নারীর উপর সহিংসতা বন্ধ কর, নারী-শিশুসহ জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত কর
৮ মার্চ ১০৭ তম আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় কমিটি নগরীরর প্রেসক্লাবের সম্মুখে সমাবেশ, র্যালি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্ত্বরে ‘নারী আন্দোলনের ইতিহাস, রাজনৈতিক আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ, বড় চরিত্র ও সমসাময়িক আন্দোলন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় সরকারের অগণতান্ত্রিক, কুপমন্ডুক “বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭” বিশেষ বিধান বাতিল ও নারীর উপর সহিংসতা বন্ধ কর, নারী-শিশুসহ জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত কর। এই দাবিকে সামনে রেখে সকাল ১১ টায় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্ত্বর পর্যন্ত র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ঢাকা নগর শাখার সভাপতি সুলতানা আক্তার রুবির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক মনিদীপা ভট্টাচার্য, প্রচার সম্পাদক আফরোজা লুনা ও সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা। সমাবেশ পরিচালনা করেন নারীমুক্তি কেন্দ্রের সংগঠক ইভা মজুমদার।
সমাবেশে বক্তরা বলেন, “জনগণের মতকে উপেক্ষা করে সরকার সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় নারী পুরুষ উভয়ের জন্য বিশেষ বিধান প্রযোজ্য করে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ শীর্ষক বিলটি সংসদে পাশ করিয়ে নিয়েছে। ‘আজ থেকে প্রায় একশত বছর আগে বিদ্যাসাগর নারীর প্রগতির পথকে সুগম করার জন্য পিছিয়ে পরা সমাজের জড়তা ভেঙে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাশ করেছিলেন। আর আজ নারী যখন নিজে তার পথের বাধা অতিক্রম করছে প্রবল প্রত্যয়ে তখন সরকার নারীকে আবারও পিছিয়ে নেয়ার জন্য উঠেপরে লেগেছে। যে দেশে আইন অনুযায়ি ১৮ বছরের নিচে সকল মানব সন্তানকে শিশু বিবেচনা করা হয়, সে দেশে ১৮ বছরের নিচে বিয়ের বিধান রাখা মানেই শিশু বিবাহকে বৈধতা দেয়া। সরকার একদিকে উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশনের শ্লোগান দিচ্ছে, আর অন্যদিকে নারীদের পশ্চাৎপদ সামাজিক অবস্থানকে পরিবর্তনের উদ্যোগ না নিয়ে আরো পশ্চাতে ঠেলে দিচ্ছে। সমস্ত বিবেকবান ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে আজ এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। কারন এটি কেবল নারীর অধিকার রক্ষার প্রশ্ন নয়, মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনাকে রক্ষার প্রশ্নও বটে।
আমরা জানি, ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার শ্রমজীবী নারীরা তাদের কাজের ন্যায্য পাওনা, উপযুক্ত কর্মপরিবেশ, ও শ্রমঘন্টা কমানের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে এই ঐতিহাসিক দিবসের জন্ম দিয়েছে। এ সংগ্রামকে সারা বিশ্বের নারী ও মেহনতী জনতার সংগ্রামের স্মারক হিসেবে ক্লারা জেটকিন ও আলেকজেন্দ্রা কোলনতাই নারী দিবস হিসেবে প্রস্তাব করেন। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের রূপকার মহমতি লেনিনের অনুপ্রেরণায় ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। নারী দিবস শুধু নারী অধিকার নয় সমাজের বৈষম্য- শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা। অথচ এই ইতিহাস ও চেতনাকে ধারণ না করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান-এনজিও’রা সারা দেশে ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী দিবস পালন করছে। চাকচিক্যময় আয়োজনে নিজেদের পণ্য বিপনণে নারী মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কোনো কথা নেই। অথচ এখনো নারী ন্যায্য মজুরি পায়না, কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তো নেইই বরং নিরাপত্তহীনতা প্রতিমুহুর্তে। একদিকে নারী তার মেধা ও শ্রমের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছে। অন্যদিকে নারীকে সিনেমা- বিজ্ঞাপনে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করে পণ্য বিক্রির প্রচার চালাচ্ছে। ধর্মীয় গোঁড়ামী, কুসংস্কার-মৌলবাদী চিন্তার বিস্তার ঘটানোর পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে নারীকে সমাজে হেয় ও হীন প্রাণী হিসাবে প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এই অবস্থার অবসানে নারী পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণে নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”