
কেন্দ্রঘোষিত ‘দাবি মাস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ১ নভেম্বর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ঢাকায় আজ সকাল ১১.৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নেতা ফখ্রুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জহিরুল ইসলাম, নাঈমা খালেদ মনিকা, মাসুদ রানা, জয়দীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশের পর একটি মিছিল পল্টন-গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে। দলের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল শেরেবাংলা নগরস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।




বাসদ(মার্কসবাদী) উত্থাপিত আশু ১২ দফা দাবিনামা :
১. সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে মানসম্মত চিকিৎসার ব্যবস্থা চাই। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় আয়ের ৬% বা জাতীয় বাজেটের ২০% বরাদ্দ কর। বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাবাণিজ্য বন্ধ কর। ঔষধ, অক্সিজেন ও অন্যান্য চিকিৎসা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ কর।
২. করোনা ও নন-করোনা সকল রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা, আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর-এর ব্যবস্থা কর। চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা-প্রণোদনা নিশ্চিত কর। প্রতিদিন ৫০ হাজার করোনা পরীক্ষা, সকল জেলায় ল্যাব ও উপজেলায় পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ কর।
৩. গরীব-মধ্যবিত্তের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহে রেশনব্যবস্থা চালু কর। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বর্ধিত বিল প্রত্যাহার কর। রেল-বিআরটিসি’সহ সরকারি গণপরিবহন বাড়াও। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অল্প ভাড়ায় সরকারি আবাসন প্রকল্প বা কলোনী নির্মাণ কর। বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর কর।
৪. দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ কর, আয়ের সাথে সঙ্গতিবিহীন সম্পদ বাজেয়াপ্ত কর। কালো টাকার মালিক-অর্থপাচারকারী-ঋণখেলাপী-ব্যাংক লুটেরাদের গ্রেপ্তার কর।
৫. কৃষকদের ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে রাষ্ট্রীয় ক্রয় বাড়াও। স্বল্পমূল্যে সার-বীজ-কীটনাশক ইত্যাদি উপকরণ ও কৃষিযন্ত্র সরবরাহ কর, কৃষিখাতে সরকারী বরাদ্দ ও ভর্তুকি বাড়াও। মহাজনী ও এনজিও ঋণের সুদ মওকুফ কর, কিস্তি আদায় বন্ধ রাখ।
৬. রাষ্ট্রীয় পাটকল ও চিনিকল আধুনিকীকরণ করে চালু রাখ, লোকসানের জন্য দায়ীদের শাস্তি চাই। ছাঁটাই-বেতন কর্তন বন্ধ কর। অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের জন্য সরকারি অর্থসহায়তার ব্যবস্থা কর। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ কর। সব শ্রমিকের জন্য অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও ‘সর্বজনীন পেনশন’ ব্যবস্থা চাই।
৭. শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ চাই। সরকারিভাবে বেকার জনগোষ্ঠীর নাম তালিকাভুক্ত করে কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় শূন্যপদে নিয়োগ দাও, সরকারি চাকুরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত কর।
৮. করোনাকালে স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের ফি মওকুফ কর। বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন সরকারি তহবিল থেকে দাও। শিক্ষার্থীদের মেস-হোস্টেল ভাড়া রেয়াত করতে প্রশাসনিক উদ্যোগ চাই। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল কর। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ কর।
৯. নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে দোষীদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মাদক-পর্নোগ্রাফি-জুয়া নির্মূল কর। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন চাই। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত কর। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অঘোষিত সেনাশাসন প্রত্যাহার কর।
১০. স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান চাই। ক্রসফায়ার-এনকাউন্টারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, বেআইনী আটক, হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ কর। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারা বাতিল কর, গ্রেপ্তারকৃতদের জামিন দাও। প্রশাসন-বিচার বিভাগের দলীয়করণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বন্ধ কর।
১১. অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
১২. ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বন্ধ কর। তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় কর। জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত না করে ভারতকে বন্দর ও রাস্তাঘাট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া চলবে না। সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ব্যয়বহুল-ঝুঁকিপূর্ণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ কর।