Saturday, November 23, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - এপ্রিল-মে ২০১৬আন্দোলন ও সংগঠন সংবাদ — সাম্যবাদ এপ্রিল-মে ২০১৬

আন্দোলন ও সংগঠন সংবাদ — সাম্যবাদ এপ্রিল-মে ২০১৬

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও

তিস্তা সেচ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দাবি

Tista_07042016_2

তিস্তা সেচ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) উত্তরাঞ্চলীয় জেলা শাখাসমূহের উদ্যোগে ৭ এপ্রিল রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও করা হয়। এর পূর্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ঘেরাও কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা আহবায়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ। বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্র্তী, জয়পুরহাট জেলা সমন্বয়ক ওবায়দুল্লাহ মুসা, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আলম, রংপুর জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, পলাশ কান্তি নাগ।

বক্তারা বলেন, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পরেই তিস্তা বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত চতুর্থ বৃহত্তম আর্ন্তজাতিক নদী। এই তিস্তা নদীর সাথে উত্তরাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, নৌ চলাচল ও পরিবেশ ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। এক কথায় তিস্তা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণ। কিন্তু সেই তিস্তা আজ মরণদশা। ভারতের জলপাইগুড়িতে তিস্তা নদীর উপর গজলডোবা ব্যারেজের সকল গেইট বন্ধ করে একতরফা পানি প্রত্যাহার করায় উত্তরাঞ্চলের কৃষিখাতে চরম দুর্যোগ নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্প ৭,৫০,০০০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চালু হয়েছিল। আর সেই তিস্তা সেচ প্রকল্প এবার ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে কৃষকেরা সেচ সুবিধা পাচ্ছে না বললেই চলে। এই প্রকল্পের আওতায় সেচ দিতে বিঘা প্রতি ১৫০-২০০ টাকা লাগতো। সেখানে তিস্তার পানি না পেয়ে কৃষককে ফসল রক্ষার তাগিদে স্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ দিতে গিয়ে প্রায় ২৫০০-২৭০০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়ছে শত শত মৎস্যজীবী ও মাঝিরা। অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠীর নতজানু ভূমিকার কারণে তিস্তার পানি বন্টনে ভারতের সাথে সমস্যার দীর্ঘদিনেও কোনো সমাধান হয়নি। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে ভারত-বাংলাদেশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ বাংলাদেশ, ৩৬ শতাংশ ভারত, বাকী ২৫ শতাংশ নদীর নব্যতা রক্ষার জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা থাকলেও ভারতের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ ভারতের স্বার্থে সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ট্রানজিটের নামে করিডোর, সমুদ্রের গ্যাসব্লক ইজারা চুক্তি করতে মহাজোট সরকার দ্বিধা করেনি। এই পরিস্থিতে তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদী বাঁচাতে তথা কৃষক-ক্ষেতমজুর ও কৃষি রক্ষা করতে গণআন্দোলন ছাড়া আর কোন পথ নেই।

রামপাল ও ওরিয়ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে

সুন্দরবন অভিমুখে জনযাত্রা

jessore-nowapara-12march copy

সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং জাতীয় কমিটি ঘোষিত সাত দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা থেকে সুন্দরবন অভিমুখী জনযাত্রা ১০ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে যাত্রা শুরু করে। যাত্রা শুরুর আগে সকাল ১০টায় শিল্পী কফিল আহমেদ ও গানের দল মাভৈঃ সুন্দরবন নিয়ে প্রতিবাদী গান পরিবেশন করে। জনযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

উদ্বোধনী সমাবেশে জনযাত্রার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “সরকার জেনেশুনে সুন্দরবনধ্বংসী রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণের মুখে বিষ ঢেলে দিচ্ছে। সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিবেশ শোধনের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা। ১০ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের ৪ কোটি মানুষকে রক্ষার প্রাকৃতিক আশ্রয়। সুন্দরবন রক্ষা তাই বাংলাদেশের মানুষের বাঁচা মরার লড়াই। সরকার বাংলাদেশ ও ভারতের মুনাফাখোরদের কাছে হাত পা বন্ধক দিয়েছে বলেই দেশ ও জনগণের জন্য এরকম সর্বনাশা প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশকে অরক্ষিত করার এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ও জাগরণ সৃষ্টির জন্য এই জনযাত্রা।”

জনযাত্রায় অংশ নেয়া রাজনৈতিক সংগঠন গুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(মার্কসবাদী), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ (ইউসিবিএল), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, জাতীয় গণফ্রণ্ট, গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (মাহবুব), গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, শ্রমজীবী সংঘ। এছাড়া বিভিন্ন ছাত্র গণ সংগঠন যেমন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রণ্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সহ অনেকে এই সমাবেশে অংশ নেয়। এছাড়া জনযাত্রায় অংশ নিয়েছে বিবর্তন গানের দল, সমগীত সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গন, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, উদীচি, চারণ, শিশু সংগঠন খেলাঘর, পরিবেশ সংগঠন প্রতিবেশ আন্দোলন ইত্যাদি। জনযাত্রার প্রতি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আহমেদ কামাল, ডা. আবু সাঈদ, জ্বালানী বিশেষজ্ঞ বিডি রহমতুল্লাহ, অধ্যাপক তানজিম উদ্দীন খান, ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গবেষক মাহা মির্জা।

জনযাত্রা এরপর সাভার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, ফুলতলা, দৌলতপুর, হয়ে জনযাত্রা খুলনা পৌঁছে। এরপর জনযাত্রা বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। মিছিল করে বাগেরহাট শহর প্রদক্ষিণ শেষে রণজিৎ চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে এবং ফররুখ হাসান জুয়েলের পরিচালনায় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাটাখালিতে পৌছে সুন্দরবন জনযাত্রার সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা থেকে বাগেরহাট হয়ে কাটাখালী যাত্রা পথের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ জনযাত্রায় এসে সংহতি জানান এবং সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। জনযাত্রায় দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট দিনাজপুর, পাবনা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এসে যোগদান করেন।

সুন্দরবন জনযাত্রার সমাপনী সমাবেশে ‘সুন্দরবন ঘোষণা-২০১৬’ পাঠ করে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ঘোষণায় তিনি বলেন, “সুন্দরবন শুধু কিছু গাছ আর কিছু পশু-পাখি নয়। সুন্দরবন অসংখ্য প্রাণের সমষ্টি এক মহাপ্রাণ, অসাধারণ জীববৈচিত্রের আধার হিসেবে অতুলনীয় ইকোসিস্টেম ও প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। এই সুন্দরবন শুধু লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকার সংস্থান করেনা, সিডর-আইলার মতো প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় চারকোটি মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। দেশের সীমানায় এবং সীমানার বাইরে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল কার্যত সুন্দরবনের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত।” ঘোষণায় আরো বলা হয়, “মুনাফালোভী আগ্রাসনে এখন প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। শীপইয়ার্ড, সাইলো, সিমেন্টকারখানা সহ নানা বাণিজ্যিক ও দখলদারী অপতৎপরতা বাড়ছে। দেশ বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চল যখন জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে তখন রামপাল, মাতারবাড়ী, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে নেয়া বিভিন্ন অবিবেচক প্রকল্প এই ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। রূপপুরেও ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে। আমরা দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই, রামপাল, রূপপুর ও মহেশখালী প্রকল্প নয়, জাতীয় কমিটির ৭ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নেই দেশের বিদ্যুৎ সংকটের টেকসই সমাধান আছে।”

সুন্দরবন জনযাত্রার সমাপনী সমাবেশ থেকে আগামী ১৫ই মে’র মধ্যে রামপাল-ওরিয়ন সহ সুন্দরবন বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল করার দাবী জানানো হয়। ঘোষণায় সরকারের প্রতি প্রয়োজনে এই সময়ের মধ্যে প্রকাশ্য আলোচনা বা বিতর্কে আসার জন্য আহবান জানানো হয়। ঘোষণায় বলা হয়, সরকার যদি এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য মহাবিপর্যয়ের প্রকল্প বাতিল করতে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের সকল পর্যায়ের মানুষকে সাথে নিয়ে ঢাকামুখি লংমার্চ, অবস্থান কর্মসূচী, ঘেরাও, হরতাল, অবরোধসহ আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

১৬ হাজার টাকা মজুরি, শ্রম আইন-বিধিমালা সংশোধন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের দাবি

বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন কেন্দ্র ঘোষিত ‘দাবি দিবস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ৪ মার্চ শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে শ্রমিকদের নিম্নতম মোট মজুরি ১৬ হাজার টাকা ঘোষণা, শ্রম আইন ও বিধিমালার শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা সংশোধন এবং ইপিজেড-এসইজেডসহ সর্বত্র অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের দাবি জানানো হয়। পরে একটি মিছিল পল্টন এলাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখার সংগঠক ফখরুদ্দিন কবির আতিক, আফসানা বেগম লুনা, রাজু আহমেদ, রাজীব চক্রবর্তী প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “সরকার দাবি করছে- দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, অচিরেই ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হতে যাচ্ছে, তাহলে শ্রমিকের অবস্থার উন্নতি হবে না কেন? সরকারি কর্মচারী-মন্ত্রী-এমপি-প্রধানমন্ত্রী-সেনাবাহিনী-পুলিশ সবার বেতন বাড়লে, শ্রমিকদের মজুরি কেন বাড়বে না? শ্রমিকরাও তো একই বাজার থেকে কেনা-কাটা করে। দেশে জাতীয় আয় বাড়ার পেছনে শ্রমজীবী মানুষের অবদানই তো সবচেয়ে বেশি। অর্থনীতির উন্নইতর জন্য শ্রমিকদের মানবেতর জীবনে ফেলে রাখা হবে তা মেনে নেয়া যায় না। তাই আজ দাবি উঠেছে, শ্রমিকদের মানুষের মত বাঁচার উপযোগি জাতীয় ন্যূনতম মজুরি সরকারি ভাবে নির্ধারণ ও ঘোষণা করতে হবে। শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবি জানিয়েছে। কারণ, সরকারি কর্মচারীদের জন্য যে নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে সর্বনিম্ন মোট বেতন দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা [বেসিক ৮,২৫০ টাকা +৬৫% বাড়িভাড়া ৫,৩৬২ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০+ যাতায়াত ৩০০ টাকা+ দুই সন্তানের জন্য শিক্ষা ভাতা ১,৫০০টাকা + টিফিন ভাতা ৩০০ + ধোলাই ভাতা ১৫০]। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের মাপকাঠিতে দারিদ্রসীমার উপরে উঠতে মাথাপিছু দৈনিক অন্ততঃ ২ ডলার আয় দরকার। অর্থাৎ ৪ সদস্যের একটি পরিবারে মাসে অন্ততঃ ১৯,২০০ টাকা আয় থাকলে তাকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে বলা যায়। এসব কিছু বিবেচনায় আমরা সর্বনিম্ন মোট মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবি তুলেছি।”

বক্তারা আরো বলেন, “শ্রম বিধিমালা ২০১৫-এ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারে বাধা রয়ে গেছে। কারখানার মোট শ্রমিকের ৩০শতাংশ সদস্য নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং ট্রেড ইউনিয়নের অনুপস্থিতিতে ক্ষমতাহীন মালিক-শ্রমিক সহযোগিতা কমিটি, স্থায়ী শ্রমিক ছাড়া কারও ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হতে না পারার বিধান রেখে ইউনিয়ন গঠন কঠিন করে রাখা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ৮২টি শর্ত পূরণ করে ট্রেড ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে শ্রমিকদের। দাবি-দাওয়া আদায়ে শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকারকে মালিক ও সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ রেখে কার্যত অসম্ভব করে তোলা হয়েছে। ‘অসদাচারণে’র জন্য বরখাস্ত হলে শ্রমিক কোন ক্ষতিপূরণ পাবে না। দেশের অর্ধ-কোটি এ্যাপারলেস ও লেদার শ্রমিক ৫ শতাংশ লাভ থেকে বঞ্চিত হবে। সুপারভাইজরদের হাতে শ্রমিকদের কর্মচ্যুত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। মালিক পক্ষ ঠিকাদারদের মাধ্যমে স্থায়ী ভাবে কর্মী নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। ফলে, এই শ্রম বিধিমালা শ্রমিক স্বার্থের পরিপন্থী ও অগণতান্ত্রিক।”নেতৃবৃন্দ মনুষ্যোচিত মজুরি ১৬ হাজার টাকা, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন-বিধিমালা, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ ও সরকারি দায়িত্বে রেশন-বাসস্থান –চিকিৎসা-পেনশনসহ সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

ফেনী : মালিকানা নির্বিশেষে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী ১৬ হাজার টাকা ঘোষণা কর – এ দাবিতে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ফেনী শহর শাখার উদ্যোগে ট্রাংক রোডে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের শহর শাখার সংগঠক ঝুলন রয়ের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) ফেনী জেলা শাখার সমন্বয়ক কমরেড জসীম উদ্দিন।

গ্যাস ও বিদ্যুতের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনা রুখে দাঁড়ান — কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আজ এক বিবৃতিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানোর সরকারী পরিকল্পনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং এই অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি প্রতিহত করতে ঐক্যবদ্ধ ও জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে সকল বাম-প্রগতিশীল শক্তিসহ সচেতন জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক কমেছে। অথচ বিদ্যুতের দাম যেখানে কমানোর কথা, তা না করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা এসেছে। যা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়াবে। বাড়বে বাড়ীভাড়া, পরিবহন ভাড়া ও কৃষি উৎপাদন ব্যয়। বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়। বিইআরসি’তে পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে তাতে গ্যাসের বিল হবে সিঙ্গল বার্নারে ১১০০ টাকা ও ডাবল বার্নারে ১২০০ টাকা, যা বর্তমানে যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা। সিএনজি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৩ শতাংশ। এতে সিএনজি চালিত সকল পরিবহনের ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্যাস আমাদের নিজস্ব সম্পদ ও লাভজনক খাত, এর দাম দফায় দফায় বাড়ানোর কোন যুক্তি নেই। অথচ, বর্তমান সরকারের সাড়ে ছয় বছরের শাসনামলে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৮ বার এবং গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৩ বার।

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এই গণবিরোধী পরিকল্পনা আরো একবার এ কথা স্পষ্ট করলো যে, জনগণের প্রতি মহাজোট সরকারের কোন দায়বদ্ধতা নেই। জনমতের কোন তোয়াক্কা তারা করে না। জনগণের সংগঠিত প্রতিরোধই কেবল স্বেচ্ছাচারী সরকারের অপতৎপরতাকে প্রতিহত করতে পারে।

তনু হত্যার বিচারের দাবিতে সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘট পালিত

কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তনু ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে গত ৩ এপ্রিল সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমর্থনে এ ধর্মঘট ডাকা হয়। ছাত্র ধর্মঘটে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল। সারাদেশের সাধারণ মানুষ ও বিশেষত ছাত্র সমাজের মধ্যে বিচারের দাবি প্রবল হলেও সরকারের তরফ থেকে এ ঘটনার বিচারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। বরং সরকার তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করে মানুষের ক্ষোভকে প্রশমিত করতেই তৎপর। তাই দোষীদের অবিলম্বে চিহ্নিত ও গ্রেফতারের দাবিতে ছাত্র জোট ও ছাত্র ঐক্য গত ৭ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতেও পুলিশ বাধা প্রদান করে। পরে এক সমাবেশ থেকে আগামী ২৫ এপ্রিল সারাদেশে আধাবেলা হরতাল ঘোষণা করা হয়।

ধর্মঘটের সমর্থনে রংপুরে স্কুল শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
ধর্মঘটের সমর্থনে রংপুরে স্কুল শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সারাদেশ আজ ধর্ষক-খুনীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ঘরের মধ্যে, রাস্তায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, চলন্ত বাসে সবত্র ধর্ষণসহ নানা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে নারী। আর তনুর লাশ পাওয়া গেছে সুরক্ষিত ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে। ফলে দেশের কোথাও আজ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। এই নিরাপত্তাহীনতার দায় সরকারকে নিতে হবে। এদেশে সরকারী সমর্থংন, দলীয় মদদ কিংবা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকলে খুন করেও পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালায় ও সরকারের মন্ত্রীরা তাকে সমর্থন করেন, সেখানে আ্ইনের শাসন ভেঙ্গে পড়া স্বাভাবিক। বক্তারা আরো বলেন – তনু হত্যা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নারী নির্যাতন ব্যাপকতা পাওয়ার পেছনে সরকারি প্রশ্রয় ও বিচারহীনতা দায়ী। পাশাপশি ভোগবাদী পুঁজিবাদী সংস্কৃতি পর্ণোগ্রাফি-বিজ্ঞাপনসহ নানাভাবে নারীদেহকে পণ্য বানাচ্ছে। এর প্রভাবে নারীকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখার যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তা আরো বিকৃত রুপ ধারণ করছে। নারীর নিরাপত্তাহীনতা দিনদিন বাড়ছে। তনু হত্যার বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলন নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ও মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক সামাজিক আন্দোলনকে বেগবান করবে।

বর্ষবরণে নারী মুক্তি ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিবাদী ব্যাজ ধারণ ও সমাবেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল

দ্রোহ ও প্রতিবাদে বর্ষবরণ উদযাপনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও নারীমুক্তি কেন্দ্র। বৈশাখের প্রথম প্রহরে রমনার বটমূলে প্রতিবাদী ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হয়। কর্মীরা সংগঠনের নাম সম্বলিত বেল্ট পরিধান করে রমনার পার্কে ২০টি পয়েন্টে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাইকে ব্যাজ পরিধানের মাধ্যমে নারী লাঞ্ছনার বিচার দাবি করেন, পাশাপাশি সবাইকে এই উৎসবে নির্ভয়ে যোগ দেবার আহ্বান করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রর ক্যাম্পের একপাশে সাদা কাপড়ে দিনব্যাপী স্বাক্ষর ও মন্তব্য সংগ্রহ করা হয়। নানা স্তরের জনগণ বিশেষত নারীরা আগ্রহ সহকারে তনু হত্যা ও বর্ষবরণে নারী নির্যাতনের বিচার দাবি করে তাদের অনুভূতি স্বতঃস্ফুর্তভাবে ব্যক্ত করেন। ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভা যাত্রার পর দুই সংগঠনের ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পাস-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান-টিএসসিতে দ্বিতীয় দফায় ব্যাজ পরিধান ও লিফলেটিং করা হয়। ক্যাম্পের চারপাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সুভাষচন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী সত্যেন বোস, বেগম রোকেয়া, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কমরেড শিবদাস ঘোষ ও ড. শামসুজ্জোহার বক্তব্য সম্বলিত পোট্রেট ছাত্র-অভিভাবকদের নজর কাড়ে।

সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল
সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল

বিকাল চারটায় হাকিম চত্বর থেকে একটি প্রতিবাদী পদযাত্রা শাহবাগ-শামসুন্নাহার হল-টিএসসি হয়ে হাকিম চত্বরে শেষ হয়। শাহবাগ ও টিএসসিতে দুটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিদীপা ভট্টাচার্য ও ছাত্র ফ্রন্টের অর্থ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী। সমাবেশ পরিচালনা করেন ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা।

বক্তারা বলেন, “গত বছর পহেলা বৈশাখে প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে নারীরা লাঞ্ছনার শিকার হয়। সেই বর্বর ঘটনার এক বছর হতে চলল। অথচ এই এক বছরেও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি পুলিশ। প্রাথমিকভাবে নিপীড়নকারীদের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পুলিশ এখন তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে পহেলা বৈশাখে নাকি লাঞ্ছনার ঘটনাই ঘটেনি! তাই তারাও নিপীড়নকারীদের খুঁজে পায়নি। তদন্তের নামে এই প্রহসনের কারণে, একের পর এক ঘটনার বিচারহীনতায় নিপীড়নকারীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে, ফলে ধর্ষণ, নির্যাতন, খুন অব্যাহতভাবে বেড়েই চলছে। তনু ধর্ষণ-হত্যা এই বিচারহীনতারই পরিণতি।”

চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল
চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল

তারা আরও বলেন, “যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল লাঞ্ছনাকারীদের খুঁজে বের করে বিচার করা, তা না করে এবার পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তার নামে সার্বজনীন এই উৎসবকে সংকুচিত করা হচ্ছে। নিরাপত্তার নামে পুলিশের সংখ্যা বাড়লেও উৎসবে জনসমাগম কমেছে। এটাই প্রমাণ করে নিরাপত্তার যত আওয়াজই সরকার তুলুক না কেন, নিরাপত্তাহীনতার বোধের কারণেই অনেক মানুষ উৎসবে আসেনি। এই এক বছরেও নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিচার না হওয়ার দায় যেমন সরকারের, তেমনি উৎসবের আমেজ কমে যাওয়ার দায়ও সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।” নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার-বিচারের দাবি জানান এবং আগামী ২৫ এপ্রিল তনু ধর্ষণ-হত্যাসহ সারাদেশে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে আহুত হরতাল সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

প্রতিবাদী পদযাত্রার পর ক্যাম্পের সামনে বসে হাঁড়ি ভাঙা খেলা, গণসঙ্গীত ও লোকগানের আসর; যা গ্রীষ্মের দাবদাহে উপস্থিত জনতার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সঞ্চার করে।

রংপুর : রংপুরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ করেছে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ছাত্র ফ্রন্ট, নারীমুক্তি কেন্দ্র্র। ১৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় রংপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে ব্যানার, ফেস্টুনসহ সুসজ্জিত র‌্যালি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠের সম্মুখে সমাবেমে মিলিত হয়। ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সভাপতি আহসানুল আরেফিন তিতুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, নারীমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সদস্য ইয়াসমিন আক্তার, কামরুন্নাহার খানম শিখা। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কারমাইকেল কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক রিযাজুল ইসলাম বসুনিয়া। সমাবেশ শেষে নারী নির্যাতন বিরোধী ব্যাজ ধারণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন কারমাইকেল কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্য্যাপক সাহারা ফেরদৌস। পরে প্রাঙ্গনে রকমারী খাবার গ্রহণ ও সাাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

বাঁশখালী হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সারাদেশে বাসদ (মার্কসবাদী)’র বিক্ষোভ

চট্টগ্রামের বাশঁখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত গ্রামবাসীদের ওপর পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ ও হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী)-র উদ্যোগে ৫ এপ্রিল বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, মানস নন্দী, উজ্জ্বল রায়, ফখরুদ্দিন কবির আতিক।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাশঁখালীতে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ বর্তমান সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। উন্নয়নের স্লোগান তুলে বর্তমান সরকার একের পর এক স্থানে সাধারণ মানুষকে বসতভিটা, চাষের জমি থেকে উচ্ছেদ করছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল সরকার জনগণের নয়, মালিক শ্রেণীর স্বার্থকেই রক্ষা করে। বক্তারা অবিলম্বে এই ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানান।

বাঁশখালী : বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত জনগণের উপর গুলিবর্ষণ, ৫ জন গ্রামবাসীকে হত্যার প্রতিবাদে ও কৃষিজমি বসতভিটা উচ্ছেদ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের তৎপরতা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) বাঁশখালী উপজেলা শাখার উদ্যোগে ৮ এপ্রিল সকাল ১১টায় বাঁশখালী উপজেলা সদর জলদীতে এক পথসভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গন্ডামারায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার পথে এখানে নেমে পথসভায় বক্তব্য রাখেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব অপু দাশগুপ্ত, ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস, চট্টগ্রাম নগর সাধারণ সম্পাদক আরিফ মঈনুদ্দিন, অমৃত করণ প্রমুখ।

চট্টগ্রাম : ৫ এপ্রিল বিকাল ৪টায় বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে নগরীর নিউমার্কেট চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অপু দাশগুপ্ত, শফিউদ্দিন কবির আবিদ, আসমা আক্তার প্রমুখ। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “মহাজোট সরকার সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জনগণের বিরোধিতা সত্ত্বেও অব্যাহত রেখেছে। এখন বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নে কৃষিজমি বসতভিটা উচ্ছেদ করে এস আলম গ্রুপ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাঁশখালীর জনগণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চায় না। তাই তারা রক্ত দিয়ে হলেও এই প্রকৃতি ধ্বংসী, জনবিরোধী প্রকল্প প্রতিহত করার জন্য মাঠে নেমেছে। সরকার জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে গ্রামবাসীদের সমাবেশে গুলি চালিয়েছে। উপরন্তু তিনহাজার গ্রামবাসীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসহায় মানুষগুলোকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। আন্দোলন দমনের নামে এই হত্যাকান্ড-নিপীড়ন মহাজোট সরকারের চরম ফ্যাসীবাদী চেহারাকে আরেকবার উন্মোচিত করলো।” নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার, নিহতদের ক্ষতিপূরণ, গ্রামবাসীদের নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং আহতদের রাষ্ট্রীয় খরচে চিকিৎসার দাবি জানান।
সিলেট : বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত জনগণের উপর গুলিবর্ষণ, ৫ জন গ্রামবাসীকে হত্যার প্রতিবাদে ও কৃষিজমি বসতভিটা উচ্ছেদ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের তৎপরতা বন্ধের দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা ৪ এপ্রিল ’১৬ বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। মিছিলটি জিন্দাবাজার থেকে শুরু হয়ে সিটি পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এড. হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, সুশান্ত সিন্হা, সঞ্জয় কান্ত দাস।

বাঁশখালী হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার বিক্ষোভ

গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা : বাঁশখালী হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বাম মোর্চার উদ্যোগে ৬ এপ্রিল বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদের সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রখেন বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মাহবুব)’র মহিনউদ্দিন লিটন, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “সরকার কৃষি জমি-বাস্তুভিটা রক্ষার নীতিকে অস্বীকার ও জনগণের মতামতের কোনো গুরুত্ব না দিয়ে লুটপাটের স্বার্থে এবং ক্ষমতা ও গায়ের জোরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম স্মরণে আলোচনা সভা

বোরহানুদ্দিন কলেজ : দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম-এর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র, শেখ বোরহানুদ্দীন কলেজ শাখার উদ্যোগে ১৬ মার্চ দুপুর ১২টায় কলেজ শহীদ মিনারে আলোচনা সভা ও বিজ্ঞান জিজ্ঞাসা-র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বিজ্ঞানীর জীবন নিয়ে আলোচনা করেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফারজানা হক, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের কো-চেয়ারম্যান মো: সেলিম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা নগর শাখার সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা, ঢাকা নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন। ছায়েদুল হক নিশানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা শেষে বিজ্ঞান জিজ্ঞাসায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হয়।

বক্তারা বলেন, “বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে সমগ্র বিশ্ব এক নামে চেনে। ড. জামাল নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ। দুইজন দুই সময়ের বিজ্ঞান সাধক হলেও সমাজের প্রতি দায়বোধ, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি দরদ থেকেই তাঁরা পেয়ে ছিলেন বিজ্ঞান সাধনার অনুপ্রেরণা। আপেক্ষিকতা, ব্রাউনীয় গতি, আলোক তড়িৎ ক্রিয়া, ভর-শক্তি সমতুল্যতা, একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব, বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান সহ বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে মৌলিক অবদান রেখেছেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। ড. জামাল নজরুল ইসলাম বিজ্ঞানের চারটি তত্ত্ব – বিগ ব্যাং, কেয়ার্ন কনফাইমেন্ট, স্রোডিঞ্জার ইকুয়েশান ইন ম্যাগনেটিক ফিল্ড এবং শক্তিকে সমন্বিত করে তত্ত্ব উন্নয়ন ও ব্যবহারিক উন্নয়নের জন্য গবেষণা করেছেন। বিজ্ঞান সাধনার পাশাপাশি সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রসনের বিরুদ্ধেও এই দুই বিজ্ঞানী ছিলেন সোচ্চার। মানুষ হিসেবে তাঁদের ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। অত্যাচার বা অসত্যের কাছে তাঁরা কখনো মাথা নত করেননি। এই দুই বিজ্ঞানীর জীবন সাধনায় আমাদের পথ দেখায় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার ও খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাড়ানোর। আজ পুরো সমাজ জুড়ে স্বর্থপরতা, অপবিজ্ঞান, কুসংস্কার যখন ছেয়ে গেছে, বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাকে হাতিয়ার করে আমাদের বাঁচার পথ করতে হবে। আসুন সমাজের গভীর অসুস্থতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিজ্ঞান চর্চা করি।”

চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহ দিবস স্মরণে পুষ্পমাল্য অর্পণ

গত ১৮ এপ্রিল’১৬ যুব বিদ্রোহ দিবসে বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে মাষ্টার দা সূর্য সেনের আবক্ষ মূর্তিতে পূষ্পমাল্য অর্পণ করছেন বাসদ (মার্কসবাদী‘র জেলা শাখার সদস্য সচিব অপুদাশ গুপ্তসহ জেলা নেতৃবৃন্দ।

পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে অভিভাবক ও স্কুল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১০ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বেইলি রোডে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সামনে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তব্য রাখেন অভিভাবক দিলারা আফরোজ, স্বপন আহমেদ, মলয় সরকার, মনি হাসান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘গত ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকার প্রাথমিক সমাপনী শিক্ষা (পিইসি) চালু করেছে। এই পরীক্ষা চালু করে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা কিংবা শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ব্যাপারে আগ্রহী করে গড়ে তোলা- কোনো উদ্দেশ্যই সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আসলে সরকার চমক লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে তার বাহবা নিতেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছিলো। আর উদ্দেশ্য ছিল, শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক স্তর থেকেই ব্যাপক শিক্ষাব্যবসার পথ রচনা করা। পিইসি চালু হবার পর শিশুদের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শারীরিক-মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। মরে যাচ্ছে কোমল মন-অনুভূতি। শিশুদের আনন্দময় শৈশবও হারিয়ে যাচ্ছে।’

অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা ২০১৬ সালের মধ্যে শৈশব ধ্বংসকারী পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা বাতিলে জোর দাবি জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments