গত ১৮ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম জানালেন, “দেশে চালের কোনো ঘাটতি নেই। সরকারি গুদামগুলোতে পর্যাপ্ত চালের মজুত রয়েছে।…গুদামগুলোতে ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল মজুত রয়েছে।” তিনি আরো বললেন, “চালের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা অস্থিরতার কোনো তথ্য এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই।” এর মাত্র তিন দিনের মাথায় ৩০টি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হলো।
এ আমদানিতে সরকারের যুক্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, চালের মূল্যবৃদ্ধি রুখতেই নাকি এ আমদানি! চালের বাজারে অস্থিরতা নেই- এটাও সরকারি ভাষ্য, আবার মূল্যবৃদ্ধি রুখতে আমদানি করতে হচ্ছে- এও সরকারি ভাষ্য। আত্মবিশ্বাসের সাথে পরস্পরবিরোধী দায়সারা বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারি আমলা ও দলীয় লোকদের তুলনা গোটা পৃথিবীতে আর একটি মেলানো এখন একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়।
যুক্তি শুনে মনে হতে পারে দেশ চাল উৎপাদন কম, তাই দাম বাড়ছে, আমদানি করলে দাম কমবে। অথচ বাস্তব চিত্র তা মানছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, বছরে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন হয়। (এ হিসাবের মধ্যে অপচয়, পশুখাদ্য, বীজ ইত্যাদি যুক্ত) কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি বছরই এর চেয়েও বেশি চাল উৎপাদন হয়। ২০১৯-২০ সালে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ মেট্রিকটন। ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়েছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ মেট্রিকটন। তারপরও আমদানি করতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ চাল।
দেশে বাড়তি উৎপাদনের পরও এ মূল্যবৃদ্ধি কেন? এতো আমদানিই বা কেন? এর কারণ দেশের চাল বাজার নিয়ন্ত্রণ করে গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ী। এরাই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। সরকার এই বড় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করেন না, বরং এরাই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। আসলে তারাই সরকার। তাই চালের মূল্যের বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করে চাল আমদানির দায়িত্ব তুলে দেয় সেই বড় ব্যবসায়ীদের হাতেই। এতে দাম কখনও কমে না, কমে বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দাম কমার সম্ভাবনা। ফলাফলে যারা দাম বাড়ায়, তারাই হয়ে উঠে চালের বাজারের হর্তাকর্তা-বিধাতা।
অনির্বাচিত সরকার আভ্যন্তরীণ বাজার ও বৈদেশিক রপ্তানী দুটোই বিগ ক্যাপিটালের হাতে তুলে দিয়ে জনগণের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। চাল উৎপাদন করে দেউলিয়া হওয়া কৃষক পেটের গামছা আরও শক্ত করে বাঁধেন, প্রতিদিন বুঝে নেন- কত ধানে কত চাল!