বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আজ এক বিবৃতিতে ঢাকার গুলশানে একটি রেস্তোঁরায় জঙ্গীবাদী হামলা, বিদেশি নাগরিকসহ বিশজনের নৃশংস হত্যাকান্ডে তীব্র নিন্দা ও শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি একইসাথে খুনীচক্র এবং মদতদাতাদের পরিচয় উদঘাটন করে তাদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “গুলশানে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী ২০ জন নিরপরাধ মানুষকে যেভাবে পৈশাচিক কায়দায় গলা কেটে হত্যা করেছে তাতে সারাদেশের মানুষের মত আমরাও গভীরভাবে ব্যথিত, শোকাহত ও ক্ষুব্ধ। ধর্মান্ধতা মানুষকে কতটা অমানুষ করে তুলতে পারে তারই একটি সাক্ষ্য এই বর্বর হত্যাকান্ড। কোন সুস্থ চিন্তার মানুষ একে সমর্থন করতে পারে না। অন্যদিকে সরকার কিছুতেই এ হত্যাকান্ডের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। সারাদেশে একের পর এক লেখক-প্রকাশক-শিক্ষক, ব্লগার, খ্রিস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের যাজক-পুরোহিত হত্যার পরও সরকার এসবকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে লঘু করে দেখাতে চেয়েছে। সবই সরকারবিরোধী চক্রান্ত বলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপিয়ে দলীয় ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছে। জঙ্গীবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের নামে ১৩ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় যার বড় অংশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী। পুলিশী হেফাজতে থাকা বেশ কয়েকজন জঙ্গী সন্দেহভাজন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ার’-এ নিহত হয়েছে, যা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তৈরি করেছে। অন্যদিকে, আওয়ামী মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীবর্গ নিজেরাই লেখালেখি ‘সংযত’ করার পরামর্শ দিয়েছেন, মৌলবাদী শক্তির সাথে আপোষ করে কথিত ‘ধর্ম অবমাননাকারী’ ব্লগারদের তালিকা ঘোষণা করেছেন। কালো আইন ব্যবহার করে ও বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে। এই সবকিছুর সুযোগে জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী বেপরোয়া ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গুলশানের মত সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায় বিপুল অস্ত্র-বোমাসহ সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ প্রমাণ করে জনজীবনে কতটা নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।”
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আরো বলেন, “যে আক্রোশ থেকে ইসলামী উগ্রপন্থীরা বিদেশিদের হত্যা করেছে তা হল — পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের মিত্ররা মুসলমান দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে। কিন্তু এই অভিযোগে ওইসব দেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর শাসকশ্রেণী তেলসহ সম্পদ লুন্ঠন ও ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের স্বার্থে ইরাক-লিবিয়া-আফগানিস্তান-সিরিয়ায় আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু এজন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারণ মানুষ দায়ী নয়, বরং ওইসব দেশের অনেক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধচক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার। পশ্চিমা নাগরিকদের লক্ষ্য করে আক্রমণ সাম্রাজ্যবাদকে দুর্বল করবে না, বরং তাদের শক্তি যোগাবে। কারণ একে অজুহাত করে তারা আরো হস্তক্ষেপ ও আগ্রাসন চালানোর সুযোগ পাবে। এ ধরণের বর্বরতা ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষ উস্কে দেবে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিরাপত্তা রক্ষার ধুয়া তুলে সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানোর সুযোগ তৈরি হবে। সচেতন মানুষকে উভয় বিপদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।”
সবশেষে তিনি বলেন, “মহাজোট সরকার ফ্যাসিবাদী শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক নীতি আদর্শ, মূল্যবোধ-সংস্কৃতিসহ ন্যূনতম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত। গণতান্ত্রিক অধিকারহীন দমনমূলক শ্বাসরুদ্ধকর এই পরিস্থিতিতে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের শক্তি যেমন লাভবান হয়, তেমনি অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদি মৌলবাদী শক্তির তৎপরতার জমিন প্রশস্ত হয়।”