সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বিদেশি কোম্পানির দরপত্র আহ্বান করা হয়। এক্ষেত্রে যে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) তৈরি করা হয়েছে, সেখানে ওই কোম্পানিগুলো আমাদের সমুদ্রে গ্যাস পেলে উত্তোলন করে তা বাইরে বিক্রি করতে পারবে – এই সুযোগ রাখা হয়েছে। ২০০৮ সালে রপ্তানির বিধান রেখে পিএসসি তৈরি করা হয়েছিল। এটি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা কমিটির অর্থনীতি বিভাগ। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার রপ্তানি থেকে পিছিয়ে আসে। বিশ-পঁচিশ বছর পরে এসে প্রমাণ হয়েছে, রপ্তানি না করার সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক।
দশ বছর পরে এসে আবার এখন নতুন পিএসসি করা হচ্ছে রপ্তানির বিধান রেখে। তখন যে যুক্তিতে স্থলভাগের গ্যাস রপ্তানির কথা বলা হয়েছিল, এখন আবার প্রায় একই রকম যুক্তি দিয়ে সমুদ্রের গ্যাস রপ্তানির কথা বলা হচ্ছে। ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ এ ব্যাপারে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং বুয়েটের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ কৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ম. তামিমের সাক্ষাৎকার নেয়। অনেকগুলো যুক্তি-তর্ক সেখানে আসে। আমরা সেই সাক্ষাৎকারের প্রধান প্রধান অংশগুলোর তুলনামূলক চিত্র পাশাপাশি তুলে ধরছি।
- আনু মুহাম্মদ
- এই পিএসসিতে তো বলা হচ্ছে – প্রথমে পেট্রোবাংলাকে বলা হবে গ্যাস কেনার জন্যে। তারা না কিনলে পরে তা রপ্তানি করা হবে। পেট্রোবাংলা যদি গ্যাস কেনে, তাহলে তো আর রপ্তানির প্রসঙ্গ আসছে না। আপনারা বিরোধিতা করছেন কেন? — “এই ধারাটি অনেক আগেও ছিল। এটা হচ্ছে লোক দেখানো ধারা। পেট্রোবাংলা গ্যাস কিনতে চাইবে কি চাইবে না – সেটাতো নির্ধারিত হবে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন এবং সরকারের মধ্যে যারা আছেন তাদের ওপরে। আমরা দেখিÑপেট্রোবাংলায় যাদের বসানো হয় তাদের মূল ভূমিকা হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে শক্তিশালী করার চাইতে বিদেশি কোম্পানিকে সার্ভিস দেওয়া। যে কারণে দেখি যে, স্থলভাগে বাপেক্সের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাপেক্স যে দামে কাজ করতে পারে, তার চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি দামে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়।
- “আসলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনেকখানি বিদেশি কোম্পানির মুখপাত্রের ভূমিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিংবা বাংলাদেশে তাদের জনসংযোগ কর্মকর্তার ভূমিকা মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা পালন করছেন। সেটাই হচ্ছে বিপদের কথা। পিএসসি চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর গ্যাস তুলতে যে খরচ হবে বা গ্যাসের যে দাম দাঁড়াবে, তখন দেখা যাবে, আমাদের গ্যাসই দেশের ভেতরে নিয়ে আসাটা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। তখন তারা যুক্তি দিবে যে, সেই গ্যাস রপ্তানি করে দেওয়াই ভালো। আবার সেই রপ্তানির টাকা যে বাংলাদেশে আসবে তাও কিন্তু নয়। অংশীদারত্ব এমন পর্যায়ে যাবে যে, সেই টাকাটাও বিদেশি কোম্পানি পাবে। কিছু লোককে সুবিধা দিতে গ্যাস সম্পদ পুরোপুরিভাবে হারানোর জন্যেই এমন চুক্তি করা হচ্ছে।”
- প্রতিবারই দেখেছি যে পিএসসি প্রণয়ন করার সময় স্বচ্ছতা, দেশের স্বার্থ নিশ্চিত, দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল বা পরিণতি পর্যালোচনা করা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এটি প্রণীত হয় যেসব সংস্থা সুবিধাভোগী হবে তাদের প্রস্তাবিত মডেল অনুযায়ী।
- সব সময়ই আমাদের বক্তব্য ছিল পিএসসির এই মডেল বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে নয়। ২০০৮ সালের পিএসসি মডেলে রপ্তানির বিধান রাখা হয়েছিল। আমরা তখন এর পর্যালোচনা করে দেখিয়েছি যে, রপ্তানির বিধান থাকলে এবং বিভিন্ন ধারার মধ্যে যে সুযোগগুলো রাখা হয়েছে তাতে শতকরা ৮০ ভাগ গ্যাস বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি হবে। আর যে ২০ ভাগ থাকবে তা গভীরসমুদ্র থেকে দেশে এনে ব্যবহার করার জন্যে যে খরচ পড়বে, তা ভায়াবল হবে না। সেসময় আন্দোলনের মুখে রপ্তানির ধারা স্থগিত রাখা হয়েছিল।
- পূর্বের পিএসসিতে আন্দোলনের চাপে রপ্তানির বিধান না রাখলেও পরবর্তীতে দেখা যায়, তা সংশোধন করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্যে সুযোগ-সুবিধা অন্যদিকে বাড়ানো হয়েছে। যেমন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেখা যায়Ñআমদানি করলে গ্যাসের যে দাম পড়বে, উত্তোলনকারী কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কিনতে হবে তার চেয়ে বেশি দামে।
- আর নতুন পিএসসিতে গ্যাসের দাম তো বাড়ানো হয়েছেই, তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি, তাদেরকে রপ্তানির সুযোগও দেওয়া হয়েছে।
- বাংলাদেশে গ্যাস সংকটের কথা বলেই কিন্তু এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এই গ্যাস সংকটের কথা বলেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কথা বলে একদিকে প্রাণ-পরিবেশ বিনাশী বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হবে, এলএনজি আমদানি করা হবে, আবার অন্যদিকে গ্যাস রপ্তানির চুক্তি হবেÑতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
- পিএসসির মাধ্যমে যে দাম ধরা হচ্ছে, তাতে দেখা যাবে গ্যাস আমদানি করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। এর মানে হলো, আমাদের গ্যাস বিদেশি কোম্পানি ও তাদের সহযোগীদের মুনাফা বাড়াবে। দেশের কোনো কাজে লাগবে না। আবার অনেক বেশি দামে আমাদের এলএনজি আমদানি করতে হবে এবং সুন্দরবনসহ দেশের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। এরকম একটা জালের মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে যার অংশ হচ্ছে এই পিএসসি।
- বাংলাদেশের জন্যে যেটা প্রয়োজন তা হলো – জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো এবং বাপেক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। বাংলাদেশের স্থলভাগে বাপেক্স যে দক্ষতা দেখিয়েছে, সেটাকে হিসাবে নিয়ে তা আরও স¤প্রসারিত করে সমুদ্রে অনুসন্ধানে বাপেক্সকে সুযোগ দেওয়া হোক। সেখানে যদি কোনো ঘাটতি থাকে, তাহলে আমরা সেসব ক্ষেত্রে সাব-কন্ট্রাক্ট দিতে পারি বা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিতে পারি। কিন্তু, মালিকানা শতভাগ দেশের হাতে থাকা উচিত। শতভাগ গ্যাস যাতে দেশের ভেতর ব্যবহৃত হয় সেটার জন্যে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
- জাতীয় সক্ষমতা ও জাতীয় মালিকানা থাকলে যা হয় – আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস উত্তোলন করতে পারি। আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থাকে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাজাতে পারি। কিন্তু, তা বিদেশি কোম্পানির মালিকানায় থাকলে তারা তাদের লাভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে করার জন্যে কোনো কোনো সময় খুব বেশি মাত্রায় গ্যাস উত্তোলন করতে পারে, আবার কখনও কখনও তা ফেলে রাখতে পারে। আবার কখনও কখনও তাদের অনুসন্ধানের কাজ স্থগিত রেখে শেয়ারবাজারে দাম বাড়িয়ে চলেও যেতে পারে। এমন ঘটনা আমরা অতীতে দেখেছি।
- আরেকটি বিষয় হলো: গ্যাসক্ষেত্র দেশের মালিকানায় থাকলে তা আমরা যে দামে পেতে পারি বা দেশের পুরো অর্থনীতি যে সুফল পাবে, তা বিদেশি মালিকানায় থাকলে পাওয়া যায় না। বিদেশি মালিকানায় থাকলে গ্যাসের দাম অনেক বেড়ে যায়, প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যায় এবং নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। গ্যাস ও খনিজসম্পদ হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তার একটি অংশ। এর উপরে জাতীয় নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানা থাকাটা শুধু জ্বালানি নিরাপত্তা নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে অপরিহার্য।
- আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নাইজেরিয়ার ঘটনা আমরা বিবেচনা করতে পারি। নাইজেরিয়ার ক্ষমতাসীনরা নিজেদের সুবিধার জন্যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিয়ে চুক্তি করেছিল। ফলে কোম্পানিগুলো গ্যাস-তেল উত্তোলন ও রপ্তানি করে লাভবান হয়েছে। বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাস থাকা সত্তে¡ও নাইজেরিয়ার কোনো লাভ হয়নি। একই রকম চুক্তি করেছিল ল্যাটিন আমেরিকার দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারগুলো। হুগো শাভেজ যুগে ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডরসহ অনেক দেশ চুক্তিগুলো বাতিল করে দেয়। গ্যাস-তেল সম্পদের মালিকানা দেশের হাতে নিয়ে নেয়। পৃথিবীতে এমন উদাহরণ থাকার পরও আমাদের সম্পদের মালিকানা বহুজাতিক কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি। আমাদের সম্পদের উপর আমাদের অধিকার থাকছে না।
- এর মধ্যে রপ্তানির সুযোগটি হচ্ছে বিপদজনক। অনেকদিন থেকে কথা হচ্ছিলো আমাদের একটি সিসমিক সার্ভে হবে। এই সার্ভে করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। অথবা দরকার হলে কোনো কোম্পানি ভাড়া করেও করা যায়। দেশি-বিদেশি সমীক্ষা অনুযায়ী সাগরে বেশ ভালো পরিমাণে গ্যাস মজুদ রয়েছে। সেই গ্যাস দিয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা বা শিল্পকারখানা চালানো যায়।
- বিদেশি কোম্পানিগুলো যদি অনুসন্ধান – উত্তোলনে খরচ বেশি করে দেখায়, তাহলে দেখা যাবে খরচ অংশীদারত্ব দেখাতে দেখাতে গ্যাসই শেষ হয়ে যায়। কোম্পানিগুলো যারা গ্যাস রপ্তানি করবে, তারা তাদের অংশ রপ্তানি করবে। সেগুলোর কোনোকিছুই আমাদের অর্থনীতিতে যোগ হবে না। কিন্তু, গ্যাসটা বিদেশে চলে যাবে। আমাদের স্থলভাগের গ্যাসের ক্ষেত্রেও এমন উদাহরণ আছে।
- পেট্রোবাংলা যেসময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেসময়ে প্রতিষ্ঠিত অনেক সংস্থা এখন আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করছে। যেমন মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস। বিদেশি কোম্পানিগুলো যারা বাংলাদেশে কাজ করছে, তারা বাংলাদেশের মানুষদের নিয়ে কাজ করছে। অনেক সময় তারা সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়। দেশি কোম্পানির যে সক্ষমতা রয়েছে, তা জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে ব্যবহার করার চাইতে বিদেশি কোম্পানির কর্মচারী বা সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার প্রক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর ফলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হচ্ছে। গ্যাস সম্পদের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে। গ্যাস সংকটের কথা বলে অনেক বিপদজনক প্রকল্প যেমন কয়লাভিত্তিক বা পারমাণবিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।”
- স্থলভাগে ক্ষেত্রে বাপেক্স তো সম্পূর্ণ শক্তিশালী। তারপরও স্থলভাগের কাজ বাপেক্সকে দিয়ে না করিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে করানো হচ্ছে। সক্ষমতা তো একদিনে তৈরি হয় না। সক্ষমতা তৈরি করতে তাকে সময় দিতে হয়, বরাদ্ধ দিতে হয়। খনিজসম্পদ অনুসন্ধান-উত্তোলনে বাজেট বরাদ্ধ খুবই কম থাকে। আবার গ্যাস উন্নয়ন তহবিল বা অন্যান্য তহবিলে যে অর্থ রয়েছে, সেগুলো বাপেক্সের কাজে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়নি। সেই টাকাগুলো পেট্রোবাংলা বা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে তার হিসাব নেই। বাপেক্সের সক্ষমতা যেটা আছে, সেটাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। সেটাকে বিকশিত করার জন্যে যেসব উদ্যোগ নেওয়া দরকার সেটাও নেওয়া হচ্ছে না। … “গ্যাস অনুসন্ধানের কথা যখন বলি সবসময়ই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়Ñআমাদের সক্ষমতা নেই। কিন্তু, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ক্ষেত্রে সরকার একথা বলে না। তখন সরকার বলেÑআমরা দক্ষতা তৈরি করে নিচ্ছি। তাহলে গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দক্ষতা তৈরির কথা আসে না কেন?”
- সমুদ্রে কাজ করার বিষয়ে বাপেক্সের তো কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাহলে প্রক্রিয়াটি কি দীর্ঘমেয়াদী হয়ে যেতে পারে?Ñ“না, তা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে না। সমুদ্রে বাপেক্সের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু, গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৮ সালে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম – পেট্রোবাংলা-বাপেক্সের মালিকানায় অনুসন্ধান করা হোক। প্রয়োজনে কাউকে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া হোক। তখন তাদের দক্ষতা নেই বলে তাড়াহুড়া দেখানো হয়েছিল। গত ১১ বছরে বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হয়নি। বাপেক্সকে যদি সুযোগ দেওয়া হতো, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে দেখা যেত যে, বাপেক্সের দক্ষতার যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব।”
- পিএসসি করাই হচ্ছে কিছু বিদেশি কোম্পানির নির্দেশনায় তাদের স্বার্থ এবং দেশে তাদের কমিশনভোগী যারা আছেন, তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্যে। দেশের স্বার্থ চিন্তা করলে এটা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
- ম.তামিম
- গ্যাস রপ্তানি হচ্ছে দ্বিতীয় অপশন। প্রথম অপশন হচ্ছে, বাংলাদেশ গ্যাস তুলবে। বাংলাদেশ যদি গ্যাস কেনে, তাহলে দ্বিতীয় অপশনটি আর কাজে লাগবে না। বাংলাদেশের গ্যাস কেনার অধিকার আছে। বাংলাদেশ যদি বলে আমরা গ্যাস কিনব, তাহলে কোম্পানি কোথাও গ্যাস বিক্রি করতে পারবে না। বাংলাদেশ যদি গ্যাস না কেনে, তাহলে কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে, তারা তখন গ্যাস রপ্তানি করতে পারবে।
- সরকার যদি দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় তাহলে একটা শর্ত দিয়েই এই চুক্তি করতে পারে যে, যেখানে, যতো গ্যাস পাওয়া যাবে সরকার সব গ্যাস কিনবে। গ্যারান্টি থাকতে হবে। তাহলে কোম্পানিগুলোর আপত্তি থাকবে না। কারণ, কোম্পানিগুলো তাদের গ্যাস বিক্রি করতে চায়। কে গ্যাস কিনলো তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই।
- সমুদ্রে অনুসন্ধানের কাজে কোম্পানিগুলো বিশাল আর্থিক ঝুঁকি নিচ্ছে। যদি তারা গ্যাস না পায় তারা যা বিনিয়োগ করবে সব তাদের গচ্চা যাবে। একটা পয়সাও তারা ফেরত পাবে না। আর যদি পায়, তখন তার যে খরচ হয়েছে তার হিসাব রাখবে তখন তাদেরকে সেই টাকাটা শোধ করে দিতে হবে।
- সেই অনুসন্ধানের কাজ যদি ওরা না করত, তাহলে তো আমাদেরকে করতে হতো। আমরা সেটা করলে আমাদেরও সেই খরচটা লাগত। যদি তারা গ্যাস না পায় তাহলে আমাদের এক পয়সাও দিতে হচ্ছে না। এই ঝুঁকিটা তাদের। এটা হচ্ছে পিএসসির মৌলিক দিক। তারপর, যেহেতু সে ঝুঁকি নিচ্ছে তার রিকোভারি খরচ বাদ দিয়ে যা থাকবে তাকে আমরা বলি প্রফিট গ্যাস। সেটা ভাগাভাগি হবে।
- তারা কতো শতাংশ পাবে? এর জবাবে তিনি বলেন, “সেটা হবে চুক্তিভিত্তিক। যতো বড় আবিষ্কার হবে বাংলাদেশের হিস্যা ততো বেশি হবে। ছোট আবিষ্কার হলে হয়তো দেখা যাবে ওদের খরচই উঠছে না। চুক্তির সবদিক বুঝে কথা বলতে হবে। আমার দৃষ্টিতেÑযারা কথা বলছেন তাদের অনেকেই রাজনৈতিক কারণে কথা বলছেন।
- গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের পর তা পাইপলাইনে করে আনতে হবে। এর যে খরচ তার চেয়ে এলএনজি আমদানির খরচ কম পড়তে পারে। তাহলে আমি কেনো গ্যাস কিনতে যাব? তখন রপ্তানির টাকা দিয়ে কম খরচে এলএনজি কেনা যাবে। অনেক রকমের পরিস্থিতি হতে পারে। যদি বেশি পরিমাণের গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে তা পুরোটা ব্যবহার করার সুযোগ বাংলাদেশে থাকবে না। তাহলে তারা কি বসে থাকবে? আমি বলতে চাই, কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণ করার জন্যে আমাদের চুক্তিতে যদিও গ্যাস রপ্তানির কথা বলা রয়েছে, বাস্তবে গ্যাস রপ্তানির পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদি দেখা যায়, আমাদের ভালো স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গ্যাস রপ্তানি করা হচ্ছে, তখন আন্দোলন করে তা বন্ধ করা যেতে পারে।
- এখানে উৎপাদিত গ্যাসের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কম হলে তখন? – “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যখনই কমে, তখনই হাই ফার্নেস ওয়েলের দামও কমে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম উঠা-নামা করলে আমাদের এখানেও দাম উঠা-নামা করবে।”
- এখন যে চুক্তি রয়েছে তাতে বলা আছে – যেহেতু আমরা নিজেরা জরিপ করিনি, ওরা গভীর সমুদ্রে প্রথমে তিন বছর জরিপ করবে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। আমরা যদি নন-এক্সক্লুসিভ মাল্টিপার্টি সার্ভেটা করতে পারতাম, ২০১৪ সালের পর তা করার কথা ছিল, যেহেতু ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা হয়ে গিয়েছিল। এখন আমরা ব্লন করে দিয়েছি। বলছি, তোমরা আগে সার্ভে করো। এর মানে তিন বছর আমরা আটকে যাচ্ছি। তারপর তারা জানাবে খনন করার সুযোগ আছে কি না। যদি তারা বলে যে, তারা খনন করবে, তখন তাদেরকে দুই বছর সময় বাড়ানো হবে। সেই সময়ের মধ্যে তারা অন্তত একটা কূপ খনন করবে।”
- গ্যাস রপ্তানি হচ্ছে দ্বিতীয় অপশন। প্রথম অপশন হচ্ছে, বাংলাদেশ গ্যাস তুলবে। বাংলাদেশ যদি গ্যাস কেনে, তাহলে দ্বিতীয় অপশনটি আর কাজে লাগবে না। বাংলাদেশের গ্যাস কেনার অধিকার আছে। বাংলাদেশ যদি বলে আমরা গ্যাস কিনব, তাহলে কোম্পানি কোথাও গ্যাস বিক্রি করতে পারবে না। বাংলাদেশ যদি গ্যাস না কেনে, তাহলে কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে, তারা তখন গ্যাস রপ্তানি করতে পারবে।
- সরকার যদি দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে চায় তাহলে একটা শর্ত দিয়েই এই চুক্তি করতে পারে যে, যেখানে, যতো গ্যাস পাওয়া যাবে সরকার সব গ্যাস কিনবে। গ্যারান্টি থাকতে হবে। তাহলে কোম্পানিগুলোর আপত্তি থাকবে না। কারণ, কোম্পানিগুলো তাদের গ্যাস বিক্রি করতে চায়। কে গ্যাস কিনলো তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই।
- সমুদ্রে অনুসন্ধানের কাজে কোম্পানিগুলো বিশাল আর্থিক ঝুঁকি নিচ্ছে। যদি তারা গ্যাস না পায় তারা যা বিনিয়োগ করবে সব তাদের গচ্চা যাবে। একটা পয়সাও তারা ফেরত পাবে না। আর যদি পায়, তখন তার যে খরচ হয়েছে তার হিসাব রাখবে তখন তাদেরকে সেই টাকাটা শোধ করে দিতে হবে।
- সেই অনুসন্ধানের কাজ যদি ওরা না করত, তাহলে তো আমাদেরকে করতে হতো। আমরা সেটা করলে আমাদেরও সেই খরচটা লাগত। যদি তারা গ্যাস না পায় তাহলে আমাদের এক পয়সাও দিতে হচ্ছে না। এই ঝুঁকিটা তাদের। এটা হচ্ছে পিএসসির মৌলিক দিক। তারপর, যেহেতু সে ঝুঁকি নিচ্ছে তার রিকোভারি খরচ বাদ দিয়ে যা থাকবে তাকে আমরা বলি প্রফিট গ্যাস। সেটা ভাগাভাগি হবে।
- তারা কতো শতাংশ পাবে? এর জবাবে তিনি বলেন, “সেটা হবে চুক্তিভিত্তিক। যতো বড় আবিষ্কার হবে বাংলাদেশের হিস্যা ততো বেশি হবে। ছোট আবিষ্কার হলে হয়তো দেখা যাবে ওদের খরচই উঠছে না। চুক্তির সবদিক বুঝে কথা বলতে হবে। আমার দৃষ্টিতেÑযারা কথা বলছেন তাদের অনেকেই রাজনৈতিক কারণে কথা বলছেন।
- গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনের পর তা পাইপলাইনে করে আনতে হবে। এর যে খরচ তার চেয়ে এলএনজি আমদানির খরচ কম পড়তে পারে। তাহলে আমি কেনো গ্যাস কিনতে যাব? তখন রপ্তানির টাকা দিয়ে কম খরচে এলএনজি কেনা যাবে। অনেক রকমের পরিস্থিতি হতে পারে। যদি বেশি পরিমাণের গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে তা পুরোটা ব্যবহার করার সুযোগ বাংলাদেশে থাকবে না। তাহলে তারা কি বসে থাকবে? আমি বলতে চাই, কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণ করার জন্যে আমাদের চুক্তিতে যদিও গ্যাস রপ্তানির কথা বলা রয়েছে, বাস্তবে গ্যাস রপ্তানির পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদি দেখা যায়, আমাদের ভালো স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গ্যাস রপ্তানি করা হচ্ছে, তখন আন্দোলন করে তা বন্ধ করা যেতে পারে।
- এখানে উৎপাদিত গ্যাসের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কম হলে তখন?Ñ“আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যখনই কমে, তখনই হাই ফার্নেস ওয়েলের দামও কমে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম উঠা-নামা করলে আমাদের এখানেও দাম উঠা-নামা করবে।”
- এখন যে চুক্তি রয়েছে তাতে বলা আছে – যেহেতু আমরা নিজেরা জরিপ করিনি, ওরা গভীর সমুদ্রে প্রথমে তিন বছর জরিপ করবে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। আমরা যদি নন-এক্সক্লুসিভ মাল্টিপার্টি সার্ভেটা করতে পারতাম, ২০১৪ সালের পর তা করার কথা ছিল, যেহেতু ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা হয়ে গিয়েছিল। এখন আমরা ব্লন করে দিয়েছি। বলছি, তোমরা আগে সার্ভে করো। এর মানে তিন বছর আমরা আটকে যাচ্ছি। তারপর তারা জানাবে খনন করার সুযোগ আছে কি না। যদি তারা বলে যে, তারা খনন করবে, তখন তাদেরকে দুই বছর সময় বাড়ানো হবে। সেই সময়ের মধ্যে তারা অন্তত একটা কূপ খনন করবে।”
- এই খরচগুলো তারাই চালিয়ে যাবে? – “হ্যাঁ, অবশ্যই। আর তিন বছর পর তারা যদি বলে, না আমি এখানে ইন্টারেস্টেড না, তাহলে সে চলে যাবে। এটা আমাদের কেন করতে হয়েছে? কারণ, আমাদের হাতে তথ্য নেই। যদি তথ্য থাকত, তাহলে সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আমাদের হিস্যাটা আরেকটু ভালো পেতাম। তখন আমরা গ্যাসের মূল্য থেকে শুরু করে হিস্যা বা সবকিছু আরও ভালোভাবে নেগোশিয়েট করতে পারতাম। আমরা যদি জানতাম, সেখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে ভালো চুক্তি করতে পারতাম। আর যদি দেখতাম সম্ভাবনা নেই, তাহলে কোম্পানিগুলেকে আরও বেশি সুযোগ দিয়ে আকর্ষণ করা যেত। তাই তথ্যের অভাবে আমাদেরকে বর্তমানে আঞ্চলিক ঝুঁকির ভিত্তিতে দিতে হচ্ছে।”
- আঞ্চলিক ঝুঁকি বলতে আপনি কী বুঝাচ্ছেন? – “যখন আমরা নির্দিষ্ট এলাকা-ভিত্তিক কোনো তথ্য না জানি, তখন ঐ অঞ্চলের আশেপাশে বর্তমান ও পুরনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ভিত্তিতে আঞ্চলিক সম্ভাবনার পরিমাপ করা হয়। এটা অনেক মোটা দাগের পরিমাপ। তবে বঙ্গোপসাগরে এই আঞ্চলিক ঝুঁকিটা খুব বেশি নয়। এটা মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। তার ভিত্তিতেই এই চুক্তিটা করা হয়েছে। আমাদের হাতে যদি নির্দিষ্ট তথ্য থাকত, তাহলে চিহ্নিত করা যেত কোথায় সম্ভাবনা রয়েছে বা কোথায় কম সম্ভাবনা রয়েছে।
- তাহলে কি গোড়ায় গলদ রয়ে যাচ্ছে? – “এই কারণে আমরা এখন যা করছি, তা হলো এলাকা-ভিত্তিক ঝুঁকির উপর ভিত্তি করে রিওয়ার্ড দিচ্ছি। বিডিং যেটা হবে, সেখানে আমাদের পক্ষে দরকষাকষির খুব একটা সুযোগ থাকবে না। ওরা ওদের লাভের ভাগটা তুলনামূলকভাবে বেশি রেখে বিড করবে। গলদ রয়েছে তা আমি বলব না। আমি বলব, আমরা আরও ভালো করতে পারতাম।”
- ২০০৪ সালে এসে পেট্রোবাংলা গ্যাস কেনার কথা জানায়। এর আগেই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে একটি বিদেশি পত্রিকায় খবর ছাপা হয় যে বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। সেই ইংরেজি আর্টিকেল অনুবাদ করে দেশে প্রকাশ করা হয়। তখন যারা গ্যাস রপ্তানির পক্ষে ছিলেন তারা এই খবরটির উদ্ধৃতি দিতে থাকেন। বাংলাদেশের কোনো বিশেষজ্ঞ বলেননি যে, “বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসছে।”
- সেসময় আপনার অবস্থান কি ছিল?- “২০০২-২০০৩ সালে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির পরামর্শে বলা হয়েছিল – পুরনো আবিষ্কৃত কোনো গ্যাস রপ্তানি করা যাবে না। কারণ, বর্তমানে আবিষ্কৃত, বিবিয়ানাসহ যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে, ২০১০ সালের মধ্যে ঘাটতি শুরু হয়ে যাবে। যদি নতুন কোনো ক্ষেত্রে গ্যাস না পাওয়া যায়। কিন্তু, নতুন আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্র থেকে যদি বাংলাদেশ না কেনে, তাহলে রপ্তানি করা যাবে। কোম্পানিগুলো যখন দেখবে বাংলাদেশ গ্যাস কিনতে পারছে না, তাহলে তারা কেন নতুন আবিষ্কারের দিকে যাবে? … তখন আশঙ্কা করা হয়েছিল, যদি আমরা এখন গ্যাস না কিনি কোম্পানিগুলো ডিজহার্টেন্ড হবে। তারা এদেশ ছেড়ে চলে যাবে। তারা আর কোনো এক্সপেন্ডারেশন করবে না। অ্যান্ড দ্যাট ইজ অ্যাক্সাক্টলি হোয়াট হেপেন্ড। ১৯৯৯-এর পরে বেসিক্যালি বাংলাদেশে আর কোনো এক্সপ্লোরেশন হয়নি। আমরা রপ্তানির কথা বললেই পাগল হয়ে যাই। কারণ, আমরা আমাদের পলিটিশিয়ানদের বিশ্বাস করি না।”
- পেট্রোবাংলাকে কি আন্তর্জাতিকমানে তোলা যায় না? – “পেট্রোবাংলার ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি জ্ঞানের দক্ষতা অবশ্যই আন্তর্জাতিকমানের করা যায়। কিন্তু, হার্ডওয়ার ইনভেস্টমেন্ট করে অনুসন্ধান বা খনন করার সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো সুযোগ এখন আর নেই। তাদেরকে অনেক বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের ম্যানেজ করার ক্ষমতা অনেক বাড়াতে হবে। সেই সুযোগ আছে। সেটাই আমাদের করা উচিত। পেট্রোনাস বা অন্যরা নিজেরা খুব একটা অ্যাক্টিভিটির মধ্যে নেই। কিন্তু, বিদেশি কোম্পানিগুলো সঙ্গে চুক্তি করা, তাদের সুপারভাইজ করা ইত্যাদি কাজগুলো খুব ভালো করতে পারে। তাদের সেই প্রশিক্ষণ রয়েছে। ম্যানেজমেন্ট ও সুপারভিশন স্কিলসম্পন্ন লোকজন আমাদের তৈরি করা উচিত।”
- গ্যাস ফিল্ডগুলোর মালিকানা যদি বিদেশি সংস্থাগুলোর হাতে থাকে, তাহলে তো তারা তাদের ইচ্ছামতো গ্যাস তুলতে বা গ্যাস তোলা বন্ধ রাখতে পারবে? — “এই ব্যাপারে আমি ঠিক বলতে পারব না। এ বিষয়ে চুক্তিতে কোথাও কিছু বলা আছে কি না, তা আমি জানি না। কী পরিমাণ রপ্তানি করা যাবে, গ্যাস উত্তোলন কতক্ষণ চলবে, তা বন্ধ করতে পারবে কি না পারবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত এই চুক্তিতে কোথাও নেই।”
- যখন বলা হয়, বিদেশিদের কাছে খনিজসম্পদ তুলে দেওয়া শুধু জ্বালানি নিরাপত্তা নয়, তা দেশের নিরাপত্তার জন্যেও হুমকি। তখন বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন? — “না, আমি তা মনে করি না। কারণ এ পর্যন্ত আমাদের পিএসসির যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা খুব ভালো অভিজ্ঞতা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে কোনো রকম সমস্যা ছাড়া গ্যাস পেয়ে যাচ্ছি। এ দেশে বিদেশি কোম্পানিগুলো দ্বারা প্রায় ৬০ শতাংশ গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। পেট্রোবাংলার ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক মানের নয়।”
- পেট্রোবাংলায় সেরকম লোকজন রয়েছে কি?—“আগে ছিলো। এখন আর নাই।”
- অনেকের অভিযোগ — বিদেশি কোম্পানিগুলো গ্যাস তুলে তাদের অংশ বিদেশে রপ্তানি করলে গ্যাস ও মুনাফার টাকা দুটোই বিদেশে চলে যাবে। আসলে বাংলাদেশ কিছুই পাবে না। “না, এটা ভুল কথা। পিএসসির গ্যাস ভাগাভাগির অংশীদারত্ব অনুযায়ী বাংলাদেশ অংশের গ্যাসও তারা রপ্তানি করবে আর সেই টাকা বাংলাদেশ পাবে।”
- এই চুক্তির মধ্যে কোনো ফাঁক-ফোকর রয়েছে কি? — “চুক্তির মধ্যে ফাঁক-ফোকর থাকতেই পারে। চুক্তিতে নানারকম ফাঁক-ফোকর থাকে। আমি তো ডিটেল চুক্তি পড়িনি। তাই ঠিক বলতে পারব না।”
- এই পিএসসির খারাপ দিকগুলো কী কী বলে আপনি মনে করেন? — “মোটা দাগে চুক্তি ঠিকই আছে।”