Tuesday, December 24, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - এপ্রিল-মে ২০১৬ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা — এদেশের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থারই সংকট

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা — এদেশের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থারই সংকট

2DtHnxi6DjaIকেমন হল ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে সারাদেশের মানুষের মাঝে এক নিরুৎসাহিত ভাব পরিলক্ষিত হবে। ইউপি নির্বাচনে যে সংঘাত হয়েছে তা বর্তমান পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংকটকেই আবারো উন্মোচিত করেছে। বুথ দখল, কেন্দ্র দখল, কারচুপি, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব, নির্বাচন কমিশনের অসারতা প্রভৃতি প্রত্যেকটি বিষয় এদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার অনুকূলের ব্যক্তিদের মধ্যেও গভীর ভাবনার জন্ম দিয়েছে। তাঁরা নানাভাবে ইসি আর সরকারের বোধোদয়ের জন্য আবেদন-নিবেদন করছেন। পত্রিকার সম্পাদকীয় আর উপসম্পাদকীয় কলামগুলোতে চোখ বোলালেই তা দেখা যাবে। কিন্তু ইসি বা সরকার কারও তাতে কোনো বোধোদয় হচ্ছে না। বরঞ্চ প্রথম দফার নির্বাচনের চেয়ে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে আরও অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। ২০১১ সালের নির্বাচনে ৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। আর ২০১৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ৩২টি তাজা প্রাণ ঝরে পড়ল। দুই দফায়ই আওয়ামী সরকারের অধীনে নির্বাচন হল। রাষ্ট্র প্রশাসনের সর্বস্তরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সরকার কতখানি বেপরোয়া এ বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি সেটা দেখিয়ে দিল। পরবর্তী দফার নির্বাচনে এ পরিস্থিতি কতখানি ভয়াবহ রূপ নেয় এখন এটাই দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ নামক জনপদটি বিশ্বের সংগ্রামী মানুষের কাছে সুপরিচিত। তার একটি বড় কারণ এই যে এই দেশটি লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছে বিদেশী শ্বাপদের হাত থেকে। পাকিস্তানী সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে নেটিভ্ বাঙালী যে সম্মুখ সমরে সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করতে পারবে তা সেসময়ে অনেকের কাছেই ধারণাতীত ছিল। কিন্তু “বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর” এই স্লোগানের উপর দাঁড়িয়ে এদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ এক হয়েছিল। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মুক্তিপাগল যোদ্ধার বেশে দাঁড়িয়েছিল। বিদেশী হায়েনা আর এদেশীয় কুলাঙ্গাররা বাঙালীদের মনোবল ভেঙে দিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের মা-বোনদের গণিমতের মাল হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে নারীর যোদ্ধৃবেশকে ভুলতে বসেছে এদেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু এতকিছুর পরও স্বাধীন গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এদেশের নারী-পুরুষের মুক্তিযোদ্ধারূপে সেদিনের যে অবদান তা আমাদের গৌরব, আমাদের ভবিষ্যত সংগ্রামের প্রেরণা।

মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার বিপরীতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শাসকশ্রেণীর বেপরোয়া লুণ্ঠন যজ্ঞে সাধারণ মানুষের জীবনে শুধু অভাব দারিদ্রই বাড়েনি, সমাজ থেকে গণতান্ত্রিক চেতনা, সংস্কৃতি-মূল্যবোধ ধ্বসিয়ে দেবার চক্রান্তে মেতেছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছে পুঁজির সেবাদাস। আজ তার একমাত্র লক্ষ্য পুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফার মাধ্যমে তা আকাশচুম্বী করা। এই লাভ আর লোভের কাছে কোন বিবেক, কোন মূল্যবোধকেই সে দাঁড়াতে দেয় না। মানুষের প্রতি যে দায়িত্ব, সেটা পালন না করে তাঁরা এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে – সর্বোচ্চ মুনাফা আত্মসাতের জন্য খেলছে, ক্ষমতার পালাবদলের জন্য খেলছে, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হননের জন্য খেলছে। সর্বশেষ, বর্তমান সরকারের যে অঙ্গীকার অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া তা না করে বরং সে অধিকার হরণ করার জন্য খেলছে। বিগত সময়ের সংসদ নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন কোনটিতেই এদেশের জনগণ সুষ্ঠ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। বর্তমান পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার মোড়ল যারা গণতন্ত্রের অর্থ শেষ পর্যন্ত ভোটের রাজনীতি সর্বস্ব করে ফেলেছে গণতন্ত্রের সেইসব তল্পিবাহকরা আজ জনগণের এটুকু অধিকারও রক্ষা করতে ভয় পায়। আজ বুর্জোয়া রাজনীতি বিনিয়োগ আর লাভালাভের সাথে এত নিরবিচ্ছিন্ন যে সংসদে আজ রাজনীতিবিদ সংখ্যালঘিষ্ঠ আর বড় বড় রুই-কাতলারা সব সংসদ সদস্য হয়ে বসে আছে যাঁরা একচেটিয়া পুঁজির মালিক।

এই একচেটিয়া পুঁজিকে নিরঙ্কুশ করতে রাজনীতিবিদরা একবার ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করলে তাকে কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। আর তাঁর সাথে রয়েছে প্রতিহিংসার রাজনীতির ডালপালা বিস্তার। অতি আশ্চর্যের সাথে স্মরণ করতে হয় যে পরাধীন বৃটিশ আর পাকিস্তান আমলেও রাজনৈতিক সমস্যার তথাকথিত সমাধানের জন্য রাজনীতিবিদরা এক টেবিলে বৈঠক করেছেন। বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা এতটুকু সহনশীলতা অথবা রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখাতে পারছেন না যে তারা নিজেদের তৈরি করা রাজনৈতিক সংকট যা পুরো বুর্জোয়া ব্যবস্থার অসারতা জনগণের সামনে উন্মোচিত করছে তা আলোচনার টেবিলে সমাধান করতে পারেন।

কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যাবে যে এ সংকটের মূল কারণ যতটা না রাজনৈতিক তাঁর চেয়েও বেশী অর্থনৈতিক। গত ৪৫ বছরে এ দেশে পুঁজিপতি শ্রেণী যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে বিদেশী পুঁজি ও প্রযুক্তির সহায়তায় বিনিয়োগের সমস্ততত সম্ভাবনা সুনিশ্চিত করার প্রয়োজনে দীর্ঘস্থায়ী তথাকথিত রাজনৈতিক স্থিতির পরিবেশ তৈরি করতে চায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে বুর্জোয়া শ্রেণী স্বীয় স্বার্থেই একমাত্র আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই এটা সম্ভব বলে মনে করে। ইতোপূর্বে বুর্জোয়া অর্থেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ছিটে ফোঁটা অবশিষ্ট ছিল, তা বর্তমানে দলীয় কর্তৃত্বে রূপ নিয়েছে। এরকম একটি প্রেক্ষাপটে দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে। এবারকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কয়েকটি বিশিষ্ট দিক রয়েছে। তা’হল এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। আমরা যদি ইউনিয়ন পরিষদের উৎপত্তির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব যে এটি কোন মহৎ উদ্দেশ্য থেকে গঠিত হয়নি। ১৮৭০ সালে বৃটিশ সরকার চৌকিদারি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ট্যাক্স কালেকশনের জন্য করেছিল। সেটিই মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত নামে প্রশাসকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ১৯৭৩ সালে এটি পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদ নামে পরিচিত হয়। তবে ১৯৭৬ সালে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জনগণের নিকট প্রশাসনের সুবিধা পৌঁছে দেবার নামে ইউনিয়ন পরিষদকে স্থানীয় সরকারের অধীন করে আরও সংহত করা হয় এবং সরাসরি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের বিধান রাখা হয়। তবে এ যাবতকাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করা হত। তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে এবারই প্রথম স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করা হল। একটা সময়ে বুর্জোয়া প্রচারযন্ত্রগুলো আর বুর্জোয়াদের মেকি গণতান্ত্রিক মুখপাত্ররা বলতেন দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে স্থানীয় সরকার দলীয়করণ হয়ে পড়বে ফলে জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হবে। প্রথম দফায় দেশের ৪০০০ ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৭১২ টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নির্বাচনে ২৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে মঠবাড়িয়ায় পুলিশের গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল একসাথে না দিয়ে ধাপে ধাপে ঘোষণা করায় মঠবাড়িয়ার মত সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ফলে মনোনয়ন প্রাপ্ত এবং মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী বিশেষত আওয়ামী লীগের মধ্যে উপদলীয় কোন্দলের কারণেই এতগুলো মানুষ প্রাণ হারালো। প্রথম দফার নির্বাচনে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ থাকলেও ইসি নিস্ক্রিয় থেকেছে। প্রায় সকল আসনে প্রকৃত বিরোধী দল না থাকা সত্ত্বেও বিদ্রোহী প্রর্থিী থাকায় সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। খবরে প্রকাশ যে বিদ্রোহী বহিস্কারের পরও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে শঙ্কা কাজ করেছে। এদিকে জোট সরকারের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি অভিযোগ করেছে ইউপি নির্বাচনে জোটের প্রার্থীকেও বাধা দেওয়া হয়েছে। খবরে আরো প্রকাশিত হয় যে, বিএনপির দাবি অনুযায়ী প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১১৯টি ইউনিয়নে তাদের কোন প্রার্থী নেই। ৮৩ টি আসনে বিরোধী দলের বাধার মুখে মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি (প্রথম আলো ১২ মার্চ ২০১৬)। এধরণের বাধার মুখে বিদ্রোহী, বিরোধী এমনকি শরিক জোটের অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। এর উপর রয়েছে মনোনয়ন বাণিজ্য। সিরাজদিখানের মতো বহু ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও সংঘর্ষের খবর জানা যায় এর মাঝে সিরাজদিখানেই সংঘর্ষে ৬৫ জন আহত হয়। দোহারে ইউপি নির্বাচনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসারের ভাষ্য যে তিনি ব্যালট কেটেছেন আর “ওরা” সিল মেরেছে! এ আসনে বিরোধী দলীয় প্রার্থী জাল ভোট ও অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেন (২৩ মার্চ ২০১৬ (প্রথম আলো)।
৩১ মার্চ ২০১৬ দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯টি আসনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এর চিত্রও ভিন্ন কিছু নয়। কেরানীগঞ্জে ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোট গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া যায়। গাজিপুরের কালীগঞ্জে বিএনপির তিন প্রার্থীসহ চারজন নির্বাচন বর্জন করেন। ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ৩১ মার্চ ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত ৩২ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এরমধ্যে অধিকাংশ মানুষ সাধারণ নাগরিক, খেটে খাওয়া মানুষ যাদের সাথে নির্বাচন বানিজ্যের কোন সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে রয়েছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশু।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে জিনিসটির কোন মূল্য নেই তা হল মানুষের জীবন। মৃত্যু যেন মানুষের পায়ে পায়ে ঘোরে। যে জিনিসের মূল্য থাকে না তা অমূল্যও হতে পারে। যেটি গোটা বৃটিশ ও পাকিস্তান পর্বে ছিল। এক আসাদের মৃত্যু আইয়ুব শাহীর মতো সেনাশাসকের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এমনকি নব্বইয়ের দশকে ডাঃ মিলনের মৃত্যু সামরিক জান্তা এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল। আজ মুত্যুর মিছিলেও কারো কোনো রা নেই। কতভাবে এদেশের মানুষ মরছে। পরিবহন ও অপরাপর দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু হত্যা. সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, প্রভৃতি নানাভাবে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। সম্প্রতি সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকান্ডে দেশের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। এরমাঝে ইউপি নির্বাচন খুনের নতুন মাত্রা যুক্ত করলো। আমাদের দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ নির্বাচনে উৎসবের আমেজ অনুভব করে। এই একটি সময়ে তাঁরা নাগরিক হিসাবে তাঁদের মর্যাদা বুঝতে চায়। সরকারের দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের এই পবিত্র আমানত রক্ষা করা। কিন্তু এ যেন শিয়ালের কাছে মুরগি রাখার শামিল।

এটি ভাবার কোন কারণ নেই যে পরিস্থিতি এর থেকে ভাল হবে। সরকার দেশ গড়ার নামে পুঁজিবাদ সংহত করছে। উপর থেকে নীচ পর্যন্ত একচেটিয়া পুঁজির লুন্ঠন প্রক্রিয়া একচ্ছত্র করার লক্ষ্যে প্রশাসনিকভাবে দলীয়করণ করার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সরকার বর্তমান ইউপি নির্বাচনকে দেখছে। সেক্ষেত্রে বিরোধী দল তো দূরের কথা এমনকি নিজদলের দলীয় প্রতীক বিহীন অথবা জোটের অপরাপর শরিক দলসমূহকেও নির্বাচনে অংশ নিতে দিচ্ছে না। মূল্যবোধ সম্পন্ন জনদরদি মানুষ যারা স্ব স্ব এলাকায় জনগণের জন্য কিছু কল্যাণমূলক কাজে অংশ নিতেন তাঁদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরাতে সরাতে বর্তমান নির্বাচনে প্রায় নিঃশেষিত করে দিচ্ছে। সরকারে সাফল্যের সবচেয়ে বড় দিক হিসাবে চিহ্নিত হয় কতগুলো পরিসংখ্যানমাত্র। এর বড় সূচক বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু গড় আয় ইত্যাদি যার সাথে কোন সম্পর্ক নেই উত্তরবঙ্গের আলুচাষি অথবা প্রান্তিক চাষিদের। যার সাথে সম্পর্ক নেই এদেশের ছাত্র, শ্রমিক, মজুরের যারা চাকরীর সন্ধানে, কাজের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিছু শহুরে মধ্যবিত্ত যাদের সংখ্যা হয়তো একটু বেড়েছে কিন্তু জনসংখ্যাও তো আর আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। ফলে পুঁজির পুঞ্জীভবনের মধ্য দিয়ে সম্পদহারা মানুষের সংখ্যা বাড়বেই। এ দৈন্যতার মাঝেও যে তাঁর নাগরিক অধিকার, ভোটাধিকারটুকু ডাকাতি হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার অসারতা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। প্রয়োজন হয়ে পড়েছে এই পঁচাগলা ব্যবস্থা থেকে মুক্ত করে সমাজকে সম্মুখবর্তী করা। ভোটধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার সংগ্রামে দৃঢ় সংকল্প হওয়া।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments