Tuesday, November 26, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদআন্তর্জাতিক নারী দিবসের ডাক : নারী-শিশু নির্যাতন, খুন-ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন...

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ডাক : নারী-শিশু নির্যাতন, খুন-ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন – বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র

 

international-womens-day
ক্লারা জেটকিন

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা উপযুক্ত বেতন, কাজের উন্নত পরিবেশ এবং ১০ ঘণ্টা কর্মদিবস এবং অভিবাসি ও কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং সর্বজনীন ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। হাজার হাজার নারী শ্রমিকদের এ মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে আহত ও গ্রেফতার হন অসংখ্য নারী শ্রমিক। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ইউরোপের দেশে দেশে কারখানার নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে মার্কেটে ৮ ঘণ্টা শ্রম সময়ের দাবিতে গড়ে ওঠে ঐতিহাসিক মে দিবসের রক্তাক্ত শ্রমিক অভ্যুত্থান। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে ফেডরিখ এঙ্গেলসের উদ্যোগে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে জার্মান কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন সর্বক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমানাধিকারের দাবিকে প্রধান করে বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্য অনুপ্রাণিত করে শ্রমজীবী ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত নারীদেরকে। নারী আন্দোলনকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে ১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্ডে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯০৮ সালে ভোটাধিকারের দাবিতে নিউইয়র্কের নারী দর্জি শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় কর্মবিরতি এবং ধর্মঘট পালন করেন। ঐতিহাসিক এই আন্দোলনের ফলে ১৯০৯ সালে নারী শ্রমিকদের সভায় নারীর ভোটাধিকারের দাবি প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করা হয়। নারী আন্দোলনের চেতনাকে ধরে রাখার জন্য ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্টদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন ঐতিহাসিক ৮ মার্চকে নারী দিবস ঘোষণার প্রস্তাব করেন। মহামতি লেনিন-এর উদ্যোগে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের অপরাপর সদস্যবৃন্দ সেই প্রস্তাবের পক্ষে  ভোট দেন। ফলে সর্বসম্মতভাবে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে গৃহিত হয়। তখন থেকে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন  দেশে পালিত হয়ে আসছে।

আজ আমরা আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ১০৪তম দিবস পালন করছি। কিন্তু আজও আমাদের দেশে ৮০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী গার্মেন্ট শ্রমিক যার সিংহভাগ নারী শ্রমিক নূন্যতম মজুরি, কর্মপরিবেশ, মাতৃত্বকালীন ছুটির দাবিতে আন্দোলন করছেন। অনেক সময় পুড়ে মরছেন। জীবনের নেই কোনো নিরাপত্তা। আবার অন্যদিকে নারী হিসাবে কারখানায়, পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে নেই তাদের মর্যাদা। নারীদের মর্যাদাহীন এই অসহায় জীবনের চিত্র শুধু নারী শ্রমিকদের নয়, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সর্বত্র বিরাজমান। আড়াই বছরের শিশু থেকে ষাট বছরের বৃদ্ধা কেউই নির্যাতন-নিপীড়নের বাইরে নয়। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের ছবি তুলে মোবাইল বা ইন্টারনেটে ছেড়ে ব্লাকমেইল করা, যৌতুকের জন্য হত্যা, প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এসিড ও ছুরি মারা –  নিত্যদিনের ঘটনা। নিজ পরিবারে, সকুলে, রাস্তা-ঘাট, কর্মস্থলে কোথাও নারী নিরাপদ নন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, প্রায় ১৬.২ ভাগ নারী কর্মস্থলে এবং ৮৭.৭ ভাগ নারী নিজ পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়। গত তের বছরে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনে ১,৭৪,৬৯১ জন নারী মৃত্যবরণ করেছে। প্রতিবছর ২০ থেকে ৫০ হাজার নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে, যার অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়ে যায়। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশী। এ সকল নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার বা শাস্তি হয় না। আসামীরা সরকার-প্রসাশনের প্রশ্রয়ে বা অর্থ ও ক্ষমতার দাপটে ছাড়া পেয়ে যায়।
শুধুমাত্র বিচার প্রক্রিয়া নয়, নারী নির্যাতন সমূলে উৎপাটনের জন্য প্রয়োজন নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্যরূপে উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিদিন শুধু ঢাকা শহরেই ২ কোটি টাকার পর্নো ভিডিও বিক্রি হচ্ছে। অশ্লীলতা-অপসংস্কৃতি ডেকে আনছে অবক্ষয়। সারাদেশে পর্নোগ্রাফি কিশোর-যুবকদের মধ্যে এক ভয়াল বিকৃতি ডেকে আনছে। এই সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেবল সমাজের কিছু নারীর সুবিধা আদায়ের জন্য গড়ে ওঠেনি। এ দিবসের মূল চেতনা হল সকল প্রকার বৈষম্য, শোষণ ও নিপীড়ন থেকে নারীদের এবং চূড়ান্ত বিচারে সমাজকে মুক্ত করা। কিন্তু আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সংগ্রামী চেতনাকে শাণিত করার পরিবর্তে শাসকগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন মহল একে বাণিজ্যিকভাবে উপস্থাপন করছে, নারী দিবসের চেতনাকে বিকৃত করছে। পুঁজিবাদী এই সমাজে একদিকে যেমন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে তেমনি অন্যদিকে সমাজ ভাঙার লড়াইয়ে এদেশের শ্রমজীবী-পেশাজীবীসহ সকল নারীদের অংশগ্রহণ করতে হবে।

আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র-এর পক্ষ থেকে দেশের নারীসমাজের প্রতি সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে লড়াই-এ শামিল হওয়ার আহ্বান জানান হয়েছে।

১০৪তম আন্তর্জাতিক নারীদিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র-এর পক্ষ থেকে নেয়া কর্মসূচি

দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী
৮ মার্চ ২০১৪, শনিবার
স্থান : মিলন চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

র‌্যালি ও সমাবেশ
বিকাল ৩টা, শনিবার, ৮মার্চ,২০১৪।
স্থান : জাতীয় প্রেসক্লাব

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
৮ মার্চ ২০১৪, শনিবার, বিকাল ৫.৩০টা
স্থান : মিলন চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেয়ালিকা প্রকাশ করা হবে

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments