Saturday, November 23, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - জুলাই ২০১৯আন্দোলন সংগঠন সংবাদ - সাম্যবাদ জুলাই ২০১৯

আন্দোলন সংগঠন সংবাদ – সাম্যবাদ জুলাই ২০১৯

ধনিক শ্রেণি তোষণের বাজেট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শোষণ-বৈষম্যের চিত্রকে তুলে ধরেছে

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, ভোটডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত এ বাজেটে জনগণের প্রতি কোন প্রকার দায়বদ্ধতা ধারণ করার প্রয়োজন বোধ করেনি। বরং ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের জন্য অন্যায্য সুবিধা প্রদানের মধ্য দিয়ে ধনিক শ্রেণি তোষণের এ বাজেট বর্তমান শোষণ- বৈষম্যের চিত্রকেই তুলে ধরেছে।

তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের উপর করারোপের ফলে জনগণের উপর আবারো মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপবে। বাজেটে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ বেকারত্বের সমস্যা সমাধানে সুস্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। নেই শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে কোনো প্রকার ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীদের কর ছাড়, সারচার্জ কমানোর ঘোষণা থাকলেও কৃষকদের ফসলের নায্যামূল্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কোনো প্রকার প্রণোদনা কিংবা পরিকল্পনা নেই।

তিনি বলেন, ব্যাংকসহ আর্থিক খাত ধ্বংসের জন্য দায়ী খেলাপীঋণ আদায়ে ও টাকা পাচার বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিয়ে বরং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে অপরাধীদের পুরষ্কৃত করা হয়েছে। উপরন্তু বিশাল অংকের ঋণের বোঝা জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না রেখে মাথাভারী প্রশাসন ও তথাকথিত মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে মেগা দুর্নীতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিবৃতিতে তিনি এ গণবিরোধী বাজেট বাতিলের দাবিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার দাবি জানান।

বাম গণতান্ত্রিক জোট : কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য কমরেডস মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, খালেকুজ্জামান, শাহ আলম, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, মোশাররফ হোসেন নান্নু, মোশরেফা মিশু, হামিদুল হক, শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, আকবর খান, ফিরোজ আহমেদ ১৩ জুন ২০১৯ সংবাদপত্রে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বর্তমান ভোট ডাকাতির সংসদের বাজেট দেয়ার নৈতিক অধিকার নেই। ফলে জনগণের ভোট ছাড়া গায়ের জোরে ক্ষমতাসীন এই সরকারের এবারের বাজেট পূর্বের মতোই গতানুগতিক, ঋণ নির্ভর, ঘাটতি বাজেট।

বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজস্ব আয়ের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা আদায় করা হবে কীভাবে তার নির্দেশনা নেই। গতবারের অভিজ্ঞতা বলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আদায়যোগ্য নয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটে ৫ স্তরের যে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে গ্রাহক ভোক্তা হয়রানি বাড়বে কিন্তু কর আদায়ে জটিলতা বাড়বে।

বিবৃতিতে বলা হয় প্রতিবারের মতো এবারেও পোশাক শিল্পে পূর্বের ৩৬০০ কোটি টাকার সাথে নতুন করে ২৮২৫ কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করা হলেও গার্মেন্টস শ্রমিক ও গ্রামীণ শ্রমজীবীদের রেশনের জন্য কোনো থোক বরাদ্দ রাখা হয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১৬.৫% বরাদ্দ দেখানো হলেও বাস্তবে এটা সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, ক্যাডেট কলেজ, সামরিক শিক্ষা এবং ২৮ মন্ত্রণালয়ের ট্রেনিংকে যুক্ত করে দেখানো হয়েছে। এতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা শুভংকরের ফাঁকি। কৃষি খাতের যে বরাদ্দ তা-ও কৃষি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ, ভূমি, বন ও পরিবেশ, পানিসম্পদ এই ৫ মন্ত্রণালয়ের যৌথ বরাদ্দ।

বিবৃতিতে বলা হয়, ঋণনির্ভর এই বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই বাজেটের এক বড় অংশ চলে যাবে। বাম জোট ধনীকে আরো ধনী করার এবং গরিবকে আরো গরিব করার এই গণবিরোধী বাজেট প্রত্যাখান করে জনগণের কল্যাণে বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান।

ঢাকা : বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে ১৬ জুন বিকাল ৫টায় ধনিক শ্রেণির স্বার্থে প্রণীত গণবিরোধী বাজেট প্রত্যাখ্যান করে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হতে শুরু হয়ে পল্টন, জিপিও, বায়তুল মোকাররম, প্রেসক্লাব হয়ে মিছিলটি শেষ হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মানস নন্দী, রাজু আহমেদ, তসলিমা আখতার বিউটি, মাসুদ রানা।

সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি চাষীর কাছ থেকে ধান ক্রয়ের দাবিতে সমাবেশে নেতৃবৃন্দ

ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত কর, কৃষক বাঁচাও

ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত করে কৃষক বাঁচাতে সরকারি ধান ক্রয় অভিযান অবিলম্বে জোরদার ও বিস্তৃত করা এবং হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্র্রঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি সারাদেশে মিছিল-সমাবেশ-মানববন্ধন-অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৬ মে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জহিরুল ইসলাম, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, সীমা দত্ত প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন এলাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “সারাদেশে আজ কৃষকের হাহাকার। বাম্পার ফলন ফলিয়েও ধানের দাম পাচ্ছে না চাষী। দুঃখে-ক্ষোভে ফসলে আগুন পর্যন্ত দিচ্ছে কৃষক। সরকার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ এখনো অনেক স্থানে জেলা-উপজেলায় তা শুরুই হয়নি। ফলে, সরকার নির্ধারিত ধানের ক্রয়মূল্য মণপ্রতি ১০৪০ টাকা হলেও বাস্তবে কৃষকদের কাছ থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা কিনছে মণপ্রতি স্থানভেদে ৪০০-৫৫০ টাকায়। সরকারি ক্রয়ের অনুপস্থিতিতে ক্ষুদ্র কৃষকরা এভাবে লোকসানে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের পক্ষে ধান মজুদ করে রাখা সম্ভব নয়, কারণ একদিকে আয়োজনের অভাব, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ ও সংসার খরচ যোগানোর তাগিদ। আবার চলতি বোরো মৌসুমে সরকার শস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সাড়ে ১২ লাখ টন, এর মধ্যে দেড় লাখ টন মাত্র ধান, বাকি ১১ লাখ টনই চাল। অর্থাৎ, কৃষকের কাছ থেকে অল্প ধান কিনে সরকার প্রধানত চাল কিনবে ধানকল মালিক-চাতাল মালিক-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এই মিল মালিকদেরই এজেন্ট হলো ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে যেটুকু ধান উপজেলা পর্যায়ের খাদ্যগুদামে কেনা হয়, তা-ও অনেক সময় প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে নেয়া হয় না, এই সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে শাসকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এভাবে মিল মালিক-চাল ব্যবসায়ী-দুর্নীতিবাজ প্রশাসন-শাসক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সকলে মিলে এক মধ্যস্বত্তভোগী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে ধান-চালের বাজার। এর ফলে শোষিত হচ্ছে গরিব কৃষক, ভোক্তারাও মূল্যবৃদ্ধির শিকার হচ্ছে।”

বক্তারা আরো বলেন, “এবারের সংকট নতুন নয়, বছরের পর বছর এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। বাম্পার ফলনের কৃতিত্ব সরকার নেয়, কিন্তু কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করার কোনো উদ্যোগ নেই। বরং, সরকারি নীতি ও কার্যক্রম লুটেরা ব্যবসায়ী-মধ্যস্বত্তভোগী সিন্ডিকেটকেই শক্তিশালী করছে। ‘কৃষক বান্ধব’ বলে নিজেদের দাবি করলেও বাস্তবে সরকার কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, এ ঘটনা থেকে তা পরিস্কার। আওয়ামী লীগ সরকার বড় বড় ঋণখেলাপি ব্যাংক লুটেরাদের রেয়াত দেয়ার জন্য ওকালতি করছে, অন্যদিকে সামান্য ঋণের দায়ে কৃষকদের নামে লক্ষ লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা দিচ্ছে। কৃষকদের প্রতিবাদকেও সহ্য করতে পারছে না এই ফ্যাসিবাদী সরকার। তাই মন্ত্রীরা বলছেন, ফসলে আগুন দেয়া সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র। আরো জোরদার আন্দোলন-গণপ্রতিরোধের পথেই কেবল এই গণবিরোধী ও স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারকে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা সম্ভব। গত কিছুদিন ধরে সচেতন ছাত্র ও দেশবাসী যেভাবে কৃষকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছেন, তাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জনতার এই সংহতিকে অগ্রসর করে নিতে হবে লুটেরা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে।”

রংপুর : ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে ১৬ মে তারিখে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে বেলা ১১.৩০টায় ধানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাসদ (মার্কসবাদী) রংপর জেলা শাখা। জেলা বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক ও কৃষক ফ্রন্ট জেলা আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ চলাকালীন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা পার্টির সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু, কৃষক প্রতিনিধি এমদাদুল হক বাবু, আবুল কাশেম প্রমুখ।

কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদের সড়ক অবরোধ : হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরকারি উদ্যোগে ১০৪০ টাকা মণ দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়, ক্ষেতমজুরদের সারাবছর কাজ ও আর্মিরেটে রেশন চালুর দাবিতে কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ রংপুর জেলার উদ্যোগে ২৯ মে সকাল ১১টায় সদর উপজেলার পাগলাপীরে ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। অবরোধ চলাকালীন সমাবেশে স্থানীয় কৃষক আব্দুল ওহাবের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ রংপুর জেলার নেতা আনোয়ার হোসেন বাবলু, আব্দুল কুদ্দুস, মফিজাল ইসলাম, আনসার আলী, আহসানুল আরেফিন তিতু প্রমুখ।

সিলেট : হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরকারি উদ্যোগে খোদ কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয় ও ধানের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে বিকাল ৩টায় সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার সদস্য রেজাউর রহমান রানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সিলেট জেলার সদস্য মহিতোষ দেব মলয়, রুবাইয়াৎ আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাশ প্রমুখ।

দিনাজপুর : ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট দিনাজপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ১৯ মে ২০১৯ সকাল ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূিচ পালন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলতাফ হোসাইন, ইউসিএলবি দিনাজপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আলী সরকার, বাসদ (মার্কসবাদী)-র এ এস এম মনিরুজ্জামান মনির, বাসদের কিবরিয়া হোসাইন।

বাম জোট : ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত করে কৃষক বাঁচানো ও অবিলম্বে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশেধসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯ মে সকাল সাড়ে এগারোটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, সিপিবি সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা আ ক ম জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জুলহাসনাইন বাবু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা লিয়াকত আলী।

বাম জোটের সংবাদ সম্মেলন

ভোট ডাকাতির সংসদ ভেঙে তদারকি সরকারের অধীনে পুনর্নিবাচন অনুষ্ঠানের দাবি

কৃষকের ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত, ধান ক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা, ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়, পাটকল শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি মেনে নেয়া, ২% ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করে ঋণখেলাপি ব্যাংক ডাকাতদের পুরস্কৃত না করে শাস্তি দেয়া ও তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, কৃষকের নামে দায়ের করা সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার, নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-খুন বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সকল মেগা প্রজেক্টের মেগা দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা, বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধসহ দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ভোট ডাকাতির সংসদ ভেঙে দল নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে পুনর্নিবাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয় বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে।

২৬ মে ২০১৯ সকাল সাড়ে এগারোটায় ২নং কমরেড মনি সিংহ সড়কের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কমরেডস শাহ আলম, সাইফুল হক, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, মানস নন্দী, হামিদুল হক, লিয়াকত আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের জন্য দায়ী গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠিত ভোট ডাকাতির নির্বাচনে অধিষ্ঠিত সরকার। ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। এর অবসানের জন্য দ্রুত বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে দল নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কৃষক ধানের দাম না পেয়ে যদি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হয়, তাহলে দেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। সরকার ঋণ খেলাপিদের শাস্তি না দিয়ে উল্টো ২% ডাউন পেমেন্টে রিসিডিউল করে ১০ বছরের জন্য পুনরায় লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে ছোবড়া করে দেবে। দেশে নারী-শিশু নির্যাতন ভায়বহ রূপ নিয়েছে। যত বড় প্রকল্প তত বড় দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালিশ কাÐ দুর্নীতির একটি প্রতীক মাত্র। লিখিত বক্তব্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভেজালমুক্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে কৃষকের ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত, ঋণখেলাপীদের ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ঈদের পর বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক কার্যালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাও’সহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ৯ দফা দাবির সমর্থনে বিক্ষোভ

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ১২ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন অবিলম্বে পরিশোধ, ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত-মৃত শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি বাবদ ২০১৩ সাল থেকে বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ৯ দফা দাবির সমর্থনে বাংলাদেশ শ্রমিক র্কমচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে ১১ মে শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল রায়, শ্রমিকনেতা মানস নন্দী, শফিউদ্দিন কবির প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের গত ১২ সপ্তাহের মজুরি ও তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। ২০১৩ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি বকেয়া। মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহার-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের লিখিত প্রতিশ্রæতি দিয়েও সরকার ও বিজেএমসি তা ভঙ্গ করেছে। এখন পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধে কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বরং লোকসানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ) খাতে ছেড়ে দেয়া হবে — পাটমন্ত্রীর এ ঘোষণা সরকারের উদ্দেশ্য ও সদিচ্ছা নিয়ে শ্রমিকদের আরো উদ্বিগ্ন ও সন্দিহান করে তুলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর লোকসানের কারণ সরকারের ভ্রান্ত নীতি, বিশ্বব্যাংকের পাটশিল্প ধ্বংসের পরামর্শ বাস্তবায়ন, সরকারের উচ্চ মহলের যোগসাজশে বিজেএমসি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-লুটপাট, অব্যবস্থাপনা ও মাথাভারী প্রশাসন। এ সমস্যাগুলো নিরসনের উদ্যোগ নিলে সহজেই পাটখাতকে লাভজনক করা সম্ভব। কিন্তু সে পদক্ষেপ না নিয়ে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট লোকসানের অজুহাতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে পিপিপি খাতে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব কার্যতঃ দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থে পাটখাতকে পরিপূর্ণভাবে বেসরকারিকরণের গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ।”

২০ মে ঐতিহাসিক চা শ্রমিক দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে গত ২০শে মে মালনীছড়া চা বাগানে চা শ্রমিক দিবসকে রাষ্ট্রীয় দিবস ঘোষণা, ভূমির অধিকার, ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরীর দাবীতে এক আলোচনা সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হৃদেশ মুদির সভাপতিত্বে এবং অজিত রায়ের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা সদস্য হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, বাংলাদেশ শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার সভাপতি সুশান্ত সিনহা সুমন, চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলার সদস্য সন্তোষ বাড়াইক, সন্তোষ নায়েক, লাংকাট লোহার, মালনীছড়া চা বাগানের প্রাক্তন সহসভাপতি সাধনা গেলোয়ার, বর্তমান সহ-সভাপতি জয়ন্তী গোয়ালা, খাদিম চা বাগানের ইউপি সদস্য দোলন কর্মকার, শ্রীপুর চা বাগানের শ্যামল সাওতাল, পাঞ্চাল রায়, জয়ন্ত কর্মকার, চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সংগঠক অধির বাউরি প্রমুখ। এছাড়া ছড়াগাং, খান বাগানসহ বিভিন্ন বাগানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আলোচনাসভা শেষে শত শত চা শ্রমিকের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি মালনীছড়া বাগানের মন্ডপ থেকে শুরু হয়ে রেস্ট ক্যাম্প বাজার, লাক্কাতুরা প্রদক্ষিণ করে আবার মালনীছড়ায় গিয়ে শেষ হয়। এর পূর্বে সিলেটের বাগানে বাগানে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০শে মে চা শ্রমিকদের ইতিহাসে এক রক্ত¯œাত গৌরবোজ্জ¦ল দিন। এতদিন ধরে মালিকরা চা শ্রমিকদের সেই ইতিহাসকে ভুলিয়ে রেখেছিল। ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এই দিনটিকে আমরা পালন করছি। দিবসটি সিলেটের ২২টি বাগানসহ সারা দেশের প্রায় সকল বাগানেই আজ নানাভাবে পালিত হচ্ছে। আগামীদিনে একে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে সবেতন ছুটি ঘোষণা, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস অন্তর্ভুক্তকরণ, ৩’শ টাকা মজুরি, ৫ কেজি রেশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ ভূমি অধিকার বাস্তবায়নের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।

মে দিবসের চেতনায়
শ্রমিক নিপীড়নকারী ও মালিকশ্রেণির স্বার্থ রক্ষাকারী ফ্যাসিবাদী শাসন রুখে দাঁড়ান

KODAK Digital Still Camera

“প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় বসেই আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম আক্রমণ করেছে শ্রমিকদের ওপর। মালিকগোষ্ঠী ও সরকারের প্রতারণায় মজুরি বৃদ্ধির পরিবর্তে কমিয়ে দেয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যা করা হয়েছে, সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে, ১২ হাজারের মত শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে, অসংখ্য মামলায় অজ্ঞাতনামা হাজার শ্রমিককে আসামী করে রাখা হয়েছে, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিজিএমইএ তথ্যভাÐারে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন করায় শ্রমিকরা হল নির্যাতিত, অন্যদিকে মালিকদের উৎস কর ও কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোসহ নানা সুবিধা বাড়ানো হল। পাটকল শ্রমিকরা বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলন করলে তাদের ওপরও পুলিশী নির্যাতন চালানো হয়েছে। ফলে, শ্রমিকের অধিকার আদায় করতে হলে মালিকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাকারী এই স্বৈরাচারী সরকারের নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।” বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত মে দিবসের সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

সংগঠনের উদ্যোগে ১লা মে সকাল সাড়ে ১০টায় লাল পতাকাশোভিত একটি মিছিল পল্টন-গুলিস্তান এলাকায় রাজপথ প্রদক্ষিণ করে এবং পরে শিশু কল্যাণ পরিষদ চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ও বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রমিকনেতা আ ক ম জহিরুল ইসলাম, ডা. মুজিবুল হক আরজু, রাজু আহমেদ, মামুন মিয়া, মানিক হোসেন, মো. ইউনুস, মাহবুবুল আলম, শহিদুল ইসলাম, মো. ইউসুফ প্রমুখ। সমাবেশে গণসঙ্গীত পরিবেশনা করেন দলীয় সংগঠকরা।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “মে দিবস নিছক আনন্দ-উদ্যাপন করার দিন নয়। সকল ধরনের শোষণ-জুলুম-বৈষম্য থেকে মুক্তি অর্জনের জন্য সংগ্রামের শপথ গ্রহণের দিন। শ্রমিকদের লড়াই এবং জীবনদানের বিনিময়েই মালিকেরা স্বীকার করে নিয়েছিল শ্রমিকেরাও মানুষ, তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম-বিনোদনের অধিকার আছে। কিন্তু আজকে যেন গোটা বিশ্ব আবারও উনিশ শতকে ফিরে যাচ্ছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয় এবং শ্রমিক আন্দোলনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দেশে দেশে মালিকশ্রেণি আবারও উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। লাগামহীন শোষণ ও লুটপাটের স্বার্থে তারা শ্রমিকশ্রেণির সমস্ত অধিকারকে পায়ে মাড়াচ্ছে।” তাঁরা বলেন, “বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের বর্তমান অবস্থার সাথে দেড়শ বছর পূর্বেকার অবস্থার বড় কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ শুধু শ্রমিকরা নন, যারা বহু বেতনের কর্পোরেট চাকরি করেন তারাও ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার পান না। এদেশে এখনো অধিকাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক নিয়োগপত্র, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, ওভারটাইম, ছুটি, গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, প্রোডাকশন বোনাস, পেনশন কিছুই পায় না। না আছে কর্মস্থলে থাকার মতো ব্যারাক-কলোনি, না আছে চিকিৎসা সুবিধা, না পায় রেশন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল বৃদ্ধি, শিক্ষা-চিকিৎসার বাড়তি খরচের চাপে সীমিত আয়ের শ্রমিক-কর্মচারীরা দিশেহারা। কর্মস্থলে শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা নেই। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে হাজারো শ্রমিক মরেছিল, কিন্তু আজও তার বিচার হয়নি, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের আইন সরকার করেনি।” তাঁরা আরো বলেন, “শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, জাতীয় উৎপাদন বাড়ছে, মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ছে, কিন্তু শ্রমিকের অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।”

শেষে নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান, “ব্যক্তিমালিকানাভিত্তিক এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণেই উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও শ্রমিকের দুর্দশা কাটে না, অন্যদিকে মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ে। এই অবস্থা পাল্টাতে হলে চাই শ্রমিকদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ লড়াই। তাই অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ে সংগ্রামের পাশাপাশি রাজনীতি সচেতন বিপ্লবী ধারার শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”

দিনাজপুর : মহান মে দিবস উপলক্ষে বাসদ (মার্কসবাদী) দিনাজপুর জেলা শাখার উদ্যোগে মিছিল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সকাল ১১টায় দলীয় কার্যালয় হতে মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মডার্ন মোড়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান মনির, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন-এর জেলা সংগঠক অ্যাড. সুকুমার রায় সৌরভ, আজিজার রহমান, ছাত্র ফ্রন্ট নেতা অজয় রায়।

নুসরাত হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা-সোনাগাজী রোডমার্চ অনুষ্ঠিত

নুসরাত হত্যার বিচার দাবিতে ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধের ডাকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে ২ মে ঢাকা থেকে সোনাগাজীর উদ্দেশ্যে রোডমার্চ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে সাতটায় মুক্তাঙ্গনে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সমাবেশে বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্র্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা আ ক ম জহিরুল ইসলাম, কমিউনিস্ট লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা বাচ্চু ভাইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু, সিপিবি নারী সেলের লুনা নুর, মুনিরা বেগম অনু, অ্যাডভোকেট ফরিদুন্নাহার লাইলী, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভাইরনমেন্টের অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান প্রমুখ।

উদ্বোধনের পর ২টি মাইক্রোবাস ও ১টি বাসযোগে নেতা-কর্মীরা রোডমার্চ যাত্রা শুরু করে সকাল সাড়ে ৮টায় কাঁচপুরে, সকাল সাড়ে ৯টায় সোনারগাও মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায়, সকাল সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার চান্দিনায়, দুপুর ১২টায় কুমিল্লা পদুয়ার বাজারে পথ সভায় মিলিত হয়। দুপুর দেড়টায় রোডমার্চ বহর ফেনী মহিপালে পৌঁছায়। সেখানে দুপুরের খাবার গ্রহণ শেষে যাত্রা করে বিকেল সাড়ে তিনটায় সোনাগাজী পৌঁছায়। সোনাগাজীতে নেতৃবৃন্দ নুসরাতের বাড়ী গিয়ে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের সান্ত¡না দেন, সহানুভূতি জানিয়ে নুসরাত হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বাম জোটের নেতা-কর্মীরা শেষ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। পরে সোনাগাজী শহীদ মিনারে সমাবেশে মিলিত হন। ফেরার পথে ফেনী শহীদ মিনারে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উভয় সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। ফেনীর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। অ্যাড. মিল্কী, ডা. হারাধন চক্রবর্ত্তী, জসিম উদ্দিন, অ্যাড. সাগর, রাসেল প্রমুখ।
উদ্বোধনী সমাবেশসহ বিভিন্ন স্থানে পথসভায় ও সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সারা দেশে নারী-শিশু নির্যাতন যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যাকান্ডের ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। রাষ্ট্র-সরকার এর প্রতিকার করতে পারছে না। নুসরাতের ঘটনা গোটা দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। নুসরাতকে শুধু যৌন নিপীড়ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। যৌন নিপীড়নের পর মামলা করতে গেলে থানার ওসি মামলা না নিয়ে সেখানেও তাকে হয়রানি করা হয়। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা ও সরাসরি যুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র-তারা সকলেই শাসক দল আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত।

নেতৃবৃন্দ বলেন, নুসরাতসহ ভয়ঙ্কর যতো ঘটনা ঘটেছে সবই শাসক দলের নেতা-কর্মীদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে। নেতৃবৃন্দ বলেন পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থায় নারীকে ভোগের পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা, ধর্মীয় কুসংস্কার, ফতোয়া-নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীদেহকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরা, পর্নোগ্রাফির প্রসারের কারণেই সারা দেশে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার শিকার হচ্ছে নারী-শিশুরা। এছাড়াও বিচারহীনতার যে রেওয়াজ তৈরি হয়েছে, সেটাই ধর্ষকদের নারী-শিশু নির্যাতনে উৎসাহী করছে। নেতৃবৃন্দ সারাদেশে নারী শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

নার্স তানিয়ার ধর্ষক-খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার ইবনে সিনা হাসপাতালের নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়ার ধর্ষক ও খুনীদের ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, স্বাধীনতা নার্সেস এসোসিয়েশন ও স্টুডেন্ট নার্সেস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে ১৯ মে সকাল ১১টায় রংপুর প্রেসক্লাব চত্তরে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র নেত্রী আলো বেগমের সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নারীনেত্রী কামরুন্নাহার খানম শিখা, শাপলা রায়, স্বাধীনতা নার্সেস এসোসিয়েশন রংপুর এর সভাপতি ফোরকান আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছা. আমিনা খাতুন, নার্সিং অফিসার সাহিদুর রহমান সাজু, স্টুডেন্ট নার্সেস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন রংপুর এর সভাপতি তারেক ইসলাম, সদস্য সালমা আক্তার প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে আইন-আদালত-প্রশাসন সবই আছে কিন্তু অপরাধীরা অপরাধ করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। গ্রেফতার হলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জামিন পায়। আর অন্যায়ের শিকার, খুন-ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুর পরিবার দুয়ারে দুয়ারে ঘোরে বিচারের আশায়। ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য এদেশে আন্দোলন করতে হয়। নতুবা অপরাধীর বিচার হয় না। নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের কাছে দাবি জানান নার্স তানিয়া, মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতসহ সকল নারী ও শিশু নির্যাতন-খুন-ধর্ষণের বিচারে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তারা বলেন ধর্ষক ও খুনীদের রক্ষায় জড়িত আইন ও প্রশাসনের লোকদেরও একই আইনের আওতায় বিচার করতে হবে। আর খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন এসবের উৎস পর্নোগ্রাফি, মাদক, অপসংস্কৃতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বাসদ (মার্কসবাদী)-র ডাকে ‘দাবি সপ্তাহ’ পালিত

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ, সরকারি দায়িত্বে শিক্ষা-চিকিৎসা-আবাসন-পরিবহন, শ্রমিকের মজুরি ১৬ হাজার টাকা ও কৃষকের ফসলের ন্যায্য দামসহ ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবি

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ১৩ দফা দাবি নিয়ে সারাদেশের জেলায় জেলায় প্রচারপত্র বিলি, প্রচার মিছিল, পথসভা ও গণসংযোগ-এর মাধ্যমে ২৪ থেকে ৩০ এপ্রিল ‘দাবি সপ্তাহ’ পালন করেছে। দাবি সপ্তাহের কর্মসূচিতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য, পিইসি পরীক্ষা বাতিল, নারীদের উপর নিপীড়ন বন্ধ করাসহ জনজীবনের সংকট নিরসনে ১৩ দফা দাবির ভিত্তিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

ঢাকা : ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে ২৫ এপ্রিল প্রচার মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি তোপখানা রোডের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে পল্টন, জিপিও, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান মোড়, বায়তুল মোকাররম হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। প্রচারমিছিল চলাকালে কর্র্মীরা রাস্তার দু’পাশে প্রচারপত্র বিলি করেন। গুলিস্তান মোড়ে ও বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তারা পুনর্বাসন না করে হকার উচ্ছেদের তীব্র প্রতিবাদ জানান। হকার ও সাধারণ মানুষরা ব্যাপকহারে এই পথসভা দুটিতে অংশগ্রহণ করেন। এরপর পল্টন মোড়ে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রচার মিছিলটি শেষ হয়। পথসভাগুলোতে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) ঢাকা নগর নেতৃবৃন্দ নাঈমা খালেদ মনিকা, সীমা দত্ত, রাজু আহমেদ, জয়দীপ ভট্টাচার্য, মাসুদ রানা ও রাশেদ শাহরিয়ার। প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাপনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য কমরেড আ ক ম জহিরুল ইসলাম।

সমাবেশগুলোতে বক্তারা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ নির্বাচনের নামে একটি নজিরবিহীন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। ‘উন্নয়ন’-এর নামে বাস্তবে দেশে চলছে লুটপাটের রাজত্ব। কিছু ধনীদের সম্পদ বাড়ছে, বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। দেশের আয় বাড়ার দাবি যতই সরকার করুক, মধ্যবিত্ত-গরীব-নিম্নবিত্তরা জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে পারছেন না। এর ওপর সরকার গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন-ফি বাড়ছে, প্রতিবছর বাড়ছে বিদ্যুৎ-পানি-তেলের দাম। বাড়ছে যাতায়াতের খরচ, ঢাকা শহরে বাড়িভাড়ায় চলে যায় বেতনের বড় অংশ। স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেসরকারিকরণের জন্য চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এর উপর শহরে জলাবদ্ধতা, যানজট, বিশুদ্ধ পানির সংকট, সরকারি পরিবহনের অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত। ঘরের মেয়েদের নিয়ে প্রতিটি পরিবার সবসময় শঙ্কায় থাকেন। যৌন নিপীড়নের বিচার চাওয়ায় সোনাগাজিতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বর্বরতা সারাদেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে।

একদিকে শহরের বাজারে মধ্যবিত্ত আগুন দাম দিয়ে জিনিসপত্র কিনছে। অন্যদিকে গ্রামের কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে রাস্তায় বসেছে। প্রতিদিন সব হারিয়ে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে শহরে কাজের সন্ধানে আসছে হাজার হাজার লোক। সস্তা দরে তারা শ্রম বিক্রি করছে। গ্রামের ছোট চাষী, ভাগচাষী, ক্ষেতমজুর থেকে শুরু করে শহরের রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দোকানকর্মচারী কিংবা চা বিক্রেতা সবাই ঋণের চক্রে বন্দী। সপ্তাহের শেষে কিস্তি পরিশোধের আতঙ্ক তাদের তাড়া করে বেড়ায়। গার্মেন্টসে চাকরি করা ৪০ লক্ষ শ্রমিক দিনে ১০ থেকে ১৪ ঘন্টা পর্যন্ত খাটে, মজুরি যা পায় তাতে সংসার চলে না। বকেয়া মজুরির দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। এ অবস্থায় জনজীবনের সংকট নিরসনে ১৩ দফা দাবির ভিত্তিতে জনমত ও গণআন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।

সিলেট : বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে ভোটাধিকারসহ গণতন্ত্র রক্ষায় ও জনজীবনের সংকট নিরসনে ১৩ দফা দাবিতে দাবি সপ্তাহে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ শাহপরাণ বাজারে ২৯ এপ্রিল প্রচারপত্র বিতরণ ও সমবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার আহŸায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়ের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সঞ্জয় কান্ত দাশের পরিচালনায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন পার্টি সিলেট জেলার সদস্য রুবেল মিয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর শাখার সদস্য বিশ্বজিৎ শীল।

সমাবেশে বক্তরা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে নজিরবিহীন ও নির্লজ্জ ভোট ডাকাতি করেছে তা জনমনে প্রচন্ড ক্ষোভ ও ঘৃণা সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসমূহে জনগণের অনুপস্থিতিই প্রমাণ করে বর্তমান এই শাসনব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে ন্যূনতম আগ্রহ নেই। তবে দেশের মধ্যে ব্যবসায়ী মহল, আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, পুলিশ-র‌্যাব-গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক বাহিনী, সিভিল সোসাইটির প্রধান অংশ, মিডিয়া সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী সুবিধাভোগী চক্র সৃষ্টি করেছে; যাদের স্বার্থ এই জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারের অস্তিত্বের সাথে যুক্ত। ভারত-চীন-রাশিয়া, সৌদি আরব ও আমেরিকা-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাইকে নানা প্রকল্পে বিনিয়োগের সুবিধা দিয়ে এবং তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করেছে। একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার আগামী দিনে আরো বেশি স্বৈরতান্ত্রিক, নিপীড়নমূলক ও গণবিরোধী শাসন চালাবে। ডাকসু নির্বাচনের ঘটনাই তার প্রমাণ। সমাজের সর্বক্ষেত্রে চলছে আজ নৈরাজ্য। শ্রমিক-কৃষক-শোষিত সাধারণ মানুষের জীবন ভীষণভাবে পর্যুদস্ত। প্রতিদিনই বাড়ছে নারী নির্যাতন, বিস্তার ঘটছে মাদক-জুয়া-পর্নোগ্রাফীর। সর্বত্র আজ ক্ষমতার দাপট মালিক শ্রেণির। এদের হাতেই আছে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ। ফলে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ছাড়া এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বদল করা যাবে না। বক্তারা সকলকে এই ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে গৃহকর্মীদের স্মারকলিপি পেশ

গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, সরকারীভাবে ন্যূনতম মজুরী ঘোষণা, কাজে যোগদানের আগে নিয়োগপত্র দেয়ার দাবীসহ ৯ দফা দাবীতে ‘গৃহকর্মী অধিকার রক্ষা কমিটি’ চট্টগ্রাম জেলার পক্ষ থেকে ২ মে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এর পূর্বে সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে কমিটির সভাপতি আসমা আক্তারের সভাপতিত্বে এবং সহ-সম্পাদক ওপিয়া আক্তারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি বেবী বেগম, সহ-সভাপতি রিনা বেগম, সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুয়ারা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজা বেগম, আজেনা বেগম, শিরিনা বেগম প্রমুখ গৃহকর্মী নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বাসা-বাড়ীতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে প্রায় ৫০ লাখ নারী, কিশোরী, শিশু। কিন্তু এরা সকলে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক। সমাজ থেকে দাসব্যবস্থার উচ্ছেদ হলেও গৃহকর্মীদের দাস হিসাবে দেখার মানসিকতা এখনো দূর হয়নি। গৃহকর্মীরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করলেও তার প্রাপ্য মূল্য বা স্বীকৃতি পায় না। বাসা-বাড়ি, মেস, হোটেল, অফিস-আদালতে কিংবা বিভিন্ন কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে তারা রান্না, তরকারি কাটা, মসলা বাটা, ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া, প্রসূতি মায়ের নানা কাজ করা, বাসার আসবাবপত্র পরিষ্কার করা ইত্যাদি নানান কষ্টসাধ্য কাজ করে। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো নীতিমালা বা আইন না থাকার কারণে শ্রমিক হিসাবে এখনো তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ন্যায্য মজুরি তো অনেক পরের কথা, নেই বাঁচার মতো মজুরী ও সাপ্তাহিক ছুটি। তাছাড়া নানাভাবে যৌননিপীড়নের ঘটনার খবরও আমরা জানি। ধর্ষণ, খুন, শারীরিকভাবে নানা নির্মম নির্যাতন, চুরির মিথ্যা অপবাদ ইত্যাদি তো আছেই। বাংলাদেশে নিয়োজিত গৃহকর্মীদের প্রায় ৮৫ ভাগ শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু সেগুলোর কোনো বিচার হয় না। অথচ আমরা জানি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসহায় নারীরা বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ, সন্তানের পেটের ভাত, পড়ালেখার খরচ, চিকিৎসার খরচ, মাতাল স্বামীর ভরণ-পোষণের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরগুলিতে আসছে মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করতে। সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয় শহরের এমন জায়গায় তারা থাকে। সেখানে মাথা গোঁজার যে জায়গাটুকু তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলা টাকা দিয়ে ভাড়া নেয়, তাতে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা। আগুন লাগলে তাতে পুড়ে মরতে হবে, এমন ঘিঞ্জি পরিবেশে তারা থাকে। মদ-গাঁজা সহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্য সহজেই পাওয়া যায় যা তাদের স্বামী-সন্তানদের বিপথগামী করছে।

বক্তারা আরো বলেন, আইএলও কর্তৃক ১৯৯৬ সালে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে যেসব অধিকার কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে তা হল : ক) গৃহকর্মে নিযুক্ত শ্রমিকদের পছন্দ মতো কোনো সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা কোনো সংস্থায় যোগদান এবং এই ধরনের সংস্থার কর্মকান্ডে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণের অধিকার; খ) চাকুরি বা পেশার বৈষম্য থেকে রক্ষার অধিকার; গ) কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার অধিকার; ঘ) পারিশ্রমিক পাবার অধিকার; ঙ) সংবিধিবদ্ধ সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষার অধিকার; চ) প্রশিক্ষণ গ্রহণের অধিকার; ছ) কর্মে বা চাকুরিতে প্রবেশের নিম্নতম বয়স সীমা; জ) মাতৃত্ব রক্ষার অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশে গৃহকর্মীরা আইএলও স্বীকৃত সব অধিকার থেকেই বঞ্চিত। এ পরিস্থিতে আমরা মানুষের মতো মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই। উত্থাপিত ৯ দফা দাবি আদায়ে গৃহকর্মীরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, ভবিষ্যতে এ দাবিতে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল নিউমার্কেট, কোতোয়ালী প্রদক্ষিণ করে কোর্ট বিল্ডিংস্থ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদানের পর সমাবেশের কাজ শেষ হয়।

জাতীয় বাজেটে ২৫ ভাগ বরাদ্দের দাবিতে অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ

শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ বরাদ্দসহ সিলেটের শিক্ষা সংকট নিয়ে ৮ দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখা । ২১ মে সকাল ১১ টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশে অনুিষ্ঠত হয়। সিলেট নগর শাখার সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাশের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া নোশিন তাসনিমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন নগর শাখার সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ চন্দ্র শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম আহমদ চৌধুরী, মদন মোহন কলেজ শাখার সংগঠক পলাশ কান্ত দাশ, এমসি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন প্রমুখ।

রামপাল রূপপুরসহ প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশী সকল প্রকল্প বন্ধ কর

জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত পরিবেশসম্মত সুলভ বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কর
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ১৬ জুন এক বিবৃতিতে বলেছেন: ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে সরকার বিভিন্ন ব্যয়বহুল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, সরকার উন্নয়নের নামে এমন অনেক প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য শুধু আর্থিক বোঝাই সৃষ্টি করবে না, প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশ করে দেশ ও জননিরাপত্তাকে বিপর্যস্তও করবে। যেমন উন্নয়নের কথা বলেই সরকার এখনও সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বদরবারে মিথ্যাচার করে আরও তিন শতাধিক, সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য, বিপজ্জনক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। রামপাল প্রকল্প নিয়ে সরকার জনগণের কাছে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে, ইউনেস্কোকে দেয়া বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে হেয় করেছে। সরকারের এই ভূমিকায় একদিকে বাংলাদেশ অরক্ষিত হচ্ছে অন্যদিকে সুন্দরবন তার বিশ্ব ঐতিহ্য মর্যাদা হারাতে বসেছে।

সরকার উন্নয়ন সাফল্যের বয়ানে যেসব প্রকল্পকে গৌরবান্বিত করছে তার মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প অন্যতম। এই প্রকল্প প্রথম থেকে অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, গোপনীয়তা ও জবরদস্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সম্প্রতি এই প্রকল্পের ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা এর খুবই ছোট অংশ। উপরন্তু বিশ্বের পারমাণবিক শক্তির প্রথম সারির দেশগুলো যখন উচ্চ ব্যয়বহুল এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে এই পথ থেকে সরে আসছে তখন বাংলাদেশের মানুষের ওপর ভয়াবহ ঋণের বোঝা চাপিয়ে, ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত না করে, প্রকল্প সংলগ্ন কোটি মানুষকে প্রত্যক্ষ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে, পদ্মা নদী এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশকে মহাবিপদে নিক্ষেপ করে এই ব্যয়বহুল প্রকল্প নিয়ে উচ্ছাস ছড়ানো এক নির্মম পরিহাস বলে আমরা মনে করি। রামপাল, রূপপুর মাতারবাড়ীর এসব প্রকল্পকে আমরা উন্নয়ন নয় ধ্বংস প্রকল্প বলে মনে করি এবং উন্নয়নের নামে প্রাণ-প্রকৃতি বিনাশী বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জনগণের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে এসব প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত পরিবেশসম্মত সুলভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় করার দাবি জানাই।

ভূমি অফিসের দুর্নীতি-হয়রানির প্রতিবাদে ধুনটে বিক্ষোভ

বগুড়ার শেরপুর ধুনট উপজেলায় ‘ভূমি রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’-এর উদ্যোগে দুর্নীতিবাজ-ঘুষখোর সাবেক সেটেলমেন্ট অফিসার আরিফুর রহমান ও এসও মনতাজ আলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, অবিলম্বে সকল জমির ভুয়া রেকর্ড সংশোধন করা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও হয়রানি বন্ধ করা এবং সকল ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবীতে গত ২ মে ধুনট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ভূমিমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে ভূমি রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা ও বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা রঞ্জন কুমার দে’র সভাপতিত্বে স্থানীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক ও ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হাবীব সাইদ, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকবর হোসেন, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সদস্য ইসমাইল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন মুকুল, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাহা সন্তোষ, বাংলাদেশ কৃষক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লিয়াকত আলী, সাইফুল ইসলাম পল্টু, আমিনুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান।
বক্তাগণ বলেন, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, এসি (ল্যান্ড) অফিস, সেটেলমেন্ট অফিসসহ সরকারি অফিসসমূহে সীমাহীন দুর্নীতি কৃষকদের জীবনকে সংকটাপন্ন করেছে। বগুড়া জেলার ধুনট-শেরপুর উপজেলার এ সকল অফিসও তার ব্যতিক্রম নয়। তৎকালীন ধুনট-শেরপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার আরিফুর রহমান ও এসও মনতাজ আলীর দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে হাজার হাজার কৃষক ভূমি আইনের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হচ্ছে। এই দুর্নীতিবাজ চক্র অফিসে বসেই একজনের জমির রেকর্ড অন্য জনের নামে করে দিচ্ছে। এমনও ঘটনা ঘটেছে যাকে বাদী দেখিয়ে জমি নতুন করে রেকর্ড করা হয়েছে সে নিজেও ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না। এই দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাগণ ২০০৯ সালের মৃত ব্যক্তিকেও ২০১৬ সালের একটি মামলার বাদী দেখিয়ে তার নামে জমি রেকর্ড করিয়েছে। পরবর্তিতে তা সংশোধনের নামে টাকা দাবী করছে। এ ভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কৃষকদেরকে সর্বস্বান্ত করছে।

তাই বক্তাগণ অবিলম্বে সকল ভুয়া রেকর্ড সংশোধন করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপের দাবী জানান। পাশাপাশি সকল প্রকার দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান। সমাবেশ শেষে শত শত মানুষের অংশগ্রহণে একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্ব¦রে গিয়ে শেষ হয় এবং নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ভূমিমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা ও বর্বর হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ২২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টান সম্প্রদায় ও বিদেশিদের টার্গেট করে পরিচালিত ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় এপর্যন্ত ৩২০ জন নিরপরাধ সাধারণ মানুষের নিহত হওয়া ও ৫০০ জনের আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা, গভীর শোক ও আক্রান্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আইএস নামধারী যে মুসলিম জঙ্গীরা নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকান্ড চালিয়েছে বলে দাবি করেছে, তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ব্যক্ত করেন এবং এই ধর্মান্ধদের প্রত্যাখ্যান ও রুখে দাঁড়াতে মুসলিম সম্প্রদায়সহ সকলের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “হামলাকারীরা জনগণের মধ্যে ভীতি, বিভেদ ও ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্য বাড়ানোই এর যথার্থ জবাব। গভীর উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ করছি যে, আমাদের দেশসহ দুনিয়াজুড়ে সাম্প্রদায়িক হানাহানি ও ঘৃণার চর্চা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও মতান্ধতার বিপরীতে যুক্তিবাদী-সহনশীল ও সেক্যুলার চিন্তার প্রসার ঘটানোর আন্দোলনকে জোরদার করার তাগিদ সকলের কাছে তুলে ধরছে। দেশে দেশে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী ধর্মীয়-জাতিগত বিরোধ ও ঘৃণার রাজনীতিকে উসকে দিচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, শোষিত জনগণকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের নামে বিভক্ত করা। ”

তিনি আরো বলেন, “বর্তমান হামলার জন্য দায় স্বীকারকারী আইএস-এর উত্থান সূচনা সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে আদর্শগতভাবে কাবু করতে ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিশেষত ইসলামী মৌলবাদীদের ব্যবহার করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সা¤্রাজ্যবাদীরা। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সেখানকার মৌলবাদীদের অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষণ দেয় মার্কিন-পাকিস্তান-সৌদি জোট। এভাবে মার্কিন প্রত্যক্ষ মদতেই জন্ম জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদার। তারাই পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা চালায়। একইভাবে আমেরিকার ইরাক দখলের পর সুন্নী মুসলিম অবমাননাবোধকে কাজে লাগিয়ে সেখানে জন্ম নেয় আইএস জঙ্গী গোষ্ঠী। পরবর্তীতে লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে শাসক পরিবর্তন করতে সাম্রাজ্যবাদীরা আইএস’সহ ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে। এভাবে শক্তি সঞ্চয় করে আইএস ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নৃশংস হামলা চালিয়েছে। এই সবকিছুই আবার মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নামে যুদ্ধোন্মাদনা, অস্ত্র ব্যবসা ও দেশে দেশে হস্তক্ষেপ-এর অজুহাত তুলে দিচ্ছে। তাই আজ মৌলবাদ-জাাতিদম্ভ-বর্ণবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বের সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষকে সামিল হতে হবে এবং এ আন্দোলনকে পুঁজিবাদী শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনবিরোধী সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ের সাথে যুক্ত করতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালনা ও প্রতিনিধি প্রেরণ সংক্রান্ত ডাকসুর বক্তব্য অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “গত ৩০ এপ্রিল ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য প্রকাশ হয় আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বক্তব্যে উল্লেখ ছিলো ’দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমÐলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে যে কোন অংশগ্রহণ এবং প্রতিযোগিতামূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমে (বিতর্ক, নাটক, গান, নৃত্য, বক্তৃতা, আবৃত্তি, রচনা প্রভৃতি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি প্রেরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ একক এখতিয়ার রাখে। এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সংশ্লিষ্ট সম্পাদকগণ অতি দ্রæত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দীর্ঘ দিন ধরে স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের ফলে সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ ও ছাত্রদের অংশগ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমান সময়ে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার প্রভাব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। উপরন্তু এহেন সিদ্ধান্ত হবে কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা!

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যে হল, বিভাগ ও টিএসসি ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এমনিতেই স্বাধীনভাবে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারছে না। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কোন্ টিম অংশ গ্রহণ করবে বা কারা সেখানে থাকবে তা মেধার ভিত্তিতে নির্ধারিত না হয়ে ক্ষমতার রাজনীতির ভিত্তিতে নির্ধারিত হচ্ছে। ডাকসুর মাধ্যমে ছাত্রলীগ ধীরে ধীরে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হরণ করার দিকে এগুচ্ছে। সকল গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে তাদের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। ডাকসুকে আমরা ছাত্রদের অধিকার রক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাইÑঅধিকার হরণের নয়। সাংস্কৃতিক চর্চার সামগ্রিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বয়কট করুন, প্রতিবাদে সামিল হোন – এই আহ্বান জানাই।

সাম্যবাদ জুন-জুলাই ২০১৯ সংখ্যা 

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments