Friday, March 29, 2024
HomeUncategorized১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার রংপুরে পানি কনভেনশন

১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার রংপুরে পানি কনভেনশন

main-qimg-a75b9ce5e5c17dcd45421ec78e2ecb7f-c

বাংলাদেশ একটা নদীমাতৃক দেশ। অথচ এই দেশের অধিকাংশ নদী আজ মৃতপ্রায়। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষ হাহাকার করছে, বিপন্ন আমাদের  কৃষি ব্যবস্থা। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা অববাহিকায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। মেঘনার উজানে ভারতের বরাক নদে টিপাই মুখ বাঁধ নির্মানের চেষ্টা চলছে। এখন আরেক বিপদের নাম হচ্ছে — আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। ৩৮ টি নদীকে ৩০ টি সংযোগ খালের মাধ্যমে যুক্ত করে এক অববাহিকার পানি অন্য অববাহিকায় নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে পানির সংকট আছে। ব্রম্মপুত্র ও গঙ্গা নদী থেকে পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ভারতের খরাপ্রবন এলাকা গুজরাট, হরিয়ানা, রাজ্স্থান, তামিলনাড়ুতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ডেকে আনবে। আমাদের পানির উৎস প্রধানত তিনটি—আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহ, বৃষ্টি এবং ভূ-গর্ভস্থ পানি । বাকি দুটোর অবদান যথাক্রমে ২৩% এবং ১.৫%। সাগরের পাশাপাশি নদীর পানি বাষ্পীভূত হয়েই বৃষ্টিতে পরিনত হয়। ভূ-গর্ভস্থ পানির ভান্ডারেও নদীর অবদান বিশাল। নদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রম্মপুত্র ও গঙ্গা উভয় নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করা হবে। এ দুটি নদী দিয়ে বর্ষাকালে পানি আসে দেশের মোট পানি প্রবাহের প্রায় ৮০%, শুকনো মৌসুমে ৯০ ভাগের বেশি। ফলে বাংলাদেশ ভারতের নদী সংযোগ প্রকল্পজনিত ক্ষয়-ক্ষতি অর্থনৈতিক মূল্যের চেয়েও প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিপর্যয় বড় হয়ে দেখা দেবে।

17097181_1893766054178400_5183385415899124945_o

আন্তর্জাতিক নদী আইন একের পর এক অমান্য করে ভারত আমাদের দেশের উজানে ব্যারেজ, ড্যাম, বাঁধ নির্মান করেছে। তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মান করে পানি প্রত্যাহারের ফলে গোটা উত্তারাঞ্চলের কৃষি, প্রান-প্রকৃতি, জনপদ বিপর্যায়ের মুখে পড়েছে। ১৯৯৩ সালে ৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের পানি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প শুরু হলেও সর্বোচ্চ সেচ সুবিধা দেওয়া যেত ১ লক্ষ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। বছর বছর এই পরিমান কমে চলতি বছর তা এসে ঠেকেছে মাত্র ৬ হাজার হেক্টরে। নদীতে পানি নেই ধুঁধুঁ বালুচর। কর্ম হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ মৎসজীবি, নৌকার কারিগর ও মাঝি। দেশ বঞ্চিত হচ্ছে মৎস সম্পদ থেকে।

১৯৭৩ সালে ভারত গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ নির্মান করে । ১৯৭৫ সালে ভারত বাংলাদেশ চুক্তিতে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি বাংলাদেশকে দেওয়ার অঙ্গীকার করে ভারত রাষ্ট্র। ১৯৭৭ সালের ভারত বাংলাদেশ ১ম গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তিতে যে কোন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে ন্যূনতম ৩৪ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার গ্যারান্টি দেয়। পাঁচ বছর মেয়াদি ঐ চুক্তির মেয়াদ উর্ত্তীন হলে ভারত ইচ্ছা মাফিক পানি ছাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি ২য় গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তি হয় যাতে ২৭৬৩৩ কিউসেক পানি দেওয়ার কথা আছে কিন্তু কোন গ্যারান্টি নেই। এই চুক্তির নবম ধারায় অন্যের ক্ষতি না করে এবং ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে অভিন্ন নদীগুলোর পানিবন্টন চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে। কিন্ত বাস্তব পরিস্থিতি হলো পদ্মা আজ মরুভূমি। পদ্মার ২০ টি শাখা নদী শুকিয়ে মরে গেছে, মুছে গেছে মানচিত্র থেকে। এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন গরু-মহিষের গাড়ি চলে। বিখ্যাত পদ্মার ইলিশ এখন ইতিহাস হয়ে গেছে।

তিস্তা, পদ্মার বাইরেও ভারত উত্তর দিনাজপুরে মহানন্দার পানি, নদীয়ার ভৈরব নদের পানি উত্তর চব্বিশ পরগনায়, বেতনা ও কোদলা নদীর পানি বাঁধ দিয়ে প্রত্যাহার করে। ফেনি নদীর পানি পাম্প দিয়ে তুলে গোমতি নদীর পানি ড্যামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করে। বিজনী, খোয়াই,মনু এবং বরাক নদের কিছু উপনদীর পানি জলকাঠামো দিয়ে নিয়ন্ত্রন করে এবং সেচ ও শহরে জল সরবরাহের জন্য প্রত্যাহার করে নিয়ে যায়। বিপরীতে পানির নায্য অধিকার বঞ্চিত হয়ে সুজলা-সুফলা শষ্য-শ্যামলা সবুজ বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মরুকরনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

দেশ স্বাধীন হবার পর যত সরকার ক্ষমতায় বসেছে তারা সকলেই ভারতের সাথে দূর্বল নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলেছে। বর্তমানে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ফ্যাসিবাদি সরকার ভারতের সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছে। ফলে অতীতের যে কোন সরকারের তুলনায়  ভারত তোষন নীতি নিয়ে চলছে এই আওয়ামী মহাজোট সরকার। কিন্ত সরকারের স্বার্থ আর জনগনের স্বার্থ কি এক? না তা এক নয়। শরীরের রক্তপ্রবাহ বন্ধ হলে যেমন মানুষের মৃত্যু ঘটে, তেমনি নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে বা বাধাগ্রস্থ হলে ভূ-খন্ডের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। সেটাই ধীরে ধীরে হচ্ছে। সে কারণে এক সময়ের ১২০০ নদীর দেশ এখন মাত্র ২৩০ টি নদী জীবিত। ১৯৭৬ সালে মাওলানা ভাসানী লক্ষ মানুষ নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে লং মার্চ করেছিলেন, মাওলানা ভাসানী যে আশংকা করেছিলেন— আজ তা নির্মম বাস্তব। শত হাহাকার করেও সেই প্রমত্তা পদ্মাকে ফিরিয়ে আনা যাবেনা, যদি না ভারতের নদী আগ্রাসনের বিরদ্ধে গন আন্দোলন গড়ে তোলা যায়। একই সাথে দেশের শাসক গোষ্টির নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে গন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসুন, তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সোচ্চার হই, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার চক্রান্ত রুখে দাঁড়াই।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments