গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনা প্রত্যাহারের দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে ৩০ মে ২০১৬ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি পেশের পূর্বে মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলার সদস্যসচিব অপুদাশগুপ্তের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলার সদস্য রফিকুল হাসান, জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, সত্যজিৎ বিশ্বাস প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনা প্রত্যাহারের দাবিতে মাসব্যাপী প্রচার পক্ষ, সভা, সমাবেশ, মিছিল, কর্মসূচী শেষে আজ আমরা স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করছি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা জানতে পেরেছি যে, সরকার আরও এক দফা বিদ্যুৎ ও গ্যাস-এর দাম বাড়াতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা বর্তমানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর বিবেচনাধীন আছে। প্রস্তাব অনুযায়ী আবাসিক খাতে গ্যাসের বিল হবে সিঙ্গল বার্নারে ১১০০ টাকা ও ডাবল বার্নারে ১২০০ টাকা, যা বর্তমানে যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা। এর আগে বর্তমান সরকারের ৭ বছরের শাসনামলে বিদ্যুতের মূল্য ৮ বার এবং গ্যাসের মূল্য ৩ বার বাড়ানো হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে, বাড়ি ভাড়া-গাড়ি ভাড়া, কৃষিকাজে ও শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সীমিত আয়ের মানুষের সংসার খরচ চালানো আরো কঠিন হবে। এবারের মূল্যবৃদ্ধিই শেষ নয়। ইতিমধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আগামীতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আরো বাড়ানো হবে। সরকার জনগণের দুর্দশার প্রতি বিন্দুমাত্র পরোয়া করে না – এই স্বৈরতান্ত্রিক ঘোষণা তার প্রমাণ।”
বক্তারা আরো বলেন, “২০১৪-’১৫ অর্থবছরে সরকারি গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর ও লভ্যাংশ বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এরপরও পেট্রোবাংলা নীট মুনাফা করেছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্যাস উন্নয়ন ফান্ডে প্রতিবছর জমা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। তারপরও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা কি? বলা হচ্ছে – কোন দেশে গ্যাস এত সস্তা নয়। গ্যাস আমাদের নিজেদের সম্পদ। উৎপাদক দেশ বলে এখানে দাম কম থাকাই যুক্তিযুক্ত। সরকার চায় বাসা-বাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিতে। এজন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলপিজি সিলিন্ডারের সমান করা হচ্ছে। জনকল্যাণমূলক সরকার হলে উচিত ছিল, ভর্তুকি দিয়ে ও কালোবাজারি বন্ধ করে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমানো। তা না করে যারা কম দামে গ্যাস পাচ্ছেন তাদের সুবিধা কেড়ে নেয়া অন্যায়। আবাসিক খাতে গ্যাসের যে অপচয় হয়, তার হিসাব কি? প্রতিদিন উৎপাদিত গ্যাসের মধ্যে মাত্র ১১-১২% বাসা-বাড়িতে ব্যবহার হয়। অথচ, দেশ থেকে এক বছরে পাচার হয়েছে কমপক্ষে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। হলমার্ক, ডেসটিনি, বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে ৩০,০০০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ৮০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।”
তাই নেতৃবৃন্দ সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এই অযৌক্তিক প্রস্তাবনা অবিলম্বে বাতিল করার জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানান।