গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
“সকলের মতামত উপেক্ষা করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মহাজোট সরকারের চরম স্বৈরতান্ত্রিক ও গণবিরোধী চরিত্রের পরিচায়ক। এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, কারণ জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক কমেছে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম কমানোর বদলে উল্টো বাড়ানো হচ্ছে। আর, গ্যাস আমাদের নিজস্ব সম্পদ ও লাভজনক খাত, এর দাম দফায় দফায় বাড়ানোর কোন যুক্তি নেই।” গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা বাতিলের দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী)-র উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির মদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী এ কথা বলেন। বাসদ (মার্কসবাদী) কর্তৃক ঘোষিত ১১ – ২৫ মে ‘দাবি পক্ষ’-এর অংশ হিসেবে ১৬ মে ২০১৬ সোমবার বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জহিরুল ইসলাম, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, সাইফুজ্জামান সাকন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রস্তাবনা অনুযায়ী আবাসিক খাতে গ্যাসের বিল হবে সিঙ্গল বার্নারে ১১০০ টাকা ও ডাবল বার্নারে ১২০০ টাকা, যা বর্তমানে যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৮% বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে, বাড়ি ভাড়া-গাড়ি ভাড়া, কৃষিকাজে ও শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সীমিত আয়ের মানুষের সংসার খরচ চালানো আরো কঠিন হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৪-’১৫ অর্থবছরে সরকারি গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর ও লভ্যাংশ বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এরপরও পেট্রোবাংলা নীট মুনাফা করেছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্যাস উন্নয়ন ফান্ডে প্রতিবছর জমা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। তারপরও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা কি?
বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের ৭ বছরের শাসনামলে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৮ বার এবং গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৩ বার। সরকারের ‘উন্নয়ন’ এর ফল এভাবেই ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, আগামীতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আরো বাড়ানো হবে। তিনি আরো বলেছেন, সরকার চায় বাসা-বাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিতে। এজন্য একদিকে পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এলপিজি সিলি-ারের সমান করা হচ্ছে, অন্যদিকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দিয়ে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স-পেট্রোবাংলার পরিবর্তে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করছে এবং তাদের কাছ থেকে বহুগুণ বেশি দামে গ্যাস কিনছে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর নামে স্থাপিত তেলভিত্তিক প্রাইভেট রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে। কথা ছিল, এসব কেন্দ্র ২০১৩ সালেই বন্ধ করা হবে। এখন বলা হচ্ছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত এগুলো চলবে। এভাবে জনগণের অর্থ দিয়ে দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভরা হচ্ছে। আর এই লুটপাটের ফলে সৃষ্ট ঘাটতি পোষাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি, বেশি দামে গ্যাস-বিদ্যুৎ-তেল বিক্রি করে পাওয়া ট্যাক্স ও মুনাফা দিয়ে সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার ভরতে চায়। তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বারবার খরচ বাড়িয়ে যে লুটপাট চলছে তার ঘাটতি পোষাতে এই টাকা ব্যবহার হবে।
সমাবেশ থেকে গ্যাস-বিদুতের দাম আবারো বাড়ানোর অযৌক্তিক ও গণবিরোধী পরিকল্পনা প্রত্যাহারের দাবিতে ২২ মে ঢাকায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে ও সারাদেশে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।