কী করিতে হইবে
(সম্পাদকীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ এপ্রিল ২০২০)
আড়াই বছর আগে বলশেভিক বিপ্লবের শতবার্ষিকী অতিবাহিত হইয়াছে। গত বুধবার, অতিক্রান্ত হইল লেনিনের জন্মের সার্ধশতবর্ষ। তাঁহার দুর্ভাগ্য— ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সিংহাসন হইতে কমরেডরা বিদায় হইয়াছেন। তাহা না হইলে, সন্দেহ নাই, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-র নেতৃত্বে মহানগরীতে মহা ধুমধাম, মহা হট্টগোল চলিত, ব্রিগেডে মহাসমাবেশের মাচা বাঁধা হইত, ইনকিলাব জিন্দাবাদের আর্তনাদে কলিকাতায় কাক-চিল বসিতে পারিত না। স্বদেশে লেনিনের মূর্তি এবং মতবাদ উৎখাত হইয়াছিল অনেক আগেই, তাহার অভিঘাতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ পূর্ব ইউরোপও অচিরেই মুক্তিলাভ করিয়াছিল, কিন্তু তাহার পরেও দীর্ঘ দুই দশক বামফ্রন্ট সরকারের অধীনস্থ এই সুদূর বঙ্গভূমিতে তিনি লাল সেলাম পাইয়াছেন। দেড় শত বৎসরের পূর্তিলগ্নে রাজ্যের সুপ্রবীণ বাম নায়করা হয়তো তাঁহার আলোকচিত্রের সামনে দাঁড়াইয়া অস্ফুট উচ্চারণে বলিয়াছেন: তে হি নো দিবসা গতাঃ। তবে লেনিন নিজে সেই আক্ষেপের শরিক হইতেন না। তাঁহার অনুগামী বলিয়া নিজেদের জাহির করিয়া কাজে তাঁহার চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করিবার প্রবণতা তিনি আপন জীবৎকালেই দেখিয়া গিয়াছেন, যে প্রবণতা তাঁহার মৃত্যুর পরে উত্তরোত্তর প্রকট হয় এবং অচিরেই বিকট মূর্তি ধারণ করে। সেই মূর্তির নাম, অবশ্যই, জোসেফ স্তালিন। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ‘সরকারি’ বামপন্থীদের কীর্তিকলাপ সেই তুলনায় অকিঞ্চিৎকর, কিন্তু তাঁহাদের চিন্তা ও আচরণের মৌলিক চরিত্রটি স্তালিনের ছাঁচে ঢালা। সেই কারণেই তাঁহাদের রাজ্যপাট হারাইবার ব্যথায় লেনিনের সমব্যথী হইবার কোনও কারণ নাই। ভুলিলে চলিবে না, শারীরিক সক্ষমতার শেষ প্রান্তে পৌঁছাইয়া তিনি যে ‘টেস্টামেন্ট’ তৈয়ারি করিয়া গিয়াছিলেন, তাহার অন্যতম নির্দেশ ছিল: স্তালিনকে অপসারণ করো।
এই নির্দেশের মূলে ছিল রাজনৈতিক মত এবং পথের স্বাতন্ত্র। এই প্রসঙ্গটিতে স্তালিন ব্যক্তিমাত্র নহেন, তিনি একটি ধারার (অন্যতম প্রধান প্রবর্তক এবং) প্রতীক, যে ধারা সমাজতন্ত্রের নামে এক সর্বগ্রাসী আধিপত্যবাদকে কায়েম করিতে তৎপর। এই ধারাটিই গত শতাব্দীর এক বড় অংশ জুড়িয়া দুনিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রাজত্ব করিয়াছে, যে রাজত্ব উত্তরোত্তর স্বৈরতন্ত্রে পর্যবসিত হইয়াছে। লেনিন সেই পরিণতির ঐতিহাসিক দায় এড়াইতে পারেন না। তাঁহার বিপ্লবের ধারণায় এবং বিপ্লব-উত্তর দেশে পার্টির শাসন জারি রাখিবার জন্য তাঁহার অনুসৃত কর্মপন্থায় পরবর্তী অ-গণতন্ত্রের বীজ নিহিত ছিল। কিন্তু ইহাও ঐতিহাসিক সত্য যে, তিনি নিজে এই বিপদ সম্পর্কে পূর্ণমাত্রায় সচেতন ও সজাগ ছিলেন। জীবনসায়াহ্নের ওই টেস্টামেন্টে তাঁহার নির্দেশ ছিল, পার্টির নেতৃত্ব যাহাতে সদস্যদের, বিশেষত শ্রমিক-কর্মীদের কথা শুনিতে দায়বদ্ধ থাকে, পার্টির কাঠামোতেই যেন তাহা নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ, ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’র আদর্শ সৎ ভাবে পালনীয়, দলনায়কদের মত দলের উপর চাপাইয়া দিবার অসৎ কৌশল নহে। কমিউনিস্ট পার্টি এবং গণতন্ত্রের মধ্যে যে দূরত্বকে বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস কার্যত অলঙ্ঘ্য বলিয়া চিনিয়াছে, লেনিন তাঁহার চেতনার শেষ অবধি তাহাকে অতিক্রম করিবার লক্ষ্য পরিত্যাগ করেন নাই।
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের প্রান্তে দাঁড়াইয়া এই ইতিহাস বিচার করিবার প্রয়োজন আছে। লেনিন বা সোভিয়েট ইউনিয়নকে স্মরণের জন্য নহে, কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের চর্চার জন্যও নহে, বিশ্বের আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সঙ্কটের মোকাবিলায় নূতন পথ খুঁজিবার জন্য। যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং তাহার অনুগামী সামাজিক কাঠামো দুনিয়ায় আধিপত্য করিতেছে, বিশেষত গত তিন দশকে যাহার প্রসার প্রায় সম্পূর্ণ, তাহার সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা এই মুহূর্তে অতিমাত্রায় প্রকট। ভাইরাসের সংক্রমণ সেই সঙ্কটকে এক অভূতপূর্ব রূপ দিয়াছে, কিন্তু সঙ্কটের মূল বিশ্বব্যবস্থার কাঠামোয় নিহিত। চিরাচরিত পন্থায়, প্রচলিত কাঠামোটির অল্পবিস্তর প্রসাধন বা পরিমার্জন করিয়া উত্তরণের পথ মিলিবে, এমন ভরসা আজ আর নাই। আবার, সমাজতন্ত্রের পরিচিত ছকেও সেই পথ মিলিবে না, কারণ— ইতিহাস সাক্ষী— তাহা একটি অ-গণতান্ত্রিক কানাগলি। একই ভুল পথে দুই বার হাঁটিতে নাই— ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভের এই প্রাথমিক শিক্ষা আজও মূল্যবান। দল এবং মত নির্বিশেষে।
আনন্দবাজারের স্তালিন বিরোধী কুৎসার জবাবে
শংকর ঘোষ
‘কী করিতে হইবে’ আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়(২৬.০৪.২০২০) প্রসঙ্গে বর্তমান পত্র। নিবন্ধে নতুন কিছু নেই। সেই একই বস্তা পচা পুরোনো কথা। স্তালিনের গায়ে কাঁদা ছেটানো, অসত্য বিকৃত কথার মালা গাঁথবার ব্যর্থ চেষ্টা।
নিবন্ধ শুরু হয়েছে একটা অর্ধ সত্য দিয়ে। লেখা হয়েছে, “তিনি (লেনিন-লেখক) যে টেস্টামেন্ট তৈরি করিয়া গিয়াছিলেন তাহার অন্যতম নির্দেশ ছিল স্তালিনকে অপসারণ করো।” আসলে ঘটনাটা কি? রোগশয্যায় শায়িত লেনিন ১৯২২ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর দলকে একটি পত্র দিয়েছিলেন। তাতে স্তালিন, ট্রটস্কি, জিনোভিয়েভ,কামেনেভ ও বুখারিন সম্পর্কে সংক্ষেপে তাঁর মূল্যায়ন রাখেন। স্তালিন সম্পর্কে বলেন, ‘ I am not sure that he always knows how to use power with sufficient care’. ট্রটস্কির ‘Nonbolshevism’ সম্পর্কেও দলকে তিনি সতর্ক করেন, আর অক্টোবর বিপ্লবের সময় জিনোভিয়েভ,কামেনেভের বিশ্বাসঘাতকতা ‘ was not accidental’ বলেন, বুখারিনের চিন্তাকে ‘পুরোপুরি মার্কসবাদ সম্মত নয়’ বলেও মন্তব্য করেন। এরপর লেনিন ১৯২৩ সালের ৫ই মার্চ দলকে আর একটা নোট পাঠান এবং তাতে স্তালিন অত্যন্ত ‘রূঢ়’ বলে তার জায়গায় অন্য আর একজনকে সাধারণ সম্পাদক করার প্রস্তাব দেন।
এ থেকে কি পাওয়া গেল? লেনিন বলেছেন- ট্রটস্কি ‘অমার্কসবাদী’, জিনোভিয়েভ, কামেনেভ ‘আবারও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে’, বুখারিনের চিন্তা ‘পুরোপুরি মার্কসবাদ সম্মত নয়’। কিন্তু স্তালিন সম্পর্কে, তার রাজনৈতিক অবস্থান, চিন্তা, চেতনা, মতাদর্শ, বিপ্লবী চরিত্র, বিপ্লবের প্রতি আনুগত্য এ সম্পর্কে তিনি কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি। শুধু তার আচরণগত একটি ত্রুটির দিক উল্লেখ করেছেন। এর বেশি কিছু নয়। ফলে লেনিনের টেস্টামেন্টকে বিচার করলে সহজেই বোঝা যায় অন্য নেতাদের তুলনায় লেনিনের কাছে স্তালিনের আসন ছিল অনেক উপরে। স্তালিনই যে রাশিয়ার সমাজতন্ত্র গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন এই দৃঢ় বিশ্বাস লেনিনের ছিল। এ আমাদের মনগড়া ধারণা নয়। লেনিনের শেষ জীবনে স্তালিনের সাথে তার সম্পর্ক কেমন ছিল এ প্রসঙ্গে লেনিনের বোন মারিয়া উলিয়ানোভা লিখছেন, ‘ লেনিন স্তালিনের সম্পর্কের প্রশ্নে কয়েকটা কথা বলার প্রয়োজন আছে। লেনিনের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমি তার পাশেই ছিলাম। লেনিনের কাছে স্তালিনের মূল্য ছিল অসীম।………. তাঁর অসুস্থতার সমস্ত সময়টা জুড়ে লেনিন কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য কোন নেতাকে ডাকেনি। তাদের কারো সাথে দেখাও করতে চাননি। শুধু চাইতেন স্তালিনই আসুন।’ সোভিয়েত আর্কাইভ ঘেটে যারা স্তালিন জীবনী লিখেছেন সেই ডিমিট্রি ভলকাগোনভ, রবার্ট সার্ভিসের লেখাতেও এ-কথার প্রমাণ মিলবে। আর একজন লেখক এডওয়ার্ড রাডজিনস্কি লিখেছেন ‘স্তালিনের প্রতি লেনিনের ভালোবাসা , আবেগ উৎসারিত হয়েছিল বিপ্লবের প্রয়োজনে। তার আদর্শের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্তালিনের জীবন ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’ ( স্তালিন, 1996, পৃঃ 172) । উল্লেখ করা যায় এরা সবাই স্তালিন বিরোধী।
যাইহোক, অপসারণের প্রস্তাব যেহেতু লেনিন দিয়েছিলেন তাই পার্টির এয়োদশ কংগ্রেসে এই প্রস্তাব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছিল। স্তালিনও পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিল স্তালিনকেই সাধারণ সম্পাদক থাকতে হবে। আর এই প্রস্তাবের সোচ্চার সমর্থক ছিলেন ট্রটস্কি, জিনোভিয়েভ, কামেনেভ, বুখারিন সহ বিভিন্ন নেতা- কর্মীরাই।
ইতিহাসের সামগ্রিক বিচার না করে বিচ্ছিন্নভাবে একটা বাক্য উদ্ধৃত করে লেনিনকে স্তালিন বিরোধী প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে সম্পাদকমশাই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছেন। এ অপরাধ।
তার কলম এখানেই থামেনি। লিখেছেন, স্তালিন রাজত্ব ‘উত্তরোত্তর স্বৈরতন্ত্রে পর্যবসিত হইয়াছে’। লেনিনের চিন্তাকে হাতিয়ার করে স্তালিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটা পশ্চাৎপদ কৃষিপ্রধান দেশ থেকে আধুনিক শিল্পউন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। সেখানে বেকারি ছিল না, পতিতাবৃত্তি ছিল না, শিশুশ্রমিক ছিল না। কাজ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের। স্বাস্থ্যের অধিকার ছিল সবার। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে দেশ ছিল মুক্ত। নারীর বিকাশের দ্বার ছিল উন্মুক্ত। জীবনের সর্বদিক ব্যাপ্ত করে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র নতুন মানুষ নতুন সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। এতে সফল হয়েছিল বলেই হিটলারি নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করে সে মানবসভ্যতাকে ফ্যাসিবাদী বর্বরতার হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছিল। গায়ের জোরে এ- সত্য অস্বীকার করা যাবে না।
এই সমাজতান্ত্রিক সমাজকে সম্পাদক মশাইয়ের চোখে ‘স্বৈরতন্ত্রী’ বলে মনে হলেও মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা কিন্তু তা মনে করেননি । তারা সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের মধ্যেই মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ বিকাশের প্রতিচ্ছবি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাই কবিগুরু রাশিয়ার চিঠিতে লিখেছিলেন “রাশিয়াতে এসেছি, না হলে এ- জন্মের তীর্থ দর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত।……..দেখতে পাচ্ছি বহুদূর ব্যাপী একটা ক্ষেত্র দিয়ে এরা একটা নতুন জগত গড়ে তুলতে কোমড় বেঁধে লেগেছে।”
প্রখ্যাত মার্কিন দার্শনিক জন ডিউই লিখেছিলেন ‘রাশিয়াতে যা ঘটছে তাকে শুধু অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভাষায় বোঝা যাবে না। বোঝা যাবে, যে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সে চলেছে তা দিয়ে। আর এই পরিবর্তন হলো ভাবগত, মানুষের মানসিক জগতে। এটাই আমার মনে গভীরভাবে ছায়া ফেলেছে।” ( Impressions of Soviet Russia)
পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর মতে, “স্তালিন এমন একজন মানুষ, যিনি যুগ নির্মাতা।” (Labour monthly, Volume 35, No 4, April 1953) ।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছেন, “বর্তমান ইউরোপের যদি একজন ব্যক্তিও থেকে থাকে যার হাতে ইউরোপীয় জাতি সমূহের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত হতে পারে, তবে তিনি আর কেউ নন- তিনি স্বয়ং মার্শাল স্তালিন।” ( শঙ্করীপ্রসাদ বসু, Subhas Chandra and National planning গ্রন্থে উদ্ধৃত,পৃঃ 174)
একটা ঘটনার কথা বলা যাক। ১৯৪৮ সালের ১৪ই মার্চ এলানর কনেল, বার্ণাড শ’ এর সাথে দেখা করতে যান। শ’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “কেন তুমি আমেরিকায় যেতে চাইছ?” কনেল উত্তরে বলেন, ” ইংল্যান্ডে যে স্বাধীনতা পাচ্ছি তার চেয়ে বেশি স্বাধীনতা পেতে চাই বলে।” উত্তরে শ’ বললেন, পৃথিবীতে একটি মাত্র দেশ আছে যেখানে তুমি সত্যিকারের স্বাধীনতা পেতে পারো- তার নাম রাশিয়া, যেখানে মহান স্তালিন বেঁচে আছেন।” ( George B. Shaw by H. Pearson , Collins, London, 1951)
এই হলো সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। এই হলো স্তালিন। কলমের খোঁচায় কি তাকে ধূলিস্যাৎ করা যাবে?
মার্কস এক সময় লিখেছিলেন- ইউরোপ কমিউনিজমের ভূত দেখেছে। সম্পাদক মশাইরাও এখন সমাজতন্ত্রের ভূত দেখছেন। সমাজতন্ত্রের আতঙ্কে তারা আতঙ্কিত। CPI(M) মার্কা বামপন্থায় তাদের আপত্তি নেই। ও তাদের পকেটের জিনিস। ইচ্ছা মতো ব্যবহার করা যাবে। ওদের ভয় যথার্থ মার্কসবাদকে, লেনিন-স্তালিনের চিন্তাকে, সমাজতন্ত্রের জন্য যথার্থ সংগ্রামকে। ওরা দেখছে বিশ্বব্যাপী করোনার বীভৎসা, পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের আসল চেহারাটা দেখিয়ে দিয়েছে। মানুষ বুঝতে পারছে, ক্রমাগত বেশি বেশি করে বুঝতে পারছে , এ পচা গলা, এ দিয়ে আর চলবে না। মানুষ বুঝতে পারছে পুঁজিবাদকে সংস্কার করেও আর চলবে না। তথাকথিত ‘সমবন্টনের’ শ্লোগানেও কাজ হবে না। চাই বিপ্লবের আঘাতে পুঁজিবাদের সবল উচ্ছেদ, চাই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। মানুষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এই আকাঙ্খার কথা বুঝতে পেরে নানা বর্ণের কলমচিরা আসরে নেমে পড়েছেন, বলছেন, স্তালিনের পথে যেও না, ও পথ ‘কানাগলি’। ওরা চেষ্টা করতে থাকুন কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতিকে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। শত চেষ্টা করলেও ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। পুঁজিবাদ ধ্বংস হবেই, সমাজতন্ত্র কায়েম হবেই।