Wednesday, November 20, 2024
Homeবিশেষ নিবন্ধআন্দোলন সংবাদ

আন্দোলন সংবাদ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সাদ হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন

bau-mymensing_50951_0ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বন্ধুদের মধ্যে কোন্দল ও শেষ পর্যন্ত তা খুনের ঘটনায় পর্যবসিত হয়। আশরাফুল হক হলের একটি কক্ষে সাদ ইবনে মমতাজকে পিটিয়ে হত্যা করে তারই বন্ধু ও একই সংগঠনের কর্মীরা। তার প্রতিবাদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ মার্চ থেকে টানা প্রায় দেড় মাস আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে শুধু এই হত্যাকাণ্ডের জন্যই নয়, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে যে অন্যায়, অগণতান্ত্রিক পরিবেশ চলে আসছিল, তারই ফলাফল ছিল এই আন্দোলন, ছাত্রবাস দখল, চাঁদাবাজি, জধমমরহম, ছাত্রীদের উত্যক্ত করছিল  ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও নির্বিচারে তা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিলনা। উপরন্তু প্রশাসনকে বারবার এসব জানানোর পরও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করেননি, বরং তা আরো বাড়ছিল প্রতিনিয়ত। অন্যায় করার পর অপরাধী যখন কোনো শাস্তি পায় না , তখন তা আরও বাড়ে এবং দেখা গেল শেষ পর্যন্ত একজন ছাত্র তাদের হাতে প্রাণ হারাল। সাদ হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা নেমেছিল, তাতে শিক্ষক, কর্মকর্তাদের  অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। আর এ আন্দোলনের নেতৃত্বের পুরোভাগে ও সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ করে মেয়েরা। বস্তুত স্বাধীনতার এত বছর পর ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণের লক্ষ্যে এটি ছিল একটি অনন্য আন্দোলন। পরবর্তীতে ধারাবাহিক আন্দোলনের চাপে প্রশাসন ৬ অপরাধীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয় ও অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করে, অপরাধীকে শাস্তি প্রদানের পর, তা কার্যকরী করার জন্য এই আন্দোলন আরো বেশ কিছুদিন চলমান থাকে। তবে এই আন্দোলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, মেয়েরাও যে দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারে, আন্দোলনকে দিকনির্দেশনা ও গতি দিতে পারে, তা যেন নতুনভাবে উপলব্ধিতে এসেছে। এক ছাত্রের মৃত্যুতে মেয়েরা যেভাবে দাঁড়ালো, তা তাদের সম্মানের আসন দিয়েছে।

 বর্ধিত সেমিস্টার ফি প্রত্যাহারের আন্দোলন

“UGC – আমাকে হ্যামারিং করে, অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর জন্য”- এই কথাই বলেছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ২০১২ সালের সেমিস্টার ফি বিরোধী আন্দোলনের সময়। “UGC- র ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্রের (২০০৬-২০২৬) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরিণত করতে চাইছে শিক্ষা ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায়  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২ সালে ১২০০ টাকা সেমিস্টার ফিসহ ফরম ফিলাপ ফি ১৭৮০ টাকা করা হলে লেভেল-১, সেমিস্টার-২ এর ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। আন্দোলনের চাপে প্রশাসন সেমিস্টার ফি বাতিল করে এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ণ বাতিল করার আশ্বাস প্রদান করে। কিন্তু ২০১৩-১৪ সালে ১ম সেমিস্টারে পুনরায় ফি আরোপ করা হলে শিক্ষার্থীরা পুনরায় আন্দোলনে নামে। তার আগে পুরো  সেমিস্টার জুড়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর নেতাকর্মীরা ছাত্রদের মধ্যে ক্যাম্পেইন করে আন্দোলনের পক্ষে মতামত তৈরি করে।

প্রশাসন বিভিন্নভাবে আন্দোলন বানচালের প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলে সর্বশেষ অস্ত্র হিসাবে ক্লাস প্রতিনিধিদের সাথে, যারা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল, সমঝোতা করে ৯৮০ টাকা প্রত্যাহার করে আন্দোলন বাতিল করতে বলে। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা সম্পূর্ণ ফি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায় । এরই এক পর্যায়ে ৩০ জন ছাত্রকে কারণ দর্শানোর  নোটিশ দিয়ে ক্যাম্পাস অঘোষিতভাবে ঈদের ছুটিতে বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পরে। স্থিমিত এ আলো আবার ফুটবে, আগামী দিনের সমস্ত ফি বিরোধী আন্দোলনকে পথ  দেখাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন

এ সমাজে আর কোথায় মেয়েরা মর্যাদা পাবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনে নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন সাময়িক বহিষ্কার

শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার শিল্পী। তাঁদের কাছেই আমরা মূল্যবোধ-মনুষ্যত্ব-সংস্কৃতির প্রথম পাঠ নিই। কিন্তু সেই শিক্ষকরা যদি পথভ্রষ্ট হন তবে গোটা জাতি, দেশের অগণিত ছাত্রছাত্রী শিখবে কার কাছে? আর শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেন কীভাবে? গোটা দেশে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় এত বেড়েছে যে পত্র পত্রিকায় হরহামেশাই আমরা খবর পাই শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছে। তাই বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ঘটনা! যে বিশ্ববিদ্যালয় একদিন জাতিকে পথ দেখিয়েছে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, মোফাজ্জ্বল হায়দার চৌধুরী, আবু মাহমুদের মতো শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের উন্নত মূল্যবোধের সন্ধান দিয়েছিলেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা-আমাদের হতভম্ব করে, ক্ষুব্ধ করে, মানুষ হিসাবে আমাদের মর্যাদাকে আহত করে। তাই তখন মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রতিবাদীও করে তোলে। গত সেপ্টেম্বর এরকম প্রতিবাদের দৃষ্টান্ত রেখেছে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিভাগীয় চেয়ারপার্সন সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। ঘটনা জানার পর সহপাঠীরা উপাচার্যকে লিখিত আভযোগ পত্র দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বারবার অনুরোধ করে। তাতেও কোন কাজ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ১৫ সেপ্টেম্বর  বিভাগীয় কার্যালয়ে চেয়ারপার্সনকে দিনভর অবরুদ্ধ করে রাখে। ঘটনা জানতে পেরে ইতোমধ্যে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরাও অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে। অবরোধের মুখে সেদিনই সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটি করে চেয়ারপার্সনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। একসপ্তাহ ব্যাপী ক্লাস বর্জন ও ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় এবং সপ্তাহব্যাপী মৌনমিছিল, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ, প্রতিবাদী পথনাটক ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে

অভিযুক্ত শিক্ষককে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করতে বাধ্য হলো প্রশাসন

Pic 4গত ৩০ মার্চ লোকপ্রশাসন বিভাগের কর্মচারী আবু সালেহ কর্তৃক বিভাগেরই এক ছাত্রী নিপীড়নের শিকার হয়। এই ঘটনার বিচার চাইতে শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে গেলে উক্ত বিভাগেরই শিক্ষক মোঃ নাসির উদ্দিন ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ইঙ্গিত ও কটুক্তি করে। উল্লেখ্য এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা সফরেও ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ এবং নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে।  বিচারের পরিবর্তে এহেন ঘটনার প্রতিবাদে  বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং বিভাগীয় প্রধানের কাছে বিচার দাবি করে। কিন্তু বিচার নিয়ে প্রহসন এবং বিভাগীয় প্রধানের বিপরীতমুখী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ডাক দেয়। এ প্রেক্ষিতে বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে ২, ৬ এবং ৮ এপ্রিল ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী ও উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে অভিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীর স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করে। উপাচার্যের আশ্বাস ও তদন্ত কমিটি গঠনের পর বিভাগের শিক্ষার্থীরা ১০ দিনের সময় বেঁধে দেন। আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে  ৯ এপ্রিল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।

তদন্ত কমিটি অনাবশ্যক দীর্ঘসূত্রিতা শেষে অবশেষে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ২১ তারিখ প্রতিবেদন দেয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযুক্ত কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত এবং শিক্ষককে এক বছরের কর্মবিরতির কথা বলা হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচী থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিল শেষে উপাচার্যের বাসভবন অবরোধ করে এক সমাবেশ হয়।সমাবেশ থেকে নিপীড়ক শিক্ষক নাসির উদ্দিনকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম এবং দাবি মানা না হলে লাগাতার ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়। ২২ এপ্রিল পর্যন্ত নিপীড়ক শিক্ষককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত না আসায় ‘যৌন নিপীড়ন বিরোধী শাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৩ এপ্রিল থেকে তিন দিনের ধর্মঘটের ডাক দেয়। কিছু শিক্ষক ও একটি মহল শিক্ষার্থীদের এ নৈতিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন এবং আন্দোলন সম্পর্কে অপপ্রচার করতে থাকেন। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ অন্যান্যপ্রগতিশীল সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণে ধর্মঘট সফল হয়। আন্দোলনের মুখে উপাচার্য আন্দোলনকারীদের সাথে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনড় থাকায় শিক্ষককে এক বছরের জন্য ক্যাম্পাসচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ‘ যৌন নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের’ হাতে তদন্তের ভার দেন। শিক্ষার্থীদের বিশ্বাসের সুযোগে এই তদন্ত আজো  আলোর মুখ দেখেনি। শিক্ষকদের এমন নিস্পৃহতা এবং এমন একটি বিষয়ে কিছু শিক্ষকের বিরোধীতা শিক্ষকদের মর্যাদা এবং উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

মহান শিক্ষা দিবস পালিত

১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষার অধিকার রক্ষার আন্দোলনের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। এদিন তৎকালীন পাকিস্তানে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের নির্দেশে প্রণীত শরীফ কমিশনের শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি ও সংকোচন, শিক্ষার সাম্প্রদাায়িকীকরণ নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে  পুলিশের গুলিতে শহীদী আত্মদান করেন মোস্তফা বাবুল, ওয়াজিউল্লাহসহ আরো অনেকে। অনেক ছাত্রই সেদিন ক্লাস ছেড়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিলÑশিক্ষার দাবিতে। শাসকশ্রেণী তাদের শাসন-শোষণের স্বার্থে যুগে যুগে শিক্ষার অধিকার থেকে বেশির ভাগ মানুষকে বঞ্চিত রাখে।  কিন্তু সমাজকে যারা প্রগতির পথে নিয়ে যেতে চায় Ñতারা এর বিরুদ্ধে লড়েছে। কখনো কখনো জীবন উৎসর্গ করেছে। তাদের সেই আত্মদানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, সেই চেতনাকে পাথেয় করে এই লড়াই এগিয়ে নেবার অংশ হিসাবে সারাদেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে শিক্ষা দিবস উদযাপিত হয়েছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে সকাল ৮ টায় শিক্ষা অধিকার চত্ত্বরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। ঢাকা কলেজে দুপুর বারটায় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, বগুড়া, জয়পুরহাট সহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষা দিবস পালিত হয়।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments