Tuesday, December 24, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদগনতান্ত্রিক বাম মোর্চা ৮ জানুয়ারী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী দিয়েছে

গনতান্ত্রিক বাম মোর্চা ৮ জানুয়ারী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী দিয়েছে

14295_741909395916116_5562543563874544496_n

গনতান্ত্রিক বাম মোর্চা সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দমন পীড়ন বন্ধের দাবী জানিয়েছে। সোমবার ৫ জানুয়ারি ২০১৫ বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দমন পীড়নের প্রতিবাদে আগামী ৮ জানুয়ারী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বিকেল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জোটের কেন্দ্রীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সংবিধানের নিয়ম রক্ষার নামে ৫ জানুয়ারী এক তরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে এই সরকার ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার বৈধতা খুঁজছে। গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক কবর রচনা করাকেই তারা ‘গণতন্ত্রের রক্ষা’ দিবস হিসেবে পালনে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে।

সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারের চরম ফ্যাসিস্ট শাসনের বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও সহিংসতার পথেই পা বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে হরতালে সহিংসতার ভেতরে পড়ে নোয়াখালিতে এক স্কুল শিক্ষিকা প্রাণ হারিয়েছেন। ভুগছেন গাজিপুরের অগ্নিদগদ্ধ আহতরা।

সম্মেলনে জানানো হয়, সরকার সমাবেশের মতো নিরীহ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকেও অসম্ভব করে তুলেছে। রাজনীতিকে তারা এক আদিম পেশিশক্তির খেলায় পরিণত করেছে।

রাজধানীর তোপখানা রোডের কমরেড নির্মল সেন মিলনায়তনের এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, মোর্চার সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। এসময় অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শ্রমিক কৃষকসমাজবাদী দলের আহবায়ক সিদ্দিকুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল  ( মার্কসবাদী ) ‘র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ও জহিরুল ইসলাম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক, মোর্চান নেতা আবদুস সাত্তার, আবদুস সালাম, বহ্নি শিখা জামালি প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের পুরো বক্তব্য

সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দমন পীড়ন বন্ধ করুন

বন্ধুগণ,

আপনারা জানেন বিগত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এক ভোটারবিহীন এক তরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় একে নিয়মরক্ষার নির্বাচন বললেও এখন তারা এর ভেতরেই ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার বৈধতা খুঁজছে। আর ইতিমধ্যেই সরকার তার শাসনের ১ বছরে লুণ্ঠন-পাচার, গুম-খুন-নির্যাতন, দুর্নীতি, বিরোধী মতের কর্মকাণ্ড দমন, বিদেশি শক্তির কাছে দেশের সম্পদ তুলে দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে একদলীয় ক্ষমতার নখ-দাঁত প্রকাশ করে দিয়েছে। এখন এই ধরনের ক্ষমতাকেই স্থায়ী করার স্বপ্নে বিভোর তারা। সেই লক্ষ্যে গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক কবর রচনা করাকেই তারা ‘গণতন্ত্র রক্ষা’ দিবস হিসাবে পালনে মরিয়া।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নামক তামাশাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদের সেই অবস্থানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবেই সরকারের ক্ষমতার ১ বছর পূরণের দিনে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সারাদেশে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে জনজীবনের চলাচলে এক মহা দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে। অথচ সরকারি দল নিজেরা বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার নিয়ে সমবেত হচ্ছে, উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে, লাঠিসোটা নিয়ে বিরোধীদের ওপর চড়াও হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সংঘর্ষে পুলিশের সাথে সহযোগী হিসাবে ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রযন্ত্র জনগণের সভা-সমাবেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করে একটা স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ক্ষমতার অধীনে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে তার নিপীড়ক চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে। কোনো বিরোধী পক্ষকে কোথাও নামতেই দেয়া হচ্ছে না।

আপনারা জানেন, গত ৩ জানুয়ারি আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বক্তব্য ও দাবি তুলে ধরেছি এবং আজ ৫ জানুয়ারি ২০১৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আমাদের সমাবেশের অনুমতির আবেদন পত্রই গ্রহণ করেনি। সরকার পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চলাচলের ওপর ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। সরকারি দল ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হামলায় বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের নিহত আহত হবার খবর আসছে। আর সরকারের এই চরম ফ্যাসিস্ট শাসনের বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও সহিংসতার পথেই পা বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে হরতালে সহিংসতার ভেতর পড়ে নোয়াখালিতে এক স্কুল শিক্ষিকা প্রাণ হারিয়েছেন, ভুগছেন গাজীপুরের অগ্নিদগ্ধ আহতরা।

সরকার তার কর্মকাণ্ডের বৈধতা পাওয়ার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গীবাদ দমনের দোহাই দিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও উন্নয়নের বিপরীত হিসাবে দাঁড় করিয়ে দীর্ঘমেয়াদী একদলীয় শাসনের মতাদর্শিক বৈধতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অথচ এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষিত হলেও একদিকে রায় বাস্তবায়ন ও জামাত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখছে, অন্যদিকে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদের সমস্ত পথ বন্ধ করে, সহিংসতা উস্কে দিয়ে কার্যত এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে যাতে জঙ্গীবাদ উত্থানেরই নতুন করে পথ তৈরি হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসাবে এমন এক সংঘাতপূর্ণ, অনিশ্চিত পথের দিকে ধাবিত হচ্ছে সেখান থেকে বের হবার পথ এই শাসকদের হাতে নাই। বর্তমান মহাজোট সরকারের বাংলাদেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেবার কোন তাগিদ বা সামর্থ নাই। এরা একটা স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার অধীনে একটা লুন্ঠনমূলক আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু রেখেছে এবং তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ক্রমাগত ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই একচেটিয়া ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে রাজনৈতিক বৈরিতাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে তারা এখন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন দূরে থাক, সমাবেশের মত নিরীহ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকেও অসম্ভব করে তুলেছে। রাজনীতিকে তারা এক আদিম পেশিশক্তির খেলায় পরিণত করেছে আর তাতে সরকারি দলকে অন্যায্য সুবিধা দিতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিপূর্ণভাবে দলীয় প্রয়োজনে ব্যবহার করছে।

বন্ধুগণ,
বিগত দিনগুলোতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের এই দলীয় ফ্যাসিস্ট চেহারা বদলে, এর গণতান্ত্রিকীকরণে শাসকদের বিরোধী পক্ষ বিএনপি জোটও শুধু অনুৎসাহীই কেবল নয়, সমর্থও নয়। বরং যে কোন মূল্যে রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে তাকে একই ধরনের ক্ষমতার হাতিয়ার বানাতেই তারা আগ্রহী। তাদের অতীত কর্মকাণ্ড এবং বর্তমানেও তাদের কর্মসূচির ভেতরে তা স্পষ্ট। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতার সামগ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো বদলের কোনো কর্মসূচি তাদের নাই। লুণ্ঠনের আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থা বদলের কোনো তাগিদও তাদের নাই। সাংবিধানিক স্বৈরতান্ত্রিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যবস্থা যে এমনকি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকেও দলীয়করণ করে এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈরিতার প্রেক্ষিতে তাদের ভেতরে সমঝোতাকে অসম্ভব করে তুলে সামরিক বাহিনীর ওপরই তার নির্ভরশীলতা তৈরি করে তাও আমরা নিকট অতীতেই দেখেছি। আর এর বিকল্প হিসাবে বিদ্যমান দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের হালও আমরা দেখেছি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

এ পরিপ্রেক্ষিতেই গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা নির্বাচনের আগে থেকেই বলে আসছিল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার শর্ত হচ্ছে এখানকার লুণ্ঠনমূলক আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার বদল। প্রধানমন্ত্রীর হাতে সাংবিধানিকভাবে কেন্দ্রীভূত স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকে জবাবদিহিতার ভেতরে নিয়ে আসা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীন বিকাশ। আর নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট সমাধান করতে হলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন নির্বাচনী ব্যবস্থা। যে নির্বাচনী ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে সাংবিধানিক কমিশন দ্বারা। এই নির্বাচন কমিশন হবে ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন এবং নির্বাচনকালে নির্বাচনী কাজে প্রভাব ফেলতে পারে এমন সমস্ত কিছুর ব্যাপারে তাদের নির্দেশই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এই নির্বাচন কমিশন সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত একটা নির্বাচনের আয়োজন করবে। আমরা মনে করি কেবল এই পথেই বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার অবসান হয়ে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হতে পারে। বাংলাদেশ আজ যে অবস্থায় নিপতিত হয়েছে তাতে একটি স্থিতিশীল ও জনগণের স্বার্থ রক্ষাকারী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করার জন্য এক জনজাগরণ ও জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা জনগণের কাছে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আবারো উদাত্ত আহ্বান জানাই।

বন্ধুগণ,
আমরা অবিলম্বে সরকারের কাছে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধের এই স্বৈরতান্ত্রিক তৎপরতা এবং দমন পীড়ন বন্ধের দাবি জানাই। না হলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই জনগণ তার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করবে। একইসাথে আমরা সরকারকে হুশিয়ার করতে চাই, দমন পীড়ন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যাবে না। অবিলম্বে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন এবং জনগনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরির পথ প্রশস্ত করুন। অন্যথায় দেশে এক নৈরাজ্যিক পরিস্থিতির দায় পুরোপরি সরকারকেই বহন করতে হবে।

কর্মসূচি: সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দমন পীড়নের প্রতিবাদে আগামী ৮ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে বাম মোর্চা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments