বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল রায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও চা-শ্রমিকদের কাজ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে রাখা প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে আজ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, “গণভবনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সকল জেলার প্রশাসকগণ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন চা-বাগান সম্পর্কিত যেসমস্ত তথ্য উপস্থাপন করেন এবং তার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রাখেন, তাতে চা-বাগানের প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, ‘উৎপাদনমুখী ও রপ্তানিমুখী শিল্প চালু রাখতে হবে। …চা পাতা দূরত্ব বজায় রেখে তোলা হয়। এখানে কোনও অসুবিধা নেই। তারা প্রকৃতির মধ্যেই থাকে, সেখানে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ নেই। …চা-বাগান চালু রাখা যেতে পারে।’ এই সিদ্ধান্ত চা-শ্রমিকদের ভয়াবহ সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। কারণ চা শিল্প একটি শ্রমঘন শিল্প। আর এই শিল্পের প্রাণ চা-শ্রমিক। গত ৫০ বছরে রাষ্ট্র তাদের দিয়েছে ৮/১২ ফুটের একটি ঘর, যেখানে ৬/১০ জনের একটি পরিবার বাস করে। শ্রমিক লাইনগুলো খুবই গিঞ্জি। বেশিরভাগ বাগানে নেই এমবিবিএস ডাক্তার। খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় একই কূয়া বা নলকূপ থেকে। পাতার ওজন করতে হয় লাইনে দাঁড়িয়ে। কাজের সেকশনগুলোতে যে ছাউনি আছে, সেখানে এক সাথে বসে দুপুরের খাবার খেতে হয়। শ্রমিক লাইনে ছোট ছোট চায়ের দোকান আছে, যেখানে জনসমাগম লেগেই থাকে। আবার সরকার নিজেই বলছে করোনা এখন বাংলাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ এখনই ছড়াবে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপ্রিল ও মে মাস বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের মাত্রা মহামারী আকারে ছড়াতে পারে। ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত ও মারা যাওয়া রোগীদের গড় হারে বাংলাদেশ শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। এমনকি করোনা সনাক্তকরণের প্রয়োজনীয় কিট, চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই দেশে। ফলে এই পরিস্থিতে যদি চা-বাগানে একবার কোনো একজনের করোনা সংক্রমণ হয়, পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ানক হবে। তাই চা-শ্রমিকদের জীবন ও চা-শিল্প রক্ষার স্বার্থে করোনা মোকাবেলায় অবিলম্বে চা-বাগান বন্ধ রেখে চা-শ্রমিকদের সবেতন ছুটি ঘোষণা খুবই যৌক্তিক ও জরুরি।”
নেতৃবৃন্ধ চা-শ্রমিকদের সবেতন ছুটির দাবি জানিয়ে আরও বলেন, “চা-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পূর্বে সবেতন ছুটি, বাগানের বিভিন্ন কর্নারে হাত ধোয়ার পানি, সাবান, স্বাস্থ্যসম্মত মাস্ক ও গ্লাবস প্রদানের দাবি তোলা হলেও এখনও পর্যন্ত সরকার, জেলা প্রশাসকগণ বা বাগান কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত কোনো আয়োজন করেনি। ফলে আমরা প্রশাসনের কর্তব্যের অবহেলার নিন্দা জানাচ্ছি, একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”