Saturday, April 20, 2024
Homeফিচারহাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা কর — সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট

হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা কর — সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট

নেকব্লাস্ট রোগ, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দিতে হবে

IMG-20170401-WA0005
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষক-ক্ষেতমজুরদের জীবন আজ বিপন্ন। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকদের জন্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধান-ভুট্টা-গম-আলুসহ সবজি চাষীরা মওসুম সময়ে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। উৎপাদন খরচের থেকেও কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। বছরের পর বছর দাম না পেয়ে ক্রমাগত জমি হারাচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষকরা। ফলে বাড়ছে ভূমিহীন ক্ষেতমুজরদের সংখ্যা। কৃষির সঙ্গে যুক্ত বিশালসংখ্যক ক্ষেতমজুর-দিনমজুরদের জীবনযাপন করতে হয় অনাহারে-অর্ধাহারে। বছরে ৩ মাস কাজ থাকে, বাকী ৯ মাস কোন কাজ থাকে না। কাজ না থাকাতে ৯ মাস সময় এই মানুষরা পরিবার পরিজন ছেড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন শহরে বস্তি এবং ফুটপাতে অমানবিক জীবনযাপন করে এই মানুষরা।

এ বছর গোটা দেশব্যাপী ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ইরি বোরো ধানের। যেখানে বিঘা প্রতি ২০/২৫ মণ উৎপাদন হওয়ার কথা, সেখানে হয়েছে ৫/৬ মণ। গত ৩ বছর থেকে এই রোগে ফসল আক্রান্ত হচ্ছে। প্রথম বছর খুবই সামান্য জমিতে এবং দ্বিতীয় বছরে তার চাইতে একটু বেশি পরিমাণ জমির ধান এই রোগে নষ্ট হয়েছে। এবছর ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক হওয়ার সম্ভাবনা আগে থেকেই ছিলো। বীজ এবং আবহাওয়া এই রোগ সংক্রমণের মাধ্যম। বীজ সংরক্ষণ, বিপনন এবং রোগ সংক্রমণের অনুকূল আবহাওয়াতে কৃষকরা কি ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে — এসব বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ছিলো জরুরী। কিন্তু তা হয়নি। ফলে সরকারের কৃষিবিভাগের দায়িত্বে অবহেলায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই ক্ষতির ফলাফল ভোগ করতে হবে গোটা দেশবাসীকে।

অন্যদিকে দেশের এক বিরাট অঞ্চল কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার জেলার বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল অকাল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকেরা বন্যার পানি থেকে কোন ফসল বাঁচাতে পারেনি। বন্যা হতেই পারে, এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার কার্যকর উদ্যোগ সরকারীভাবে গ্রহণ না করলে কতবড় ক্ষতি হতে পারে, তা এবছরের হাওর অঞ্চলের দিকে তাকালে বুঝা যায়। ওই অঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধগুলো আগেভাগেই মেরামত করা জরুরী ছিলো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তা করেনি। বন্যা হলে এলাকার কৃষক সাধারণ কি কি ভূমিকা পালন করতে পারে সে বিষয়ে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়নি। ফলে সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দায়িত্ব অবহেলা ও দুর্নীতির ফলাফল হাওর অঞ্চলের এতবড় সর্বনাশ।

হাওড় অঞ্চলে বন্যায় এবং দেশের অন্যসব এলাকার নেকব্লাস্ট রোগের কারণে কৃষক এবং কৃষির সংগে যুক্ত বিরাটসংখ্যক ক্ষেতমজুরদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। তার প্রভাব পড়বে কৃষি উৎপাদনে। ফলে কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রক্ষার প্রয়োজন সরকারী নানা ধরণের উদ্যোগ জরুরী। এ অবস্থায় আমরা দাবি জানাচ্ছি — প্রতিটি কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করে যথার্থ ক্ষতিপূরণ, আগামী মওসুমের প্রস্তুতির জন্য সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদান, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার, ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ, বিনামূল্যে সার-বীজ-কীটনাশক সরবরাহ, ক্ষেতমজুরদের জন্য আর্মিরেটে রেশনিং, পর্যাপ্ত টিআর-কাবিখা-ভিজিডি-ভিজিএফসহ ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু, সরকারী সাহায্য বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করতে হবে।

 

নেকব্লাস্ট রোগ-অতিবৃষ্টি-বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, হাওড় অঞ্চলকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষনা ও দায়িত্বহীন কৃষি কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে কৃষক ফ্রন্ট গাইবান্ধার উদ্যোগে বিক্ষোভ ও সমাবেশ

18193778_1895521024037704_790857967084307891_n

গত ৩০ এপ্রিল’১৭ সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট গাইবান্ধা সদর উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সদর উপজেলার শাখার সভাপতি প্রভাষক গোলাম সাদেক লেবুর সভাপতিত্বে ১নং ট্রাফিক মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন বাসদ মার্কসবাদী গাইবান্ধা জেলা আহবায়ক কমরেড আহসানুল হাবিব সাঈদ, কৃষক ফ্রন্ট সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুর রহমান খোকা প্রমুখ। বক্তাগণ বলেন, প্রতিবছর কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। দিন দিন তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। কৃষকের নামে বরাদ্দ সামান্য অর্থ হরিলুট হয়ে যায়। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নতুন করে মরার উপর খাঁড়ার ঘা পড়েছে। এ মৌসুমে ইরি বোরো ধানের ব্যাপক ফলন কম হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীন আচরণের ফলে ধানে নেকব্লাস্ট রোগ প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা হয়নি। বক্তাগণ অবিলম্বে নেকব্লাস্ট রোগ-অতিবৃষ্টি-বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপুরণ, হাওর অঞ্চলকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা ও দায়ী কৃষিকর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments