Sunday, November 24, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদআইনস্টাইন স্মরণে আলোচনা সভা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী

আইনস্টাইন স্মরণে আলোচনা সভা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী

Einestin_duবিজ্ঞানচর্চা কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টস-এর ৬০ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচনা করেন বিজ্ঞানচর্চা কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সংগঠক আবু নাঈম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক ইভা মজুমদার ও নূরে আলম সিদ্দিকী।

আলোচকবৃন্দ আইনস্টাইনের জীবন ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সামাজিক ও দার্শনিক তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, আলবার্ট আইনস্টাইন বিজ্ঞান-সাধনায় গভীরভাবে মগ্ন একজন মানুষ ছিলেন এ কথা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য যে তিনি সমাজ সচেতনতা ও মানবপ্রীতির এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বিজ্ঞানে তাঁর অবদান সেদিন বিজ্ঞানের জগতে সৃষ্ট হওয়া দার্শনিক অচলায়তন ভাঙতে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। তিনি জার্মানির মাটিতে নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নির্ভীক লড়াই করেছেন। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার সময়ও সেখানকার শাসকদের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক আচরণ ও আইনের বিরুদ্ধে, গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার ছিলেন। বিশ্বশান্তি রক্ষা এবং যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে রাজপথের সংগ্রামে অপরাপর বিজ্ঞানী-দার্শনিক-বুদ্ধিজীবীদের সাথে নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

“এই মানুষটের সাথে যাদের পরিচয় হয়েছে, তারা স্থির করতে পারবেন না যে এই মানুষটির যে মস্তিষ্কের চিন্তায় বিশ্বের রূপ ধরা পড়েছে, সেই মস্তিষ্কটি বড়, না যে হৃদয়ে সঞ্চিত থাকতো সব মানুষের প্রতি ভালবাসা -সেই হৃদয়টি বড়।” — আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর তাঁর সম্পর্কে এক বন্ধুর শ্রদ্ধার্ঘ্য

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। সমগ্র বিশ্ব তাকে চেনে এক নামে। বিজ্ঞানে পড়ে, কিন্তু আইনস্টাইনের তত্ত্ব বা আবিষ্কার সম্পর্কে জানে না এমন শিক্ষার্থী নেই। ‘আইনস্টাইন নামটি শুনলেই সবার চোখে ভেসে উঠে এলোমেলে চুল, উদাসীন দৃষ্টির একজন মানুষের মুখচ্ছবি। সমাজবিমুখ মানুষ হিসাবে বহুল প্রচারিত এই মানুষটিকে আসলেই কি আমরা চিনতে পেরেছি। আইনস্টাইন বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক প্রতিভাই নন, এই মহান বিজ্ঞানীর মানব-প্রীতি, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ ও স্বাধীনতার অনুরাগ যুগে যুগে মানব সমাজের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজের প্রতি দায়বোধ, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি দরদ থেকেই তিনি পেয়েছিলেন বিজ্ঞান সাধনার অনুপ্রেরণা। সমাজে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সর্বদা প্রতিবাদমুখর।জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বর্ণবাদী অত্যাচার, ফ্যাসিবাদী শাসন, ভিন্নমতের কণ্ঠরোধসহ বিজ্ঞানকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেলন। একসময় নাৎসী বাহিনীর আত্যাচারে আমেরিকায় আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন। আবার আইনস্টাইনের সাথে করা চুক্তি ভঙ্গ করে আমেরিকা নাগাসাকি ও হিরোসিমাতে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটালে তার তীব্র সমালোচনা করতে কুন্ঠাবোধ করেননি। অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রখ্যাত মানুষদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনেও তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ইহুদি হবার কারণে সারা জীবন অত্যাচারিত হয়েছেন কিন্তু আবার ইহুদি রাষ্ট্র হিসাবে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট হবার আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। দর্শনহীনভাবে বিজ্ঞানের কারিগরি শিক্ষার বিপদ বুঝতে পেরে, তিনি তার বিরোধীতা করেছিলেন। বিজ্ঞানের সথে যে মূল্যবোধ ও সমাজের সম্পর্ক রয়েছে সে কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বারংবার। সমাজ আইনস্টাইনকে এত দিক থেকে মূল্যায়ণ না করলেও তাঁর সংস্পর্শে আসা বড় মানুষেরা ঠিকই তা ধরতে পেরেছিলেন।
“….. মানুষ হিসাবে তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। অত্যাচার বা অসত্যের কাছে তিনি কখনো মাথা নত করেন নি। মানুষের উপরে তাঁর বিশ্বাস ছিল অপরিসীম।….. তুচ্ছ আত্মগরিমা কিংবা নিজের আর্থিক প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কখনো ব্যগ্র ছিলেন না।” গুরুদেবের আসনে বসানো আইনস্টাইন সম্পর্কে এভবেই শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন আত্মপ্রচার বিমুখ ও মানবতার অক্লান্ত যোদ্ধার প্রতীক তাঁর অনুজ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু।

আলোচনা সভা শেষে আইনস্টাইনের আবিষ্কার থিউরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী করা হয়। এছাড়া আইনস্টাইনের জীবনপঞ্জি ও উদ্ধৃতির একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments