সর্বহারার মহান নেতা কমরেড ফ্রেডরিক এঙ্গেলস্ ও কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণ
বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের মহান নেতা কমরেড ফ্রেডরিক এঙ্গেলস ও কমরেড শিবদাস ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৫ আগস্ট প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিকাল ৫টায় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, কমরেড ফ্রেডরিক এঙ্গেলস বিজ্ঞান ও দর্শনের আলোকে এ যুগের সত্য মতাদর্শ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মূলনীতিগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে কার্ল মার্কসের সহযোগী হিসেবে অনন্য অবদান রেখে গেছেন। বিরাট পান্ডিত্য ও অসাধারণ সংগ্রামী কমিউনিস্ট চরিত্রের অধিকারী কমরেড এঙ্গেলস্ দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে জগত-জীবন, সমাজ ও অর্থনীতির বিকাশের গতির সূত্র ব্যাখ্যা করে গিয়েছেন তা আজও মার্কসবাদের জ্ঞানভান্ডারে জীবন্ত বিশ্বকোষ।”
নেতৃবৃন্দ কমরেড শিবদাস ঘোষের বিপ্লবী জীবন ও সংগ্রাম তুলে ধরে বলেন, “লেনিনোত্তর সময়ে পার্টি গড়ে তোলার লেনিনীয় ধারণাকে বিকশিত করা, শুধুমাত্র রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, জীবন ও জ্ঞান জগতের সকল স্তরের সমস্যাসমূহ বিশ্লেষণ করে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিকশিত ও সুনির্দিষ্ট উপলদ্ধি দাঁড় করিয়েছেন। তিনি আধুনিক সংশোধনবাদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে সঠিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন, যা বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনে আগামী দিনে পথ দেখাবে।”
সরকার ও মালিকের অবহেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ বয়লার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে শ্রমিকদের
গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টিফ্যাবস লিমিটেডে মেয়াদোত্তীর্ণ বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে ৫ জুলাই ২০১৭ বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টায় গাজীপুরের মাল্টিফ্যাবস পোশাক কারখানার সামনে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অবিলম্বে মালিককে গ্রেফতার, নিহত শ্রমিকের এক জীবনের ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহত শ্রমিকের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ক্ষতিপূরণ আইন সংশোধনের দাবি করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা আ ক ম জহিরুল ইসলাম। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিকনেতা মোশরেফা মিশু, ইসমাইল হোসেন, প্রকাশ দত্ত, জুলহাসনাইন বাবু, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, ডা. শামসুল আলম ও তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মশিউর রহমান খোকন। সমাবেশ থেকে ওই অঞ্চলে শোকদিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় যে বয়লারটি বিস্ফোরিত হয়েছে তা মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। বয়লার চালু করার পর কয়েকবার সংকেত দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শ্রমিকরা অভিযোগকরার পরও বয়লার অপারেটর তা চালু রাখেন এবং প্রচন্ড বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় কর্মরত শ্রমিকদের শরীর। ইতোমধ্যে ১৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে, এখনো নিখোঁজ আছে অন্তত ৩ জন। অসংখ্য আহত শ্রমিক ও পথচারীদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। বক্তারা বলেন, মালিক ও কর্তৃপক্ষের পরিষ্কার অবহেলার কারণেই এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ফলে একে কোনোভাবেই দুর্ঘটনা বলা যাবে না বরং এটা একটি নিশ্চিত কাঠামোগত হত্যাকান্ড এবং এর দায়ভার কোনোভাবেই মালিক ও বয়লার পরিদর্শকরা এড়াতে পারেন না। ফলে অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে এবং বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার আগের ঘটনাগুলোতে যদি মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সকল কারখানায় কাজের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ নির্মাণ করতো তাহলে কারখানাগুলোতে এভাবে শ্রমিকদের আগুনে পুড়ে, ভবন চাপা পড়ে এবং বয়লার বিস্ফোরণসহ নানাবিধ দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের মরতে হতো না। বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকের জীবনহানির ঘটনায় দায়ী মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ দূরের কথা সরকার মালিক পক্ষের হয়ে এধরনের ঘটনায় গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলন পুলিশ, গুন্ডা-মাস্তান দিয়ে কঠোর হস্তে দমন করে।
বক্তারা আরো বলেন, শ্রম প্রতিমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেছেন, বয়লার পরিদর্শন এবং এর নিরাপত্তা বিধানের দায় তার মন্ত্রণালয় নিতে পারবে না। তাহলে এই দায় কার? গতবছর গাজীপুরের ট্যাম্পাকো ফয়েল কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ৩৮ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার পর ঘোষণা করা হয়েছিল সকল কারখানার বয়লার পরীক্ষা করা হবে এবং বছরে অন্তত দুইবার নিরীক্ষা করে ফিটনেস সনদ নিতে হবে। কিন্তু তার কোনো অগ্রগতি যে ঘটেনি সেটা মন্ত্রী স্বীকার করেছেন নিজ মুখেই। তাহলে তিনি কোন নৈতিকতার বলে এখনো প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্বপদে বহাল আছেন? নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, অবিলম্বে সকল নিহত শ্রমিকের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে হবে, যারা এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আছেন তাদের পরিচয়ও প্রকাশ করতে হবে এবং সকল আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি কোষাগার থেকে অনুদান দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা চলবে না। অবিলম্বে শ্রম আইন বদল করতে হবে, নিহত সকল শ্রমিককে বাকি জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭টি কলেজের শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশি হামলার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ
ঢাকায় কলেজ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বর্বরোচিত পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ২১ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদা মনিকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা ও অর্থ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী।
সমাবেশে সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা বলেন, “৭টি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের সংকট নিরসনের দাবিতে ঢাকার রাজপথে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল। কলেজসমূহ পরিচালনা করার কোনো নীতিমালা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি কলেজের অন্তর্ভুক্তি বিদ্যমান সংকটকে আরো বৃদ্ধি করেছে। কলেজগুলোর সেশনজট, আবাসন, পরিবহন, গবেষণা, সেমিনার ও ক্লাসরুমের সংকট বিদ্যমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও চলমান সংকটসমূহ নিরসনের কোনো নীতিমালা ছাত্রসমাজের সামনে হাজির করা হয়নি। কিন্তু আমাদের সরকার তাদের প্রতিবাদটুকু সহ্য না করে পুলিশ বাহিনী দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্যাসিস্ট কায়দায় শিক্ষার্থীদের শরীর বরাবর টিয়ারশেল-রাবার বুলেট মেরে লাঠিচার্জ করে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করতে রাজপথ রক্তাক্ত করছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন পুলিশ সদস্য সামান্য দূরত্বে অবস্থানরত শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের মুখ বরাবর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে সিদ্দিকুরের দুটি চোখই মারাত্মকভাবে আহত হয়। সিদ্দিকুর রহমান আর দেখতে পাবে না। এ ঘটনার দায় সরকার কোনোভাবে এড়াতে পারে না। সিদ্দিকুরসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর এধরনের বর্বর আক্রমণ ও অজ্ঞাতনামা ১২০০ জন শিক্ষার্থীর ওপর মামলা সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে আরেকবার উন্মোচিত করলো। কোনো ধরনের ন্যায়সংগত আন্দোলন যেন দানা বাঁধতে না পারে এজন্য সরকার দমন-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে।”
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হামলার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং ৭টি কলেজের সংকট নিরসনের দাবিতে সংগঠিত প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ধর্ষক-নির্যাতকদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
বগুড়ায় শ্রমিকলীগ নেতা ধর্ষক তুফান ও সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে গত ১ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আফসানা লুনা, সুস্মিতা রায় সুপ্তি।
গাইবান্ধা: ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল, গিদারী ইউনিয়নের আলমগীর, মদনের পাড়া-রামচন্দ্রপুরসহ সারা জেলায় সংঘটিত নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ১২ জুন গাইবান্ধা শহরের ১নং ট্রাফিক মোড়ে এলাকাবাসীর উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নারীমুক্তি কেন্দ্র গাইবান্ধা জেলা সভাপতি অধ্যাপক রোকেয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী, ছাত্র ফ্রন্ট জেলা সভাপতি শামীম আরা মিনা, গিদারী ইউনিয়নের ভিকটিম রুবির স্বামী। ভিকটিম জেমি আকতার বলেন, সারাদেশে যে একের পর এক নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে তার সুষ্ঠ বিচার না হওয়ায় এ সমস্ত ঘটনা অব্যাহতভাবে বেড়েই চলছে। নেতৃবৃন্দ এ সমস্ত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণ হিসেবে অপসংস্কৃতি, অশ্লীলতা, মাদক-জুয়া-পর্নোগ্রাফির বিস্তার ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই দাবী করেন। অপরাধীরা প্রভাবশালী ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করছে না বলে তীব্র সমালোচনা করেন।
রংপুর: বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র রংপুর জেলার উদ্যোগে গত ১ আগস্ট প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কামরুন্নাহার খানম শিখার সভাপতিত্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, ছাত্র ফ্রন্ট জেলা সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, বেগম রোকেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টুম্পা খাতুন, শাপলা রায়।
পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ তিন দফা দাবিতে রাঙ্গামাটিতে স্মারকলিপি পেশ
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) রাঙামাটি জেলার পক্ষ থেকে ২২ জুন মানববন্ধন, সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) রাঙ্গামাটি জেলা শাখার নেতা কলিন চাকমার সভাপতিত্বে ও মধুলাল চাকমার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক মুক্তা ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম জেলা আহবায়ক ফজলে রাব্বী, সুনীল কান্তি চাকমা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, পাহাড় ধসে শতাধিক মৃত্যু, বাসস্থান-ফসল-ফলের বাগানসহ সম্পত্তি ধ্বংসের ভয়াবহ ঘটনা নিছক প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়। বিষয়টির সাথে রাষ্ট্রীয় নীতি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে যুক্ত। কেন বিপর্যয় ঘটলো তার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, দীর্ঘ সময় ধরে পাহাড় ব্যবস্থাপনা নিয়ে চলেছে অনিয়ম। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী জলবিদ্যুতের জন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু করেছিল। সেসময় উপত্যকার মানুষ বাধ্য হয়ে উঠে এসেছে পাহাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যক্রমে ভূতাত্ত্বিক ও প্রতিবেশগত বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয়েছে বারবার। ফলে বনভূমি ও পানির উৎসগুলো ধ্বংস হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অবহেলা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ এ পাহাড়কে নির্বিচারে ব্যবহার করেছে। পাহাড় কাটা, দখল, মাটি বিক্রি, ইট ভাটা, বসতি, হোটেল-মোটেল ইত্যাদি স্থাপনা করেছে ব্যবসায়িক স্বার্থে। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে বাণিজ্যিক বনায়ন করা হয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ২০০৩ থেকে ১৫ সালের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ২৭.৫২% প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়েছে। ৬১% পাহাড়ি ঝরনা শুকিয়ে গেছে। প্রাকৃতিক গাছ কেটে সেগুন, গজারি, রাবার ও ফলের বাগান তৈরি করাতে পাহাড়ের মাটি আলগা ও শুকিয়ে গেছে। ফলে এ সমস্ত কারণে পাহাড়ের ভারসাম্য হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই ঘটনা একাধারে মানবিক, প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ২০০৭ সালের পাহাড় ধসের ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে একটি রাষ্ট্রীয় সুপারিশমালা তৈরী হয়। সুপারিশে বলা হয়েছে, “ভূ-তাত্ত্বিক জরিপের মাধ্যমে মাটির ধারণ ক্ষমতা এবং পাহাড়ের ঢালের কোণ ও শক্তি নির্ণয় করে তার ভিত্তিতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা করা। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অবশ্যই ভূ-তাত্ত্বিক সুপারিশ মেনে চলা।” ৩৬টি সুপারিশমালায় আরো বলা হয়েছে, “প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণসহ পাহাড়ের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইট ভাটার অনুমোদন না দেয়া, ৫ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন নিষিদ্ধ করা।” কিন্তু এ সমস্ত সুপারিশ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি কেউই আমলে নেয়নি। ফলশ্রুতিতে আমরা আজকে এতবড় মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছি। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণসহ সরকারি উদ্যোগে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসন, পাহাড়ে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ, ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ ছাড়া পার্বত্যস্থানে অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ, পাহাড় কাটা-দখল-অপরিকল্পিত বসতিস্থাপন-ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ করা এবং পাহাড় ধসের চিহ্নিত কারণসমূহ রোধে ২০০৭ এ প্রণীত সুপারিশের ভিত্তিতে ভূ-তত্ত্ববিদ-পরিবেশবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরী ও বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।
অবৈধ সিনেট নির্বাচন বাতিল ও অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ
গত ৮ আগস্ট অপরাজেয় বাংলায় প্রগতিশীল ছাত্র জোট ঢাবি শাখার মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষকদের হামলার নিন্দা জানিয়ে ডাকসু নির্বাচনের দাবির প্রতি সংহতি জানান একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা।
তারা বলেন, “আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে টএঈ’র ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র বাস্তবায়নে শিক্ষা বাণিজ্যের পথে হাঁটছে সে কারণেই তারা ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে দাড়াঁবে না।” জোট নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দখলদারিত্বের পরিবেশ চলছে, টএঈ’র শিক্ষা বাণিজ্যের কৌশলপত্র বাস্তবায়নে একের পর এক বিভাগে নাইটকোর্স খোলা হচ্ছে, ফি বাড়ানো হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে ছাত্রদের কথা বলার জায়গা হতো ডাকসু। কিন্তু আজ দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে একে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্রমাগত বাড়ছে। ছাত্র প্রতিনিধিবিহীন অবৈধ সিনেট নির্বাচন হচ্ছে, যেখানে ছাত্ররা তাদের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছনার শিকার হলো। প্রগতিশীল ছাত্রজোট এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণে ডাকসু নির্বাচনের দাবির আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
নদী ভাঙ্গন ও বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে বিক্ষোভ
বন্যা ও ভাঙন কবলিত মানুষকে দ্রুত পুনর্বাসনসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ এবং নদী ভাঙন ও বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে ১৯ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে শহরের ১নং রেলগেটে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বাসদ (মার্কসবাদী) আহবায়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, সদস্য সচিব মঞ্জুর আলম মিঠু প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে। হাজার হাজার বিঘা আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ও ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মৎস্যচাষীরা। এ অবস্থা থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য নদী ভাঙন ও বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে দুর্গত মানুষদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ এবং মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান। একইসাথে নদী ভাঙন ও বন্যা কবলিত মানুষদের এনজিও এবং ব্যাংক ঋণ মওকুফ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি করেন।
অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলন
সারা দেশে অক্টোবর বিপ্লব উদ্যাপন কর্মসূচির ঘোষণা
অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্যাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন ১২ জুলাই সকাল ১১টায় রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আজফার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক হায়দার আকবর খান রনো, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নানড়বু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, গরীব মুক্তি আন্দোলনের নেতা শামসুজ্জামান মিলনসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি পেশার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯১৭ সালের অক্টোবর মাসে রুশ দেশে যে বিপ্লব ঘটেছিল তা পৃথিবীকে চমকে ও বদলে দিয়েছে। রাশিয়ার শ্রমিক-কৃষক মেহনতী মানুষ লেনিন ও বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল। বহুকাল ধরে মানুষ সাম্য, মৈত্রী, ইনসাফের যে সমাজের স্বপ্ন দেখে এসেছে, অক্টোবর বিপ্লব সেই স্বপ্নকেই বাস্তবায়ন করার কাজ করেছে এবং তার মধ্য দিয়ে মানুষকে দিয়েছে আশা ও অগ্রযাত্রার পথের দিশা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯ মে ২০১৭ ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছে ‘অক্টোবর বিপ্লব শতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটি’। এই কমিটি কর্তৃক আগামী ১লা অক্টোবর কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপনের কর্মসূচী শুরু হবে, ৭ই নভেম্বর একটি মহাসমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিলের মধ্য দিয়ে কর্মসূচী আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশের প্রগতিশীল শ্রমিক-কৃষক-ক্ষেতমজুর-ছাত্র-যুব-নারী-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ঢাকায় সভা-সমাবেশ-প্রদর্শনী-সেমিনার-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানামাত্রিক কর্মসূচি পালন করবে। দেশে ইতিমধ্যেই যেসকল জায়গায় স্বতস্ফূর্তভাবে অক্টোবর বিপ্লবের উদ্যাপনের কমিটি গঠিত হয়েছে, কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেই সকল কার্যক্রমকে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়। এছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপনে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানসর্বস্বতা নয়, বরং অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য সকল মানুষের কাছে তুলে ধরে এদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যেই এই জাতীয় কমিটি কর্মসূচি পালন করবে বলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান।
‘জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (২০১৭-৪১)’ জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত খসড়া রূপরেখা উত্থাপন
নবায়নযোগ্য জ্বালানীকে গুরুত্ব দিয়ে, মানুষ ও প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়ন দর্শনের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনাকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ২২ জুলাই ২০১৭ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে সরকারের বাংলাদেশের জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (২০১৭-৪১)-এর বিপরীতে জাতীয় কমিটির প্রস্তাবিত খসড়া রূপরেখা উত্থাপন করেছে।
প্রস্তাবিত রূপরেখায় বলা হয়, ‘সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর আধিপত্য থেকে মুক্ত হলে দেশ ও জনগণের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি না করে সর্বোচ্চ চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো সম্ভব।’ প্রস্তাবে বলা হয় এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হবে, ‘সকল নাগরিকের জন্যে সুলভে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত, নিরাপদ-ঝুঁকিহীন ও পরিবেশসম্মত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ এবং জাতীয় সক্ষমতার উপর দাঁড়িয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
সরকার ও জাতীয় কমিটির প্রস্তাবের তুলনামূলক অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়, সরকারের পরিকল্পনার মূল বৈশিষ্ট্য হলো আমদানি ও রাশিয়া-চীন-ভারতের ঋণ নির্ভরতা। যা পরিবেশ বিধ্বংসী। সরকারের বিদ্যুৎ উৎপানের প্রধান উৎস হলো কয়লা, এলএনজি ও পারমাণবিক চুলা এবং মূল চালিকা শক্তি হলো বিদেশি কোম্পানী অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ও কনসালটেন্ট। এর বিপরীতে জাতীয় কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়, মূল বৈশিষ্ট্য হবে দেশের সম্পদ নির্ভরতা। রাশিয়া-চীন-ভারতের ঋণমুক্ত ও পরিবেশ অনুকূল। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস ধরতে হবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীকে। মূল চালিকা শক্তি হবে জাতীয় সংস্থা, দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও জন উদ্যোগ।
প্রস্তাবে বলা হয়, ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট নির্ধারণ করে সরকার ১২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা নিয়েছে তার বিপরীতে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে টার্গেট থেকে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রস্তাবে বলা হয়, বিদ্যুতের দামও এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী (২০১৫-এর দামস্তর অনুযায়ী) ১২.৭৯ টাকা বিপরীতে ৫.১০ টাকায় আনা সম্ভব।
সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন রাজনীতিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী, প্রকৌশলী মাহাবুব সুমন, ড. সুজিত চৌধুরী, রাজনীতিক সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকী, টিপু বিশ্বাস, রুহিন হোসেন প্রিন্স, মোশরেফা মিশু, জাহিদুল হক মিলু, আজিজুর রহমান, নাসিরউদ্দিন নসু, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন, মাসুদ খান, সামছুল আলম প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অসংখ্য প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার যখন পশ্চাতমুখী, লুণ্ঠন ও ধ্বংসমুখী, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক উন্নয়ন চিন্তার অধীনে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তখন প্রায় দুই দশকে জনআন্দোলনের শক্তি ও আকাক্সক্ষার উপর দাঁড়িয়ে আমরা ভবিষ্যতমুখী, প্রগতি ও সমতামুখী প্রবৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক, প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষের স্বার্থপন্থী উন্নয়ন চিন্তার কাঠামোতে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ পরিকল্পনার খসড়া উপস্থাপন করছি। তিনি বলেন, আমরা কখনও দ্বিমত করিনি যে আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু এটা দেখিয়ে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল কয়লা প্রকল্পের প্রয়োজন নেই। সরকার যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় এটা হলে দেশ ঋণের শৃঙ্খল ও আধিপত্যের মধ্যে পড়বে, পানি-মাটি-পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে জাতীয় কমিটি বিকল্প প্রস্তাবনা হাজির করছে। আমরা যথাযথ নীতি গ্রহণ করলে ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশের গ্যাস চাহিদা নিজেদের গ্যাস থেকেই মেটাতে পারব। সেজন্য রপ্তানিমুখী চুক্তি বাতিল, বাপেক্সকে কাজের সুযোগ দেওয়া, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থলভাগ ও গভীর অগভীর সমুদ্রে নিয়মিত অনুসন্ধান চালাতে হবে। তিনি বলেন শুধু এলএনজি আমদানির কথা বলা হচ্ছে, এর ফলে গ্যাসের দাম বাড়বে এবং বিদ্যুতের দামও বাড়বে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর কথাও সরকার বলে। বিদেশে এ নিয়ে ঢাক-ঢোল পেটানো হচ্ছে অথচ দেশে কোনো অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পরিবেশবিনাশী পথ বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানী নির্ভরতার টার্গেট নির্ধারণ করেছে। অথচ আমরা এসব চিন্তা করছি না। তাই দেশের সৌর-বায়ু-বর্জ্যরে ব্যবহার বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, এটি প্রস্তাবিত খসড়া। চূড়ান্ত করার জন্য বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহলের পরামর্শ নেওয়া হবে। বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের মহাপরিকল্পনা জনগণ জানে না। আমরা আজ প্রকাশ্যে আমাদের বিকল্প প্রস্তাব পেশ করলাম। এ বিষয়ে আমরা আপনাদের মতামতও প্রত্যাশা করছি। সভায় জানানো হয় প্রস্তাবিত খসড়া উন্মুক্ত থাকবে যে কেউ এ বিষয়ে মতামত দিতে পারবেন এবং জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষজ্ঞসহ দায়িত্বশীলদের সাথে আলোচনা করা হবে।