাদ্দের আইন থাকলেও খাস জমি তাঁদের বরাদ্দ না দিয়ে প্রভাবশালী বড়লোকদের দিয়ে দেয়া হচ্ছে তাই অবিলম্বে এই মানুষদের বাঁচাতে তাঁদের অধিকার খাস জমির বরাদ্দ, কৃষি শিল্প নির্মাণ করে সারাবছর কাজের নিশ্চয়তা তৈরি, পল্লী রেশন চালু, ৬০ উর্দ্ধ বয়সের মজুরদের জন্য পেনশন স্কীম চালু ও খাই খালাসি ধরনের আইন করে এনজিও ঋণ মওকুফ করতে হবে। জাতীয় বাজেটে সেফটি নেটের জন্য উপকার ভোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশে হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপিদের দায়মুক্তি দেয়া হলেও ৫০০ কোটি টাকার কষিঋণ আদায়ের জন্য ১২ হাজার কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অবিলম্বে সকল মামলা প্রত্যাহার ও ঋণ মওকুফ, জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, ফসলের লাভজনক দাম, ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি উদ্যোগে ক্রয়েকেন্দ্র, বিএডিসির মাধ্যমে স্বল্প দামে কৃষি উপকরণ সরবরাহের দাবি জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments