![?](https://spbm.org/wp-content/uploads/2015/08/Sylhet240815-1024x631.jpg)
এ বছর পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের ২০ তম বছর। এই নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের উন্নত নৈতিক ও মূল্যবোধ প্রমাণের ইতিহাস। দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিন ১৯৯৫ সালের ২০আগষ্ট ভোর ৪ টায় দশ মাইল মোড় থেকে দিনাজপুর শহরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। তার নিরাপত্তার জন্য ফজরের নামায পড়তে বের হওয়া মুসল্লিরা দিনাজপুর অভিমুখী একটি পুলিশ ভ্যানে ইয়াসমিনকে এবং কোতয়ালী পুলিশে অনুরোধ করেন তাকে নিরাপদে পৌছে দিতে। দিনাজপুর শহরে আসার পথে ৩ পুলিশ সদস্য ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করে চলন্ত পিকআপ ভ্যান থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় রাস্তায়। ইয়াসমিনের রক্তে লাল হয় রাজপথ। পুলিশ হেফাজতে কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে দিনাজপুর। বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার জনতা ঘেরাও করে কোতয়ালী থানা। সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা বদলি এবং দোষী পুলিশ কর্মকর্তা শাস্তি দাবি করলে সেখানে গুলি করে পুলিশ। শহীদ হন ৭ জন প্রতিবাদী নাগরিক এবং আহত হন শতাধিক মানুষ। পরবর্তী ৩ পুলিশ সদস্যকে ফাসি দেয়া হয়। তখন থেকেই ২৪ শে আগষ্টকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে পালন করা হচ্ছে।
এ দিবসকে সামনে রেখে ২৪ আগষ্ট ২০১৫ বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, সিলেট জেলা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সিলেট নগর শাখার উদ্যোগে বিকাল ৪টায় মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি কোর্ট পয়েন্টে এসে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, সিলেট জেলার সদস্য তামান্না আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার নেতা লিপন আহমেদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি রেজাউর রহমান রানা, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সংগঠক ইশরাত রাহী রিশতা এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) এর সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যে সময় পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস সে সময়ে সারা দেশে শিশুদের উপর নির্যাতন, হত্যা, জখম নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে পড়েছে। মানুষ রূপী মনুষ্যত্বহীন মানুষের হাতে বলী হচ্ছে রাজন, রাকিব, রবিউলের মত শিশুরা। বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারাদেশে নারীর উপর যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় সারাদেশের বিবেকবান মানুষ প্রতিবাদ করেছে। এর পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চলন্ত বাসে এক নারীশ্রমিককে ধর্ষণ শেষে রাস্তায় ফেলে রেখেছে, কুড়িলে চলন্ত মাইক্রোবাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক আদিবাসী গারো নারী। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী গার্মেন্টস শ্রমিকদের সিংহভাগ নারী। তাদের নেই নুন্যতম মজুরি, নেই নিরাপদ কর্মপরিবেশ, নেই মাতৃত্বকালীন ছুটি। প্রায় ২০ লাখেরও বেশী শ্রমিক গৃহকর্মে ১২-১৬ ঘন্টা শ্রম দেয় যাদের বেশীর ভাগ কিশোরী। তাদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, শ্রম ঘন্টা বা নিরাপত্তা ও সপ্তাহিক ছুটি কোনটিই নেই। চা শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিকদেরও একই অবস্থা। সম্পত্তিতে নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত হয়নি। গার্হস্থ্য শ্রম এখনো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত নয়। নারী পাচার, অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে ব্ল্যাকমেইল এরূপ অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলছে প্রতিদিন। পত্রিকায় প্রকাশিত রির্পোট অনুযায়ি সাড়ে তিন বছরে ৯৬৮ শিশু হত্যা হয়েছে। প্রতিবছর এদেশ থেকে ৪০/৫০ হাজার নারী ও শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেকে আতঙ্কিত-শংকিত। এই হচ্ছে আমাদের দেশের নারীদের বর্তমান অবস্থা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের ইতিহাসের শিক্ষা এই আতংক-শঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র পথ উন্নত নৈতিক ও মূল্যবোধের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। আর সেই আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান বক্তারা।