একের পর এক হত্যাকান্ড, ধারাবাহিক গুপ্তহত্যা বন্ধ ও জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখা ২৪ জুন ২০১৬ বিকালে নগরীতে মিছিল ও পুরাতন রেল ষ্ট্রেশন চত্বরে সমাবেশ করেছে। বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব অপু দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে এবং রফিকুল হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সদস্য শফিউদ্দিন কবির আবিদ, জান্নাতুল ফেরদাউস পপি, আসমা আক্তার প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘প্রতিদিনই লোমহর্ষক হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে হত্যাসহ গত দুই বছর ধরে ধারাবাহিক এধরনের হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হচ্ছে। সরকার ঠেকাতে পারছে না। অথচ মহাজোট সরকার দাবি করছে মানুষ শান্তিতে ঘুমাচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে জঙ্গী হামলার ঘটনাকে এতদিন লঘু করে দেখানো হয়েছে, সরকারের মনোযোগ নিবদ্ধ ছিল বিরোধী দমনে। উপরন্তু ব্লগারদের লেখালেখি সংযত করার কথা বলে ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঘাতকরা আজ শক্তিশালী ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে, এই পরিস্থিতি সৃষ্টির দায়-দায়িত্ব সরকার এড়াতে পারে না। এখনো সরকার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত না করে দলীয় স্বার্থে ব্লেইম গেইমের আশ্রয় নিচ্ছে। প্রতিটি ঘটনার পর দোষারোপ করে সরকারের মন্ত্রীসহ নেতারা যতটা সরব হয়ে ওঠেন, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের বিষয়ে ততটাই নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ক্রসফায়ারের নামে পুলিশী হত্যা। ফলে নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের উদ্যোগে জনগণ আশ্বস্ত না হয়ে বরং আরো আশংকার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির চূড়ান্ত দমন-পীড়নের ফ্যাসীবাদী শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের মধ্যেই শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদেই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিস্তার ঘটেছে। এধরনের হত্যাকান্ডের ফলে জনগণের মধ্যে বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ লেখক-প্রকাশক-ব্লগার শিল্পী-মুক্তচিন্তার মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকার ফ্যাসিবাদী শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক নীতি আদর্শ, মূল্যবোধ-সংস্কৃতিসহ ন্যূূনতম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত। আর এ ধরণের অগণতান্ত্রিক পরিবেশ কার্যতঃ গুম, খুন, গুপ্তহত্যার উর্বর জমিন তৈরী করে দিচ্ছে। একই রাজনৈতিক স্বার্থে জঙ্গীবাদী মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বুলিসর্বস্ব বিরোধিতা আর ক্ষমতার স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতার নির্লজ্জ প্রশ্রয়দান চলছে। ফলে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ও সাম্প্রদায়িকতার উচ্ছেদ ঘটাতে প্রতিরোধ আন্দোলন একই সাথে গড়ে তুলতে হবে।’
নেতৃবৃন্দ একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার, বিচার এবং জঙ্গী দমনের নামে গ্রেফতারকৃতদের ক্রসফায়ারের সমালোচনা করেন এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরার জোর দাবি জানান।