Saturday, December 21, 2024
Homeবিশেষ নিবন্ধআন্দোলন সংবাদ

আন্দোলন সংবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

টেলিভিশন এন্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগে টিউশন ফি প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘট পালিত

Du_Strikeসবকিছুকে আজ ব্যবসার পণ্যে পরিণত করার আয়োজন চলছে। অধিকার বলতে কিছুই থাকছে না। তাই ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষাকারী আমাদের এই রাষ্ট্র নিজ দায়িত্বকে অস্বীকার করে শিক্ষাকেও পণ্যে পরিণত করতে চায়। একারণে সর্বত্র চলছে শিক্ষার বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এই বাণিজ্যিকীকরণের বাইরে নয়। প্রতিবছর বাড়ছে ফি, নিত্য নতুন নামে নয়া কৌশলে। থেমে নেই সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর মাধ্যমে শিক্ষকদের বাড়তি আয়ের অপচেষ্টা। তবে এবার বর্ধিত ফি’র মাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মহলকেই বিস্মিত করেছে। টেলিভিশন এন্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের চার বছরের অনার্সকোর্সের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যান্য সকল খরচ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র বিভাগকেই দিতে হবে এই পরিমাণ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের বিশ বছর (২০০৬-২৬) মেয়াদী কৌশলপত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহারের পরিকল্পনার কথা বলা আছে। সেই পরিকল্পনা অনুসারে ধীরে ধীরে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন ফি বাড়িয়ে,  অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বা বিভাগের খরচ মেটানোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর অনিবার্য ফল উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে দেশের নিুবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা। তাই টি.ভি.ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিল প্রগতিশীল ছাত্রজোট। বিভাগীয় শিক্ষার্থীসহ বিভাগীয় কার্যালয় অবরোধ করে। অবরোধের মুখে চেয়ারম্যান ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিতের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি  দেখিয়ে  পুনরায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এ প্রেক্ষিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট গত ১১ ফেব্রুয়ারি কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ধর্মঘট আহ্বান করে। শিক্ষার্থীদের স¦তঃস্ফূর্ত ক্লাস বর্জন ও বিপুল সমর্থনের মধ্য দিয়ে এ দাবির প্রতি একাত্মতা  জানায়। কিন্তু ছাত্রস্বাথের্র বিপক্ষে অবস্থান নেয়া প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিকে উপেক্ষা করে চলেছে। প্রগতিশীল ছাত্রজোট এই দাবিতে ছাত্রদের সংঘটিত করে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।

ঢাকা কলেজ

বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণসহ ৪ দফা দাবিতে ঢাকা কলেজে আন্দোলন চলছে

Dhaha College SSFঢাকা কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কখনও প্রতিশ্র“তি, কখনওবা কুযুক্তির আড়ালে হাজারো শিক্ষার্থীর সেই দাবি আজও বাস্তবতার মুখ দেখেনি। শিক্ষা বিস্তারের এক দীর্ঘ ঐতিহ্য এবং দেশের অন্যতম প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ববিদ্যালয় করা ছিল এই সময়ের প্রয়োজনেরই স্বীকৃতি। কিন্তু তা তো করা হয়ই নি বরং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করায় এই কলেজ নানা সংকটে জর্জরিত হয়েছে। বারবার শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে কথা বললেও সংকট সমাধান হয়নি। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা লড়াইয়ের পথ ছাড়েনি। তারা আবারও স্লোগান তুলেছে ঢাকা কলেজকে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে। এই দাবিসহ ৪ দফা দাবিতে (পরিবহন সংকট নিরসন করতে বাস ও রুটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, সারা বছর ক্লাস চালু রাখতে ও পরীক্ষাজনিত বন্ধ এড়াতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকৃত স্বতন্ত্র পরীক্ষা হল অবিলম্বে নির্মাণ করা, শিক্ষক ও ক্লাসরুম সংকট ও সেশন জট নিরসন  করা ও শহীদ মিনার সংস্কার করা) গত ১৩ ফেব্রুয়ারি’ ১৪ ঢাকা কলেজের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সকাল ১১টায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল ইসলাম সাদ্দামের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন নাজমুল ইসলাম শাওন, রাসেল সরদার, নাহিদুল ইসলাম, তারেক রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ। শিক্ষার্থীবৃন্দ বলেন, ‘প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজকে রক্ষা এবং আরও বিকশিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কোনো বিকল্প নেই। কেননা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা কলেজ নানা সংকটে বিপর্যস্ত। প্রায় ৩ বছরের সেশন জটের খরগ, পরীক্ষা হল নির্মাণের অভাবে বছরের একটা বড় সময়ে ক্লাস না হওয়া, ক্লাসরুমের তীব্র সংকট, শিক্ষকের অপ্রতুলতা, অকার্যকর লাইব্রেরি-সেমিনার, অপ্রতুল আবাসন ব্যবস্থা, বছর বছর ফি বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা সংকটে কলেজে শিক্ষার মান ক্রমাগত নিুমুখী। এই অবস্থায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানকে উচ্চশিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। দেশের সামগ্রিক উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন মেটাতে এটি প্রয়োজন। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট মোকাবেলা করতেও ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জেলার কলেজসমূহকে অধীভুক্ত করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী কলেজসমূহকে শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা এবং এই বিবেচনায় ঢাকা কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি আমাদের সংগঠন করে আসছে। মানববন্ধন থেকে কলেজ অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি প্রদান, স্বাক্ষর সংগ্রহ করে শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান, ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন ইত্যাদি কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বেদখলকৃত হল উদ্ধার ও নতুন হল নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থীদের

জ বি পুলিশের হামলা ২৩ ০২ ২০১৪বেদখলকৃত হল উদ্ধার ও নতুন হল নির্মাণের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারো রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীরা টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশী নির্যাতন হামলা উপেক্ষা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অতীত দিনেও অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে শিক্ষামন্ত্রী প্রস্তাবিত ছাত্রী হল নির্মাণ, জমি অধিগ্রহণ করে নতুন হল নির্মাণ ও নতুন একাডেমিক ভবনের কাজ শুরু করাসহ বেদখলকৃত হল উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে পরিকল্পিতভাবে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের হলগুলো থেকে ছাত্রদের বিতাড়িত করে তা দখল করা হয়েছিল। এরশাদের পতনের পর অনেকেই গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু বেদখলকৃত হল উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বরং তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা এ হলগুলো দখল করে রেখেছে। ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের সাথে নিয়ে হলগুলো উদ্ধার ও নতুন হল নির্মাণের দাবি করে আসছে। ২০০৯ সালে হল নির্মাণের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হয়। সে সময়েও হামলা-মামলা উপেক্ষা করে ছাত্ররা এ আন্দোলনে এগিয়ে এসেছিল। তীব্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হল এটাই প্রতিষ্ঠার ৫ বছর অতিবাহিত হলেও হল নির্মাণ বা উদ্ধার হয়নি। তাই শিক্ষামন্ত্রীর এবারের প্রতিশ্র“তিও কেবল আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না।  ছাত্রসমাজকে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। এর মাধ্যমেই কেবল ছাত্রদের অধিকার আদায় হতে পারে।

অনুশীলন : সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মুখপত্র

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments