১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ এক সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা উৎপাদিত আলু নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষীদের সংকটের চিত্র তুলে ধরেন।সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের আলুর চাহিদা ৭০ লক্ষ টনের বিপরতীতে নির্ধারিত লক্ষ্য মাত্রা ৮৫ লক্ষ টন ছাড়িয়ে ৯০ লক্ষ টনের বাম্পার ফলন হয়েছে। অথচ এ কৃতিত্বপূর্ণ অবদান আলু চাষীদের জন্য আজ অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলু বিক্রি করতে গিয়ে চাষীরা পড়েছে মহাসংকটে। আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা অথচ উত্তরবঙ্গে চাষীরা দেড় থেকে দুই টাকার বেশি দাম পাচ্ছে না। অথচ ঢাকা চট্টগ্রামসহ জেলা শহরের বাজারগুলোতে ক্রেতারা কিনছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে। মাঝখান থেকে বিপুল মুনাফা লুটছে মধ্যসত্ত্বভোগী ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে সরকার দাম নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কোন ভুমিকা নেয় না। একই সাথে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরকারী উদ্যোগে আলু সংগ্রহেরও পরিকল্পনা নেই। ফলে বছর বছর চাষীদের এ জিম্মিদশা থেকে যেন কোন মুক্তি নেই। সরকারের এ দায়িত্বহীন আচরণ কার্যত ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের মুনাফা লুটে নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার সামিল। কৃষকের পক্ষে আলুর সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনাও তথইবচ। সংরক্ষণের সুযোগ থাকলে কৃষকরা কিছুদিন পরে বিক্রি করে বেশি দাম পেতো। কিন্তু আলু সংরক্ষণের জন্য দেশে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। দেশে যেসব সংরক্ষণাগার আছে তাতে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। বেশিরভাগ বেসরকারি মালিকানার এ সংরক্ষনাগারগুলোতে আলু রাখতে কৃষককে প্রতি বস্তা ৩২০ টাকা গুনতে হয়। অবস্থা বুঝে মালিকরা কখনো কখনো আরো বেশি অর্থ নিয়ে নেয়। এ কোল্ডষ্টোরেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন প্রকার সরকারী বিধি কার্যকর না থাকার ফলে মালিকরা এ যথেচ্ছাচারের সুযোগ নিতে পারছে। দেশে প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে তোলাসহ রপ্তানীর উদ্যোগে বাড়াতে পারলে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। এ বিষয়ে কোন পরিকল্পনার কথা শোনা যায় নি। আপনারা নিশ্চয় জানেন, আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষুদ্র চাষীদের কোন ফসলই বেশিদিন ধরে রাখার উপায় থাকে না। মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সূদে দাদন নিয়ে তারা চাষ করে। দ্রুত ফসল বিক্রি করে ঋণ শোধ ও সংসার চালাতে হয়। ফলে প্রান্তিক চাষীদের কাছে এটা জীবন-মরন সমস্যা। প্রতি বছরই এ দেশের কৃষকরা মৌসুমে ফসল বিক্রি করতে গিয়ে সরকারের দায়িত্বহীনতা, ব্যবসায়ীচক্রের মুনাফার শিকারে পরিনত হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। আর ভোক্তা হিসেবে সাধারণ মানুষও মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়ছে।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা এ পরিস্থিতির জন্য সরকারী নীতিকে দায়ী করে বলেন, বি.এ.ডি.সি-কে সংকুচিত করে, চাষের উপকরণ, সার, ব্রীজ, কীটনাশক, সেচযন্ত্র ইত্যাদি সবকিছুর ব্যবসা বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কৃষি উৎপাদনে বাম্পার ফলনের কৃতিত্ব দাবী করলেও সরকার একদিকে ডিজেল- বিদ্যুৎ-সারের দাম বাড়াচ্ছে অন্যদিকে কৃষিপন্যের ন্যায্যমূল্য ও কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমানও লোক দেখানো।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা নিম্নোক্ত দাবীসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। একইসাথে ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলে আলু চাষীদের রক্ষায় বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা এগিয়ে যাবে বলে অঙ্গীকার করে।
১।সরকারী উদ্যোগে উৎপাদন খরচের সাথে ৩৫% মূল্য সহয়তা দিয়ে চাষীদের কাছ থেকে আলু ও সবজি ক্রয় কর।
২। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোল্ডষ্টোরেজে প্রকৃত চাষীদের আলু সংরক্ষন কর।
৩। বস্তা প্রতি কোল্ডষ্টোরেজের ভাড়া ১৫০/- টাকা নির্ধারণ, আলু ও সবজি সংরক্ষণের জন্য সরকারী উদ্যোগে পর্যাপ্ত কোল্ডষ্টোরেজ নির্মাণ, বেসরকারী কোল্ডষ্টোরেজের ক্ষেত্রে সরকারী নীতিমালা প্রণয়ন কর।
৪। বি.এডি,সিকে সচল ও সার-ব্রীজ-কীটনাশক সেচের জন্য ডিজেল ও বিদ্যুৎ এ ৫০% ভুর্তকি দাও। আলু চাষের এলাকায় আলু ভিত্তিক শিল্প গড়ে তোল।
৫। কোল্ডষ্টোরেজে সংরক্ষিত আলুর উপর সহজ শর্তে প্রকৃত চাষীদের কৃষি ঋণ প্রদান কর। কোল্ডষ্টোরেজে আলু পঁচে গেলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাও।