প্রতিবাদী বর্ষবরণ পালন করে নারী লাঞ্ছনাকারীদের গ্রেফতার–বিচার দাবি
গত বছরের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-তে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। এই বর্বর ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। পাশাপাশি দেশব্যাপী নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-গণধর্ষণ-খুন অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বর্ষবরণে নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিচার ও নারী-শিশু নির্যাতন রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে এ বছর ১৪ এপ্রিল দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ষবরণ উদ্যাপন করেছে সমাজতন্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। বৈশাখের প্রথম প্রহরে রমনার বটমূলে প্রতিবাদী ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হয়। কর্মীরা সংগঠনের নাম সম্বলিত বেল্ট পরিধান করে রমনা পার্কের ২০টি পয়েন্টে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাইকে ব্যাজ পরিয়ে দেন। বিকাল চারটায় দুই সংগঠনের উদ্যোগে হাকিম চত্বর থেকে একটি প্রতিবাদী পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রেফতার, পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা মোকাবেলা করে তনু হত্যাসহ অব্যাহত গুম-খুন-ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল পালিত
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচারের দাবিতে এবং অব্যাহত গুম-খুন-ধর্ষণ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ডাকে গত ২৫ এপ্রিল সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত খুন-ধর্ষণের সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও হরতাল পালনকালে বিভিন্ন জেলায় ২৮ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশী হামলায় আহত হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মী। কোথাও পুলিশের সাথে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। হরতালে সারা দেশের মানুষ নৈতিক ও সক্রিয় সমর্থন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের বাইরেও স্কুল ছাত্ররা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে নিজ হাতে ‘তনু হত্যার বিচার চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলো।
হরতালের আগে প্রগতিশীল ছাত্র জোট এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ডাকে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩ এপ্রিল সফল ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়।
হরতাল পালনকালে রংপুরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রোকনুজ্জামান রোকন, কেন্দ্রীয় সদস্য আবু রায়হান বক্সি, কারমাইকেল কলেজ শাখার সভাপতি হুজাইফা সাকওয়ান জেলিড গুরুতরভাবে আহত হন। আরও আহত হন ছাত্র ফেডারেশনের জেলা আহ্বায়ক প্রত্যয়ী মিজান, রংপুর সরকারি কলেজের সভাপতি আসিফ সাজু। গ্রেফতার ও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ছাত্র ফ্রন্ট জয়পুরহাট জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাজিউল ইসলাম, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী।
পিএসসি পরীক্ষা বাতিল করতে হবে
গত ৩১ মে ’১৬ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছর থেকে অষ্টম শ্রেণী শেষে প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। আর প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার তদারকি করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই ষোষণার প্রেক্ষিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু এক বিবৃতিতে বলেন, “২০০৯ সাল থেকেই পঞ্চম শ্রেণীর পিইসি পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবি উঠলেও সরকার এ ব্যাপারে কোনো জোর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে সরকার শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের ধারাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। শিক্ষার্থীদের কোচিং-গাইড বই নির্ভরতা বেড়েছে। যে বয়সে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল জাগ্রত করে জগত-জীবনের রহস্য, তার কার্যকারণ সম্বন্ধ সম্পর্কে আনন্দদায়ক পাঠের মধ্য দিয়ে কৌতূহল নিবৃত্ত হবার কথা সেই সময় তারা পরীক্ষার চাপে পিষ্ট। শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধির কারণে অভিভাবকদের নাভিশ্বাস চরমে উঠেছে। তাই শিক্ষক-শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা অনেক আগে থেকেই এই পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। তার প্রেক্ষিতে সরকার অষ্টম শ্রেণীতে পিএসসি পরীক্ষা নেবার ঘোষণা দিলো।
২০১৮ সালের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার আয়োজন সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু তার কিছুই সরকার এখনো করতে পারেনি। অবকাঠামোগত আয়োজন সম্পন্ন না করে লোক দেখানো ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং মন্ত্রণালয় পরিবর্তনের ফলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই কেবল বাড়বে। একই স্কুল, একই শিক্ষক দিয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণ কিভাবে কার্যকর হবে? অষ্টম শ্রেণীর পর বাড়বে ঝরে পড়ার হার। বাস্তবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রাথমিক শিক্ষা ধ্বংসের আরেকটি পদক্ষেপ। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এবং শিক্ষার অধিকার সংকোচনের সূদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য থেকেই সরকার ‘পিএসসি’ পরীক্ষা চালু করতে চাইছে। ফলে আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি এবং অবিলম্বে এই পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাই।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি রাত ৮টা পর্যন্ত চালু রাখার দাবি মেনে নিল প্রশাসন
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ধারাবাহিক আন্দোলনের চাপে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে মাত্র ১০ ভাগ শিক্ষার্থীও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারে না, সেখানে এতদিন বিকাল চারটায় ক্যাম্পাস বন্ধ হবার সাথে সাথে লাইব্রেরিও বন্ধ হয়ে যেত। একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই অবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ, বই-জার্নালের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এত দিন দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি বরং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে লাইব্রেরির প্রায় অর্ধেক অংশ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলো। এর প্রতিবাদে ধারাবাহিক আন্দোলনের এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি রাত ৮টা পর্যন্ত চালু রাখা ও আগামী ছয় মাস পরে ল্যাব রুমটিকে লাইব্রেরির উন্মুক্ত রিডিং রুম করার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি গঠন
গত ২৭ মে ২০১৬ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ষোড়শ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সংগঠনের সপ্তদশ কমিটি গঠিত হয়। ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের কমন রুমে কমিটি পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। মশিউর রহমানকে আহবায়ক, মাহাথির মুহাম্মদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা। আরো উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড সাইফুজ্জামান সাকন এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু।
অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার প্রতিবাদ
আবারো বর্বরোচিতভাবে খুন হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী অধ্যাপনার পাশাপশি গান গাইতেন, গান শেখাতেন, নির্মাণ করেছিলেন গানের স্কুল, সম্পাদনা করতেন সাহিত্য পত্রিকা। এমন মানুষদেরও এদেশে আজ নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়।
এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক শরিফুল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইভা মজুমদার।
সমাবেশে নাঈমা খালেদ মনিকা বলেন, ‘দেশে একের পর এক পরিকল্পিত হত্যাকান্ড চলছে। গত বছর অভিজিৎ রায়, ফয়সল আরেফিন দীপনসহ পাঁচজন লেখক-ব্লগারকে খুন করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। আজ দেশ যেন খুনিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অথচ দেশের কর্তাব্যক্তিদের কোনো দায় নেই। অপরাধীরা একের পর হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে কিন্তু তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না। স্পষ্টতই প্রশ্ন ওঠে, ১৫-১৬টি গোয়েন্দাবাহিনী, পুলিশ-সামরিক বাহিনীর তাহলে কাজ কী? এই বিচারহীনতার কারণে একের পর হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে। সরকারকে এই ঘৃণ্য তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এরকম সংকটময় পরিস্থিতিতে, যখন সত্য-যুক্তি-ন্যায়বোধ ভূলুণ্ঠিত, তখন দেশের সকল শিক্ষিত-সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্ধকার যখন আজ গোটা জনপথকে গ্রাস করছে তখন নিশ্চুপ থাকার কোনো অবকাশ নেই। ধার্মিক মানুষদেরও এই চরম অধার্মিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
ক্ষমতাসীনদের হাতে শিক্ষকের মর্যাদাও ভুলুন্ঠিত
পুরো দেশময় গুম-খুন-হত্যা-ধর্ষণ চলছেই। বর্তমান অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতার ভিতটাই পঙ্কিলে ভরা। ফলে এই সরকারের মন্ত্রী-সাংসদরা কায়েমী স্বার্থে দেশের মানুষের ন্যূনতম ব্যক্তি মর্যাদাটুকু পর্যন্ত নির্লজ্জভাবে হরণ করতে উদ্ধত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনই একটি ঘটনা ঘটলো নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাই স্কুলে। স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশে ও পুলিশের উপস্থিতিতে একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠা-বসা করানোর মতো চরম লজ্জাজনক ঘটনা ঘটলো। সর্বস্তরের মানুষ ঘৃণায় লজ্জায় এর প্রতিবাদ করেছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট দেশব্যাপী এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৪র্থ সম্মেলনের খন্ড চিত্র
শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে…
আদর্শবান মানুষের জন্য মৃত্যু কখনো শেষ কথা নয়। কিন্তু আদর্শবান মানুষের মৃত্যুই অন্যদের কাঁদায় সবচেয়ে বেশি। গত ১৮ মে ২০১৬ অসংখ্য নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন বাসদ (মার্কসবাদী) রাঙামাটি জেলার সমন্বয়ক কমরেড বোধিসত্ব চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কমরেড বোধিসত্ব চাকমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তিনি ১৯৯৩ সালে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রথম রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কলেজ জীবন থেকে তিনি আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। ২০০০-০২ পর্যন্ত তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ এ জেএসএস-এর রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পার্বত্য অঞ্চলের শাসক শ্রেণির দীর্ঘদিনের অত্যাচার-নিপীড়নের বিপরীতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর স্বশস্ত্র লড়াইয়ের জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন।
একপর্যায়ে তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন। এই চিন্তাধারা গ্রহণের ধারাবাহিকতায় তিনি ২০১২ সালে আঞ্চলিক রাজনীতি ছেড়ে সরাসরি বাসদের সাথে যুক্ত হন এবং ২০১৩ সালে বাসদ (মার্কসবাদী) রাঙামাটি জেলার সমন্বয়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর একজন হয়ে মার্কসবাদী রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়া সহজ বিষয় ছিল না। কিন্তু তিনি তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাহাড় কিংবা সমতলে সর্বহারা সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই দায়ী। এই ব্যবস্থা ভাঙতে হলে প্রয়োজন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের। এই লড়াইয়ের পথেই কেবল পার্বত্য অঞ্চলের বিশেষ সমস্যার সমাধান হবে। পার্বত্য চট্ট্রগ্রামের সমস্যার সমাধান এদেশের সকল মানুষের মুক্তির সংগ্রামের সাথে যুক্ত। দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে এমন সত্যোপলব্ধি তাঁকে আমৃত্য পুঁজিবাদবিরোধী লড়াইয়ে যুক্ত রেখেছিল।
কমরেড বোধিসত্ব চাকমার অকাল মৃত্যুতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠী হারালো একজন অকৃত্রিম, দরদী বন্ধুকে। আমাদের সংগঠন ও দল হারালো একজন অত্যন্ত বড় মাপের ত্যাগী ও নিষ্ঠাবান নেতাকে। তাঁর জীবন সংগ্রাম আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা ও শক্তির উৎস হয়ে থাকবে।
কমরেড বোধিসত্ব চাকমা লাল সালাম
‘‘জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ। এই জীবন সে পায় মাত্র একটি বার। তাই, এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে বছরের পর বছর লক্ষ্যহীন জীবন যাপন করার যন্ত্রণাভরা অনুশোচনায় ভুগতে না হয়, যাতে বিগত জীবনের গ্লানিভরা হীনতার লজ্জার দগ্ধানি সইতে না হয়; এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষ বলতে পারে; আমার সমগ্র জীবন, সমগ্র শক্তি আমি ব্যয় করেছি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো আদর্শের জন্যে Ñ মানুষের মুক্তির জন্যে সংগ্রামে।” – নিকোলাই অস্ত্রভ্স্কি