Wednesday, December 25, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - এপ্রিল ২০১৯আন্দোলন ও সংগঠন সংবাদ — সাম্যবাদ এপ্রিল ২০১৯

আন্দোলন ও সংগঠন সংবাদ — সাম্যবাদ এপ্রিল ২০১৯

ফসলের লাভজনক দাম, কৃষি বাজেট বৃদ্ধি, চাষীর সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার, ক্ষেতমজুরদের কাজ ও রেশন, ভূমিহীনদের খাসজমি বরাদ্দসহ ৯ দফা দাবিতে

কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদের স্মারকলিপি পেশ

56506560_1046620775536783_2432510060153274368_n copy

কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর বাঁচাতে ৯ দফা দাবিতে কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। এর পূর্বে সকাল ১১টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাইফুল হক, মঞ্জুরুল হক মিঠু, এড. আনোয়ার হোসেন রেজা, লিয়াকত হোসেন, ফিরোজ আহসান প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর ও দেশ বাঁচাতে সংগ্রাম পরিষদের ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান, যার মধ্যে রয়েছে —

১. ধান-আলুসহ কৃষি ফসলের লাভজনক দাম; প্রতি ইউনিয়নে ক্রয়কেন্দ্র চালু করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামে ফসল ক্রয়। সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ। জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি।

২. ক্ষেতমজুরদের সারা বছরের কাজ; স্বল্পমূল্যে গ্রামীণ রেশনিং ব্যবস্থা ও ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু। দুস্থভাতা-কাবিখা-কাবিটা-ভিজিএফ-ভিজিডি-টেস্টরিলিফ-বয়স্কভাতাসহ সকল গ্রামীণ প্রকল্পের দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ বন্ধ।

৩. খাসজমি উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমিহীনদের নামে সমবায়ের ভিত্তিতে বরাদ্দ। বেকার যুবকদের সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান।

৪. ভূমি অফিস, তহসিল অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, পল্লীবিদ্যুৎ ও ব্যাংকঋণের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ। পুলিশী হয়রানী-জুলুম-নিপীড়ন, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার-গ্রেপ্তার বাণিজ্য বন্ধ।

৫. কৃষকের নামে দায়েরকৃত সার্টিফিকেট মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার। ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ সুদাসলে মওকুফ। শস্যবীমা চালু। এনজিও ও মহাজনী ঋণের হয়রানী বন্ধ।

৬. কৃষিজমি অকৃষি খাতে ব্যবহার রোধ। কৃষিজমি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন। আখচাষিদের রক্ষা, বকেয়া পাওনা পরিশোধ। আম চাষিদের রক্ষায় ব্যবস্থা। নদী-খাল খনন, দখল-দূষণ বন্ধ, নদীভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা। হাওর সমস্যার স্থায়ী সমাধান।

৭. দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূর; লবণাক্ততা রোধে ব্যবস্থা। তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়; বাংলাদেশকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা।

৮. পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি; মাতৃভাষায় শিক্ষা ও ভূমির অধিকার এবং জানমালের নিরাপত্তা।

৯. নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিল করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধিনে দ্রুত পুনঃনির্বাচন; জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।

চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবিতে গ্রামীণ ব্যাংকের পিয়ন-কাম-গার্ডদের অবস্থান কর্মসূচি

GB-2 copy
গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত প্রায় ৩ হাজার দৈনিক ভিত্তিক পিয়ন-কাম-গার্ডদের চাকুরী স্থায়ীকরণ, শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র-ওভারটাইম-সবেতন ছুটি-বোনাসসহ যাবতীয় সুবিধাদি প্রদান এবং আন্দোলনকারীদের শাস্তিমূলক চাকুরিচ্যুতি-বদলি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে গ্রামীণ ব্যাংক ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী পরিষদের উদ্যোগে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে ও মিরপুরস্থ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ১৮ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত চলে। সারাদেশ থেকে আসা গ্রামীণ ব্যাংকের ৫ শতাধিক কর্মচারী ১৮ মার্চ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নেয়। তারা নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও গরিব কর্মচারীদের আইনসম্মত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বন্ধ করতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ দাবি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে।

১৯ মার্চ বিকেল থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থানের প্রেক্ষিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ২২ মার্চ তাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে চাকুরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের পরবর্তী সভায় উত্থাপনের আশ্বাস দেয়। কর্তৃপক্ষ আরো আশ্বাস দেন — তাদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি করা হবে এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে কাউকে হয়রানি করা হবে না। তবে কর্মকর্তারা লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছে যে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে চাকুরী স্থায়ীকরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, সিপিবি-র প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, জাতীয় গণতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক শামীম ইমাম, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, সমন্বিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নেতা রফিকুল ইসলাম পথিক, শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিক, গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য আসমা বেগম। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গ্রামীণ ব্যাংক ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী পরিষদ-এর আহ্বায়ক আজিজুল হক বাবুল। বক্তব্য রাখেন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইউনুস, নয়ন শিকদার, সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল ইসলাম, উপদেষ্টা ইরাদুল ইসলাম, যশোর জোনের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, নরসিংদী জোনের সভাপতি মো. আরিফ মিয়া, টাঙ্গাইল জোনের সভাপতি ইউসুফ আলী, সিরাজগঞ্জ জোনের মো. আজমসহ অনেকে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা একে ‘গরিবের ব্যাংক’ বলে দাবি করেন। অথচ ব্যাংকটি নিজেদের গরিব কর্মচারীদের সাথে অমানবিক আচরণ ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা অফিসে পিয়ন-কাম-গার্ড হিসেবে কর্মরত তিন হাজারের বেশি কর্মচারীকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে (No Work, No Pay) বছরের পর বছর ধরে কাজ করানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে (অনেকে ১৫-২০ বছরের বেশি) চাকুরি করলেও চাকুরী স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। এই কর্মচারীদের কোন নির্ধারিত কর্মঘন্টা, সাপ্তাহিক-সরকারি-উৎসব-ঐচ্ছিক-অসুস্থতাকালীন ছুটি, বোনাস নেই। কোনরকম কারণ দর্শানো ও লিখিত অভিযোগ ছাড়া যেকোন সময় মৌখিক ভিত্তিতে ছাঁটাই করা হয়। এসবই বাংলাদেশ শ্রম আইন, আন্তর্জাতিক শ্রমমান ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বর্তমানে দিনে অফিসের কাজের জন্য দৈনিক ৩৭৫ টাকা, রাতে অফিস পাহারার জন্য মাসে ১০০০ টাকা ও সকালে ঝাড়ুদারের কাজের জন্য মাসে ৬০০ টাকা মজুরি দেয়া হয়। এই পদে ১০ বছরের বেশি সময় ধারাবাহিক কাজ করলে বিদায়কালীন অনুদান বাবদ মাত্র ২ লক্ষ টাকা দেয়া হবে। দশ বছর হওয়ার আগেই নানা অজুহাতে ছাঁটাই করা হয়। প্রতিটি ঈদ উদযাপন/উৎসব পালন এর জন্য সহায়তা বাবদ মাত্র ২৫০০ টাকা দেয়া হয়। চাকুরিতে যোগদানের সময় কোন নিয়োগপত্র ও ছবিসম্বলিত পরিচয়পত্র দেয়া হয় না। ‘শান্তিতে নোবেল বিজয়ী’ ড. মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে ২০০৩ সালে স্থায়ী পিয়ন-কাম-গার্ড নিয়োগ বন্ধ করে ‘দৈনিক ভিত্তিক লোক কাজে লাগানো সংক্রান্ত’ সার্কুলার জারি করা হয়। সরকার নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলেও এখনো সেই ড. ইউনুস প্রশাসনেরই ধারাবাহিকতা চলছে। অথচ, গ্রামীণ ব্যাংকের ‘বিভিন্ন পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদত্যাগ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক ‘নির্দেশিকা ষোল’-এর ১৬.৬.৯ অনুচ্ছেদ মতে ‘দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত পিয়ন-কাম-গার্ডদের কোন অবস্থাতেই ৯ মাসের বেশি দৈনিক ভিত্তিতে রাখা যাবে না’। বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ান্তে শ্রমিক/কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ করতে হবে। কর্মচারীদের প্রশ্ন — ‘এত বছর ধরে ২৪ ঘন্টা কাজ করি, তবু কেন অস্থায়ী’?

চাকুরী স্থায়ীকরণ চেয়ে ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষকে দাবিগুলো জানানো হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মার্চ ও জুলাই মাসে জাতীয় প্রেসক্লাব ও গ্রামীণ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। তখন ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট আশ্বাস দিলেও স্থায়ীকরণের মূল দাবি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু আন্দোলনের সাথে জড়িতদের নানা কৌশলে অন্য জেলায় হয়রানিমূলক বদলি, চাকুরিচ্যুতি করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উচিত — বাংলাদেশের শ্রম আইন, গ্রামীণ ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও সর্বোপরি মানবিক দিক বিবেচনা করে ৩০০০ দৈনিকভিত্তিক পিয়ন-কাম-গার্ডদের চাকুরী স্থায়ী করে তাদের পরিবারের সম্মানজনক জীবিকা ও ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বামপন্থী নারী সংগঠনগুলোর যুক্ত সমাবেশ ও র‍্যালী

নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক

IMG_1924 copy

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রগতিশীল নারী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে ৮ মার্চ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে আয়োজিত যুক্ত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-বৈষম্য প্রতিরোধে এবং রাষ্ট্র-সমাজে মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, “নারীর সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হলে কোন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজেকে সভ্য বলে দাবি করতে পারে না। ভোট দেবার অপরাধে নারীকে যখন ধর্ষিতা হতে হয় এবং সামাজিক লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় তখন লজ্জার সীমা থাকে না। একদিকে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যদিকে শ্রেণীগত নানা নিপীড়নে নারীরা শোষিত, বঞ্চিত ও অবদমিত। পুরুষতান্ত্রিক ও শ্রেণী শোষণের অবসান না হলে নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি নেই। আর নারী মুক্তি ছাড়া সামাজিক মুক্তি নেই।”

কমিউনিস্ট পার্টি নারী সেলের নেত্রী লক্ষ্মী চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে এবং সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নেত্রী প্রকৌশলী শম্পা বসুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত নারী দিবসের এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সহ-সভাপতি এড. সুলতানা আক্তার রুবি, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম সভাপতি রওশন আরা রুশো, নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী, বিপ্লবী নারী ফোরাম যুগ্ম আহ্বায়ক আমেনা আক্তার, শ্রমিকনেত্রী জলি তালুকদার, এড. জান্নাতুল মরিয়ম তানিয়া, রাশিদা বেগম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে পাঁচ শতাধিক নারীর অংশগ্রহণে একটি র‍্যালী প্রেসক্লাব থেকে তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন প্রদক্ষিণ করে।

উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বাম গণতান্ত্রিক জোট

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান

উপজেলা নির্বাচন ও সিটি কর্পোরেশন উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় মৈত্রী মিলনায়তন, মুক্তিভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির ইতিহাসে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। কারচুপি, জালিয়াতি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মিডিয়া ক্যু ইত্যাদি সকল বিষয়কে ছাপিয়ে এটি ছিল ভোটের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভরে রাখার এক নতুন কীর্তি। এই কলংকিত নির্বাচনের দগদগে ঘা শুকানোর আগেই এবং জনগণের ভোটাধিকার কোনরূপ নিশ্চিত না করেই উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, গত একাদশ সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, আগামী নির্বাচনও সেভাবেই অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আরও একটি প্রহসন ও তামাশার খেলায় সামিল হতে চাই না বিধায় এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ। উপস্থিত ছিলেন শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, হামিদুল হক, বাচ্চু ভূইয়া, আকবর খান, লিয়াকত হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

‘নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন : নাগরিক সমাজের ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময়

আওয়ামী লীগের অতি বিজয় অর্জিত হয়েছে ঘৃণ্য ও কলঙ্কজনক পথে

IMG_2417 copy

বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে ২৮ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন : নাগরিক সমাজের ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাম জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোটডাকাতি হয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অতি বিজয় অর্জিত হয়েছে ঘৃণ্য ও কলঙ্কজনক পথে। আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভর্তি করার এ নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন দিতে হবে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার স্বার্থে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন আওয়ামী লীগ সরকার অবিলম্বে পদত্যাগ করে সকলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ গঠন করে তার অধীনে নির্বাচন করতে হবে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মোমিনুল ইসলাম মোমিন।

মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, পৃথিবীর দুইশোটি দেশের মধ্যে পঞ্চাশটি দেশে গণতন্ত্র আছে, বাকিগুলোতে স্বৈরতন্ত্র চলছে। বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মিছিলে ঢুকে গেছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ভয় এবং লোভ ব্যবহার করে নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গদের দুর্নীতিগ্রস্থ করেছে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবিধা নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত পদ্ধতিতে নির্বাচনে অতি বিজয় অর্জন করেছে। ব্যাংক মালিক আর গার্মেন্টস মালিকদের সমিতির প্রত্যক্ষ মদদে, আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের সহযোগিতায় জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের এ বিজয়। তিনি বাম জোটের নেতা-কর্মীদের ভোট ডাকাত সরকার এবং তাদের জাতীয় সম্পদ লুটপাটের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বাংলাদেশ অন্ধকার পথে প্রবেশ করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। অধ্যাপক আকাশ বাম জোটকে ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশী তাকে দেব’ আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন সহিংসতা অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে। কিন্তু সহিংসতা চলেছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকেই। এ হচ্ছে প্রলম্বিত সহিংসতা। ভয় ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে নির্বাচিত হওয়ার ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি চক্রান্ত প্রতিহত করার ঘোষণা

_DSC0065 copy 2

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারার বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক জোটের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৭ মার্চ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। জোটের সমন্বয়ক বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কমরেড সাইফুল হক, রুহিন হোসেন প্রিন্স, মানস নন্দী, নজরুল ইসলাম, মনির উদ্দিন পাপ্পু, হামিদুল হক ও লিয়াকত আলী। সমাবেশের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আয়োজন সম্পন্ন করে সরকার জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ব্যবসায়ীদের করছে পুরুষ্কৃত। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসি’র আইন ভঙ্গ করে গণশুনানি করেছে। তার আগেই জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছে তা বেআইনি। এক বছরে একাধিকবার দাম বাড়ানো ও বিতরণকারী কোম্পানিগুলো মুনাফায় থাকলে গণশুনানির প্রস্তাব গ্রহণ করা যায় না। তারপরও গণশুনানির আয়োজন করে সরকার-বিইআরসি একযোগে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এলএনজি ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাসাবাড়ীতে জনগণ কম গ্যাস ব্যবহার বেশি দাম দিচ্ছে। দেশের জনগণের দাবি উপেক্ষা করে বিদেশি কোম্পানিকে স্থলভাগের গ্যাস ক্ষেত্র ইজারা দিলেও দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও তারা অনুসন্ধান-উত্তোলন করছে না। ২০১৩ সালে সমুদ্র জয় করার পরও আজ পর্যন্ত সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলনে কার্যকর উদ্যোগ নাই, অথচ পাশ্ববর্তী দেশ বার্মা ও ভারত তাদের অংশে গ্যাস তুলছে। আবার অনুসন্ধান না করেই গ্যাসের সংকটের কথা বলে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করছে বেসরকারিভাবে। সেখানেও দুর্নীতি চলছে, ভারত ৬ ডলারে গ্যাস কিনলেও বাংলাদেশ কিনছে ১০ ডলারে আর এই বাড়তি মূল্য জনগণের পকেট থেকে আদায় করছে এবং দফায় দফায় দাম বাড়াচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের ভুলনীতি, দুর্নীতি, লুটপাটের দায় জনগণ কেন নেবে? মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ না করলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি গঠন

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৪তম কমিটি গত ২৭ জানুয়ারি গঠন করা হয়েছে। রাশেদুল কবির বাঁধনকে আহ্বায়ক ও শরিফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। আগামী দিনে ছাত্র অধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র সমাজের অগ্রণী সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকার করে এই কমিটি অবিলম্বে ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণ করে রাকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং দখলদারিত্বমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার দাবী জানায়। কমিটি গঠন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কবাদী) রাজশাহী জেলা শাখার সমন্বয়ক কমরেড আতিকুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতা সাজ্জাদ লিওন সরদার।

তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি ছাত্র ফ্রন্টের

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার ২১ মার্চ এক যুক্ত বিবৃতিতে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার নির্দেশ এবং অর্থমন্ত্রীর শিক্ষা খাতকে বেসরকারিকরণ সংক্রান্ত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ যে স্বৈরাচারী কায়দায় চলছে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের নির্দেশ আবারও তা প্রমাণ করল। ইতোপূর্বেও শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষত ২০০৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ( পিইসি) পরীক্ষা প্রবর্তন এবং ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্তি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হয়েছিল। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কারো মতামত না নিয়ে অগণতান্ত্রিক কায়দায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতটা ক্ষতিকর তা উপরোক্ত দুটি বিষয়ে দেশবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এরপরও সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কোন পূর্বালোচনা বা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কারো মতামত না নিয়ে আবার এ ধরনের নির্দেশ জারি ভবিষ্যতে সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।

দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এবং সারাদেশের অভিভাবক- শিক্ষক-ছাত্র- বুদ্ধিজীবীরা যখন শৈশব ধ্বংসকারী পিইসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সরব, তখন মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা ধ্বংসের নতুন কৌশল হিসেবে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়ার এ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। পরীক্ষা না রাখার যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে শিশুদের পরীক্ষার চাপ কমানোর কথা। কিন্তু আমরা দেখেছি পিইসির মত একটি বোর্ড পরীক্ষা শিশুদের উপর ভয়াবহ মানসিক চাপ তৈরী করেছে। শুধুমাত্র এমডিজি, এসডিজি -র লক্ষ্য পূরণ হয়েছে দেখানোর জন্য এবং কোচিং গাইড ব্যবসায়ীদের স্বার্থে প্রবল জনমতকে উপেক্ষা করে পিইসি পরীক্ষা বহাল রাখা হয়েছে। ফলে পরীক্ষার চাপ দূর করা এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য নয় এটা স্পষ্ট। আবার বলা হচ্ছে, কিন্ডারগার্টেন থেকে শিশুদের সরকারি বিদ্যালয়মুখী করতে এ পদক্ষেপ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকারি বিদ্যালয়সমূহকে ক্রমাগত দুর্বল করে বেসরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। ফলে ব্যাঙের ছাতার মত সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন, কোচিংসহ নানা নামের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী হচ্ছে। এখন তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না থাকলে স্বাভাবিকভাবে সরকারি স্কুলে পড়াশোনার গুরুত্ব ও মান কমবে। তখন মানুষ আরও বেশি মুনাফা নির্ভর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে গরীব সাধারণ মানুষ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি সেখানে শাসকগোষ্ঠী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ ফেল প্রথা তুলে দেয়ার ফলে শিক্ষার মান নিম্নগামী ও বেসরকারি খাত নির্ভর হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পাশ ফেল প্রথা পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করছে ঐ দেশের সাধারণ জনগণ। পার্শ্ববর্তী দেশে এই অভিজ্ঞতা থাকার পরও সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ আদতে শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের সূদূর প্রসারী লক্ষ্যের অংশ।

প্রধানমন্ত্রী তার নির্দেশে ফিনল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আদলে শিক্ষা ব্যবস্থা সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। অথচ, আমরা জানি ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে পরিচালিত হয়। ওখানে প্রাথমিক স্তরে ছাত্র ছাত্রীদের ইউনিফর্ম, খাবার, যাতায়াত, বই, খাতা, কলম সবকিছু রাষ্ট্র সরবরাহ করে। এসবের কোন কিছুর ব্যবস্থা না করে শুধু ফিনল্যান্ডের আদলে পরীক্ষা তুলে দিলেই শিক্ষার মান বাড়বে না। আমাদের দেশের বাস্তবতানুযায়ী স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হওয়া দরকার। পাশাপাশি নিয়মিতভাবে শিক্ষকসহ গোটা শিক্ষা ব্যবস্থারও মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। এদেশের বর্তমান বাস্তবতায় পরীক্ষা ও পাশ-ফেল না থাকলে স্কুলে পড়া ও পড়ানোর তাগিদ থাকবে না। পরীক্ষাভীতি দূর করতে অবিলম্বে পিইসি পরীক্ষা বাতিল করা দরকার। অথচ সেটা না করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়ার অযৌক্তিক নির্দেশ দেয়া হল। প্রাথমিক শিক্ষাকে বলা হয় বুনিয়াদী শিক্ষা। অথচ আমাদের দেশে বরাবর এটাকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই, স্বৈরাচারী নির্দেশ জারি করে।

এরইমধ্যে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে গত ১৯ মার্চ অর্থমন্ত্রী প্রাক বাজেট এক আলোচনায় শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে একে বেসরকারি খাতে তুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাক্ষেত্র এখন একটি ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগের জায়গা। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এদেশের ছাত্রসমাজ ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার অধিকারের দাবি উচ্চকিত করেছে। এই দেশে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এধরনের বক্তব্য ধৃষ্টতাপূর্ণ। অবিলম্বে অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য এ দেশের মানুষের শিক্ষার অধিকার হরণের ধারাবাহিক পদক্ষেপের নতুন কৌশল।
নেতৃবৃন্দ প্রাথমিক স্তরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইন করে নিষিদ্ধ করে দেশের সকল শিশুদের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে একইধারার প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানান। পরীক্ষার চাপ কমাতে এ বছর থেকে পিইসি পরীক্ষা বাতিল, তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল এবং শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করার রাষ্ট্রীয় অপকৌশলের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক সহ সকলের প্রতি আহবান জানান।

শহীদ শামসুজ্জোহা স্মৃতি পাঠাগার উদ্বোধন

শহীদ ডা.শামসুজ্জোহা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম বুদ্ধিজীবী শহীদ। ছাত্রনেতা আসাদ,মতিউরের রক্তে তখন জেগে উঠেছিল সম্পূর্ণ দেশ, তারঁ সম্মুখভাগে ছিলেন তৎকালীন ছাত্ররা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও উত্তাল হয়ে উঠে ছাত্র আন্দোলনে। এর মধ্যেই জেলের অভ্যন্তরে হত্যা করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী সার্জেন্ট জহরুলকে। সাথে সাথে আরোও উত্তাল হয়ে উঠে দেশ। মাওলানা ভাসানী পল্টনের সমাবেশ থেকে হুঙ্কার দিলেন প্রয়োজনে ফরাসি বিপ্লবের মত জেলখানা ভেঙ্গে রাজবন্ধীদের মুক্ত করা হবে। শুরু করলেন বিখ্যাত ‘জ্বালাও-পোড়াও-ঘোরাও’ আন্দোলন। এই আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলোড়িত করল। প্রায় প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর দমন-পীড়ন-গ্রেফতার চলত। ১৫ তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য ছাত্রদের উপর হামলা এবং আহত ছাত্রদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। শামসুজ্জোহা সেই ছাত্রদের সাথে ছিলেন,ফিরে এসে বলেছিলেন ছাত্রদের পবিত্র রক্তের স্পর্শে আমি উজ্জিবীত, ছাত্রদের গায়ে গুলি লাগার আগে আমার গায়ে গুলি লাগবে। ১৮ফেব্রুয়ারি যখন ছাত্র পুলিশ মুখোমুখি তখন বুক চিতিয়ে সামনে দাঁড়ালেন তিনি। আইয়ুবের পেটুয়া বাহীনিকে বললেন ‘ডোন্ট ফায়ার’। কিন্তু তারা শামসুজ্জোহার কথা না মেনে গুলি করতে উদ্ধত হয়। পাক সেনারা শামসুজ্জোর উপর শুধু গুলিই চালায়নি, বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। শহীদ হন তিনি। এই মহান মানুষটি যুক্ত ছিলেন মহান ভাষা আন্দোলনে, বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্যে ডাক পেলেও শুধু দেশমাতৃকাকে ভালবেসে থেকে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ আমরা ভুলতে বসেছি তাঁকে। শাসক গোষ্ঠি অত্যন্ত কৌশলে এ কাজ করছে। এই অবরুদ্ধ সময়ে শহীদ শামসুজ্জোহার চেতনা ছড়িয়ে দিতে ঢাকার মিরপুরের কল্যাণপুরে ‘শহীদ শামসুজ্জোহা স্মৃতি পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা শ.ম.মাহাবুব ইসলাম, কল্যাণপুর গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক জুলফিয়া হাবিব, রাশেদ শাহরিয়ার, অতনু মুখার্জী ও আশরাফুল ইসলাম।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments