Thursday, December 26, 2024
Homeছাত্র ফ্রন্টচট্টগ্রামে শিক্ষাদিবস উপলক্ষে ছাত্রসমাবেশ অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রামে শিক্ষাদিবস উপলক্ষে ছাত্রসমাবেশ অনুষ্ঠিত

শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ-সাম্প্রদায়িকীরণ ও রাষট্রীয় ব্যয় সংকোচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা আহবান

Ctg_170915

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা,বিশ্ববিদ্যালয়,রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি,কক্সবাজার ও নগর শাখার উদ্যোগে মহান শিক্ষাদিবস উপলক্ষ্যে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকেল ৩টায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর শাখার সভাপতি তাজ নাহার রিপন ,সভাপতিত্ব করেন জোন ইনচার্জ সত্যজিৎ বিশ্বস। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্তী রিন্টু, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড উজ্জ্বল রায়। আরো বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলা আহবায়ক কলিন চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ফজলে রাব্বী,খাগড়াছড়ি জেলার ছাত্র নেতা কবির হোসেন, নগর সাধারণ সম্পাদক আরিফ মাঈন উদ্দিন ও নগর সহ সভাপতি মুক্তা ভট্টাচার্য।

বক্তারা মহান শিক্ষা দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন বাংলাদেশ জন্ম ইতিহাসের সাথে ১৯৬২সালের শিক্ষা আন্দোলন একটি গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায়। সবার জন্য শিক্ষার দাবীতে মোস্তফা,বাবুল ও ওয়াজিওল্লার শহীদী আত্মদান যুগে যুগে আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতি মনুষ্যত্ব রক্ষার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে প্রেরণা যোগায়। কিন্তু আমরা দেখি, শিক্ষা দিবসের ৫৩ বছর ও স্বাধীনতার ৪৫ বছরে ক্রমাগত বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জীবনে নানা সংকট ঘণীভূত হয়েছে।

লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে, তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ সহ গণপরিবহনে অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন দিশেহারা। ক্রমাগতহারে বাড়ছে শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতনের মতো অমানবিক ঘটনা। চলছে নীতি নৈতিকা ধ্বসিয়ে দেয়ার নানান আয়োজন। বক্তারা বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সর্বস্তরে চলছে শিক্ষার ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধি। স্বাধীনতার পরবর্তিতে ৪৫ বছরের বাংলাদেশে সর্বস্তরে শিক্ষার অধিকার সংকোচিত হয়েছে। শিক্ষার মৌলিক মানবিক উদ্দেশকে উপেক্ষা করে শিক্ষাকে মুনাফা লাভের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত করা হয়েছে। “টাকা যার শিক্ষা তার” পাকিস্তানী বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতির বাস্তবায়নে এদেশের শাসকগোষ্ঠী বারে বারে শিক্ষা দিবসের চেতনাকে ভুলন্ঠিত করেছে। ৬২’ শিক্ষা আন্দোলনে দাবি উঠেছিল শিক্ষাখাতে ২৫% বাজেট বরাদ্দের। কিন্তু স্বাধীন দেশে কোন সরকারই এ দাবি মেনে নেয়নি। বরং প্রতিবছর শিক্ষাখাতে রাষ্ট্রীয় বাজেট কমছে। তাই দেখা যায় শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির দৌরাত্মে অভিভাকদের দিশেহারা অবস্থা। বাড়ছে ঝরে পড়ার হার। এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ২ লক্ষাধিক শিক্ষাথী দারিদ্রতার কারণে ঝরে গেছে। সরকারের এ ব্যাপারে কোন ভ্রক্ষেপ নেই। উপরন্ত শিক্ষাকে ক্রেতা ভোক্তার আইনী প্রক্রিয়া পরিণত করার উদ্দেশ্যে সরকার এবার বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর ভ্যাট আরোপ করেছিল। দেশের ৬২’ এর শিক্ষা আন্দোলনের চেতনায় সারা দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার শিক্ষা ভ্যাট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। বক্তারা বলেন ছাত্রদের এই নৈতিক জাগরণই পারে অন্যায় জবরদস্তিমূলক সমাজের ভিত কাঁপিয়ে দিতে। পারে অন্যায় সিদ্ধান্ত প্রতিহত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এই ছাত্র সমাবেশ থেকে ছাত্রদের এই জাগরণকে শিক্ষা রক্ষার নৈতিক স্ফুরণ হিসেবে অবহিত করা হয়।

বক্তারা বলেন, এই আন্দোলন চেতনাকে ধারণ করে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে শিক্ষা সংকোচনের সমস্ত আয়োজনের রুখে দাঁড়াতে হবে। তারা বলেন বিপুল জনসংখ্যার চট্টগ্রামে ছাত্র সংখ্যার অনুপাতে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাতে গোনা। তাই প্রতিবছরই স্কুল থেকে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত তীব্র ভর্তি সংকটে পড়তে হয় এ অδলের সাধারণ মানুষকে। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে চট্টগামে সরকারি উদ্যোগে কোন স্কুল নির্মিত হয়নি। নগরীতে সরকারি ৯টি মাধ্যমিক স্কুলে আসন আছে মাত্র ৩,৪৪৫টি। মিরসরাই, বাঁশখালি, সীতাকুন্ড,আনোয়ারাসহ অনেক উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই। অথচ সেই অδলগুলোতে গড়ে উঠছে বেসরকারি বাণিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এবছরই চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র ঘোষণা করেন, সিটি কর্পোরেশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আভ্যন্তরীণ আয়ের মাধ্যমে ব্যয় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বক্তারা বলেন, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট ৯০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশূনা করে যাদের অধিকাংশই নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান। মেয়রের এ সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থী মাঝ পথে ঝরে যাবে। ছাত্র সমাবেশের মাধ্যমে বক্তরা বলেন, অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশংকা মুক্ত করা হোক। অন্যথায় ছাত্র শিক্ষক অভিভাকদের নিয়ে একটি বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত প্রতিহত করা হবে। বক্তারা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ লক্ষ শিক্ষার্থী নানান সংকট নিয়ে একটি মানহীন শিক্ষা জীবন বহন করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই।

শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু সরকার তা অস্বীকার করেছে বারে বারে। শিক্ষা এখন বেসরকারি বিনিয়োগ খাত হিসেবে অধিক লাভজনক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯২ সালে এদেশে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম আরম্ভ হয়। লাভজনক হওয়ায় প্রাইভেট বিশ্ববিদালয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল-ইঞ্জিনিয়ারিং মিলে ১৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থেই শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়াশুনার খরচ চালায় এসব বিশ্ববিদালয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অভাবে অভিভাবকরা শেষ সম্বল দিয়েও সন্তানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে চায় বেসরকারিতে। এ সুযোগে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোন নিয়মনীতি ছাড়াই লাখ লাখ টাকা নিয়ে নিচ্ছে মালিকেরা। তারা সুনির্দিষ্ট সরকারি নীতিমালায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেও টিউশন ফি নির্ধারণের আহবান জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, অগণতান্ত্রিক বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবসস্থায় শিক্ষা সংস্কৃতি মনুষ্যত্ব মানবিকতা ইতিহাস সব কিছু আজ লুন্ঠিত। মনোবিকাশের সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে জায়গা নিচ্ছে অশ্লীলতা অপসংস্কৃতি,মাদক জুয়া।তাই প্রয়োজন শিক্ষার মানবিক অধিকার রক্ষার কার্যকর ছাত্র গণআন্দোলন। তবেই শিক্ষা মনুষ্যত্ব মানবিকতা বাচঁবে। সমাবেশ শেষে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments