Sunday, December 22, 2024
Homeফিচারএকতরফা নির্বাচনের তামাশা স্থগিত করুন ঃ আন্দোলনের নামে হত্যা-খুন বন্ধ করুন

একতরফা নির্বাচনের তামাশা স্থগিত করুন ঃ আন্দোলনের নামে হত্যা-খুন বন্ধ করুন

১৪ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় তোপখানা রোডে কমরেড নির্মল সেন মিলানায়তনে আহুত সংবাদ সম্মেলনে বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে একতরফা পাতানো নির্বাচনের তফসিল ও নির্বাচনের সমস্ত আয়োজন স্থগিত করে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের নামে মানুষকে জিম্মী করে বিএনপি-জামায়াত জোটের হত্যা-খুনের সহিংস যাবতীয় অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করারও আহ্বান জানান। তারা সরকারকে দেশের জনগণের জানমালের হেফাজতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা বলেন, কোনো অজুহাতেই এই দায়িত্ব অবহেলার সুযোগ নেই। তারা অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, জোনায়েদ সাকি, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, শহিদুল ইসলাম সবুজ, হামিদুল হক, মহিনুদ্দিন চৌধুরী লিটন, এড. আব্দুস সালাম, বহ্নিশিখা জামালী, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, মোফাজ্জেল হোসেন মোস্তাক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন কেন্দ্রীক রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের এক ভয়ংকর খেলায় লিপ্ত রয়েছে। সরকারের এই সাজানো নীল নকশার নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষ হয়েছে এবং আজ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ চলছে। ইতিমধ্যে নজিরবিহীনভাবে প্রায় দেড়শত জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিতও হয়েছেন। সরকারী দল আওয়ামী লীগ নিজেদের জোট ও সরকারের মিত্রদের মধ্যে আসন ভাগাভাগিও চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। নির্বাচনের নামে নিজেদের মধ্যে সীট ভাগাভাগি করার এই ধরণের তামাশা ১৯৯৬ এর পর বাংলাদেশে আর দেখা যায়নি।
তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের এই খেলায় এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখতে সরকার তথা সরকারী দল যা করছে তা নিকৃষ্ট ধরণের রাজনৈতিক নোংরামি ছাড়া আর কিছু নয়। রাজনীতির নামে কেনাবেচা, উৎকোচ, প্রলোভন, চাপ, হুমকী প্রভৃতি এখানকার লুটেরা শাসকশ্রেণীর অধঃপতিত কুৎসিত রাজনীতিরই বহিপ্রকাশ। এরশাদ ও তার জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অশ্লীল টানাটানি রীতিমত জাতীয় লজ্জায় পরিণত হয়েছে। এসব অপতৎপরতা এখানকার শাসকশ্রেণী ও তাদের দলসমূহের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বকে কেবল বারবার সামনে নিয়ে আসছে। নেতৃবৃন্দ পরিস্কারভাবে বলেন যে, বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্বাচনের বাইরে রেখে রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে জোরজবরদস্তির মাধ্যমে নির্বাচনের পাঁয়তারা দেশকে নজিরবিহীন সংঘাত, সংঘর্ষ ও রক্তপাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ১৯৯৬ সালে জনগণ যেমন বিএনপির একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখান করেছিল তেমনি এবারও দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখান করবে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশব্যাপী পরিকল্পিত সহিংসতা, হত্যা, সন্ত্রাস, রেল, বাস, প্রাইভেট গাড়ী, সি এন জি, মটর সাইকেল, রিকশায় যখন তখন যথেচ্ছ অগ্নিসংযোগ, রেল লাইন উপড়ে ফেলা, বিদ্যুৎ অফিস, রেলস্টেশন, থানাসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় বেপরোয়া হামলা-আক্রমণ, ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধ্বংসাত্মকভাবে অবরোধ সৃষ্টিসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসী তৎপরতার মধ্য দিয়ে যে নৈরাজ্যিক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকা- ছাড়া আর কিছু নয়। এর সাথে প্রচলিত ধারার গণআন্দোলন-গণসংগ্রামের কোন সম্পর্ক নেই। দৃশ্যত এদের কথিত আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ আজ পেশাদার সন্ত্রাসী ও বোমাবাজদের হাতে। বিএনপির জামায়াত-শিবির নির্ভরতার কারণে সশস্ত্র সহিংস তৎপরতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, গণআন্দোলনের চাপে ৭১-এর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। দেশের মানুষ যখন প্রত্যাশা করছে সকল চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত বিচার হবে ও বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর হবে তখন যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ও তা কার্যকরি করাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী পুরোপুরি অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির পরিবর্তে বিএনপি-জামায়াত জোট আজ সরকারের সাথে পাল্টা শক্তি প্রদর্শনের সহিংস প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই অবস্থায় দেশের মানুষ আজ গত ৪২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে অসহায়, বিপন্ন ও নিরাপত্তাহীন। সরকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের শক্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় কোটি কোটি মানুষ জিম্মী। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ঢাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন। শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে; উৎপাদক কৃষক সমূহ লোকসানের মুখোমুখি; শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বেকার এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত; রপ্তানী বাণিজ্য গুরুতর হুমকির মুখে। এই অসহনীয় পরিস্থিতির দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতকে বহন করতে হবে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ এই অবস্থা আর কোনভাবেই চলতে দিতে পারেনা।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments