Saturday, November 23, 2024
Homeফিচারঋণ নয়, বরাদ্দ বৃদ্ধি করে কৃষকদের অনুদান দাও

ঋণ নয়, বরাদ্দ বৃদ্ধি করে কৃষকদের অনুদান দাও

আজ ১২ এপ্রিল ২০২০ সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষিখাতে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এই প্যাকেজ নিয়ে এক বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এই প্রণোদনা প্যাকেজ অনুসারে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হার সুদে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীরা ঋণ নিতে পারবেন। এটা কৃষকদের প্রতি নির্মম উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্টস মালিকদের ৫০০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছেন ২ শতাংশ হারে, তাও ছয় মাসের পর থেকে এটা পরিশোধ করতে হবে। শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ৩০ হাজার কোটি ঋণ দিচ্ছেন ৪.৫ শতাংশ হারে (৯ শতাংশের ৪.৫ শতাংশ সরকার দেবে), ছোট ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছেন ৪ শতাংশ হারে (৯ শতাংশের ৫ শতাংশ সরকার দেবে), কাঁচামাল আমদানির সুবিধার জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের সুদের হার কমিয়ে করেছেন ২ শতাংশ-অথচ এদের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা, ফসল উৎপাদন ও বিক্রির অনিশ্চয়তার কারণে লোকসান ও ঋণে জর্জরিত থাকা কৃষকদের জন্য সুদের হার নির্ধারণ করেছেন শতকরা ৫ শতাংশ। এই মহামারী পরিস্থিতিতে আজ খাদ্য উৎপাদন একটা অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার। মহামারীর সাথে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হবে। তাই এ সময়ে রাষ্ট্র্রীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল কৃষি খাত ও কৃষকদের উপর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই কৃষি প্যাকেজে সেটার আভাস পর্যন্ত দেখা গেল না।

এই ঋণ কীভাবে বিতরণ করা হবে? সরকারের কাছে ছোট ও মাঝারি কৃষকদের কোনো তালিকা আছে কি? কৃষিঋণ বিতরণ ব্যবস্থা যে কত নাজুক তা আমরা সকলেই জানি। ২০১৭ সালের হিসাব বলছে, দেশের ২ কোটি ৬০ লাখ কৃষকদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাননি। আবার যে ২৫ শতাংশ ঋণ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ নিয়েছেন বিভিন্ন এনজিও থেকে। কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দেয়া তথ্যমতে, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে বিতরণ করা কৃষিঋণের ৬১ শতাংশ যায় বেসরকারি সংস্থা-এনজিও এবং ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। মাত্র ৩৯ শতাংশ ঋণ সরাসরি ব্যাংক বিতরণ করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে এনজিও এবং ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দেয়া ঋণের সুদহার ২৫ থেকে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। এই প্রণোদনার কৃষিঋণ নিয়েও আমরা সন্দিহান, সঠিক লোক সঠিক প্রক্রিয়ায় এই ঋণ পাবে না।

ফলে ঋণে সুদের হার এবং ঋণ বিতরণ দুই দিকেই কৃষকরা ঠকবে। পুঁজিপতিদের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার উন্মুক্ত করে দিয়ে, এরপর প্রবল সমালোচনার চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনার ঘোষণা দিলেন। এটা বাস্তবে ‘আমরা কৃষকদের পাশেও আছি’ দেখানো ছাড়া আর কোনো অর্থই বহন করে না।”

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী কৃষিখাতে প্রণোদনা প্যাকেজ আরও বৃদ্ধি করা এবং ঋণের পরিবর্তে অনুদান হিসাবে বিতরণের জন্যে জোর দাবি জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments