• Home
  • About Us
  • Services
  • Blog
  • Contact Us
  • FAQ
  • Portfolio
  • Gallery
Monday, April 19, 2021
Socialist Party of Bangladesh (Marxist)
  • প্রচ্ছদ
  • পার্টি সংবাদ
  • প্রেস রিলিজ
  • সাম্যবাদ
  • অনুশীলন
  • ঐকতান
  • পুস্তিকা
    • পার্টির পুস্তিকা
    • অন্যান্য গ্রুরত্বপূর্ণ পুস্তিকা
  • যোগাযোগ
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • পার্টি সংবাদ
  • প্রেস রিলিজ
  • সাম্যবাদ
  • অনুশীলন
  • ঐকতান
  • পুস্তিকা
    • পার্টির পুস্তিকা
    • অন্যান্য গ্রুরত্বপূর্ণ পুস্তিকা
  • যোগাযোগ
No Result
View All Result
Socialist Party of Bangladesh (Marxist)
No Result
View All Result

নেশাসক্ত কিশোরীর হাতে পিতা-মাতা খুন কারা ঐশীদের অমানুষ করছে?

November 1, 2013
0 0
Publish Time 4:18 pm
0
SHARES
0
VIEWS
Share on FacebookShare on Twitter

এ জনারণ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যু আজ আর কোন ভয়াবহ ঘটনা নয়। একদিকে মুষ্টিমেয় ধনী, অপরদিকে প্রায় সবাই দরিদ্র – এরকম একটা বৈষম্যের সমাজে খেতে না পেয়ে, বিনা চিকিৎসায়, দুর্ঘটনায় কিংবা সন্ত্রাস-হানাহানির বলি হয়ে মানুষের মারা যাওয়াটা কোনো বড় খবর নয়। কিন’ কিছুদিন আগে মেয়ের হাতে পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ও মায়ের খুনের ঘটনাটি মানুষের মধ্যে প্রবল আলোড়ন তুলেছে। নৃশংস এ হত্যাকা-ের পর ঐশী নামের মেয়েটি এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। ঘটনাটি চমকে দেয়ার, ঘটনাটি বেদনার। মিডিয়াতে উথাল-পাথাল হচ্ছে ঐশী কত নষ্ট ছিল তার বর্ণনা মাহাত্ম্যে। মেয়েদের দোষ বর্ণনায় এ সমাজ বরাবরই সরব। তাই ঐশীর জীবনের কৃত অথবা অকৃত সকল কর্মের মুখরোচক বর্ণনায় মিডিয়া ব্যসত্ম। এতে তাদের কাটতি বাড়ছে। বুদ্ধিজীবীরা কলম ধরেছেন ঐশীদের মতো কিশোর-কিশোরীর মনসত্মত্ব অন্বেষণে। আর লড়্গ লড়্গ বাবা-মা চরম আশঙ্কায় তার সনত্মানের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। এমন হবে না তো তার ছেলে-মেয়ের পরিণতি?
এই পিতা-মাতারা তাদের সনত্মানকে প্রাণাধিক ভালবাসেন। সারাদিনের পরিশ্রম, সারাজীবনের অর্জন দিয়ে তারা তাদের সনত্মানদের বড় করতে চান। তাদের মঙ্গলের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন’ এমন কেন হচ্ছে? কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা অপরাধী হচ্ছে, নেশাসক্ত হচ্ছে, জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। কি তাদের অভাব? কেন তারা এরকম করে? এসব নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে প্রচুর। কিন’ থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। এধরনের খুনের ঘটনা এদেশে এখনো বিরল। যদিও ইউরোপ-আমেরিকায় এরকম ঘটনা কদিন পর পরই ঘটছে। সেখানে বাবা-মা কেন, পরিবারের সকল সদস্যদের খুন এমনকি স্কুলে ঢুকে কিংবা রাসত্মায় এলোপাথারি গুলি ছুড়ে খুন করার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এর পেছনে মনসত্মত্ব ঘেঁটে ‘সাইকো থেরাপী’ দিয়েও কোন ফল আসছে না।
কিশোর-কিশোরীদের মনসত্মত্ব বিশেস্নষণ করা গুরম্নত্বপূর্ণ, কিন’ মানুষের মন বা মননকাঠামো তার একানত্মই নিজস্ব বায়বীয় কোনো বিষয় নয়। সমাজের মধ্যে থেকে, বাসত্মব পরিবেশের সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে মানুষের চেতনা তৈরি হয়। সমাজকে দেখে সে শেখে। সমাজচিনত্মা তার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিচিনত্মা হিসেবে প্রকাশিত হয়। তাই এ ঘটনার কারণ খুঁজতে হবে সমাজের মধ্যেই। আর সমাধান প্রত্যেক কিশোর-কিশোরীর মধ্যে আলাদাভাবে খুঁজে লাভ নেই। সামাজিক কারণকে নির্মূল করতে পারলে গোটা প্রক্রিয়াকেই বন্ধ করা যাবে।
কি সেই কারণ? কি জন্য আজ কিশোর-তরম্নণদের মন বোঝা যাচ্ছে না? কি ঘটছে তাদের মনে?
এ সমাজ পুঁজিবাদী সমাজ। এখানে লাভের জন্য সব কিছু হয়। লাভের জন্য এখানে শুধু মানুষ হত্যাই হয় না, মনকেও আজ হত্যা করে এই পুঁজিপতিরা, তাদের দোসর সমাজপতিরা। কারণ, তাহলে মানুষকে লুট করে তারা যে সম্পদের পাহাড় জড়ো করছে তার বিরম্নদ্ধে টুঁ শব্দটি হবে না। তারা জানে নিঃস্ব, রিক্ত, বলহীন মানুষও লড়াই করতে পারে। অন্যায়ের বিরম্নদ্ধে দাঁড়াতে পারে। কিনত্ম মনুষ্যত্ব-মানবতাহীন, নীতিহীন মানুষ পারে না। তাই তারা জীবনের শুরম্নতেই মানুষের এ মনকে মেরে দিতে চায়। তার মাথা তুলে দাঁড়াবার পথ বন্ধ করে দিতে চায়।
সেই মনকে মারার জন্য আজ কত আয়োজন। হাজার হাজার কোটি টাকার নেশাদ্রব্য আসছে দেশে। শুধু ইয়াবাই ঢাকা শহরে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৭ কোটি টাকার। হরেক রকম নেশাদ্রব্য আর পর্ণোগ্রাফীতে বাজার ছেয়ে গেছে। ঢাকা শহরে পর্ণো ব্যবহারকারীদের ৭০ ভাগই স্কুলে পড়-য়া ছেলেমেয়ে। পুঁজিবাদ শেখাচ্ছে – জীবনকে উপভোগ কর, ফূর্তি কর। জীবন আর ক’দিনের, এর মধ্যে যত পার ভোগ করে যাও। নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে তারই প্রচার চলছে। এই উদ্দেশ্য নিয়েই সাহিত্য, গান তৈরি হচ্ছে। ভোগের এই বাঁধভাঙ্গা জোয়ার আজ রম্নখবে কে?
তাই নৈতিকতা-মনুষ্যত্বে আজ ভাটার টান। রাসত্মায় ভিখারীকে দেখে চোখের জল ফেলা আজ শিশুদের কাছে দুর্বলতা। বাবা-মা শেখাচ্ছেন,‘নিজের চরকায় তেল দাও। কাউকে সাহায্য করার দরকার নেই। নিজেরটা দেখ। ফার্স্ট হও। সবাইকে ছাড়িয়ে যাও। পেছনে তাকিও না।’ এই শিশুরা বড় হয়ে নিজেরটাই দেখে। বাবা-মাকেও দেখে না। কিন’ নিজেরটা দেখার যে দর্শন আজ গোটা সমাজকে আচ্ছন্ন করে আছে তার ফল কি? ফল হচ্ছে ঐশীর মতো মেয়েরা। যে বয়সে কিশোর-কিশোরীদের খেলার মাঠে দাপিয়ে বেড়াবার কথা, হাসির ছটায় আনন্দের বান বইয়ে দেবার কথা – সেই বয়সে তারা আজ মাদকাসক্ত। তারা আজ খুনী। রবি ঠাকুরের ‘বীরপুরম্নষ’ এর বীর খোকা আজ আর নেই। ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ এর অবুঝ খুকিও আর নেই। আজ সে মা-বাবা হত্যাকারী ঐশী। এই হল এ সমাজের আসল চেহারা।
সারা দুনিয়ায় আজ ব্যবসাতে মন্দা। পুঁজিবাদের আজ মরণাপন্ন দশা। কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিনবে কে? যাদের শোষণ করে এই বিপুল সম্পদ, এই মিল-কারখানা – তারাই তো আবার ক্রেতা। কিন’ তারা তো আজ নিঃস্ব। এখন বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের বিড়্গোভ কি দিয়ে ঠেকাবে? চাকরির বাজারে আসা বেকারদের ঢল কিভাবে সামলাবে? সামলাবে নেশা দিয়ে। তাই আজ মাদক ছড়িয়ে দাও। ভোগের দর্শন প্রচার কর। নিজেরটা দেখার দর্শন প্রচার কর। তাহলে বঞ্চিতেরা নিজেরা লড়াই করতে পারবে না শুধু নয়, কেউ তাদের পাশে দাঁড়াবে না। এই কারণে আজ আর কিশোর-যুবকদের সুস’ থাকার উপায় নেই। ভয়াবহ অন্যায়েও তাই কোন প্রতিরোধ নেই।
মাদকাসক্ত হয়ে টাকার জন্য বাবা-মাকে ব্যসত্ম করত ঐশী। আর বাবা-মা তাকে পরামর্শ দিতেন লেখাপড়া করতে, নিজেরটা দেখতে। একদিকে ভোগের দর্শন, অন্যদিকে নিজেরটা দেখার দর্শন। দুটোই পুঁজিবাদের তৈরি। কারণ ঐশীরা শুধু নয়, তাদের বাবা-মাও এ সমাজেরই মানুষ। ফলে কেউ কাউকে বোঝেনি। দুজনেই আত্মকেন্দ্রিক। এইভাবেই প্রতিদিন বলি হচ্ছে শত শত ছেলেমেয়ে।
এ পঁচে যাওয়া সমাজে কোন বাবা-মা চাইলেই তার সনত্মানকে রড়্গা করতে পারবেন না। কড়া শাসনে নিজের সনত্মানকে রেখে সমাজের নিয়মকে উল্টানো যাবে না। ধর্মের কঠোর অনুশাসনও পারবে না তাকে রম্নখতে। পারলে মাদ্রাসা শিড়্গক ধর্ষক হতেন না, সমকামিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হত না। চারপাশে এত নষ্ট চরিত্রের জন্ম হত না। কিছুদিন আগেও লড়্গ লড়্গ লোক ধর্ম রড়্গার জন্য পথে নামলেন। মেয়েদের উপর এত নির্যাতন, গরীবের উপর এত জুলুম – এসব দেখেও কেন ধর্মপ্রাণ ঐ লাখো মানুষ নামছেন না। আমাদের মায়েদের সম্মান রড়্গা করা কি ধর্ম নয়? গরীবের বাঁচার অধিকার কি ধর্মে নেই?
ঐশীরও বাঁচার ইচ্ছা ছিল। প্রথমে সে আত্মহত্যা করার চিনত্মা করেছিল। যদিও পরে আত্মহত্যা না করে সে বাবা-মাকে হত্যা করে। তখন সে একটা সুইসাইডাল নোট লিখেছিল। সেখানে সে বলেছে, ‘শুধু একটাই আফসোস থেকে গেল। জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল কোনটাই পূরণ করতে পারলাম না। এ পৃথিবীর মানুষ সবাইকে বুকের মাঝে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম সবই কেমন ধুয়েমুছে গেল – সবশেষ। আচ্ছা সবকিছু এমন কেন হয়ে গেল বলো তো?’
আজ শিড়্গিত সমাজ নিদ্রামগ্ন। কোনরকমে নিজেরটা চলে গেলেই হল। কোনভাবেই নিজের শানিত্ম ভঙ্গ করতে চান না। এই মরার দেশের মড়া শানিত্ম নিয়ে আমরা যারা বেঁচে আছি আমরা কি পারব ঐশীর এ প্রশ্নের জবাব দিতে? ঐশীর মতো আমাদেরই কোন বোন, সনত্মান যদি কোনদিন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে ‘সবকিছু এমন কেন হয়ে গেল?’ আমরা কি উত্তর দেব তাদের?
তাই আজ অন্যায়-অপসংস্কৃতি-মাদক এসবের বিরম্নদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। নির্মূল করা দরকার এদের উৎসকেও। পাশাপাশি বিদ্যাসাগর, শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরম্নল, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া – এইসব বড় বড় মনীষীর জীবনকে সামনে আনা দরকার। উন্নত সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটকের চর্চা দরকার। ধ্বংসের জীবনের উল্টোটাও যে দুনিয়ায় আছে – তাদের জানানো দরকার। ভোগবাদী আত্মকেন্দ্রিক জীবনাদর্শের বিপরীতে মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ ও উন্নত সমাজ গড়ার জন্য সংগ্রামের চেতনা জাগাতে পারলেই কেবলমাত্র পুঁজিবাদী সমাজের পংকিলতায় গা ভাসানো ঐশীর মত কিশোর-তরম্নণদের মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
নেশাসক্ত কিশোরীর হাতে পিতা-মাতা খুন
কারা ঐশীদের অমানুষ করছে?
এ জনারণ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যু আজ আর কোন ভয়াবহ ঘটনা নয়। একদিকে মুষ্টিমেয় ধনী, অপরদিকে প্রায় সবাই দরিদ্র – এরকম একটা বৈষম্যের সমাজে খেতে না পেয়ে, বিনা চিকিৎসায়, দুর্ঘটনায় কিংবা সন্ত্রাস-হানাহানির বলি হয়ে মানুষের মারা যাওয়াটা কোনো বড় খবর নয়। কিন’ কিছুদিন আগে মেয়ের হাতে পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ও মায়ের খুনের ঘটনাটি মানুষের মধ্যে প্রবল আলোড়ন তুলেছে। নৃশংস এ হত্যাকা-ের পর ঐশী নামের মেয়েটি এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। ঘটনাটি চমকে দেয়ার, ঘটনাটি বেদনার। মিডিয়াতে উথাল-পাথাল হচ্ছে ঐশী কত নষ্ট ছিল তার বর্ণনা মাহাত্ম্যে। মেয়েদের দোষ বর্ণনায় এ সমাজ বরাবরই সরব। তাই ঐশীর জীবনের কৃত অথবা অকৃত সকল কর্মের মুখরোচক বর্ণনায় মিডিয়া ব্যসত্ম। এতে তাদের কাটতি বাড়ছে। বুদ্ধিজীবীরা কলম ধরেছেন ঐশীদের মতো কিশোর-কিশোরীর মনসত্মত্ব অন্বেষণে। আর লড়্গ লড়্গ বাবা-মা চরম আশঙ্কায় তার সনত্মানের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। এমন হবে না তো তার ছেলে-মেয়ের পরিণতি?
এই পিতা-মাতারা তাদের সনত্মানকে প্রাণাধিক ভালবাসেন। সারাদিনের পরিশ্রম, সারাজীবনের অর্জন দিয়ে তারা তাদের সনত্মানদের বড় করতে চান। তাদের মঙ্গলের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন’ এমন কেন হচ্ছে? কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা অপরাধী হচ্ছে, নেশাসক্ত হচ্ছে, জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। কি তাদের অভাব? কেন তারা এরকম করে? এসব নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে প্রচুর। কিন’ থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। এধরনের খুনের ঘটনা এদেশে এখনো বিরল। যদিও ইউরোপ-আমেরিকায় এরকম ঘটনা কদিন পর পরই ঘটছে। সেখানে বাবা-মা কেন, পরিবারের সকল সদস্যদের খুন এমনকি স্কুলে ঢুকে কিংবা রাসত্মায় এলোপাথারি গুলি ছুড়ে খুন করার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এর পেছনে মনসত্মত্ব ঘেঁটে ‘সাইকো থেরাপী’ দিয়েও কোন ফল আসছে না।
কিশোর-কিশোরীদের মনসত্মত্ব বিশেস্নষণ করা গুরম্নত্বপূর্ণ, কিন’ মানুষের মন বা মননকাঠামো তার একানত্মই নিজস্ব বায়বীয় কোনো বিষয় নয়। সমাজের মধ্যে থেকে, বাসত্মব পরিবেশের সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে মানুষের চেতনা তৈরি হয়। সমাজকে দেখে সে শেখে। সমাজচিনত্মা তার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিচিনত্মা হিসেবে প্রকাশিত হয়। তাই এ ঘটনার কারণ খুঁজতে হবে সমাজের মধ্যেই। আর সমাধান প্রত্যেক কিশোর-কিশোরীর মধ্যে আলাদাভাবে খুঁজে লাভ নেই। সামাজিক কারণকে নির্মূল করতে পারলে গোটা প্রক্রিয়াকেই বন্ধ করা যাবে।
কি সেই কারণ? কি জন্য আজ কিশোর-তরম্নণদের মন বোঝা যাচ্ছে না? কি ঘটছে তাদের মনে?
এ সমাজ পুঁজিবাদী সমাজ। এখানে লাভের জন্য সব কিছু হয়। লাভের জন্য এখানে শুধু মানুষ হত্যাই হয় না, মনকেও আজ হত্যা করে এই পুঁজিপতিরা, তাদের দোসর সমাজপতিরা। কারণ, তাহলে মানুষকে লুট করে তারা যে সম্পদের পাহাড় জড়ো করছে তার বিরম্নদ্ধে টুঁ শব্দটি হবে না। তারা জানে নিঃস্ব, রিক্ত, বলহীন মানুষও লড়াই করতে পারে। অন্যায়ের বিরম্নদ্ধে দাঁড়াতে পারে। কিনত্ম মনুষ্যত্ব-মানবতাহীন, নীতিহীন মানুষ পারে না। তাই তারা জীবনের শুরম্নতেই মানুষের এ মনকে মেরে দিতে চায়। তার মাথা তুলে দাঁড়াবার পথ বন্ধ করে দিতে চায়।
সেই মনকে মারার জন্য আজ কত আয়োজন। হাজার হাজার কোটি টাকার নেশাদ্রব্য আসছে দেশে। শুধু ইয়াবাই ঢাকা শহরে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৭ কোটি টাকার। হরেক রকম নেশাদ্রব্য আর পর্ণোগ্রাফীতে বাজার ছেয়ে গেছে। ঢাকা শহরে পর্ণো ব্যবহারকারীদের ৭০ ভাগই স্কুলে পড়-য়া ছেলেমেয়ে। পুঁজিবাদ শেখাচ্ছে – জীবনকে উপভোগ কর, ফূর্তি কর। জীবন আর ক’দিনের, এর মধ্যে যত পার ভোগ করে যাও। নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে তারই প্রচার চলছে। এই উদ্দেশ্য নিয়েই সাহিত্য, গান তৈরি হচ্ছে। ভোগের এই বাঁধভাঙ্গা জোয়ার আজ রম্নখবে কে?
তাই নৈতিকতা-মনুষ্যত্বে আজ ভাটার টান। রাসত্মায় ভিখারীকে দেখে চোখের জল ফেলা আজ শিশুদের কাছে দুর্বলতা। বাবা-মা শেখাচ্ছেন,‘নিজের চরকায় তেল দাও। কাউকে সাহায্য করার দরকার নেই। নিজেরটা দেখ। ফার্স্ট হও। সবাইকে ছাড়িয়ে যাও। পেছনে তাকিও না।’ এই শিশুরা বড় হয়ে নিজেরটাই দেখে। বাবা-মাকেও দেখে না। কিন’ নিজেরটা দেখার যে দর্শন আজ গোটা সমাজকে আচ্ছন্ন করে আছে তার ফল কি? ফল হচ্ছে ঐশীর মতো মেয়েরা। যে বয়সে কিশোর-কিশোরীদের খেলার মাঠে দাপিয়ে বেড়াবার কথা, হাসির ছটায় আনন্দের বান বইয়ে দেবার কথা – সেই বয়সে তারা আজ মাদকাসক্ত। তারা আজ খুনী। রবি ঠাকুরের ‘বীরপুরম্নষ’ এর বীর খোকা আজ আর নেই। ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ এর অবুঝ খুকিও আর নেই। আজ সে মা-বাবা হত্যাকারী ঐশী। এই হল এ সমাজের আসল চেহারা।
সারা দুনিয়ায় আজ ব্যবসাতে মন্দা। পুঁজিবাদের আজ মরণাপন্ন দশা। কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিনবে কে? যাদের শোষণ করে এই বিপুল সম্পদ, এই মিল-কারখানা – তারাই তো আবার ক্রেতা। কিন’ তারা তো আজ নিঃস্ব। এখন বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের বিড়্গোভ কি দিয়ে ঠেকাবে? চাকরির বাজারে আসা বেকারদের ঢল কিভাবে সামলাবে? সামলাবে নেশা দিয়ে। তাই আজ মাদক ছড়িয়ে দাও। ভোগের দর্শন প্রচার কর। নিজেরটা দেখার দর্শন প্রচার কর। তাহলে বঞ্চিতেরা নিজেরা লড়াই করতে পারবে না শুধু নয়, কেউ তাদের পাশে দাঁড়াবে না। এই কারণে আজ আর কিশোর-যুবকদের সুস’ থাকার উপায় নেই। ভয়াবহ অন্যায়েও তাই কোন প্রতিরোধ নেই।
মাদকাসক্ত হয়ে টাকার জন্য বাবা-মাকে ব্যসত্ম করত ঐশী। আর বাবা-মা তাকে পরামর্শ দিতেন লেখাপড়া করতে, নিজেরটা দেখতে। একদিকে ভোগের দর্শন, অন্যদিকে নিজেরটা দেখার দর্শন। দুটোই পুঁজিবাদের তৈরি। কারণ ঐশীরা শুধু নয়, তাদের বাবা-মাও এ সমাজেরই মানুষ। ফলে কেউ কাউকে বোঝেনি। দুজনেই আত্মকেন্দ্রিক। এইভাবেই প্রতিদিন বলি হচ্ছে শত শত ছেলেমেয়ে।
এ পঁচে যাওয়া সমাজে কোন বাবা-মা চাইলেই তার সনত্মানকে রড়্গা করতে পারবেন না। কড়া শাসনে নিজের সনত্মানকে রেখে সমাজের নিয়মকে উল্টানো যাবে না। ধর্মের কঠোর অনুশাসনও পারবে না তাকে রম্নখতে। পারলে মাদ্রাসা শিড়্গক ধর্ষক হতেন না, সমকামিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হত না। চারপাশে এত নষ্ট চরিত্রের জন্ম হত না। কিছুদিন আগেও লড়্গ লড়্গ লোক ধর্ম রড়্গার জন্য পথে নামলেন। মেয়েদের উপর এত নির্যাতন, গরীবের উপর এত জুলুম – এসব দেখেও কেন ধর্মপ্রাণ ঐ লাখো মানুষ নামছেন না। আমাদের মায়েদের সম্মান রড়্গা করা কি ধর্ম নয়? গরীবের বাঁচার অধিকার কি ধর্মে নেই?
ঐশীরও বাঁচার ইচ্ছা ছিল। প্রথমে সে আত্মহত্যা করার চিনত্মা করেছিল। যদিও পরে আত্মহত্যা না করে সে বাবা-মাকে হত্যা করে। তখন সে একটা সুইসাইডাল নোট লিখেছিল। সেখানে সে বলেছে, ‘শুধু একটাই আফসোস থেকে গেল। জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল কোনটাই পূরণ করতে পারলাম না। এ পৃথিবীর মানুষ সবাইকে বুকের মাঝে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম সবই কেমন ধুয়েমুছে গেল – সবশেষ। আচ্ছা সবকিছু এমন কেন হয়ে গেল বলো তো?’
আজ শিড়্গিত সমাজ নিদ্রামগ্ন। কোনরকমে নিজেরটা চলে গেলেই হল। কোনভাবেই নিজের শানিত্ম ভঙ্গ করতে চান না। এই মরার দেশের মড়া শানিত্ম নিয়ে আমরা যারা বেঁচে আছি আমরা কি পারব ঐশীর এ প্রশ্নের জবাব দিতে? ঐশীর মতো আমাদেরই কোন বোন, সনত্মান যদি কোনদিন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে ‘সবকিছু এমন কেন হয়ে গেল?’ আমরা কি উত্তর দেব তাদের?
তাই আজ অন্যায়-অপসংস্কৃতি-মাদক এসবের বিরম্নদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। নির্মূল করা দরকার এদের উৎসকেও। পাশাপাশি বিদ্যাসাগর, শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরম্নল, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া – এইসব বড় বড় মনীষীর জীবনকে সামনে আনা দরকার। উন্নত সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটকের চর্চা দরকার। ধ্বংসের জীবনের উল্টোটাও যে দুনিয়ায় আছে – তাদের জানানো দরকার। ভোগবাদী আত্মকেন্দ্রিক জীবনাদর্শের বিপরীতে মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ ও উন্নত সমাজ গড়ার জন্য সংগ্রামের চেতনা জাগাতে পারলেই কেবলমাত্র পুঁজিবাদী সমাজের পংকিলতায় গা ভাসানো ঐশীর মত কিশোর-তরম্নণদের মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

Previous Post

পিএসসি’র সংশোধনী জাতীয় স্বার্থবিরোধী

Next Post

শাসকশ্রেণীর ফ্যাসিবাদী প্রবণতা প্রতিহত করতে বামপন্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন

Next Post

শাসকশ্রেণীর ফ্যাসিবাদী প্রবণতা প্রতিহত করতে বামপন্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 − one =

সাম্যবাদ পিডিএফ ভার্সন

  • সাম্যবাদ অক্টোবর ২০২০
  • সাম্যবাদ এপ্রিল ২০২০
  • সাম্যবাদ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • সাম্যবাদ আগষ্ট ২০১৯
  • সাম্যবাদ জুলাই ২০১৯
  • সাম্যবাদ এপ্রিল ২০১৯
  • সাম্যবাদ জানুয়ারি ২০১৯

  

সাম্যবাদ আর্কাইভ

সাম্যবাদ পুরোনো সংখ্যা

সম্প্রতি প্রকাশিত

  • মোদি বিরোধী বিক্ষোভ দমনে গুলি হত্যার নিন্দা জানিয়েছে বাসদ (মার্কসবাদী)
  • কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী হাসপাতালে
  • ভারতের সংগ্রামী কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন
  • লাগামহীন গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিধান রেখে আইন পাশের প্রতিবাদ
  • শোষণমুক্তির চেতনায় সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডা উর্ধ্বে তুলে ধরুন; মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জীবন-জীবিকার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হোন

আর্কাইভ

ফেসবুকে বাসদ (মার্কসবাদী)

Follow @spb_marxist

যোগাযোগ  : 

২২/১ তোপখানা রোড (৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা – ১০০০ ।
ফোন :  ৯৫৭৬৩৭৩
ই-মেইল :
https://spbm.org/

© 2019 Devloped by Sourav Bhuiyan. E-mail : sourav.anawar@gmail.com, Mobile : +8801670702270

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • পার্টি সংবাদ
  • প্রেস রিলিজ
  • সাম্যবাদ
  • অনুশীলন
  • ঐকতান
  • পুস্তিকা
    • পার্টির পুস্তিকা
    • অন্যান্য গ্রুরত্বপূর্ণ পুস্তিকা
  • যোগাযোগ

© 2019 Devloped by Sourav Bhuiyan. E-mail : sourav.anawar@gmail.com, Mobile : +8801670702270

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In