Wednesday, November 20, 2024
Homeবিশেষ নিবন্ধকোন পথে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা?

কোন পথে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা?

cover onnushilon copyসম্প্রতি মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রকাশিত এক রিপোর্ট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় উঠেছে। ভিডিও-তে দেখা গেছে, এসএসসি-তে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। এসএসসি-র পূর্ণাঙ্গ রূপ কী, নেপালের রাজধানীর নাম কী, পিথাগোরাস কে ছিলেন, স্বাধীনতা দিবস কবে, শহীদ মিনার কোথায়- এরকম সহজ প্রশ্নের উত্তরও তাদের জানা নেই।

‘যদি প্রায় সব লোহার পেরেকে একই রকম খুঁত থাকে, তাহলে পেরেকের দিকে নয় পেরেক বানানোর কলটির দিকে তাকাও’- টেলিভিশনের রিপোর্টটি দেখলে এই কথাটি মনে পড়ে যায়। আমাদের সংগঠন বহু আগে থেকেই শিক্ষাব্যবস্থার এমন অন্তঃসারশুণ্যতার কথা বলে এসেছে। এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থী নয়, পরীক্ষার্থী তৈরি করছে। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমাদের দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা শাসকেরা। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি-তে পাশের সংখ্যা ও জিপিএ ৫-এর সংখ্যা বৃদ্ধি এখন একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপার। বেশি বেশি পাশ মানে সরকারের বেশি সাফল্য আর পাশের সংখ্যা কম মানে বিরোধী দলগুলোর ষড়যন্ত্র- বুর্জোয়া রাজনীতির এমন নোংরা সমীকরণের শিকার আমাদের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষার মান নয়, বেশি পাশ দেখানোই এখন সরকারের প্রধান গুরুত্বের ব্যাপার। শিক্ষক-ক্লাসরুম সংকট, সৃজনশীলতার নামে গাইডবই মুখস্ত করা, প্রশ্নফাঁস- আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতস্বরূপ। এই সমস্যাগুলোর উপর কোনোরকম আলোকপাত না করে শুধু ‘ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা’ জপতে জপতে এরা আমাদের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের যে কী দুগর্তিতে ফেলেছে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

এইসব কোমলমতি শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা ও মূল্যবোধ রক্ষার দায়িত্ব কার? Man making, Character building- এর শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হবে কিভাবে- এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন আজকে আমরা সবাই। আমরা অভিভাবকদের বলতে চাই, নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এখনই সচেতন হোন। যেকোনোভাবে ভালো ফলাফলের নোংরা প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসুন। মুখস্ত করে, গাইড বই পড়ে, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে জিপিএ ৫ পাওয়া গেলেও আপনার সন্তান মানসম্মত শিক্ষা পাবে না। সরকারও তাই চায়। ‘ভালো ফলাফলের’ মোহজালে শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্যতাকে ঢেকে রাখতে চায়। ফলে সতর্ক হোন। আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্যই এই শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।

শিক্ষা আইন ২০১৬ বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ ও বহুধারার শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈধতা দেবে

শিক্ষা আইন

‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ কে ভিত্তি করে সরকার ‘শিক্ষা আইন’ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই আইনে শিক্ষার বিদ্যমান সংকট দূরীকরণে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনায় সরকারের করণীয় কী সে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। নোট বা গাইড বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও লঘু দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এমন একটি অগণতান্ত্রিক শিক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে গত ৯ মে ’১৬ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

একই দাবিতে কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে গত ২১ মে বিকাল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে “প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬: বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ ও বহুধারার শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈধতার আইন” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, শিক্ষাবার্তার সম্পাদক এ.এন রাশেদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মামুন আল রশীদ, ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মযহারুল ইসলাম বাবলা, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক সাহিত্যিক রাখাল রাহা, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা প্রমুখ।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘এ শিক্ষা আইন শাসকদলের স্বার্থে ও প্রয়োজনে প্রণীত হয়েছে। অগণতান্ত্রিক সরকার অগণতান্ত্রিকভাবেই এ আইন প্রণয়ন করছে।’

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষা আইনে একদিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে ‘আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক’ শিক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে অন্যদিকে আবার ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়ার বিধানও রেখেছে। যা সংবিধান প্রতিশ্রুত শিক্ষার সর্বজনীন অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানে একই পদ্ধতির শিক্ষার কথা বলা হলেও বিগত শিক্ষানীতির মতই বর্তমান শিক্ষা আইনেও তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তিনধারায় বিভক্ত এ শিক্ষাব্যবস্থা যেমন বৈষম্য তৈরি করছে তেমনি দেশে ক্রমবর্ধমান মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাকেই পরিপুষ্ট করছে। আজকে মৌলবাদীরাও হিন্দুত্ববাদের ধুয়া তুলে এই শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি করছে। তাদের দাবি মানলে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখ মহান সাহিত্যিকের রচনা পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হবে।’

বক্তরা শিক্ষা আইন বাতিলের জোর দাবি জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments