মা নিজে আইসিইউতে ভর্তি। ছেলে শ্বাস নিতে পারছে না। খবরটা কানে যেতেই মা চিকিৎসকদের ইশারা করেন তাকে ছেড়ে যেন ছেলেকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা শত চেষ্টা করেও মাকে বোঝাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মাকে ছেড়ে ছেলেকে আইসিইউ’র বেডে নেওয়া হয়। এক ঘণ্টার মধ্যেই মা মারা যান। এর ছয় ঘণ্টা পর ছেলে। সম্প্রতি এরকম হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ ছেলে তার বাবাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরছে ভর্তির জন্য। অনেককেই প্রচণ্ড অসুস্থতা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে থাকতে হচ্ছে। একজন অপেক্ষা করছে, অন্যজন মারা গেলেই আইসিইউ ফাঁকা হবে; তখন সে নিজে হয়ত চিকিৎসা পাবে, বেঁচে যাবে। এরকম যন্ত্রণাদায়ক বাস্তবতা আমাদেরকে প্রতিমুহূর্তে স্পর্শ করছে, আমাদের কাঁদাচ্ছে।
এই যখন অবস্থা, তখন প্রধানমন্ত্রী আর তার অনুগত প্রশাসন, এমপি—মন্ত্রীরা কাজ সারছেন নির্বিকার থেকে – গলাবাজি আর দায় অস্বীকার করে। তাই তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা মোকাবিলার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়’। সরকারের এ ধরনের ক্রিমিনালসুলভ অবহেলা ও দায় অস্বীকার ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
পরিস্থিতি বলছে, ছিল না পরিকল্পনা
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিধ্বস্ত গোটা দেশ। এই লেখা তৈরির সময় দেশে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এটা সরকারি হিসাব, বাস্তব সংখ্যা আরও বড়। সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ মুহূর্তে মৃত্যুর হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে অবস্থা আরও ভয়ানক আকার ধারণ করবে।
করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ে গত বছরের শুরুতে। মাঝখানে চলে গেছে প্রায় দেড় বছর। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এটা কি যথেষ্ট সময় নয়? তাহলে সরকার করল কী? এর উত্তরে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. লেনিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে এটা মোকাবিলার চেষ্টা করিনি। আমরা কোন পরিকল্পনা করিনি। এপিডেমিক প্রজেকশন করতে হয় তা আমরা করিনি।’
সরকারের পরিকল্পনাহীনতার দায় মানুষ শুধছে জীবন দিয়ে। চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব। রোগী বাড়ছে; কিন্তু হাসপাতালে বেডের অভাব। পর্যাপ্ত চিকিৎসক-টেকনিশিয়ানের অভাব। জীবনদায়ী ঔষধ-অক্সিজেন-ভেন্টিলেটরের অভাব। দরকার হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অক্সিজেনের; তার অভাব। বিদেশি গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে’র একটি রিপোর্টে প্রকাশ ‘দেশের শতকরা ৫২ শতাংশ কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ নেই।’ জেলা—উপজেলা স্তরের খুব কম হাসপাতালেই আইসিইউ রয়েছে। অক্সিজেনের সংকট মারাত্মক। প্রান্তিক অঞ্চলে কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভেতরে থাকা শহর ও গ্রামের বৈষম্য।
স্বাস্থ্যব্যবসা বিপদ বাড়িয়েছে
মহামারি পরিস্থিতিকে রোখা যেত, যদি জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঠিক ঠিক গড়ে তোলা হতো। তা না করে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বাজার অর্থনীতির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ চিকিৎসা পাবার যোগ্যতা টাকা ঢালতে পারার সামর্থে্যর ওপর দাঁড় করানো হয়েছে। যাদের সেই সামর্থ্য নেই, ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুই যেন তাদের জীবনের গন্তব্য। মানুষ মরছে অক্সিজেনের অভাবে, বিনা চিকিৎসায়। এই যখন অবস্থা, তখন কর্পোরেট হাসপাতালগুলোর ভূমিকা কী? হয় পুরোপুরি হাত গুটিয়ে নিয়েছে নয় বিশাল অংকের খরচ ধার্য করেছে। মানুষের মৃত্যু-বিপন্নতাকে এরা মুনাফার হাতিয়ার করেছে।
কর্পোরেট ফার্মা কোম্পানিগুলোর লোক ঠকানো থেমে নেই। মানুষের আয় কমেছে, ঔষধ কিনবে কী করে? দরকার ছিল ঔষধের দাম কমানো। উল্টো প্যারাসিটামলের মতো আরও কিছু জীবনদায়ী ঔষধ নিয়ে কালোবাজারি হচ্ছে। দোকানদাররা দুষছে কোম্পানিকে কিন্তু নিজেরা দাম ঠিকই বাড়িয়ে নিচ্ছে। ক্ষতি শুধু ‘পাবলিক’—এর। এত সংকটেও ঔষধের ব্যবসা কমেনি বরং বেড়েছে। অর্থাৎ মানুষ তার হাহাকার—মৃত্যুর মধ্য দিয়েও এই কোম্পানিগুলোর মুনাফা জুগিয়ে যাচ্ছে। এরই নাম পুঁজিবাদ, যা শুধুই পুঁজির জয়গানে ব্যস্ত। একে চিনতে যেন আমাদের ভুল না হয়।
চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুর্নীতির ভাইরাস
শুধু সাধারণ নয়, কোভিড হাসপাতালগুলোর দুর্নীতিও মহামারি আকার ধারণ করেছে। পুরো সময়জুড়ে অসংখ্য দুর্নীতির চিত্র সামনে এসেছে। আড়ালে আছে যে আরও কত, তার ইয়ত্তা নেই। সম্প্রতি মহাহিসাবনিরীক্ষণ নিয়ন্ত্রক (সিএজি) ঢাকার ১৫টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সার্বিক মানের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, চিকিৎসক-নার্সদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য যে দামে হোটেলগুলোর সাথে চুক্তি হয় তার ৩ গুণ বেশি বিল দেখানো হয়েছে। সরকারি ক্রয় বিধিতে (পিপিআর) বলা আছে, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের (এমআরপি) চেয়ে বেশি দামে পণ্য কেনা যাবে না। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, ৮টি হাসপাতাল তা লঙ্ঘন করেছে। এতে দুর্নীতি হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে যে পরিমাণ এক্স-রে ফিল্ম ও ইনজেকশন থাকার কথা, নিরীক্ষা দল যাচাই করে দেখেছে তা থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার পণ্য নেই। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ডিভাইস, ট্যাবলেট ও ইনজেকশন সরবরাহ না পেয়েও বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার। প্রতি জোড়া হ্যান্ড গ্ল্যাভস্ কেনার কথা ছিল ৫ টাকা ১৯ পয়সা দরে। অথচ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তা কিনেছে ১৮ টাকা দরে।
এ তো গেল অবস্থিত হাসপাতালগুলোর চিত্র। প্রতিষ্ঠিতব্য একটি হাসপাতালের কথা বলছি। গোপালগঞ্জে অবস্থিত হাসপাতালটি শেখ মুজিবের মা সায়েরা খাতুনের নামে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নে রায়ান হামিদের প্রতিষ্ঠান ‘বিডি থাই কসমো’ এতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্ব পায়। এতে ১৫ ওয়াটের বাথরুম লাইটের দাম ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৪৩ টাকা। যার বাজার মূল্য ২৫০—৫৫০ টাকার মধ্যে। এমন ২৪ ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম অস্বাভাবিক দামে সরবরাহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ যে, এ চিত্র যেন দুর্নীতির বিশাল সমুদ্র থেকে এক বালতি পানি তুলে আনার মতো।
‘সচল লকডাউনে’অচল জীবন
সরকার বলছে ‘কঠোর লকডাউন’ চলছে। কিন্তু কঠোর লকডাউন আর পুলিশের হুমকি-ধামকিতে তো জিনিসের দামও কমছে না, মানুষের পেটও ভরছে না। শ্রমিকদের খাদ্য নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত না করে হঠাৎ করেই সরকার গার্মেন্টসগুলো বন্ধ ঘোষণা করল। আবার মালিকদের চাপে রাতারাতি খোলার ঘোষণা দেয়। মানুষ দেখল, এই শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে, ট্রাকে গাদাগাদি করে কর্মস্থলে ফিরেছে। মালিক-সরকার কোনো দায়ই অনুভব করল না। এদের চোখে এই শ্রমিকরা মানুষ নয়, ‘শ্রমদাস’। এই ব্যবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ‘শ্রমিকের দাম ততক্ষণ, যতক্ষণ সে মুনাফা যোগায়।’
কী দুঃসহ জীবন মানুষ পার করছে, সে খবর কি রাখছে সরকার? কোনো কাজ নেই। দিনমজুর রাজমিস্ত্রী, অটোচালক, ফেরিওয়ালা, দর্জি, ছোট দোকানদার যাদের দুটো টাকা সঞ্চয় নেই – এরা বেঁচে আছে কেমন করে! নিম্নমধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও আজ প্রায় পথে বসেছে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, ‘প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে।’ গরিব আরও গরিব হয়েছে, মধ্যবিত্ত গরিবের খাতায় নাম লিখিয়েছে। বেকারত্ব বেড়েছে। চারিদিকে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার! জীবন যন্ত্রণা সইতে না পেরে মা নিজের সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; হাজারও ঘটনার একটা উদাহরণ মাত্র। চাকুরীজীবী বাবা কাজ হারিয়ে দু’মুঠো খাবার সন্তানদের মুখে তুলে দেওয়ার জন্য মানুষের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে। মানুষের এত সংকট আর বিপন্নতা কিন্তু সরকারের ‘উন্নয়ন’ থামাতে পারছে না। – এ উন্নয়নের ফলভোগী কারা?
মহামারিতে বেড়েছে লুটপাট
মানুষের ক্ষুধা আর মৃত্যুর বিপরীতে আরেকটা দুনিয়া আছে যেখানে কমছে না প্রাচুর্যের রোশনাই। এ বছরের জানুয়ারি মাসে অক্সফাম ‘বৈষম্যের ভাইরাস’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সীমাহীন দারিদ্র্য, অনাহার, অপুষ্টি আর বেকারত্ব সত্ত্বেও শীর্ষ ১০ ধনীর সম্পদের পরিমাণই বেড়েছে ১ লাখ কোটি ডলার। এই অর্থে বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া সম্ভব। পাশাপাশি এই মহামারিতে কেউ দরিদ্র হবে না – তা নিশ্চিত করা সম্ভব। ঐতিহাসিক দুর্যোগের মধ্যেও শুধু জেফ বেজোসের একার সম্পদ বেড়েছে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি। অতিধনী ২,৭৫৫ জনের সম্পদ বেড়েছে ৮ লাখ কোটি ডলার, যা গত ২০১৯ সালের তুলনায় ৮ শতাংশের বেশি। অথচ একই সময়ে বিশ্বে গত ৯০ বছরের মধ্যে বেকারত্ব সবচেয়ে তীব্র হয়েছে। এবার দেশের দিকে ফেরা যাক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, ‘গত একবছরে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১১ হাজারেরও অধিক। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি। এভাবেই চাতুর্য আর লুটের অর্থনীতিতে গরিবদের সম্পদ ধনীদের হাতে চলে যাচ্ছে।
কোনটা আগে – ব্যবসা নাকি মানুষের জীবন?
টিকা সংকট তুঙ্গে। এদেশে এবং তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলোতে। কিন্তু থেমে নেই টিকা নিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ, বৈষম্য আর রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ। একটি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে বাস করেন বিশ্বের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ। অথচ উৎপাদিত প্রতিষেধকের ৬০ শতাংশই তাদের দখলে। অপরদিকে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ বাস করেন নিম্নআয়ের দেশে। তাদের হাতে আছে মাত্র ১৭ শতাংশ টিকা। এই যে বৈষম্য; এর পেছনের কথা কী? তা হলো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর এর পেটেন্ট বা উৎপাদনস্বত্ব কিনে নিয়েছে মুষ্টিমেয় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো। তারা তাদের লাভের উদ্দেশ্যেই এর উৎপাদন এবং বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে আফ্রিকা থেকে শুরু করে ভারত, বাংলাদেশ, ব্রাজিলসহ অধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশগুলোতে ৯০ শতাংশ মানুষই টিকা পায়নি। বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছে ১ম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের মাত্র ৪৩ শতাংশ। যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.৫০ শতাংশ।
এ পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো? আমরা দেখেছি, শুরুতে সরকার নিজস্ব উদ্যোগকে বাদ দিয়ে একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্মিকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে টিকা আমদানির চেষ্টা করে। এ ধরনের কাজ করা হয়েছে এই কোম্পানিকে বিপুল মুনাফা করিয়ে দেওয়ার স্বার্থে। উল্লেখ্য যে, বেঙ্মিকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগের সাংসদ এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক। জনগণের স্বাস্থ্য সংকটকে উপেক্ষা করে, রাষ্ট্রীয় আয়োজনে এরকম অনৈতিক সুবিধা প্রদান ইতিহাসে কর্পোরেট পুঁজির নির্লজ্জ পদসেবার দলিল হিসেবে উল্লেখ থাকবে।
সংক্রামক ব্যাধিকে রুখেছিল সোভিয়েত
গোটা বিশ্বে কোভিডে মারা গেছে ৫০ লাখের অধিক মানুষ। বড় অর্থনীতির দেশগুলোও এ মৃত্যু রোধ করতে পারছে না। অথচ আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে আছে কিউবা, ভিয়েতনামসহ আরও কিছু দেশ। যাদের অর্থনীতি বড় না হলেও তারা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ‘কেনা-বেচার বস্তু’-তে পরিণত করেনি। তাই সেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার অনেক কম।
এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো রুখে দিয়েছিল সংক্রামক রোগ-ব্যাধিকে। সুদৃঢ় করতে পেরেছিল রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে। কমিউনিটি মেডিসিন, জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং এপিডোমোলজি অর্থাৎ মহামারি নিয়ন্ত্রণের বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগের সাথে দুনিয়াকে প্রথম পরিচয় করে দিয়েছিল। সোভিয়েত সংবিধানের ৪২নং ধারা প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করেছিল। কারণ সমাজতন্ত্রে মানুষকে মুনাফা তৈরির বস্তু নয়, অপার সম্ভাবনার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েই সমাধান
বিশ্বব্যাপী কোভিডের প্রকোপে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অসারতা-নিষ্ঠুরতা দগদগে ঘায়ের মতো ফুটে উঠেছে। মানুষ অসহায়, ক্ষুধার্ত, কর্মহীন। কলম্বিয়া, পেরু, গুয়েতেমালা, হাইতি, ব্রাজিলসহ দেশে-দেশে বিক্ষুদ্ধ মানুষ পথে নামছে, আন্দোলন সংগঠিত করছে। ন্যায্য আন্দোলনগুলোকে দমাতে সরকার নিপীড়নের পথ বেছে নিচ্ছে। আমাদের দেশেও আওয়ামী সরকার মহামারি পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের উপর অধিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। এটা করছে মানুষকে দাবিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু বলছে জনগণের স্বার্থে, কখনও করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য। কথায় বলে, ‘দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না।’ সরকারের এই ছল মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে। তাই মানুষও পথে নামছে, প্রতিবাদ করছে। এই প্রতিবাদকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদের পথে পরিচালিত করতে হবে; আর এই পথেই মানুষের মুক্তি।