বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, অর্থবহ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সংলাপের শেষে প্রধানমন্ত্রীর মতামত জানানোর পর সংলাপের পরিসমাপ্তি ঘটবে ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হবে বলে আশা করা হয়েছিল। তা না করে, সংবাদ সম্মেলন স্থগিত ও দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা পুরো সংলাপ প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করে দিলো। অন্য দাবি-দাওয়াগুলি গৌণ হয়ে রাজনীতি এখন তফসিল কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক কূটকৌশল দেশের গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে যে যুক্তিসংগত দাবি উত্থাপন করা হয়েছে তা কার্যকর করা ছাড়া অবাধ-গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বাম জোটসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উত্থাপিত দাবিসমূহ বিষয়ে সমাধান না করে নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের ঘোষণা ‘এক তরফা নির্বাচনের জন্য সরকার ফাঁদ পেতেছে’ বলে জনমনে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধেও বক্তব্য তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ ও ভোট নিয়ে শঙ্কা দূর করার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি।
একইসঙ্গে ‘এক তরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফাঁদে পা না দিয়ে’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
১৩ নভেম্বর সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ২ কমরেড মণি সিংহ রোডস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয় ও সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম। সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী)’র মানস নন্দী, গণসংহতি আন্দোলনের জুলহাসনাইন বাবু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। রাজনীতিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে নানা ষড়যন্ত্রকারীরা উৎসাহিত হয়। ক্ষমতার খেলার অংশ হিসেবে শাসকগোষ্ঠী আরো নানা ধরনের কূটকৌশল গ্রহণ করে। এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশবাসী সজাগ না থাকলে কি পরিস্থিতি হয় তার দুঃখজনক ইতিহাস আমাদের জানা আছে। আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভূমিকা যাতে আর বিতর্কিত না হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় “গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী সংগ্রামে অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখতে চাই। কিন্তু তা নির্ভর করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কার্মকা- ও আচরণের উপর। আমরা আশা করব সরকার ও নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা ও দায়িত্বশীল কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে সকল দল ও ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। আমরা আশা করব তারা এমন কোন ভূমিকা পালন করবেন না যাতে আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হই। আমরা মনে করি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা না থাকা নির্ভর করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকা- ও আচরণের উপর। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আমরা সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেব।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, “বর্তমান সরকারের দুঃশাসন অবসানে আমরা লড়াই করছি। একইসঙ্গে বিকল্প কর্মসূচির ভিত্তিতে শাসকশ্রেণির সকল অংশের বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষের স্বার্থে বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি। আসন্ন নির্বাচনে টাকার খেলা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। সরকার এর প্রতি আমাদের আহ্বান নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন ও পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহার করবেন না, নির্বাচন কমিশন এর প্রতি আমাদের দাবি- নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুন। টাকার খেলা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সময়োচিত পদক্ষেপ নিন। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাম গণতান্ত্রিক জোট উত্থাপিত ৮-দফা ও ৭-দফা দাবিসমূহ বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করুন। জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান- দেশ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে জাগ্রত হোন। টাকার খেলা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও যেকোন ধরনের প্রশাসনিক কারসাজির বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন।”