• Home
  • About Us
  • Services
  • Blog
  • Contact Us
  • FAQ
  • Portfolio
  • Gallery
Tuesday, April 20, 2021
Socialist Party of Bangladesh (Marxist)
  • প্রচ্ছদ
  • পার্টি সংবাদ
  • প্রেস রিলিজ
  • সাম্যবাদ
  • অনুশীলন
  • ঐকতান
  • পুস্তিকা
    • পার্টির পুস্তিকা
    • অন্যান্য গ্রুরত্বপূর্ণ পুস্তিকা
  • যোগাযোগ
No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • পার্টি সংবাদ
  • প্রেস রিলিজ
  • সাম্যবাদ
  • অনুশীলন
  • ঐকতান
  • পুস্তিকা
    • পার্টির পুস্তিকা
    • অন্যান্য গ্রুরত্বপূর্ণ পুস্তিকা
  • যোগাযোগ
No Result
View All Result
Socialist Party of Bangladesh (Marxist)
No Result
View All Result

সন্দেহ, নিষ্ঠুরতা, ভয় – আমাদের বদলে যাওয়া সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল

August 14, 2019
0 0
Share on FacebookShare on Twitter

একটা কথা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে – মানুষের মন পাল্টে যাচ্ছে। মানুষকে এখন চেনা যায় না, বোঝা যায় না। বেশ কিছুদিন ধরে দেশে যেসকল ঘটনা ঘটছে, তাতে এ দেশটাকে চিনতে খুব কষ্ট হয়। আমরা মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছিনা; বন্যা, খরা কিংবা ডেঙ্গুর কথাও নয়। যে সংকটের কথা আমরা বলতে চাই, তার উৎস মানব মনের অনেক গভীরে। টাকার অভাব মানুষের জীবনযাপনে অনেক কষ্ট তৈরি করে ঠিক, কিন্তু মানবিক সংকট সমাজের সামাজিক সত্তাকে ভেতর থেকে মেরে দেয়। যৌথকে ব্যক্তি করে, সকল নির্মল ভালোবাসাকে নিয়ে যায় স্বার্থের চোরাগলিতে।

কী সেই মানবিক সংকট? আমরা এই সময়ের পত্রিকার খবরগুলোর দিকে তাকাই। বেশ কিছু নৃশংস ঘটনা আমাদের ভাবাবে। অপরাধমূলক কর্মকান্ড কোমল ব্যাপার নয়, এগুলো সবসময় নৃশংসই হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে তার সংঘটন প্রক্রিয়া দেখলে চমকে উঠতে হয়। আবার প্রতিদিন সমাজের মানুষের পারস্পরিক আদান-প্রদান, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, প্রত্যেকটি ব্যক্তির সামাজিক মানুষ হিসেবে যে ভূমিকাটা থাকে, তা প্রতিনিয়ত কমছে। সামাজিক মানুষ ক্রমেই ব্যক্তি মানুষ হয়ে উঠছে, সামাজিক দায় বলে তার মধ্যে কোনো বোধ কাজ করছে না। অথচ সমাজ ছাড়া ব্যক্তির আলাদা কোনো অস্তিত¦ ভাবাই যায় না। আমাদের এ অঞ্চলের রয়েছে দীর্ঘদিনের সহযোগিতার সংস্কৃতি। যে নতুন সমাজ এখন আমরা দেশে জন্মাতে দেখছি, তার সাথে আমাদের অতীত ধারাবাহিকতা যেন মেলে না।

যা হওয়ার কথা ছিল, আর যা হলো!

সাধারণভাবে কথাগুলো না বলে আমরা ঘটনায় যাই। গত ২৬ জুন বরগুনা শহরে বরগুনা সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। সংঘবদ্ধভাবে তাকে কোপানো হয়েছে শত মানুষের সামনে জনাকীর্ণ একটি রাস্তায়। মানুষ দাঁড়িয়ে দেখেছে, ভিডিও করেছে – কেউ এগিয়ে যেতে সাহস করেনি। পত্রিকায় এসেছে দু’একজন তারপরও সাহস করেছিলেন, কিন্তু ঘাতকরা তা গ্রাহ্য করেনি। যারা মেরেছে তাদের বয়স বেশি নয়। তারা তরুণ। এই বয়সে তাদের লেখাপড়ায় মনযোগী থাকার কথা। নিজেকে গড়ে তোলার জন্য খেলাধূলা করার কথা, বিতর্ক করার কথা, গান শেখার কথা। কিন্তু তারা কেউ লেখাপড়ায় মনযোগী হয়নি। বিতর্ক শেখেনি, গলায় গান তুলেনি। হাতে অস্ত্র তুলেছে। বাস্তবে অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

খুন আগেও হয়েছে, তবে এমন খুব একটা নয়। এর আগে এই প্রক্রিয়ায় আমরা বিশ্বজিতের খুন দেখেছিলাম। তারা যুবক ছিল, সরকারি দলের ক্যাডার ছিল। এরা তুলনামূলকভাবে কমবয়স্ক, তরুণ। দেশের কিশোর-তরুণরা অল্প বয়সে অপরাধী হচ্ছে। নির্মম আনন্দ, বীভৎস মজায় মজে যাচ্ছে। অল্পবয়সী ছেলেরা কিশোর গ্যাং তৈরি করে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে, বন্ধুকে খুন করছে, মেয়েদের ধর্ষণ করছে। এরা ভাল মনের নয়, পরিবার থেকে তারা কিছু শেখেনি, তারা বখে গেছে, কথা শোনেনাÑ এ কারণে কি এমন হচ্ছে? এটা কি কেবলমাত্র একটা পারিবারিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যাপার, নাকি এর কোন আর্থসামাজিক কারণ আছে? সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যাপারও কি দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু?

পারিবারিক ও মানবিক সম্পর্কগুলো ভেঙে পড়েছে

আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কিংবা ভায়ে ভায়ে সম্পর্কও আজ তার মাধুর্য্য পরিত্যাগ করেছে। একান্নবর্তী পরিবার ভাঙা শুরু হয়েছে অনেক আগেই, অর্থনৈতিক নিয়মেই। কিন্তু অর্থনৈতিক ব্যাপারটাই সব নয়, এসব সম্পর্কে নৈতিক জায়গা বলে একটা ব্যাপার থাকে। চুলা আলাদা হলেও আগে দেখা যেত বাড়ির বাচ্চাদের সে ব্যাপারে তেমন কড়াকড়ি নেই। কখনও সে মায়ের হাঁড়িতে, কখনও সে চাচীর হাঁড়িতে খাচ্ছে। সে দিনও গেছে। কয়েকদিন আগের খবর, কুমিল্লায় এজলাস থেকে তাড়া করে বিচারকের কক্ষে নিয়ে গিয়ে ফুফাতো ভাইকে হত্যা করেন আসামী হাসান। তিনি ও তার ফুফাতো ভাই ফারুক একই হত্যা মামলার আসামী ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের একজনের নানা ও অন্যজনের দাদা হাজী আব্দুল করিমকে তারা দুই ভাই মিলে খুন করেছেন।

এ ধরনের ঘটনা চিন্তার উদ্রেক না করে পারে না। এই ঔদ্ধত্য ও উন্মত্ততা কিছুদিন আগেও বিরল ছিল, এখন অহরহ। বৃদ্ধা মাকে পিটিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়া, বৃদ্ধ বাবাকে মারতে মারতে একেবারে খুনই করে ফেলা, শিশুদের পিটিয়ে হত্যা করা, পেটানোর ভিডিও পোস্ট করা – এসব ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকায় আসছে। ফেসবুকে কিংবা ইউটিউবে আপলোড করা এসব ভিডিওর দর্শকও কম নয়। অনেকেই দেখছেন। ‘এত নিষ্ঠুর যে দেখা যায়না’, ‘এত নোংরা যে শোনা যায় না’ – এই বাক্যগুলো আজ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আগে অনেকেই ছোট ছেলেমেয়েদের না খেতে পাওয়া শুকনো মুখ দেখে থাকতে পারতেন না। সিনেমায় এরকম দৃশ্য দেখলেও কেঁদে গায়ের কাপড় ভিজিয়ে ফেলতেন। বাস্তব জীবনে ঘরের পাশে কিংবা রাস্তায় দেখলে ছুটে গিয়ে সাহায্য করতেন। সেই সময় এখন নেই। কান্নার সিনেমা এখন চলে না। এ্যাকশন, রোমান্টিক আর কমেডির যুগ এখন। এখন ঘরে ঘরে দম আটকানো কান্না, কিন্তু বাইরে তার প্রকাশ নেই। প্রকাশিত হলে স্নেহ-ভালবাসার চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে রাখারও কেউ নেই। মানসিক দিক থেকে চূড়ান্ত অভাবী, অবলম্বনহীন ও শেকড়হীন লক্ষ লক্ষ পরিবারের জন্ম হচ্ছে প্রতিদিন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এদের মধ্যে চলছে প্রবল টিকে থাকার প্রতিযোগিতা। এই টিকে থাকার প্রতিযোগিতার কারণে প্রতারণা, লোককে ঠকানো এসব এতো বেড়েছে যে কেউ সাহায্য চাইলে সে সত্যিই অসহায় কিনা একথাও অনেকে এখন যাচাই করে নিতে চান। একারণে রাস্তায় ভিখারি ভিক্ষা চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করেন, খোঁড়া লোককে পরীক্ষা করে দেখেন সে আসলেই তা কিনা। অসহায় লোকের দুঃখের বিবরণ বিশ্বাস করেন না। সন্দেহপ্রবণ মন এই সময়ের মননজগতের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

আমাদের মা ও বোনেরা

একাত্তরে দেশের মা-বোনেরা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। প্রত্যক্ষ লড়াই করেছেন, ইনফরমার হিসেবে কাজ করেছেন। লক্ষ লক্ষ মেয়েরা ধর্ষিত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মায়ের সামনে তাঁর শিশুসন্তানকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছে মিলিটারিরা, তবু মা মুক্তিবাহিনীর খোঁজ দেয়নি। সেই একই দেশে সাত বছরের শিশু সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হল। গত ৬ মাসে ৬৩০ জন নারী ও ২৫৮ জন শিশু ধর্ষিত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ১০৫ জন নারী ও ৪৩ জন শিশু ধর্ষিত হয়েছেন। বাসে, ট্রেনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ঘরের ভেতরে কোথাও মেয়েরা নিরাপদ নয়, কোথাও তারা স্বস্তিতে নেই। পাশে যে দাঁড়ায় সে বাবার মতো, তবে বাবা নয়; ভাইয়ের মতো, তবে ভাই নয়। তার পরিচয় সে পুরুষ। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। কিন্তু ব্যতিক্রম তো হওয়ার কথা অস্বাভাবিকতার, অমানবিকতার। অথচ আজ স্বাভাবিকতাই ব্যতিক্রম। সহানুভূতি ও মমত্ব প্রদর্শনের মতো সাধারণ মানবীয় গুণাবলী আজ যেন মহৎ চরিত্রের কাজ। কাজ শেষে বাড়ি ফেরত মেয়েরা তাদের চলাচলের সীমার মধ্যে কাউকে খুঁজে পায়না যার দিকে পরম ভরসায় তাকানো যায়। নির্যাতনের কোন বিচার হয় না, অপমানের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। বিচার চাইলেই প্রশ্ন ওঠে, সন্ধ্যার পরও বাইরে কেন কিংবা ওই রাস্তায় গেলে কেন? এডিস মশা থেকে শুরু করে পাড়ার মাস্তান সবার ব্যাপারেই সাবধান থাকো। সাবধান থাকাই পরিবারের নির্দেশ, রাষ্ট্রের পরামর্শ। ব্যক্তি তুমি সাবধান হও, রাষ্ট্র কোন দায়িত্ব নেবে না – এটাই পুঁজিবাদী সমাজে জনগণের ভোট ও ট্যাক্সের সম্মানজনক প্রতিদান।

আইনের চোখে সবাই সমান – তাই কী ?

গণতন্ত্রের উন্মেষকালে আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় এই কথা এসেছিল যে, ‘আইনের চোখে সবাই সমান’। কিন্তু আজ এ বাক্য অকার্যকর। প্রকাশ্যে খুন করা এই কিশোর তরুণরা জানে তাদের হাতে খুন হলে তার বিচার হবে না। যারা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে তারাই তাদেরকে রক্ষা করবে। বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায় বের হলো কিছুদিন আগে। নিম্ন আদালত আটজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন, উচ্চ আদালত তার ছয়জনকে রেহাই দিলেন। প্রকাশ্য রাস্তায় তামিল সিনেমার দৃশ্যের মতো খুন করা হল, তার ছবি উঠল, পত্রিকায় খুনিদের পরিচয় ঠিকানাসহ প্রকাশিত হল। সেই খুনের মৃত্যুদন্ড থেকে আইনি পথেই দু’জন বাদে সবাই রেহাই পেয়ে গেলেন। পুলিশ হত্যাকান্ডের আলামত ঠিকমতো সংরক্ষণ করেনি, এমনকি পোস্ট মর্টেম রিপোর্টও ঠিকঠাক করা হয়নি – এসব দেখে আদালত পুলিশকে মৃদু ভর্ৎসনা করলেন।

মানুষ প্রতিটি ঘটনা থেকে শেখে। সে শিখেছে যে, এসকল খুনের কোন বিচার হয় না। এজন্য তারা এই খুনিদের ভয় পায়। তাদেরকে খুন করতে দেখলে কেউ আটকানোর জন্য এগিয়ে যায়না। মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করে। বিচারহীনতাই এই ভয় সৃষ্টি করেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর ভয়ের সংস্কৃতি – এই দুই সংস্কৃতি তাদেরকে নির্বাক করে রেখেছে।

প্রতিটি অন্যায়-অপকর্মের সাথে সরকারি দল যুক্ত। আওয়ামী লীগের সমর্থন তাদেরকে প্রতিপত্তিশালী করে। অভাবনীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি তরুণ-যুবকদের চরিত্রকে করে লাগামছাড়া। বিরাট সংখ্যক বেকার যুবকরা সরকারি দলের ক্যাডার হয়ে কাজ করে। এদেরকে শাসকশ্রেণির দল সময়মতো কাজে লাগায়, তাদেরকে ভয়ঙ্কর চরিত্র হিসেবে মানুষের সামনে নিয়ে আসে, তাদের দিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তারা পাড়ায় ঘর বানানো, দোকান ভাড়া দেয়া থেকে শুরু করে বিয়ে – মুখেভাত পর্যন্ত সকল ব্যাপারে মাথা গলায়। এলাকায় মাদকের ব্যবসা তাদের হাত দিয়ে হয়। তাদের পকেটে কাঁচা টাকা আসে আসে। অল্প বয়সে তারা হাল ফ্যাশনের বাইক চালায়, দামী রেস্টুরেন্টে খায়। তাদের দাপটে এলাকা কাঁপে। প্রত্যেকটি এলাকায় সুসংহত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ তার দশ বছরেরও বেশিসময়ের এই শাসনামলে। এদের বিচার হয় না। আবার কখনও পত্রপত্রিকার আসার কারণে কিংবা সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণহীন কর্মকান্ডে প্রশ্নের মুখে সরকার পড়ে গেলে তাদের জন্মদাতারা অবলীলায় তাদের ঝেরে ফেলে দেয়। এর জন্য বেশি পিছনে যাওয়ার দরকার নেই। এই ক’দিন আগে রিফাত হত্যার অন্যতম আসামী নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার ঘটনা স্মরণ করলেই হবে। এটা আরেক দেশ, সেখানে হাজারে হাজারে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করা হয়, ধ্বংস করা হয়, সৃষ্টিকর্তা থাকেন অদৃশ্য। কিশোর নয়নকে নয়ন বন্ড হিসেবে জন্ম দিয়েছে এই রাষ্ট্রব্যবস্থা, মেরেছেও তারাই।

কেন ঘটছে এসব?

আমরা বলেছিলাম বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতি সামাজিক প্রতিরোধশক্তিকে অনেকখানি স্থিমিত করেছে। এই খোলা রাস্তায় কোপানোর আরেকটা প্রভাব আছে। দাস বিদ্রোহ দমন করার পর বিদ্রোহীদের মেরে রাস্তায় ক্রুশবিদ্ধ করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, যাতে অন্য দাসরা দেখে বুঝতে পারে বিদ্রোহের শাস্তি কী হতে পারে। প্রকাশ্য রাস্তায় কোপানো কিংবা পিটিয়ে মেরে ফেলা, তারপর বিচার না হওয়া – এসকল ব্যাপার একটা ছোট বার্তা দেয় মানুষের কাছে। দেখ, তুমি বিদ্রোহ করলে তোমার অবস্থা কী হতে পারে। প্রতিবাদের পরিণতি কী তুমি বুঝে নাও।

কিন্তু এই অন্যায়, অত্যাচার, অসাম্য, তীব্র অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ ও দৈনন্দিন এই অসহনীয় অপমান কি ভুলে যায় মানুষ? ভুলে না। তীব্র ক্ষোভ জমা হতে থাকে ভেতরে ভেতরে। সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঘৃণায় ফুঁসতে থাকে সে কিন্তু বিদ্রোহের রাস্তা পায় না।

এই মানুষেরা তাদের এই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটাচ্ছে ক্ষুদ্র শত্রুর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। বেশ কয়েকবছর আগে দেখা গিয়েছিল যে ধরা পড়ার পর পকেটমারকে উত্তেজিত জনতা পুড়িয়ে মারছে। এরকম কয়েকটি ঘটনা পরপর ঘটেছিল। গত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, গণপিটুনিতে নির্বিচারে মানুষকে খুন করা হচ্ছে। গত ছয়মাসে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৩৬ জন। জুলাইয়ের ২৪ তারিখ পর্যন্ত সেটা গিয়ে ঠেকেছে ৪৩ জনে। এ আরেক চিত্র!

রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান আজ মানুষের আস্থা হারিয়েছে। মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। প্রকাশ্য রাস্তায় খুন হয়। অপরাধী প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়ায়। যারা খুনিকে ধরবে সেই পুলিশ-র‌্যাবের বিরুদ্ধে রয়েছে খুন-ছিনতাই-চাঁদাবাজীর অভিযোগ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা এখন টাকা নিয়ে খুন করেন অর্থাৎ খুনের কন্ট্রাক্ট নেন। দেশের বিচারব্যবস্থা প্রধান বিচারপতিকেই সুবিচার দিতে পারেনি। উপরন্তু উচ্চ আদালতে বড় বড় অপরাধীর জামিন হচ্ছে, তারা না পারলে দেশের রাষ্ট্রপতি নিজ ক্ষমতাবলে খুনের আসামীর সাজা মওকুফ করে দিচ্ছেন। পার্লামেন্টে বসে যারা আইন প্রনয়ণ করেন তারা একটা অবৈধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দলদাস দালাল শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এরপরও এক একটা নিয়োগে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়া হচ্ছে। চাকরি পেয়েই এই নিয়োগপ্রাপ্তরা ঘুষ-দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছেন। হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানেরও চিত্র একই। ফলে কোথাও কোন পাবলিক সার্ভিস নেই। বিচারালয়ে বিচার নেই, হাসপাতালে চিকিৎসা নেই, এলাকায় শান্তি নেই, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেই ‘কন্ট্রাক্ট কিলার’; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই, সরকারের তাবেদারদের নিয়োগ ও নিয়োগ বাণিজ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মহত্ত¡কেই কলংকিত করেছে। টাকা দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা চাকরি পেয়ে সেই টাকা দ্রুত উত্তোলনের জন্য মনযোগী হন। ফলে শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলেই সকল রকম নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে ঘিরে যে কান্ড হয়ে গেল তাতে আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখেনা যে তারা ক্ষমতার জন্য কী করতে পারেন। এই বিদ্যাপীঠের এগারো শতাধিক শিক্ষক ৩০ ডিসেম্বরের কারচূপির নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।

ফলে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান একযোগে ভেঙে পড়েছে। কোন জবাবদিহিতা কোথাও নেই, নেই ন্যায়বিচার। মানুষ একদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আস্থা হারাচ্ছে। সে জানে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া নেই, হাসপাতালে চিকিৎসা নেই – কোথাও গিয়ে সে মানুষের অধিকার নিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। তার টাকা কিংবা ক্ষমতার জোর থাকলে সবই তার হবে। তখন মানুষ জীবন যাপনের জন্য আর কোনদিকে তাকানোর সময় পায় না। অর্থ উপার্জনই তার সমস্ত কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়। এ করতে গিয়ে নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ বিসর্জন দিচ্ছে অনেকে। সামাজিক সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে। মানুষ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে মনে করছে সবাই তাকে ঠকিয়ে নিচ্ছে। সবাই ধান্ধাবাজ।

ফলে ন্যূনতম সন্দেহে সে ক্ষিপ্ত হচ্ছে। নালিশ করলে বিচার পাবে না জেনে নিজেই শাস্তি দিতে যাচ্ছে। আবার ধর্ম-বর্ণ-জাত-বিভেদ-ধনী-গরীব এসকল সামাজিক বিভক্তিকে কেন্দ্র করে যে ধরনের রাগ-ঘৃণা মানুষের মধ্যে কাজ করে, সেগুলোও কোন একটা ভুল সন্দেহ কিংবা উত্তেজনা কিংবা ক্ষোভকে উপলক্ষ করে ভয়ংকর পরিণতির দিকে মোড় নিচ্ছে। এই পুরোটাই একটা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সামাজিক ফলাফল।

আর্থসামাজিক ব্যবস্থাটি কেমন আমাদের দেশে

আমাদের দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে এটি একটি পুঁজিবাদী অর্থনেতিক ব্যবস্থা। এখানে লাভের জন্য, মুনাফার জন্য দেশের সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। বড় বড় শিল্পপতি-পুঁজিপতিরা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, এককথায় গোটা দেশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের উদগ্র মুনাফা লাভের বাসনায় তারা মানুষ বলে দেশে কিছু রাখছে না। কয়েকটি বড় বড় কর্পোরেট হাউজ দেশের সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে, সুন্দরবন থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করছে। এই শোষণ নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালাতে গিয়ে যা তারা যা করছে তার পরিণতিই হচ্ছে আমাদের বর্তমানের এই সমাজ। অনেকে বলেন, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অন্যান্য দেশেও আছে, সব জায়গায় তো এরকম বিশৃঙ্খলা, শোষণ, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা নেই। বাস্তবে তারা ওই ব্যবস্থাগুলোর গভীরে ঢোকেননি। বড় বড় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো সারা পৃথিবীর সম্পদ লুটে নিয়ে তাদের দেশে জড়ো করে। ফলে তাদের কাড়াকাড়ির চরিত্র আমাদের মতো নয়। কিন্তু যেহেতু এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যই অস্থিরতা এবং পুঁজিপতিদের নিজেদের অর্জিত মুনাফা আরেকদিকে তাদেরই কবর খোঁড়ে – তাই এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর দাঁড়ানো সমাজ কখনই বিকাশমান কোন সমাজ হতে পারে না। আমেরিকার স্কুলে ও রাস্তাঘাটে ‘মাস শুটিং’, ইংল্যান্ডে অল্প বয়সেই গর্ভবতী হয়ে পড়ার জন্য স্কুলে স্কুলে ‘অ্যাবরশন সেন্টার’ চালু করা – এসব ঘটনা সেসব দেশের কোন সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থার চিত্র আমাদের দেয় না। ফলে এই অস্থিরতা, এই দূরত্ব, এই নিষ্ঠুরতা, এই একাকীত্ব – একটা কারণের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তা হলো ‘পুঁজিবাদ’। সামাজিক-পারিবারিক সংকট অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।

এই প্রবল ক্ষয়ের স্্েরাত ঠেকাতে হলে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলকে সামিল হতেই হবে। দেশে দেশে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করার বিরুদ্ধে, নারীকে ভোগ্যবস্তু হিসাবে উপস্থাপনের বিরুদ্ধে, নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে-সাহিত্যে অশ্লীলতার প্রচারের বিরুদ্ধে, ধনীগরীবের বৈষম্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সকলকে একযোগে রাস্তায় নামতে হবে। এ না হলে বিবেক মনুষ্যত্বের এই উথালপাতাল ভাঙন রোধ করা যাবে না। পৃথিবী আর মানুষের থাকবে না। বিদ্রোহই এ বিকৃতিকে রুখতে পারে, বিদ্রোহই এ সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব কাটাতে পারে।

সাম্যবাদ আগষ্ট ২০১৯

Previous Post

মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী 

Next Post

ফ্যাসিবাদ  ও সংস্কৃতি

Related Posts

লাগামছাড়া উন্নয়ন, বিপর্যস্ত জনজীবন
সাম্যবাদ

লাগামছাড়া উন্নয়ন, বিপর্যস্ত জনজীবন

August 14, 2019
দশ বছরে সাতবার বাড়লো গ্যাসের দাম
সাম্যবাদ

দশ বছরে সাতবার বাড়লো গ্যাসের দাম

August 14, 2019
পাটকলের শ্রমিক – আবারও নামতে হবে রাস্তায়
সাম্যবাদ

পাটকলের শ্রমিক – আবারও নামতে হবে রাস্তায়

August 14, 2019
সমাজতন্ত্র : কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক
সাম্যবাদ

সমাজতন্ত্র : কাল্পনিক ও বৈজ্ঞানিক

August 14, 2019
ফ্যাসিবাদ  ও সংস্কৃতি
সাম্যবাদ - আগষ্ট ২০১৯

ফ্যাসিবাদ  ও সংস্কৃতি

August 14, 2019
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী 
সাম্যবাদ

মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী 

August 13, 2019
Next Post
ফ্যাসিবাদ  ও সংস্কৃতি

ফ্যাসিবাদ  ও সংস্কৃতি

সাম্যবাদ পিডিএফ ভার্সন

  • সাম্যবাদ অক্টোবর ২০২০
  • সাম্যবাদ এপ্রিল ২০২০
  • সাম্যবাদ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • সাম্যবাদ আগষ্ট ২০১৯
  • সাম্যবাদ জুলাই ২০১৯
  • সাম্যবাদ এপ্রিল ২০১৯
  • সাম্যবাদ জানুয়ারি ২০১৯

  

সাম্যবাদ আর্কাইভ

সাম্যবাদ পুরোনো সংখ্যা

সম্প্রতি প্রকাশিত

  • মোদি বিরোধী বিক্ষোভ দমনে গুলি হত্যার নিন্দা জানিয়েছে বাসদ (মার্কসবাদী)
  • কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী হাসপাতালে
  • ভারতের সংগ্রামী কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন
  • লাগামহীন গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিধান রেখে আইন পাশের প্রতিবাদ
  • শোষণমুক্তির চেতনায় সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডা উর্ধ্বে তুলে ধরুন; মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জীবন-জীবিকার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হোন

আর্কাইভ

ফেসবুকে বাসদ (মার্কসবাদী)

Follow @spb_marxist

যোগাযোগ  : 

২২/১ তোপখানা রোড (৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা – ১০০০ ।
ফোন :  ৯৫৭৬৩৭৩
ই-মেইল :
https://spbm.org/

© 2019 Devloped by Sourav Bhuiyan. E-mail : sourav.anawar@gmail.com, Mobile : +8801670702270

No Result
View All Result
  • প্রচ্ছদ
  • পার্টি সংবাদ
  • প্রেস রিলিজ
  • সাম্যবাদ
  • অনুশীলন
  • ঐকতান
  • পুস্তিকা
    • পার্টির পুস্তিকা
    • অন্যান্য গ্রুরত্বপূর্ণ পুস্তিকা
  • যোগাযোগ

© 2019 Devloped by Sourav Bhuiyan. E-mail : sourav.anawar@gmail.com, Mobile : +8801670702270

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In