বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক আজ এক বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামন্ডপে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, গতকাল কুমিল্লার নানুয়ারদিঘী পূজামন্ডপে প্রতিমার পায়ের কাছে কোন এক ষড়যন্ত্রকারী মহল মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরান রেখে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে হিন্দু ধর্মালম্বী সাধারণ মানুষের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ নামিয়ে আনে। তিনি পরিকল্পিতভাবে কোরান অবমাননার ইস্যু সৃষ্টিকারী মহলকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অবিলম্বে চিহ্নিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি সারাদেশে যে সব হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেসব বর্বর ঘটনার সাথে জড়িতদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান। বিবৃতিতে তিনি কোন প্রকার পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে উত্তেজিত না হয়ে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা রক্ষা করার জন্য সকল ধর্মপ্রাণ ও গণতন্ত্রমনা জনসাধারণের প্রতি তিনি আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও উন্মক্ত জনতার মধ্যে যারা আহত-নিহত হয়েছেন তদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে চিকিৎসা-ক্ষতিপূরণ প্রদান ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।বিবৃতিতে বলা হয়, “এ কথা যেকোন সচেতন মানুষ বুঝতে পারেন যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন সাধারণ কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি প্রতিমার পায়ের কাছে অন্য কোন ধর্মালম্বী মানুষের ধর্মগ্রন্থ রেখতে পারেননা। আদিকাল থেকেই এখানে পূজা হয়ে আসছে, কখনো এধরণের ঘটনা ঘটেনি। ফলে যে বা যারা পূজামন্ডপে কোরান রেখেছে, তারা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্য থেকে পরিকল্পিতভাবে একাজ করেছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রের আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। আবার এই ঘটনার পর নানা গুজব ছড়িয়ে সংগঠিতভাবে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করা হয়েছে – এর সাথে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তি, একশ্রেণীর ধর্মীয় বক্তা-নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জড়িত। দেশের বুকে দীর্ঘদিন চেপে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসনের ফলাফল হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব বাড়ছে, যুক্তিবাদী মন নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। যে কারণে গুজব ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে মানুষের ধর্ম অনুভূতিকে সহজেই কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছে সরকারী-বেসরকারী নানা কায়েমী স্বার্থবাদী মহল। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় যে সব দল বা গোষ্টি এসেছে তাদের গণবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন এবং এর ধারাবাহিকতায় গত এক যুগ ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন এর জন্য দায়ী।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “কারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পূজামন্ডপে কোরান রেখেছে ও কারা সাম্প্রদায়িক আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে – তাদের চিহ্নিত ও উন্মোচন করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতার কথা বললেও ক্ষমতার স্বার্থে তারা নানাভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, কখনো আঁতাত ও ব্যবহার করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণে নেতৃত্বদানকারীদের দলীয় নমিনেশন দেয়া, হেফাজতে ইসলামের সাথে সখ্যতা, এসরকারের আমলে সংঘটিত অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়া ইত্যাদি এর প্রমাণ। ফলে এ গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে না পারলে অতীতের মত বর্তমান ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার অনিশ্চিত। আমরা দাবি জানাই – সরকারী তদন্তের পাশাপশি এধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংসতাগুলোর তদন্ত ও প্রতিকারের জন্য নাগরিক সমাজ ও নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী কমিশন গঠন করা হোক। পাশাপাশি —সাম্প্রদায়িকতার বিষ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে সার্বজনীন সেক্যুলার একমুখী শিক্ষা প্রচলন এবং দেশে গণতান্ত্রিক-মানবিক চেতনা ও সংস্কৃতির বিস্তারে উদ্যোগী হওয়া দরকার।”
