১৮ জুলাই সকাল ১১টায়, পুরান পল্টনস্থ মৈত্রী মিলনায়তনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আট দলের সমন্বয়ে ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ এর ঘোষণা দেন বামপন্থী নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনের প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয় রাষ্ট্র ও সরকারের ফ্যাসিবাদী প্রবণতা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের ‘উন্নয়নে’র রাজনীতিতে ধনী গরিবদের মধ্যে আয় ও সম্পদের সীমাহীন বৈষম্য বাড়ছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের’ মডেল নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সকল দল ও সমাজের অপরাপর অংশের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভারত, মার্কিন ও পাকিস্তানসহ বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের অপতৎপরতা চলছে। নির্বাচন সামনে রেখে বড় দুই দলের বিদেশি প্রভুদের কাছে ধর্ণা বাংলাদেশে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে তুলেছে, বিপদগ্রস্ত করছে দেশের সার্বভৌমত্বকে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্নের জবাবে সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘নির্বাচনকে যে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে এর বিরুদ্ধে আমরা একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। আমরা নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চাই। সেখানে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করতে চাই। নির্বাচনে টাকার খেলা, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি থেকে নির্বাচনকে মুক্ত করতে চাই।’
বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না অভিযোগ করে সেলিম বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনকালে যাতে প্রকৃত নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন থাকে সেই জন্য সংবিধান সংশোধন করে হলেও সেই ব্যবস্থা অবিলম্বে চালু করতে হবে।’
এটি নির্বাচনী জোট কি না – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের অন্তরের আকাঙ্খা প্রতিধ্বনিত করাই জোটের লক্ষ্য। সেটাকে ভোটের সংখ্যায় রূপান্তরিত করার জন্যও আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। কিন্তু এই জোট ভোট সর্বস্ব জোট না, এটা ইলেকশন এলায়েন্স না। ইলেকশনটা আমাদের সামগ্রিক আন্দোলনের একটা অংশ। আন্দোলনের স্বার্থে ভোটে আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি, আবার বয়কটও করতে পারি।’
সরকারের সঙ্গে থাকা বাম দলগুলো এই জোটে আসতে পারবে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, ‘প্রকৃত বামপন্থীরা রাজপথে নামলে পরে তাদের সঙ্গে মিলিতভাবে এই জোট আরও সম্প্রসারিত হতে পারে। কিন্তু যারা শাসক শ্রেণীর সঙ্গে, এই ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারা আমাদের এই চিন্তা বা আহ্বানের আওতাভুক্ত না। আমাদের লড়াই তাদের বিরুদ্ধেও।’
সংবাদ সম্মেলনে আটটি রাজনৈতিক দল- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সমন্বয়ে ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কর্মসূচি
ক) দুঃশাসন, জুলুম, দুর্নীতি-লুটপাটতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র প্রতিরোধ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে আগামী ২৪ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় বিকাল ৪টায় প্রেসক্লাবের সম্মুখে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
খ) ৪ আগস্ট, ২০১৮ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবিতে ঢাকায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
গ) আগামী ১০ ও ১১ আগস্ট দেশের ৬টি বিভাগীয় শহর, যথাক্রমে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুরে সভা, সমাবেশ, জনসভা, মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।