Tuesday, December 24, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - এপ্রিল ২০১৮আন্দোলন ও সংগঠন সংবাদ — সাম্যবাদ এপ্রিল ২০১৮

আন্দোলন ও সংগঠন সংবাদ — সাম্যবাদ এপ্রিল ২০১৮

সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হামলার তীব্র নিন্দা

5472

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী সিরিয়ায় সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মিথ্যা অভিযোগে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী জোটের একতরফা হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য যে অভিযোগে হামলা চালানো হয়েছে তা তদন্তের Organization for Prohibition of Chemical Warfare (OPCW)-এর পরিদর্শক দল সিরিয়ায় পৌঁছেছে। কিন্তু তাদের তদন্তের জন্য অপেক্ষা করা হয়নি। সিরিয়ার সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া বলেছে তাদের হাতে প্রমাণ রয়েছে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের যোগসাজশে কারা কীভাবে রাসায়নিক হামলার নাটক সাজিয়েছে। বেশ কিছু স্বাধীন সাংবাদিকের বরাতে জানা গেছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ঘৌতার দ্যুমায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি স্থানীয় হাসপাতালগুলোতেও এ ধরনের আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। অতীতে এই সাম্রাজ্যবাদীরাই ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। সম্পদ লুটপাট করেছে।

প্রকৃত ঘটনা হলো সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, জাতীয়তাবাদী ও সেক্যুলার আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়াকে বশংবদ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় মার্কিন-বৃটিশ-ফ্রেন্স জোট। এই অপচেষ্টার অংশীদার সৌদি-কাতার-তুরস্ক ইত্যাদি আঞ্চলিক শক্তিগুলো। গত ৭ বছর ধরে আসাদবিরোধী শক্তি আইএস-আল কায়েদাসহ বিভিন্ন মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র-অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে এই দেশগুলো। কিন্তু রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতায় সিরিয়ান সেনাবাহিনী ও জনগণ তা প্রতিরোধ করে চলছে। এখন রাসায়িনিক অস্ত্র ব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল নিয়েছে সাম্রাজ্যবাদীরা। এ অবস্থায় দেশে দেশে দেশপ্রেমিক ও যুদ্ধবিরোধী জনগণের শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই কেবল ইরাক, লিবিয়া ও আফগানিস্তানের মতো ধ্বংসযজ্ঞের কবল থেকে সিরিয়াকে বাঁচাতে পারে।”

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ভিটেমাটি রক্ষার আন্দোলনে পুলিশের গুলিবর্ষণ

30594968_768399523354065_6320352385348665344_nঘুষঘুষে আগুন অনেকদিন ধরেই জ্বলছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। এ আগুন ভিটেমাটি রক্ষার, ফসলি জমি রক্ষার। বাস্তুভিটা রক্ষার চলমান আন্দোলনে গত ১০ এপ্রিল পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করেছে। লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল তো মেরেছেই, গুলিও ছুড়েছে। এ ঘটনায় ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। আহত হয়েছে অনেকে। সুন্দরগঞ্জে বেক্সিমকো কোম্পানি সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মানের নামে দখল করছে কৃষকদের ফসলি জমি। ছলে-বলে, লোভ দেখিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে তাদের শত প্রজন্মের বসত ভিটা থেকে। উচ্ছেদের কবলে পরেছে ওই এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। অথচ আইন অনুযায়ী, বসত ভিটা- ফসলি জমিতে পাওয়ার প্ল্যান্ট করার কোনো অনুমতি নেই। এই এলাকারই লাটশালার চরে প্রচুর অনাবাদী অকৃষি জমি পরে থাকা স্বত্ত্বেও শুধু মাত্র কোম্পানির খরচ কমানোর জন্য দখল করে নিচ্ছে মানুষের বাস্তুভিটা, কৃষিজমি। সোলারপ্ল্যান্ট নির্মাণ করতে ইতোমধ্যে ওই এলাকায় শুরু হয়েছে ভূগর্ভস্থ বালি উত্তোলন, যা সেখানকার পুরো কৃষি জমির ধ্বংস ডেকে আনছে। এলাকাবাসী বাস্তুভিটা ও আবাদী জমি রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে উপজেলা, জেলা প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে এসেছে এই পাওয়ার প্ল্যান্ট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার। প্রশাসন তাতে কোনো কর্ণপাত করেনি। ফলে স্থানীয় জনগণের ক্ষোভ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সালমান এফ রহমান, যার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ আছে, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ আছে, তার কোম্পানি বেক্সিমকো সুন্দরগঞ্জে সোলার প্ল্যান্ট করতে সরকারের সাথে চুক্তি করেছে। জনগণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার সমস্ত শর্ত লঙ্ঘন করে এই প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ চলছে।

সরকার জনগণের দাবির প্রতি তোয়াক্কা না করে, শত শত মানুষের ভিটে মাটি, ফসলি জমির দিকে দৃষ্টিপাত না করে বেক্সিমকো কোম্পানির হয়ে মানুষের ভিটে মাটি রক্ষার আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে। ঠিক একই ভাবে গুলি চালিয়েছিল চট্টগ্রামের বাশখালীতে। দেশের অধিকার সচেতন মানুষের আজ তাই উপলব্ধি করা প্রয়োজন — এই শাসকরা আসলে কার পক্ষে?

মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে উদ্ধার অপহরণকারী ও তাদের মদদদাতাদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মিছিল সমাবেশ

39416

হিল উইমেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার, অপহরণকারী ও তাদের মদদদাতাদের গ্রেফতার ও বিচার, পাহাড় ও সমতলে সংঘটিত সকল ধর্ষণ-গুম-খুন-অপহরণের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অঘোষিত সেনাশাসন প্রত্যাহার এবং পাহাড় ও সমতলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে মশাল মিছিল, প্রতিবাদী নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স

29858_FRA20180322FRANCESTRIKES_1521723467907

ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রন সরকারের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী নীতির প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফ্রান্স। গত মার্চের ২২ তারিখ ফ্রান্সের ৭টি জাতীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ আহবানে দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়েছে। এদিন ধর্মঘটের সমর্থনে দেশের ১৮০টি বিক্ষোভ সমাবেশে প্রায় ৪ লক্ষের অধিক বিক্ষোভকারী অংশ নেয়। ধর্মঘটে চালক-কর্মচারি-শ্রমিকরা অংশ নেয়। এ বিক্ষোভে ছাত্ররাও যুক্ত হয়। শ্রমিকদের দাবির প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ সংকুচিত করা, উচ্চশিক্ষাকে ব্যয়বহুল করার সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ করে। শুধু প্যারিসেই ৪৮০০০ বিক্ষোভকারী অংশ নেয়। প্যারিসে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্যারিস কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ফ্রান্সে মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর পরই ম্যাক্রন সরকার শ্রম আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সরকারের পরিকল্পনায় আছে ২০২২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে ১,২০,০০০ শ্রমিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা হবে। পূর্বের শ্রম আইনে শ্রমিকরা যেসব অধিকার ও চাকুরির নিরাপত্তা ভোগ করতো, তা সংকুচিত করা হচ্ছে। স্থায়ী চাকরির বদলে স্বল্পমেয়াদী চুক্তিভিত্তিক নতুন শ্রমিক নিয়োগ, বেকারত্ব, ইনস্যুরেন্স সংস্কার, অবসরের বয়স কমানো, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের উপর উচ্চ ট্যাক্স আরোপ, অবসর ভাতা ও অন্যান্য প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব রেলখাত সংস্কার ও লোকসান কমানোর কথা বলে অভিজ্ঞতা নয়-মেধার ভিত্তিতে মজুরি, মূল্যস্ফীতির সাথে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির নিয়ম বাতিল, রেল কর্মচারিদের পরিবারের সদস্যদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে রেলভ্রমণের সুবিধা সংকোচনসহ অনেক শ্রমিক স্বার্থবিরোধী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে রেলখাত বেসরকারিকরণের দিকেই ফ্রান্স হাঁটছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির মন্দা ফ্রান্সকে চেপে ধরেছে। এ মন্দা কাটাতে অন্য পুঁজিবাদী দেশের মতোই ক্রমাগত অর্থনীতির সামরিকীকরণের দিকে হাঁটছে। সম্প্রতি ফ্রান্স বাজেটে সামরিক খাতে ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। সামরিক বাহিনীকে নতুন জেনারেশনের অস্ত্রে সজ্জিত করা, ইরাক-লিবিয়া-সিরিয়ায় এবং আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে তার সামরিক উপস্থিতি, রণহুঙ্কার তারই অংশ। এ কারণেই ফ্রান্সের পুঁজিপতি শাসকরা সামাজিক খাতে সরকারি ব্যয় বরাদ্দ কমাচ্ছে। শ্রমিকের অধিকার, চাকুরির নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে অধিকার সবগুলো একে একে কেড়ে নেওয়ার আয়োজন চলছে। এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের শ্রমিকরা একজোট হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে। এবারের ধর্মঘট থেকে ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সের এই অধিকার সচেতন ও লড়াকু শ্রমিকশ্রেণি বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রেরণা হয়ে থাকবে।

সাম্যবাদ এপ্রিল  ২০১৮

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments