Wednesday, November 20, 2024
Homeবিশেষ নিবন্ধআন্দোলন ও সংগঠন সংবাদ — অনুশীলন ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আন্দোলন ও সংগঠন সংবাদ — অনুশীলন ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আন্দোলনের মাধ্যমে ১০ ভাগ কোটা আদায় করলো চা বাগানের শিক্ষার্থীর

16667360_967782420018316_216804760_o copy

Cover jpg copyসিলেট শহরের অদূরেই অবস্থিত লাক্কতুরা চা বাগান, তার পাশে মালনিছড়া চা বাগান। শহরের পাশে হওয়ার কারণে প্রতিদিন শত শত মানুষ বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখতে এবং শহুরে যান্ত্রিক জীবনের বাইরে একটু শান্তির পরশ নিতে ছুটে যান পাশের লাক্কাতুরা ও মালনিছড়া চা বাগানে। কিন্তু যে মানুষদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এই সৌন্দর্য ও শান্তির পরিবেশ নির্মিত হয় তাদের অবস্থা কেমন? মাত্র ৮৫ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করা এই মানুষগুলোর এমনকি নিজেদের কোনো ভূমি অধিকারই নেই। অথচ তাদের জীবনের এরকম হাজারও সঙ্কট-অশান্তির বদৌলতে মালিক শ্রেণির সম্পদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। শোষণের সবরকম নিকৃষ্টতম আয়োজন এখানে বর্তমান। তারপরও তারা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।

চা শ্রমিকদের সেই স্বপ্নকে ধারণ করে গড়ে উঠে ‘চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রত্যেক বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রতি তিন বাগানকে কেন্দ্র করে একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণসহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছিলো। এর মধ্যে সরকার লাক্কাতুরা চা বাগানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্যে জমি অধিগ্রহণ করে এই বলে যে, এখানে চা বাগানের শ্রমিক সন্তানরাই পড়াশুনা করবে। কিন্তু ২৮ নভেম্বর ’১৬ স্কুলে ভর্তির যে সার্কুলার জারি করে প্রশাসন, তাতে দেখা গেলো অতীতের বহু আশ্বাসের ন্যায় এবারও সেই একই প্রতারণার পথে হেঁটেছে সরকার। চা শ্রমিকদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। তৎক্ষণাৎ আন্দোলনে নামে ‘চা বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’। দাবি তোলা হয়, ভর্তির ক্ষেত্রে চা বাগানের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার এবং ৪০ ভাগ কোটা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মাধ্যমিক সরকারি স্কুলে ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালায় ঢাকা শহরের মতো জায়গায় ৪০ ভাগ এলাকা কোটা রয়েছে, তবে পশ্চাৎপদ চা বাগানের ক্ষেত্রে কেন নয়? সাথে সাথে চলতে থাকে আন্দোলনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি, স্কুলের পাশে অবস্থিত ৭টি চা বাগানের প্রায় প্রতিটি পাড়ায় বৈঠক, উঠান বৈঠকসহ নানা ধরনের প্রচার প্রচারণা। এসময় চা শ্রমিকদের মনোভাব বোঝা যায় লাক্কতুরা চা বাগানের ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রের বক্তব্যে ‘আমাদের বুকের উপর স্কুল আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব? আমাদের সুযোগ না দিলে স্কুল চালু হবেনা।’ ৯ ডিসেম্বর স্কুলের সামনে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। মিছিল সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন আশেপাশের বাগানের কয়েকশ চা শ্রমিক। অধির বাউরির সভাপতিত্বে এবং শান্ত বাউরির পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা এবং মালনিছড়া চা বাগানের প্রধান শিক্ষক হৃদেশ মুদি, সংগঠক সঞ্জয় কান্ত দাস, রানা বাউরি, মাসুম আহমেদ, রিপন কুর্মি, লিটন রায় প্রমুখ। সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ৯-১৯ ডিসেম্বর সিলেটের বাগানগুলোতে সংহতি সমাবেশ, বাগানে ক্রিয়াশীল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময় এবং ২০ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাগানে বাগানে সংহতি সমাবেশ এবং বিভিন্ন সংগঠনের সাথে মতবিনিময় প্রক্রিয়ায় আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে উঠে ।

Tea Bagan

এই আন্দোলন চলতে চলতে ১৭ ডিসেম্বর স্কুলের সম্মুখে মানববন্ধন ও প্রায় ২ ঘন্টা আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরোধের এক পর্যায়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান এসে ৩ দিনের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। এসময় অবরোধ থেকে শ্লোগান উঠে, ‘মুখের কথায় মানিনা, লিখিত ছাড়া বুঝিনা’, ‘টাকা যার শিক্ষা তার এই নীতি মানিনা’, ‘গ্যাস দিয়েছি মাঠ দিয়েছি, স্কুল আমরা দিবোনা’। অবরোধ থেকে বাগানে কর্মবিরতিসহ বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়। ২৫ ডিসেম্বর শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং সর্বশেষ ১ জানুয়ারি ’১৭ জেলা প্রশাসক ১০ ভাগ কোটা প্রদানের কথা নিশ্চিত করেন। এখন এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে উক্ত বিদ্যালয়ে ৪০ ভাগ কোটা এবং প্রতি বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, প্রতি ৩ বাগানকে কেন্দ্র করে ১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে চা বাগানের শিক্ষার্থীদের বিশেষ কোটাসহ ৫ দফা দাবিতে সংগঠনের ধারাবাহিক আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।

শাবিপ্রবি-তে ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধিবিরোধী আন্দোলনে জয়ী হলো শিক্ষার্থীরা

Form fees

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি ফরমের মূল্য ৭৫০ ও ৮৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে যথাক্রমে ১০০০ ও ১২০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কৌশল করে এই সিদ্ধান্ত ক্যাম্পাস বন্ধ হবার দু’দিন আগে অর্থাৎ ২ অক্টোবরে ঘোষণা করে। তারা ভেবেছিলো ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে হয়তো শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে পারবে না। কিন্তু প্রশাসনের এ পরিকল্পনা বুমেরাং হয়ে যায়। টানা ১৭ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বহু কর্মসূচি পালন করে শত শত শিক্ষার্থী প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের আন্দোলনে শামিল হয়। আন্দোলনের প্রয়োজনে ‘ভর্তি ফরমের বর্ধিত মূল্যবিরোধী শিক্ষার্থী মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফরম গড়ে উঠে। এর ফলে আন্দোলন আরও ব্যাপক মাত্রা পায়। ধারাবাহিক আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৬ অক্টোবর শিক্ষার্থী মঞ্চের ব্যানারে কয়েকশ শিক্ষার্থী মিছিল করে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেয় এবং দাবি মানা না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়। অব্যাহত চাপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ১৯ অক্টোবর শিক্ষার্থী মঞ্চের সকল দাবি মেনে নেয় এবং ফরমের মূল্য আগের বছরের মতো রাখতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলন শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণবিরোধী লড়াইয়ে প্রেরণা হয়ে থাকবে।

৮ম কেন্দ্রীয় কর্মীসদস্য সম্মেলন

SSF1

মহান নভেম্বর বিপ্লবের চেতনায় সমাজ বদলের পরিপূরক ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে গত ২৮-৩০ জানুয়ারি ’১৭ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর ৮ম কেন্দ্রীয় কর্মীসদস্য সম্মেলন। সম্মেলনের তিন দিনে তিনটি বিষয়ের উপর আলোচনা হয়- সমাজতন্ত্রের অনিবার্যতা, সংশোধনবাদের বিপদ এবং সভ্যতা বিকাশে সমাজতন্ত্রের অবদান। সারাদেশ থেকে আগত নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিলো কর্মীসদস্য সম্মেলন। বিভিন্ন সেশনে আলোচনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীসহ পার্টি ও সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

SSF2

রোকেয়া স্মরণ

“ভগিনীগণ! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন- অগ্রসর হউন! বুক ঠুকিয়া বল মা, আমরা পশু নই। বল ভগিনী, আমরা আসবাব নই। বল কন্যে, আমরা জড়াউ অলংকার-রূপে লোহার সিন্দুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বল আমরা মানুষ।”

Rokeya

সূর্য সেন স্মরণ

Surje Sen

“আমার শেষ বাণী- আদর্শ ও একতা। ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। …কত মধুর তোমাদের সকলের স্মৃতি। …এই সুন্দর পরম মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্য দিয়ে গেলাম স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার জীবনের এক শুভ মুহূর্তে এই স্বপ্ন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জীবনভর উৎসাহভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো সেই স্বপ্নের পেছনে আমি ছুটেছি। জানি না কোথায় আজ আমাকে থেমে যেতে হচ্ছে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর হিমশীতল হাত আমার মতো তোমাদের স্পর্শ করলে তোমরাও তোমাদের অনুগামীদের হাতে এই ভার তুলে দেবে, আজ যেমন আমি তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। আমার বন্ধুরা- এগিয়ে চল, এগিয়ে চল- কখনো পিছিয়ে যেও না।”

শীতার্ত মানুষের পাশে

Relif

খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ১২০০ ফুট উপরে হাতিমুড়া গ্রাম। অভাব-দারিদ্র্য এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যসঙ্গী। খেয়ে-না খেয়ে, কষ্টে দিন কাটে সবার। শীত আসলে কষ্ট বাড়ে আরও। সরকার কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, সহায়তা করার নেই কেউ। এ বছর সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, খাগড়াছড়ি জেলার উদ্যেগে এই অঞ্চলে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রচেষ্টা ক্ষুদ্র হলেও প্রবল শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষগুলো তাতেই যেন পেয়েছিলো উষ্ণতা আর ভালোবাসার উত্তাপ।

অনুশীলন ফেব্রুয়ারি ২০১৭

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments