২৮ এপ্রিল ২০১৫ এর ৩ সিটি কর্পোরেশনে প্রহসনের নির্বাচনসহ ৫ জানুয়ারী ২০১৪, ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে তারা জনগনের অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনী ব্যাবস্থা আর চাচ্ছে না। তারা অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে নির্বাচনের নামে প্রহসন করবে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা তাই এই অবৈধ সংসদ ও তাদের অধীনে সকল অবৈধ ভোটারবিহীন নির্বাচন বাতিলের দাবি তুলেছে ১১ মে ২০১৫ আহুত এক সংবাদ সম্মেলনে।
কমরেড নির্মল সেন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ঢাকা উত্তর দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও সন্ত্রাসী দলীয় ক্যাডারদের সহায়তায় সরকার আবারো নির্বাচন নামক এক প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। সরকার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা ভোট শুরুর পূর্বেই অনেক কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, সরকার সমর্থিত প্রার্থী ব্যাতিত অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া, প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এবং সরকার দলীয় ক্যাডার কর্তৃক ইচ্ছামত সীল মেরে ব্যালট পেপার বাক্সে ভরানো, সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রের চারশত গজের মধ্যে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে না দেওয়াসহ ভোট জালিয়াতির সকল পন্থাই অবলম্বন করা হয়। আনসারের পোশাক পরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ যাতায়াত করতে দেখা যায়। নির্বাচনের আগের রাতে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের বাসায় বাসায় গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সরকার দলীয় মাস্তানরা হুমকি প্রদান এবং গ্রেফতারের ভয় দেখান। এমনকি নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বিরোধী প্রার্থীর অনেক এজেন্টকে গ্রেফতার করা হয়। প্রার্থীরা ভোট চলাকালীন সময়ে ভোট ডাকাতি ও প্রহসনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। অথচ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নির্লজ্জভাবে দাবি করছেন সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
সিটি নির্বাচন ঘোষণার পর গত ৪ এপ্রিল ২০১৫ গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিল, বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিদ্যমান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী কাঠামোর অধীনে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সম্মতি ও ভোট ছাড়াই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মহাজোট সরকার দেশ চালাচ্ছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দ্রুত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে গায়ের জোরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায় আর তা করতে গিয়ে দেশে নিপীড়নমূলক, স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসন চালাচ্ছে মহাজোট সরকার। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নেই। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা, গুম করার লাইসেন্স তুলে দেয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। মত প্রকাশ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অধিকার এবং সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা হুমকির মুখে। এই অগণতান্ত্রিক শাসনকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার লক্ষ্যে এবং বিরোধীদের কোনঠাসা করে নিজেদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার উদ্দেশ্যে মহাজোট সরকার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে তড়িঘড়ি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ঘোষণা দেয়। দেশে বিরাজমান সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখে যেভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য যে সরকার দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে আনা তা স্পষ্ট। সংবাদ সম্মেলনে আমরা আরো বলেছিলাম সরকারের আজ্ঞাবহ বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবং বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় জাতীয় নির্বাচন দূরে থাক, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও আপাত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কার্যত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঘটেছেও তাই। সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে শেখ হাসিনার বিগত শাসনামলের সরকার ৫ জানুয়ারি ‘১৪ ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে তার সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে এবং ক্ষমতায় টিকে আছে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচন এই অবৈধ ক্ষমতাকে সংহত করণের প্রক্রিয়ারই অংশ এবং ২৮ এপ্রিল ‘১৫ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার শর্ত হচ্ছে এখানকার লুণ্ঠনমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা। আর নির্বাচন কেন্দ্রীক সংকট বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক কাঠামো এবং প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিকভাবে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যেই নিহিত। তাই প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা কাঠামো ও বিদ্যমান আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই সংকটের কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। এরূপ একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল সম্ভব সন্ত্রাস, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজন করা। বাংলাদেশ আজকে যে অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়েছে এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য একটি স্থিতিশীল ও জনগণের স্বার্থ রক্ষাকারী সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করার মধ্য দিয়ে জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সংবাদ সম্মেলন থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করর্পোরেশনে ভোট ডাকাতি ও প্রহসনের নির্বাচন বাতিল এবং জনপ্রতিনিধিত্বহীন বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।