দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান
৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর ভোটারবিহীন নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি এবং সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার বক্তব্য তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলন ৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় ২৩/২ তোপখানা রোডস্থ কমরেড নির্মল সেন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী অধ্যাপক আবদুস সাত্তার। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য সাইফুল হক, আবদুস সালাম, মোশরেফা মিশু, হামিদুল হক, ফখ্রুদ্দিন কবির আতিক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত মহাজোট সরকারের দুই বছরে গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্রমাগত সংকুচিত করে দেশে এক স্বৈরতান্ত্রিক নিপীড়নমূলক শাসন কায়েম করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং গতবছর ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে প্রশাসনিক কারসাজি, বলপ্রয়োগ ও জালিয়াতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকারকে আরেকবার পদদলিত করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে দীর্ঘস্থায়ী ফ্যাসিবাদী শাসনের বিপদ ক্রমে প্রবল হয়ে উঠছে। মহাজোট সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকারকেও নানাভাবে হরণ করে চলেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যকান্ড-গুম-নির্যাতন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়াকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
তারা বলেন, মহাজোট সরকার উন্নয়নের কথা বলে গণতন্ত্রকে বনবাসে পাঠিয়েছে। অথচ সীমাহীন দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, দলীয়করণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি অতীতের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মত বর্তমান সরকারেরও বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের নামে মহাজোট সরকার বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মত পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারতের সাথে যৌথভাবে। রাশিয়ার ঋণ ও প্রযুক্তিতে বিপুল ব্যয়ে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে যা ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপন করতে হবিগঞ্জে চা-বাগানে বংশপরম্পরায় বসবাসরত হতদরিদ্র চা-শ্রমিকদের তাদের কৃষিজমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এই অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শাসনের সুযোগে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী তৎপরতার জমিন বিস্তৃত হচ্ছে। অতীতের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মত বর্তমান মহাজোট সরকারের কাছেও দেশ-জনগণের গণতান্ত্রিক কোন ভবিষ্যত নেই। এই অবস্থায় ভোটাধিকারসহ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা, জাতীয় সম্পদ রক্ষাসহ জনজীবনের সংকট নিরসনের দাবিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণসংগ্রামে সংগঠিত হতে গণতন্ত্রমনা জনসাধারণের প্রতি নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় – ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনের দুই বছর পূর্তিতে জনগণের ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে আগামী ৬ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ এবং সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশ ছাড়পত্র বাতিলের দাবিতে ১৩ জানুয়ারি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে।