জনজীবনের সংকট নিরসন এবং মহাজোট সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলার লক্ষ্যে ১০দফা দাবিতে পক্ষব্যাপী পরিচালিত কর্মসূচীর সমাপনী সমাবেশ ১৭ফেব্রুয়ারি’১৮ বিকাল ৪টায় সিটি পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিছিল সমাবেশের মাধ্যেমে শুরু হয়ে পথসভা, সমাবেশ, গণ সংযোগসহ নান কর্মসচি পালনের মধ্যে দিয়ে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বর, শাহপরান মাজার গেইট, শহরতলীর রেস্ট ক্যাম্প বাজার, কুমার গাঁ বাস স্ট্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পথসভা এবং কোর্ট, শাহপরান, মদিনা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমা, নয়া বাজার, বন্দর, জিন্দাবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচার-প্রচারণা ও প্রচার পত্র বিলি করা হয়।
সিটি পয়েন্টে বিকাল ৪টায় বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়ের সভাপতিত্বে এবং সুশান্ত সিনহার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র সিলেট জেলার আহ্বায়ক তামান্না আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি রেজাউর রহমান রানা প্রমুখ। সমাবেশ পরবর্তীতে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি ১০দফা দাবি শোভিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন,লাল পতাকাসহ সিটি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আম্বরখানায় গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আওয়ামী মহাজোট সরকারের গণবিরোধী নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, দমন-পীড়ন, চূড়ান্ত লুটপাট-দুর্নীতি, দখলদারিত্ব দলীয়করণ সবকিছু মিলে মানুষ অতিষ্ঠ। মহাজোট সরকার উন্নয়নের শ্লোগান দিচ্ছে অথচ চাল, ডাল, তেল, সবজীসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য উর্ধ্বমুখী। ক্ষমতায় আশার সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি ১০টাকা সেরে চাল কিংবা প্রতি ঘরে চাকুরি আজ ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় টিসিবিকে কার্যকর করা ও আর্মি রেটে রেশনিং চালু করা জরুরি। কর্মসংস্থানহীন ৮২ শতাংশ তরুন যুবকারা আজ হতাশাগ্রস্ত, এদেরকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে মাদক-জুয়া-আর অপসংস্কৃতির দিকে, অথচ শুধু শূন্যপদই খালি আছে ৩লক্ষ।
দলীয়করণ-সন্ত্রাস নূন্যতম আইনের শাসনকেও গলা টিপে ধরছে। সম্প্রতি প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ এর ৩২ ধারায় মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চূড়ান্তভাবে হরণ করছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারের একছত্র আধিপত্য। শিক্ষাঙ্গন গুলিতে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব-সন্ত্রাস অতিতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের হাতে। শিক্ষা বাণিজ্যের ফলাফলে প্রশ্ন ফাঁস আজ মহামারি রুপ নিয়েছে। অথচ সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার প্রত্যেকটিতেই প্রশ্নফাঁস হচ্ছে নিয়মিত। শ্রমিকের নূন্যতম মজুরি ১৬হাজার টাকা প্রদান তো দূরের কথা,কোন মতে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্যে কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত নেয় নি সরকার। আবার গ্রাম থেকে সব হারিয়ে নিঃস্ব এই কৃষি পরিবারের মানুষরা যখন শহরে এসে ফুটপাতে একটু ব্যবসা করছে, তখন শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধণের নামে বিকল্প কোন আয়োজন না করেই তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আর একেই সরকার উন্নয়নের গণতন্ত্র বলছে। এ উন্নয়ন মুষ্ঠিমেয় মানুষের, যার সাথে গরীব, কৃষক মেহনতি মানুষের কোণ যোগ নেই। দেশে ৯০ভাগ মানুষকে নিঃস্ব, রিক্ত করে দূর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে মুষ্ঠিমেয় একদল ধনিকগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে কোটিপতির সংখ্যায় প্রায় ৫০হাজার। এই কোটিপতিরাই গত ১০ বছরে বিদেশে পাচার করেছে ৬ লাখ কোটি টাকা। আর এই দুর্নীতি গ্রস্থ ধনিকদের স্বার্থ বহাল রাখতে আওয়ামী মহাজোট সরকার আবারো হাটছে ভোটার বিহীন নির্বাচনের পথে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে বাস্তবে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেওয়া হবে। যা জনগন কখনও মেনে নেবে না।
বক্তরা এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনে সামিল হয়ে মৌলক মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে বাধ্য করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।